একদিন দল বেঁধে ক’জনে মিলে যদি পুজোয় ক’খানা সিনেমাই না দেখা হল তো কিসের পুজো উদযাপন! খাওয়াদাওয়া, দেদার আড্ডা, প্যান্ডেল হপিং-এর পাশাপাশি এ-বছরের পুজোয় রিলিজ হওয়া বাংলা সিনেমাগুলি অন্তত দেখে আসাই যায়। কারণ বেশ কয়েক বছর পর পুজোয় তারকাদের এমন মহাসমারোহ। শুধু তাই নয়, ছবির বিষয়-বৈচিত্রও চোখে পড়ার মতো। তাই হাতে যেটুকু সময় আছে নষ্ট না করে আজই বুক করে ফেলুন শো-এর টিকিট। পছন্দ আপনার, তালিকা আমাদের!
আরও পড়ুন-সেদিনের সেই ভালবাসার গান
কাছের মানুষ
পরিচালনা : পথিকৃৎ বসু
প্রযোজনা : দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চারস
অভিনয় : প্রসেনজিৎ
চট্টোপাধ্যায়, দেব,
ইশা সাহা
এই প্রথম বাংলার দুই সুপারস্টার এক ছবিতে। ছাপোষা সাধারণ এক যুবকের চরিত্রে দেব আর প্রসেনজিৎ হলেন ‘এক ইনসিওরেন্স কোম্পানির ছোট্ট এজেন্ট’! মা অসুস্থ। এই অবস্থায় অপরাধবোধ আর অবসাদে ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া দেবের সঙ্গে দেখা প্রসেনজিতের। মরতেই যখন চাইছে তখন সেই মরাটা ফ্রুটফুল হোক। কাজে লাগুক! তেমনই প্রস্তাব আসে প্রসেনজিতের তরফে। তারই পরামর্শে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য একটা ডেথ বেনিফিট ইনসিওরেন্স পলিসি করায় দেব। কিন্তু পলিসির শর্ত একটাই। বিমার টাকা পেতে গেলে মরতে হবে! দেব তাতেও রাজি। এরপর শুরু হয় প্ল্যানিং। আত্মহত্যা হলে তো হবে না। মৃত্যু হতে হবে দুর্ঘটনায়। তাই তার প্ল্যান ছকা শুরু হয়। দুর্ঘটনা কোথায় ঘটবে! রেললাইনে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে, বহুতল থেকে মাটিতে পড়ে, রাজপথে বাসের তলায় নাকি জলে ডুবে। চেষ্টা চলতে থাকে একের পর এক!
আরও পড়ুন-দুর্গাপুজো এবং একটি বেতার অনুষ্ঠান
এই মৃত্যুর নামাবলির মধ্যেই জীবনের সুর নিয়ে আসে ইশা। ইশা সাহা। গত পুজোয় এই ইশাই ছিলেন দেবের সঙ্গী। গোলন্দাজ-এ। এ ছবিতে জীবন থেকে মুখ ফেরানো দেবের কাছে অক্সিজেন নিয়ে আসে ইশা। একসঙ্গে পথ চলার স্বপ্ন দ্যাখে। স্বপ্ন দেখায় দেবকেও। কিন্তু মৃত্যুও যে হাতছানি দিয়ে ডাকে। জীবন-মৃত্যুর এই দোলাচল পুরো ছবি জুড়েই। আসলে ‘মৃত্যু’ এখানে রূপক। এর মাধ্যমে মানুষ চেনাই আসল উদ্দেশ্য। কাছের মানুষ, কতটা আপন, দূরের মানুষই বা কেমন দূরের তা ভাবাবে দর্শককেও।
আরও পড়ুন-পুজোর ছবি
বিজয়া দশমী
পরিচালনা : শৌভিক দে
প্রযোজনা : দৃষ্টি এন্টারটেইনমেন্ট
অভিনয় : রজতাভ দত্ত, আরিয়ান ভৌমিক, গুলশনরা খাতুন
দৃষ্টি এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত ‘বিজয়া দশমী’ মূলত ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার ছবি। একটি খুনকে কেন্দ্র করে গল্প শুরু হয়। আচমকা শহরে একের পর এক মধ্যবয়স্ক মহিলা খুন হতে থাকে। এরই মাঝে মহালয়ার দিন একটি ছেলে তার মাকে পৌঁছতে যায় তার কাকিমার বাড়ি। কিন্তু তারপরেই মাকে হারিয়ে ফেলে সে। মায়ের খোঁজ পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়। সেখানে বর্মন নামে এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে দেখা হয় তার যে এই খুনের কেসগুলি তদন্ত করছে। তদন্তে উঠে আসতে থাকে একের পর এক হাড় হিম করা তথ্য। কিন্তু মাকে কি সে আদৌ খুঁজে পাবে? সিরিয়াল কিলিংগুলির সঙ্গে কি তার মায়ের অন্তর্ধানও জড়িয়ে? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ক্লাইম্যাক্সে। আর ক্লাইম্যাক্সে এমন কিছু ট্যুইস্ট আছে যা দর্শক কল্পনাও করতে পারবে না। ছেলেটির চরিত্রে অভিনয় করেছে আরিয়ান। আর রগচটা কিন্তু মজার এক পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আছেন রজতাভ দত্ত। এছাড়াও ছবিতে আছেন একঝাঁক নতুন অভিনেতা। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন প্রতীক কুণ্ডু ও পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। থ্রিলার ছবি বাংলায় কমই হয়, তাই ‘বিজয়া দশমী’ দর্শক উপভোগ করবেন আশা করা যায়।
আরও পড়ুন-বাংলা সিনেমায় দুর্গাপুজো
বৌদি ক্যান্টিন
পরিচালনা : পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
প্রযোজনা : শ্যাডো ফিল্মস
অভিনয়ে : শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী
পেশায় শিক্ষিকা পৌলোমী। কিন্তু নেশা রান্না। রান্না নিয়ে ভাবতে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভীষণ ভালবাসে। পৌলোমীর হাতের রান্নায় মুগ্ধ পরিবার থেকে পরিজন সকলে। এমনকী স্বামীর সহকর্মীরাও। প্রচুর প্রশংসা পায় রোজ। কিন্তু পৌলোমী যখন নেশাটাকেই পেশা করতে চায় কাজটা সহজ হয় না। আর সহজ হয় না বলেই পৌলোমী হাল ছাড়ে না। যাবতীয় আপস, অশান্তি, নিয়ম এবং প্রাচীনতার বেড়া টপকে নিজের মর্যাদা আদায়ের লড়াইটা যে নিজেকেই করতে হয় এবং লেগে থাকলে যে লড়াইটা লড়ে নেওয়া যায়, পৌলোমী তা দেখিয়ে দেয়। আর এটাই ছবির ইউএসপি। শুধু মানুষের মন ছোঁয়া নয়, তাদের ভেতর ভেতর কোথাও এগিয়ে দেওয়া। বিয়ে মানেই আপস, শ্বশুরবাড়ি মানেই মেনে কিংবা মানিয়ে নেওয়া আর হাতে রইল পেন্সিল-এর মতো নিজস্ব হা-হুতাশ, তা আর নয়।
আরও পড়ুন-এবার পুজো মাতাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর অ্যালবাম
এ-ছাড়া আরও একটা বিষয় নিয়ে সোজা-সাপ্টা প্রশ্ন তোলা হয়েছে ছবিতে। বাঙালি ব্যবসা বোঝে না বা পারে না, অন্য প্রদেশের মানুষেরা যেমন এ ধারণায় বিশ্বাসী তেমনই শিক্ষিত বাঙালি শ্রেণির এক অংশও ব্যবসা করাকে একটু খাটো চোখেই দ্যাখে। চিরাচরিত এ ধারণাও ভাঙতে চায় পৌলোমী। সরাসরি প্রশ্ন তোলে, “ব্যবসা করলে কি বাঙালির জাত যায়?” আর সব তির্যকতা ফুৎকারে উড়িয়ে হাতে হাতা-খুন্তি নিয়ে নিজের প্যাশনকেই প্রফেশন বানাতে এগিয়ে যায়। খোলে, ‘বৌদি ক্যান্টিন’।
এই গোটা গল্পটি পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ভাবনায় আসার কারণ একজন নারীই! ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান শেফ আসমা খান। আসমার জীবন কাহিনির আধারেই তৈরি হয়েছে ‘বৌদি ক্যান্টিন’। জন্মসূত্রে বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বর্তমানে আসমা লন্ডনের একাধিক ভারতীয় রেস্তোরাঁর মালিক। ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর গল্প লিখেছেন অরিত্র। সব মিলিয়ে মেয়েদের মন ছোঁয়ার মতো এক ছবি ‘বৌদি ক্যান্টিন’।
আরও পড়ুন-আমার বলার কিছু আছে
কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন
পরিচালনা : ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রযোজনা : এসভিএফ
অভিনয় : আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, ইশা সাহা
এই নিয়ে তৃতীয় দফায় সোনাদা গুপ্তধন খুঁজতে বেরোবে। সঙ্গে আগের মতোই আবির আর ঝিনুক। রহস্য, রোমাঞ্চ, অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে সোনাদা-আবির-ঝিনুকের রসায়ন আর সেই সঙ্গে ইতিহাসের অনুসন্ধান সব মিলিয়ে এ বছর পুজোর জন্য জম্পেশ ককটেল বরাদ্দ করেছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’, ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ দর্শক পছন্দ করেছেন দারুণ রকম। প্রায় আড়াই বছর পর সোনাদার ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ অভিযানও যে তাঁদের পছন্দ হবে আশা করাই যায়। কারণ আগের দুটি ছবির থেকে লুক, ফিল, গ্র্যাঞ্জার সব দিক থেকেই এই ছবি আরও একটু বড় মাত্রায়।
বাংলার প্রথম সার্বভৌম রাজা শশাঙ্কের রাজধানী ছিল বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ। আজও প্রচুর মিথ প্রচলিত অঞ্চলে। শুধু মিথই নয়, হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণ কাহিনিতে কর্ণসুবর্ণের বিবরণ রয়েছে, নানাবিধ উল্লেখ আছে। ঐতিহাসিক এই প্রেক্ষাপটকে ধরেই কাহিনি রচনা করেছেন ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মাটির নিচে গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া ও তা উদ্ধারের অভিযানে যাবে সোনাদা। কর্ণসুবর্ণের ঐতিহাসিক সৌধ, অতীতের অস্তিত্ব, গা-ছমছমে জঙ্গল, শত্রুদের প্রতিকূলতা সবকিছুর মুখোমুখি হয়ে ও মোকাবিলা করেই সোনাদা বাংলার গচ্ছিত সম্পদ উদ্ধার করবে! গত বছর ৩১ ডিসেম্বর ছবির ঘোষণা করেছিলেন ধ্রুব। তারপর চুটিয়ে শ্যুটিং করেছেন মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গের আরও নানা জায়গায়। সোনাদার ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁর কাছে ভীষণ স্পেশ্যাল। সোনাদাকে দিয়েই ধ্রুবর বাংলা ছবির জগতে পা দেওয়া। রীতিমতো রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা জার্নি বলা যায় যা ছোট থেকে বড় সবাইকেই পুজোর আবহে ভরপুর বিনোদন জোগাবে।
আরও পড়ুন-ধর্ম যার যার, উৎসব সবার স্লোগানের জীবন্ত উদাহরণ এই তিলোত্তমার বুকে…
মিশন এভারেস্ট
পরিচালনা : দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রযোজনা : ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন প্রাইভেট লিমিটেড
অভিনয় : চান্দ্রেয়ী ঘোষ
‘মিশন এভারেস্ট’ এভারেস্ট-এ টিকে থাকার গল্প। বাস্তব কিছু চরিত্রের সঙ্গে কাল্পনিক চরিত্রদের মিলিয়ে সাজানো হয়েছে ছবির গল্প। পর্বতারোহী সুনীতা হাজরার কাহিনি আছে এ ছবিতে, যদিও এটি তাঁর বায়োপিক নয়। যুগ যুগ ধরে এভারেস্ট সারা পৃথিবীর কাছে এক বিস্ময়। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ যান এর শিখর জয় করতে। সফলতার গল্পগুলি মানুষ জানতে পারেন কিন্তু ব্যর্থতার কাহিনিগুলো থেকে যায় গোপনে। সব মিলিয়ে আনন্দ, যন্ত্রণা, খুশি, হতাশার নানা ঘটনা এভারেস্ট ঘিরে প্রচলিত। ‘মিশন এভারেস্ট’-এ এরকম নানা অকথিত কাহিনিই গল্পের মোড়কে পরিবেশন করা হয়েছে। পুজোর সময় সম্পূর্ণ অন্য স্বাদের এক গল্প দেখা যাবে এই ছবিতে।
সব মিলিয়ে পুজোয় বক্স অফিসে এ-বছর বাংলা ছবির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।