না থাকলে এপিসোড পানসে
বাংলা সিরিয়ালে যতটা নায়িকার দাপট, ততটাই দাপট খলনায়িকার। বরং কোনও কোনওক্ষেত্রে বেশিই। পরিপাটি সাজগোজ। বাঁকা চাহনি। মন অন্ধকারাচ্ছন্ন। কুটিলতায় ভরা। কেউ দাঁত-চিবিয়ে কথা বলেন। কেউ বলেন উচ্চৈঃস্বরে। কাঠি করায় তাঁরা ওস্তাদ। সারাক্ষণ লেগে থাকেন ভালমানুষের পিছনে। খারাপ কাজ করেন। পিন ফোটান। ক্ষতি করার চেষ্টায় ডুবে থাকেন। অন্যদের যতটা সম্ভব নিচে নামান নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এঁদের টার্গেট মূলত মিষ্টি মুখের নায়িকারা। নানা উপায়ে নাস্তানাবুদ করেন। কাঁদিয়ে ছাড়েন। যদিও শেষমেশ এঁরা পরাস্ত হন। জঘন্য কাজের জন্য ক্ষোভের শিকার হন দর্শকদের। অভিশাপ কুড়োন। তার আগে তরতরিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে যান টিআরপি। এঁদের ঘৃণা করা যায়, তবে অস্বীকার করা যায় না। অনেকেই মনে করেন, খলনায়িকা না থাকলে এপিসোড পানসে। তাঁরা এলে তবেই গল্পের ট্যুইস্ট আসে। খলনায়িকা যত স্ট্রং, সিরিয়াল তত সুপারহিট। বাংলা মেগা সিরিয়ালে কয়েকজন মন্দ মেয়ে দর্শক-মনে বিশেষভাবে রেখাপাত করেছেন। তাঁদের দেখে রীতিমতো ভয় পেয়েছেন দর্শকরা। ছুঁড়ে দিয়েছেন তীব্র ঘৃণা, ক্ষোভ। তালিকা দীর্ঘ।
আরও পড়ুন-আট কোটির ভিনদেশি আলোয় সেজেছে গঙ্গাসাগর
বাবুর মা
এই মুহূর্তে সবচেয়ে চর্চিত দত্তপরিবারে বাবুর মা। টিপিক্যাল পজেসিভ শাশুড়ি। এক অর্থে চিরন্তন খলনায়িকা, কিন্তু আদতে একজন ইনসিকিওরড মা। যার চোখের কাঁটা তাঁর বউমা পর্ণা। বাবু-অন্তপ্রাণ বাবুর মা একবারেই সহ্য করতে পারেন না বউমাকে। যেভাবেই হোক ছেলে হাতছাড়া করা যাবে না, এমনটাই মরণপণ করেছেন তিনি। তাই ছলেবলে কৌশলে ষড়যন্ত্রে শুধু সৃজন আর পর্ণাকে আলাদা করতে এককাট্টা। এমন এক খলহিংসুটে শাশুড়িকে কোন দর্শক সহ্য করবেন! তাই কৃষ্ণা দত্তের ওপর বেজায় চটেছেন দর্শকরা। তিনি পর্দায় এলে গালমন্দ, শাপ-শাপান্ত করেন দর্শকরা। যদিও সেইসব তির্যক মন্তব্য বাবুর মার কানে না পৌঁছলেও অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায়ের কানে পৌঁছয়। তিনি এই চরিত্রের অভিনেত্রী। দর্শকদের কটু কথাকে তিনি আশীর্বাদ মনে করেন। কারণ খলনায়িকা চরিত্রের অভিনেত্রীর কাছে এটা মস্তবড় পুরস্কার। নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় নিয়ে অরিজিতা বললেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করছি। প্রথমে থিয়েটারে, তারপর টেলিভিশন। আমার কাছে চরিত্রটাই গুরুত্বপূর্ণ। নেগেটিভ-পজেটিভ বলে কিছু হয় না। মনে রাখতে হবে কোনও মানুষের সবটা ভাল হতে পারে না, আবার সবটাই খারাপ হতে পারে না। ভাল-মন্দ মিশিয়েই মানুষ।’’
আরও পড়ুন-৮ বছর আগে ২৯ জনকে নিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল বায়ুসেনার বিমান, অবশেষে উদ্ধার ধ্বংসাবশেষ
২০১৯ সাল থেকে পুরোদমে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। ‘আয় খুকু আয়’ নামে একটি সিরিয়ালে অভিনয় করেন। সেই চরিত্রটিও ছিল নেগেটিভ। একজন শিশু পাচারকারী। সেই মহিলার মধ্যে কোনওরকম মায়া মমতা ছিল না। হিংস্র, খল, স্বার্থপর একটি চরিত্র। নেগেটিভ চরিত্র অথচ খুব পপুলার হয়েছিল। তারপর থেকে আরও কিছু নেগেটিভ চরিত্রের অফার আসতে থাকে। যদিও একটা সময় তাঁর মনে হয়েছিল, একটু পজিটিভ চরিত্র করলে মন্দ হত না। আরেকটি সিরিয়াল ‘জীবন সাথী’। প্রথম দিকে চরিত্রটি নেগেটিভ ছিল। পরে ধীরে ধীরে পজিটিভ হয়ে যায়। তারপর বেশকিছু সিরিয়াল। ‘মিঠাই’ সিরিয়ালে ভয়ঙ্কর একটি নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এতটাই বদমায়েশি করেছেন, খেপে লাল হয়ে গিয়েছিলেন দর্শকরা।
