মণীশ কীর্তনিয়া, মালদহ: জনকল্যাণমূলক কাজ না করে কেন্দ্র শুধু রাজনীতি করে। রাজ্যের পাওনা টাকা দেয় না অথচ কেন্দ্রীয় দল পাঠায়। মঙ্গলবার মালদার গাজোল কলেজ মাঠে আবারও রাজ্যের প্রাপ্য নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বিজেপির লাগাতার কুৎসা-অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও গর্জে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দিলেও রাজ্যের সব প্রকল্পই চালু থাকবে। আর এমনও দিন আসবে গোটা দেশকে বাংলার প্রকল্পগুলিকে স্যালুট করতে হবে।
আরও পড়ুন-চুক্তিভঙ্গে কড়া ব্যবস্থা
এদিন গাজোলের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেন। মিজোরামে মৃতদের পরিবারগুলিকেও ২ লক্ষ টাকা করে দেন মঞ্চেই।
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলার প্রকল্পের বকেয়া টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। এই নিয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব গর্ব করে বলেন, তাঁরা বাংলার টাকা আটকে রাখার জন্য আবেদন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের টাকা নিয়ে রাজনীতি করে, প্রকল্পের টাকা দেয় না অথচ কেন্দ্রীয় টিম পাঠায়। মমতার কথায়, রাজনীতি বেশি করে আমাদের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয় না, তার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের টিম পাঠিয়ে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। উন্নাও, উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাতে কোনও ঘটনা ঘটলে ক’টা টিম যায়? মাথায় উকুন হলে মেরে দিতে হয়। বাড়িতে ছারপোকা থাকলে তা মেরে দিতে হয়। আমরা মানুষের মৃত্যুর কথা বলছি না। যাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন, জেনে নিন, বাংলার সবাইকে একদিন আপনাদের সকলকে স্যালুট জানাতে হবে।
আরও পড়ুন-তিন জেলায় ট্যুরিজম সার্কিট
সংখ্যালঘু থেকে ওবিসি স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়ায় মোদি সরকারকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, কেন্দ্র যেসব স্কলারশিপ বন্ধ করছে, তা চালু করেছে রাজ্য সরকার। মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে এনআরসি, সিএএ প্রসঙ্গ তুলে মোদি সরকারকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, মতুয়াদের জন্য আমরা সবটা করেছি। বিজেপি নির্বাচন এলে একটু ভাত খেয়ে বলবে, আমরা মতুয়াদের বন্ধু। এনআরসির নামে সকলকে জেলে বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে, সিএএ-র নামে ভুল বোঝানো হয়েছে। বড়মা বেঁচে থাকার সময় তাঁর চিকিৎসার সব ব্যবস্থাও আমি করেছিলাম। তখন কেউ তাকিয়ে দেখেনি। রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের খতিয়ানও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে জলস্বপ্ন প্রকল্পে মালদহ-উত্তর দিনাজপুর-দক্ষিণ দিনাজপুরের লক্ষ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন-আধার নিয়ে নির্দেশ
এদিন বাংলার নদীভাঙন নিয়েও এদিন সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মালদা-মুর্শিদাবাদ-নদিয়াকে নিয়ে পর্যটন সার্কেল তৈরি হয়েছে। বালুরঘাটে বড় করে এয়ারপোর্ট তৈরি হবে। এদিন এনআরসি-সিএএ নিয়েও সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাজোল কলেজ মাঠে এদিন দাঁড়ানোর জায়গাও ছিল না। বিশাল সামিয়ানা ছাড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ রোদের মধ্যে মাঠেই অপেক্ষা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। তিনি হেলিকপ্টার থেকে নামলে তাঁকে আদিবাসী নৃত্য ও ধামসা-মাদল বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকা বিশাল ধামসা বাজাতে শুরু করেন। তা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। এরপর তিনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দোকানে ঢুকে সবটা ঘুরে দেখেন। কয়েকটি জিনিসও কেনেন। এরপর হাতে একটি পাখা নিয়ে হাওয়া করতে করতে মঞ্চে ওঠেন। গালা এন্ট্রি যাকে বলে। জনতার মাঝে তখন আওয়াজ উঠছে ‘মমতাদি আরেকবার’।
আরও পড়ুন-দখলদারিতে কড়া ব্যবস্থা পুরসভার
এক নজরে মালদহে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা
* গাজোলের দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও চাকরি।
* মিজোরামে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ।
* গাজোলে স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ঘোষণা।
* বালুরঘাটে বড় এয়ারপোর্ট।
* মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া নিয়ে পর্যটন সার্কেল।
* মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর— তিনটে জেলা নিয়ে ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস।
* মালদার আম ও আমসত্ত্ব— দুটোই চাই আমার।
* কেন্দ্র টাকা না দিলেও বাংলার সব প্রকল্প চালু থাকবে।
* বাংলায় কোনও এনআরসি-সিএএ হবে না।
* সংখ্যালঘু, ওবিসিদের দেখবে রাজ্য সরকারই, বজায় থাকবে ঐক্যশ্রী ও মেধাশ্রী।