সংখ্যালঘু স্বার্থে অনন্য এবারের বাজেট

Must read

সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে, ঘাড়ে-গর্দানে এক-হয়ে-যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রাজাবাবুরা এতদিন যে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকেই স্বীকার করতেন না, আজ তাঁরাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে গিয়েছেন প্রান্তিকের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন সংখ্যালঘু-কল্যাণে কীভাবে কাজ করা যায়। কীভাবে তাঁদের পাশে টানা যায়। লিখছেন ফারুক আহমেদ

বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা। কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলন চলছে আজও কৃষি বিল বাতিল করতে এগিয়ে আসছে না বিজেপির সরকার। এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তারা। ওই স্বপ্ন সফল করতে তারা হাত বাড়িয়েছিল বাংলার দিকে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। বাংলার মানুষের রায়ে বিজেপি বড় চোট পেয়েছে।

আগামীতে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে। কারণ, শুধু সংখ্যাগুরুর মনোরঞ্জন নয়, সংখ্যালঘুদেরও উন্নয়নের যজ্ঞে শামিল করতে রাজ্যে এক অনবদ্য বাজেট পেশ করেছে মা- মাটি-মানুষের সরকার।
২০২৩-২৪ বর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৫১১৬.৯৯ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ বর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ৫৫৩০.৬৫ কোটি টাকা।

বাজেট ২০২৪-২৫ সংখ্যালঘু বরাদ্দে দেখা যাচ্ছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪৭ কোটি ৯৮ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। আন এডেড মাদ্রাসার সহায়তায় জন্য ১০০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ পাহাড়িয়া মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের জন্য ১৯ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। রাজ্য হজ কমিটির জন্য ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩ হাজার টাকা। ওয়াকফ বোর্ডের জন্য ১৬২ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের জন্য ৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের জন্য ৭ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা।

মাদ্রাসায় ছাত্রীদের উৎসাহ ভাতা ২০ কোটি টাকা। মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য ১০৫ কোটি টাকা। জেলায় সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের হস্টেল নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩ হাজার টাকা। সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের ট্যালেন্ট সাপোর্ট প্রকল্পে ১২০১ কোটি টাকা। আন এডেড মাদ্রাসায় বিজ্ঞান সামগ্রীর জন্য ১০০ কোটি টাকা। মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য ১০৫ কোটি টাকা। সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের সাইকেল বিলির জন্য ২২০ কোটি টাকা। উর্দু ভাষার প্রসারে ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কারমাইকেল ও বেকার হস্টেল সংস্কার ও বর্ধিতকরণের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের জন্য ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়নের জন্য ১৬ কোটি টাকা। সংখ্যালঘু সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্র নির্মাণে ২০ কোটি টাকা। সত্যি বলতে কি সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন খাতে সার্বিক কল্যাণের জন্য জনমুখী সার্থক বাজেট পেশ করেছে রাজ্য সরকার।

আরও পড়ুন- পাঞ্জাব-চণ্ডীগড়ে একাই লড়বে আপ, লোকসভা ভোটে জোট নিয়ে ঘোষণা কেজরিওয়ালের

২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজ্যে বাজেটে সংখ্যালঘু খাতে বরাদ্দ বাড়ল চারশো কোটি টাকারও বেশি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫,৫৩০.৬৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সংখ্যালঘু খাতে বরাদ্দ ছিল ৫১১৬.৯৯ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থ বর্ষের বাজেটে বরাদ্দের জন্য দাবিসমূহের অন্তর্গত দফতরওয়ারি প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ পুস্তিকায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের সবিস্তার তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, ওবিসি ও সংখ্যালঘু কল্যাণ খাতের আওতায় দরগাহ কমিটির তত্ত্বাবধানে দরগাহ শরিফের পরিকাঠামো খাতে ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রধান খাতে ২০২৩-২৪ সালের সংশোধিত বাজেটে ৪৫ কোটি ১১ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০২৪-২৫ বর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৮ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের জন্য ৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের জন্য এক কোটি ৩৭ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা, ডিরেক্টরেট অফ মাদ্রাসা এডুকেশনের জন্য ১ কোটি ৩ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা, জেলায় সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের হস্টেল নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩ হাজার টাকা। সরকার পোষিত মাদ্রাসা বা স্কুলের হস্টেলে থাকা ছাত্রছাত্রীদের ভাতা হিসেবে ১৪ কোটি টাকা, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের ট্যালেন্ট সাপোর্ট খাতে ও কম্পিউটারাইজেশনের জন্য ১২০১ কোটি টাকা, প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের স্কুল ইউনিফর্ম, জুতোর জন্য ৮০ কোটি টাকা, কলকাতা মাদ্রাসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা, মাদ্রাসার ছাত্রীদের উৎসাহ ভাতা খাতে ২০ কোটি টাকা, উর্দু ভাষার প্রসারের জন্য ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, মাদ্রাসা ভবনের সংস্কারের জন্য ১২ কোটি টাকা, জৈন সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের বৃত্তির জন্য ১০ লক্ষ টাকা, আন এডেড মাদ্রাসায় বিজ্ঞান সামগ্রীর জন্য ১০০ কোটি টাকা, পশ্চিমবঙ্গ পাহাড়িয়া সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ১৯ লক্ষ ৬ হাজার টাকা, পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ডের জন্য ১৬২ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের জন্য ৭ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা, বিত্ত নিগমকে শক্তিশালী করতে আরও ২ কোটি টাকা, ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়নের জন্য ১৬ কোটি টাকা, সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ১৫০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের সাইকেল দেওয়ার জন্য ২২০ কোটি টাকা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটির জন্য ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩ হাজার টাকা, মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য ১০৫ কোটি টাকা, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের জন্য ৭৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, পরিত্যক্ত মুসলিম মহিলাদের আবাসন সহ বিভিন্ন খাতে ৩২০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্র নির্মাণে ২০ কোটি টাকা।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলার সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীকে পিছনে ফেলে রেখে সংখ্যালঘু উন্নয়নে অফুরন্ত কাজ করছেন বাংলার সেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকাল মানুষের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তরিক হয়ে যে সব কাজ ইতিমধ্যেই করেছেন তা ইতিহাস রচনা করেছে। ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে জননেত্রী যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, সেটা সতত অনুসরণযোগ্য।

Latest article