আরও পড়ুন-আতঙ্ক ছড়িয়ে বাহিনী মনে করাল হাল্লা রাজাকে
এখন ‘নিম ফুলের মধু’। বাবুর মা কৃষ্ণা দত্ত চরিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এই চরিত্রটা কিন্তু পুরোপুরি নেগেটিভ নয়, ধূসর। ভাল-মন্দ, মায়া-মমতা মেশানো। বহুস্তরীয় একটি চরিত্র। পরিবারের প্রতি, পুত্রের প্রতি গভীর টান, গভীর ভালবাসা। ধূসর চরিত্রটা একটা সময় পুরোপুরি নেগেটিভ হয়ে যায়। খুলে যায় মুখোশ। পুত্র বাবুর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। মায়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বাবু। এইভাবে চরিত্রটার একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। গত এক বছর ধরে চরিত্রটাকে আমি বয়ে নিয়ে চলেছি। নিতে পেরেছি অনেক চ্যালেঞ্জ। চরিত্রটি আমাকে দারুণ জনপ্রিয়তা দিয়েছে। পাশাপাশি আমাকে বহু মানুষ ঘৃণাও করেছেন। যদিও একজন অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমার সাফল্য বলেই মনে করি।’’ একটি ঘটনার উল্লেখ করলেন অরিজিতা, ‘‘বিভিন্ন সময়ে দর্শকদের সঙ্গে মুখোমুখি হতে হয়। একবার সবংয়ের দিকে একটি অনুষ্ঠানে গেছি। বৃষ্টি মাথায় বহু মানুষ আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমি পৌঁছনোর পর জানতে চেয়েছিলাম, আমাকে আপনাদের কেমন লাগে? কয়েকজন উত্তরে বলেছিলেন, ‘খুব খারাপ লাগে। কেন আপনি এত খারাপ কাজ করেন? একটু ভাল হতে পারেন না?’ এই খারাপ লাগাটুকু জানানোর জন্যই ওঁরা আমার জন্য রাত বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। এটা আমার বড় প্রাপ্তি। আরও কিছুক্ষণ থাকার পর জানতে চেয়েছিলাম, এখন আমাকে আপনারদের কেমন লাগছে?’ ওঁরা বলেছিলেন, ‘খুব ভাল লাগছে।’ ব্যক্তি-মানুষ পছন্দ হলেও অভিনীত চরিত্রটি মানুষের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। একজন খলচরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে এটাকে আমি আশীর্বাদ বলেই মনে করি। বুঝতে পারি, আমার অভিনয় মানুষের মনে দাগ কাটছে। চরিত্রের জন্য খুব বড় প্রাপ্তি।’’
এর আগে ‘আয় তবে সহচরী’ সিরিয়ালে বরফির মামি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ধূসর চরিত্র। ভালমন্দ মেশানো। ‘গোধূলি আলো’ সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন পজেটিভ চরিত্র। তিনি বলেন, ‘এতদিন ধরে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার ফলে দর্শকদের আমার প্রতি যথেষ্ট বিরক্তি তৈরি হয়েছে। রাগ-ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নির্মাতাদের মধ্যেও অনেকে মনে করেন একজন নেগেটিভ চরিত্রের অভিনেত্রীকে একই ধরনের চরিত্রে কাস্ট করলে হয়তো জনপ্রিয়তা বাড়বে। কিন্তু আমার সেটা মনে হয় না। পুরোটাই নির্ভর করে অভিনয়ের উপর। আমি দুই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেই আনন্দ পেয়েছি।’
আরও পড়ুন-নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কেন বাদ প্রধান বিচারপতি?
