অর্পিতা চৌধুরী: মাননীয়া রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে মন্ত্রী অখিল গিরির (Minister Akhil Giri) মন্তব্য অবাঞ্ছিত, আপত্তিকর, অশোভন, অন্যায়। দল ক্ষমা চেয়েছে, মন্ত্রী নিজে ভুল স্বীকার ও দুঃখপ্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী (Mamata Banerjee) প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে মন্তব্যের কড়া নিন্দা করেছেন। অথচ এই সংক্রান্ত সংবাদ
পরিবেশনে মিডিয়ার তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ চরিত্র’ যেভাবে বেআব্রু হল তাও উল্লেখ করার মতো।
১) রাষ্ট্রপতি (Draupadi Murmu) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা হবে। খুবই স্বাভাবিক। সঙ্গত, যথাযথ। কিন্তু তা করতে গিয়ে এর প্রেক্ষিতটাকে আড়াল করার চেষ্টা কেন? এক বয়স্ক মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে লাগাতার কটূক্তি করে গেলেন বিরোধী দলনেতা, বাবার বয়সি লোকের চেহারা নিয়ে খোঁচা দিয়ে মশকরা করলেন, ব্যঙ্গ করলেন সেটা কেন মিডিয়ায় আসছে না? তার মানে কি কারও চেহারা নিয়ে বক্রোক্তি করার ফ্রি-পাশ বিরোধী দলনেতার (Suvendu Adhikari) আছে? মিডিয়া তাই মনে করে? এক ব্যক্তির আপত্তিকর প্রতিক্রিয়া নিয়ে হইচই হবে, আর তার আগের প্ররোচনামূলক ক্রিয়াটি ধামাচাপা দেওয়া হবে, সেটা কেমন নৈতিকতা? প্রতিক্রিয়া নিয়ে ঝড় উঠবে আর তার আগের ক্রিয়াটিকে লঘু করে দেখাতে হবে! এমন কৌশলে কোনও রাজনৈতিক দল চলতে পারে, কিন্তু মিডিয়ার এই একপেশে ভূমিকার কারণ কী? তৃণমূলের কোনও নেতার খারাপ কাজ দেখলে শোরগোল আর বিরোধী দলের নেতা হলে সাউন্ড মিউট?
আরও পড়ুন-অভিষেকের বিরুদ্ধে সুকান্তর FIR-র আর্জি খারিজ হল আদালতে
২) আরেকটি বিষয়। মন্ত্রীর (Minister Akhil Giri) মন্তব্যকে ইস্যু করে বিজেপি নেতারা মেকি আদিবাসীপ্রেম দেখানোর সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করতে চান না, সে না হয় বোঝা গেল! কিন্তু মিডিয়ার দুমুখো নীতি কেন? এক আদিবাসীকন্যা এবং জঙ্গলমহল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে জুতোর নিচে রাখতে চাওয়া মন্তব্যের ধিক্কার কেন নেই? বিরোধী নেতার ঝুটো আদিবাসীপ্রেমের পর্দাফাঁস করতে মিডিয়ার আপত্তি কীসের? মাননীয়া রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে মন্তব্য খারাপ আর আদিবাসীকন্যাকে জুতোর নিচে রাখতে চাওয়া বুঝি প্রকৃত আদিবাসীপ্রেম! সেই কদর্য মন্তব্য নিয়ে মিডিয়ায় কোনও টু উইনডো হয় না কেন? খারাপ কাজের নিন্দা করতেও পক্ষপাত?
৩) খটকা আরেকটি। অখিল গিরির মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরেও স্রেফ রাজনৈতিক লক্ষ্যে ইস্যুটিকে জিইয়ে রাখতে বিজেপি নেতারা নানা কথা বলছেন, হুমকি দিচ্ছেন। আর সেগুলি প্রচার করছে মিডিয়া। অথচ বীরবাহা হাঁসদাকে জুতোর নিচে রাখতে চাওয়ার পরেও আজ পর্যন্ত শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে কোনও দুঃখপ্রকাশ বা নিন্দা শোনা যায়নি কোনও বিজেপি নেতার মুখে। এ-নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলছে না মিডিয়া! এই দ্বিচারিতা কীসের জন্য? এটা নিরপেক্ষ ভূমিকা?
মনে রাখা উচিত, সংবাদ প্রচারের সময় লাগাতার একপেশে ভূমিকা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল সাধারণ দর্শক-শ্রোতার কাছে শেষপর্যন্ত ধরা পড়ে যায়। মানুষকে এভাবে বোকা বানানো যায় না। তবে সার্বিক বিচারে মিডিয়ার একপেশে ভূমিকা গণতন্ত্রের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। তা কাম্যও নয়।