চড়ুই এবং ময়ূরী
‘জাহানারা’ সিরিয়ালে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শ্বেতা মিশ্র। পজিটিভ চরিত্র। পেয়েছিলেন দারুণ প্রশংসা। তারপর তিনি হয়ে গেলেন খলনায়িকা। ‘ধুলোকণা’য় চড়ুই এবং ‘ইচ্ছে পুতুল’-এ ময়ূরী। দুটো চরিত্রই জ্বালিয়ে দিয়েছে দর্শকদের হাড়। অভিনেত্রী অর্জন করেছেন দর্শকদের ঘৃণা, ক্ষোভ। কেন বেছে নিলেন এই ধরনের চরিত্র? শ্বেতা জানালেন, ‘‘আমি নিজের ইচ্ছায় নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছি। চড়ুই এবং ময়ূরী আমার খুব প্রিয় চরিত্র। এদের ফুটিয়ে তুলতে তুলতে মনে হয়েছে, নেগেটিভ চরিত্রে নিজেকে প্রকাশ করার নানারকম সুযোগ থাকে। পরপর দুটো নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করে ভালবাসা পেয়েছি। প্রচুর মানুষ ঘৃণাও করেছেন। সেটা অবশ্য আমার অভিনীত চরিত্রের কারণে। এবার একটু ব্রেক নিতে চাই। ফুটিয়ে তুলতে চাই অন্য ধরনের চরিত্র।’’
নেগেটিভ চরিত্রের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হল কীভাবে? তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে বহু সিনেমা দেখেছি, টিভি সিরিয়াল দেখেছি। ভিলেনদের দেখে অনেক সময় মনে হয়েছে, ওরা যেটা করছে তার পেছনে কোনও না কোনও কারণ আছে। সবই যে খারাপ, তা কিন্তু নয়। এই ভাবেই নেগেটিভ চরিত্রের প্রতি একটা অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে কেউ সম্পূর্ণ ভাল নয়, কেউ সম্পূর্ণ খারাপও নয়। পজিটিভ চরিত্র অনেক সময় ভুল কাজ করে। সেগুলো খুব একটা চোখে পড়ে না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের সময় অন্যতম সেরা তারকা শাহরুখ খান ক্যারিয়ারের শুরুতে ভিলেন হতে চেয়েছিলেন। ড্যানি, প্রাণ প্রমুখ অভিনেতার অভিনয় আমার খুব পছন্দের। এঁদের দেখেই নেগেটিভ চরিত্রের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়।’’ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে দর্শকরা খুব খারাপ খারাপ মন্তব্য করেন। সেই প্রসঙ্গে শ্বেতা জানালেন, ‘‘শুনতে ভালই লাগে। বুঝতে পারি আমার অভিনয় ঠিকঠাক হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে মানুষজন পছন্দ করেন। তাঁদের মুখে শুনতে পাই অভিনয়ের প্রশংসা। আগামী দিনে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।’’
আরও পড়ুন-বৈঠকে থাকছে না তৃণমূল
গায়ত্রীর মুখোমুখি
নবনীতা দে চ্যাটার্জি ছোটপর্দায় অভিনয় করছেন ২০০৭ থেকে। বহু জনপ্রিয় সিরিয়ালে। অতি সম্প্রতি ‘বেনে বউ’, ‘খোকাবাবু’, ‘আমাদের এই পথ যদি না শেষ হয়’— এমন বহু সিরিয়ালে তাঁকে দেখেছেন দর্শকরা। নবনীতা দে ছোট পর্দার চেনা মুখ। অল্প সময়ের মধ্যেই পেয়েছেন দারুণ জনপ্রিয়তা।
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা অভিনয় জগতের মানুষ। একটা সময় নৃত্যশিল্পী হতে চেয়েছিলাম। হয়ে গেলাম অভিনেত্রী। জনপ্রিয়তা পেলাম খলচরিত্রে অভিনয়ের জন্য। ‘আমাদের এই পথ যদি না শেষ হয়’ সিরিয়ালের গায়ত্রী চরিত্রটি পুরোপুরি নেগেটিভ। দারুণ পপুলার। আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। মাথা ঠান্ডা রেখে সে জঘন্য কাজ করত। বেটা বেটা বলে সম্বোধন করত তাকে, যাকে সে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। যার সঙ্গে শত্রুতা বেশি।’’ বর্তমানে অভিনয় করছেন ‘আমাদের রানি’ সিরিয়ালে। চরিত্রের নাম শুক্লা। নবনীতা জানালেন, ‘‘নেগেটিভ মনে হলেও চরিত্রটি সেই অর্থে নেগেটিভ নয়। প্রত্যেকেই বাড়িতেই এমন একটি চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়। হয় মায়ের মধ্যে, নয় কাকিমার মধ্যে, নয় জেঠিমার মধ্যে, মাসিমার মধ্যে। অনেক চরিত্রের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে চরিত্রটি। যাঁরা পরিবারের ভালর কথা ভাবেন। তার জন্য হয়তো কখনও রূঢ় আচরণ করে ফেলেন, খ্যাঁক খ্যাঁক করেন। এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পেরে খুব আনন্দ পাচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা চরিত্রাভিনেত্রী। নানান চরিত্রে বাস করি। পজিটিভ-নেগেটিভ যে ধরনের চরিত্র পাব, অভিনয় করব। আমি টাইপ কাস্ট হতে চাই না। দর্শকদের মনে রাখার মতো কিছু দিতে হবে। তবেই তাঁরা মনে রাখবেন। নেগেটিভ চরিত্রে আমার অভিনয় দেখে বহু দর্শক নানারকম বিরূপ মন্তব্য করেছেন। অনেকেই বলেছেন, ‘তুমি এত মিষ্টি দেখতে, কেন এত খারাপ কাজ করো?’ আমার বাবা-মা দিদিও বলেন, পর্দায় খারাপ কাজ না করতে। এগুলো শুনে আমি খুব মজা পাই।’’
আরও পড়ুন-মাটির মানুষ রশিদ
পায়েলের কথা
‘টাপুর টুপুর’-এর পায়েল। বাংলা মেগা সিরিয়ালের অন্যতম জনপ্রিয় নেগেটিভ চরিত্র। দর্শকদের ভালবাসা এবং অভিশাপ দুটোই কুড়িয়েছে। প্রথমটা গেছে অভিনেত্রীর দখলে, দ্বিতীয়টা চরিত্রের। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাফিন চক্রবর্তী। দর্শকদের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে উদ্দেশ্য করে নানারকম মন্তব্য ভেসে আসত সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও একটা সময় চরিত্রটি পজিটিভ হয়ে যায়। মাফিন বলেন, নির্মাতারা জানতে চেয়েছিলেন, ‘টাপুর টুপুর’-এর পায়েল চরিত্রটি আমি ফুটিয়ে তুলতে পারব কি না। কারণ তখন আমার কণ্ঠস্বরের মধ্যে ছেলেমানুষি ভাব ছিল। আমি জোর গলায় বলেছিলাম, পারব। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে আমি সফল হয়েছি। আমার চেনাজানা মানুষ আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব নেগেটিভ চরিত্রে আমাকে দেখে বলেছিলেন, ‘কেন তোমাকে এই ধরনের চরিত্র দেয়? এত খারাপ কাজ কেন তুমি করো?’ কমেন্টগুলো আমি খুব এনজয় করি। বাইরে গেলে বহু অচেনা অজানা মানুষ আমাকে বলেন, ‘তোমাকে আমরা খুব অপছন্দ করি। সিরিয়ালে তোমার আচরণ একদম ভাল লাগে না।’ এই মন্তব্যগুলোও আমার দারুণ লাগে। পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, চরিত্রই আমার কাছে বেশি গুরুত্ব পায়। যে চরিত্রই আমার কাছে আসুক না কেন, আগামী দিনে আমি ঠিকঠাক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শেষ যে দুটো কাজ আমি করেছি সেই দুটোকে পুরোপুরি খলনায়িকা বলতে আমি নারাজ। চরিত্র দুটোর নেগেটিভিটির মধ্যে জাস্টিফিকেশন আছে। ‘সাহিত্যের সেরা সময়’-এর ‘অগ্নিপরীক্ষা’র কথা ধরা যাক। সেখানে আমার অভিনীত চরিত্রটির খুব কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। সে চায় তার মেয়ে ভালভাবে পড়াশোনা করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক। তারপর বিয়ে করুক। যখন মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয় তখন কিন্তু আমার অভিনীত চরিত্রটি ঝাঁপিয়ে পড়ে। হয়তো প্রসেসটা ভুল। তবু মনে হয় সে ঠিক। আরেকটি সিরিয়াল ‘মিলি’। সেখানেও আমার চরিত্রটি নেগেটিভ। সে যা করে পরিবারের ভালর জন্য করে। কিন্তু ওই যে, প্রসেসটা ভুল। সবাই অন্যরকম ভাবে।’’ কেউ যখন পরপর কয়েকটা খলনায়কের চরিত্র অভিনয় করেন তখন টাইপ কাস্ট হয়ে যাওয়ার ভীষণ সম্ভাবনা থাকে। সেই ব্যাপারে খুব কনসাস মাফিন। গুরুগম্ভীর ভাব সরিয়ে রেখে নেগেটিভ চরিত্রের মধ্যে কমেডির ছোঁয়া দিতে পছন্দ করেন। তিনি জানালেন, ‘‘জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘মিলি’-তে খলনায়িকা হলেও, আমার অভিনীত চরিত্রে রয়েছে কমেডি টাচ। কমেডি আমি ভীষণ এনজয় করি।’’ অভিনয়ের পাশাপাশি নাচ ভালবাসেন মাফিন। চালান নবরং ডান্স অ্যাকাডেমি। জানালেন, ‘‘যাঁরা সিরিয়ালে নায়ক-নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে তাদের পাশাপাশি পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জনপ্রিয়তা কোনও অংশে কম নয়। খলচরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বহু মানুষ পছন্দ করেন। শুরুর দিকে এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছি যেখানে সারাক্ষণ কেঁদে বেড়াতে হত, মনখারাপ বয়ে নিয়ে বেড়াতে হত। অনেকেই বলতেন, এত মনখারাপ কীসের? এত কষ্ট কীসের? সেই পজিটিভ ক্যারেক্টারগুলো ফুটিয়ে তোলার সময় আমার মনে হয়েছিল, আমি নেগেটিভ ক্যারেক্টার ফুটিয়ে তুলব। সেখানে কান্নাকাটির কোনও জায়গা নেই। বরং সে অন্যদের কাঁদায়। সেইসঙ্গে সাজুগুজুর দারুণ সুযোগ রয়েছে। তাই আমি নেগেটিভ চরিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ি।’’
আরও পড়ুন-কাল শুরু টুর্নামেন্ট, ট্রফি জিতলে ১৭ কোটি
আরও চার ছারখার
‘বেহুলা’ ধারাবাহিক একটা সময় ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। মনসা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ। দেবী চরিত্র, ছিল নেগেটিভ আঙ্গিক। চোখ মুখের ভাব ভঙ্গিমা দিয়ে খলনায়িকার চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। চরিত্রটি তাঁকে দারুণ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। সেটাই তাঁর এরপর ‘কিরণমালা’ ধারাবাহিকেও তাঁকে দেখা গেছে দুর্ধর্ষ খলনায়িকা চরিত্রে। ওই ধারাবাহিকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন রানি কটকটির চরিত্র। ‘গৌরী এল’ ধারাবাহিকেও চান্দ্রেয়ীকে দেখা গেছে একটি নেগেটিভ চরিত্রে।
টেলিভিশন দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় খলনায়িকা রূপাঞ্জনা মিত্র। কেরিয়ারের অর্ধেকের বেশি ধারাবাহিকেই তিনি খলনায়িকার চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। দর্শকরা মনে করেন, অভিনেত্রীকে পজিটিভ চরিত্র থেকে নেগেটিভ চরিত্রেই বেশি মানায়। ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকে খলনায়িকা চরিত্রে তাঁর অভিনয় উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। ছারখার করে দিয়েছেন অন্যের জীবন, সংসার।
আরও পড়ুন-খলচরিত্রে বাংলার অভিনেত্রীরা
বাংলা টেলিভিশন জগতের আরও একজন জনপ্রিয় খলনায়িকা রীতা দত্ত চক্রবর্তী। তাঁর অভিনীত খল চরিত্রগুলো দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ‘মা’ ধারাবাহিকে পিসির চরিত্রে দেখা গিয়েছিল এই অভিনেত্রীকে। চরিত্রটি নেগেটিভ। সার্থকতা পেয়েছিল অভিনেত্রীর ছোঁয়ায়। দর্শকরা ভয় পেয়েছিলেন। ‘উড়ন তুবড়ি’ ধারাবাহিকেও নেগেটিভ চরিত্রে তিনি দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন।
ছোটপর্দার খল নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম অনন্যা বিশ্বাস। প্রায় প্রতিটি ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় প্রশংসনীয়। ‘টাপুর টুপুর’ ধারাবাহিক থেকে খলচরিত্রে অভিনয় করছেন অনন্যা। তারপর থেকে একের পর এক ধারাবাহিকে তাঁকে দেখা গেছে। ‘কে আপন কে পর’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘বরণ’ ধারাবাহিকে খলনায়িকার চরিত্রে তিনি মাত করে দিয়েছেন। ‘নবাব নন্দিনী’ ধারাবাহিকেও খলচরিত্রে তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে।