প্রতিবেদন : বাংলার আকাশ আরও একবার সবুজ হল। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বাংলা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই আছে। বাংলা তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই ছিল, আছে, থাকবে। একদিকে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের রামধনু জোট। কেন্দ্রের এজেন্সি রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গায়ের জোরে বাংলার প্রাপ্য আটকে রাখা। আদালতের ভিন্ন ধরনের রায়। রাজ্যপালের নাটক।
আরও পড়ুন-বিরোধীরা নেই, চা-বলয়ে ফুটল জোড়া ফুল
এক শ্রেণির মিডিয়ার লাগাতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসিত অপপ্রচার। মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে তাই একসঙ্গে এতগুলি ফ্যাক্টরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই বিপুল জয় হাসিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই জয়ের জন্য নেত্রী মঙ্গলবার রাতে বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, গ্রাম-বাংলায় বিকশিত জোড়াফুল। আপনাদের অভূতপূর্ব সমর্থন, অকুণ্ঠ ভালবাসা, আশীর্বাদে আমি তথা আমাদের গোটা তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার কৃতজ্ঞ। এই জয় আমার প্রণম্য গণদেবতার জয়। এই নির্বাচন আবারও প্রমাণ করল, বাংলার হৃদয়ে তৃণমূল কংগ্রেসেই আসীন। বাংলাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আত্মবিশ্বাসী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি জনসভায় বারবার বলেছেন, বিজেপি যখন ইডি-সিবিআইয়ের ভরসায় রাজনীতি করছে।
আরও পড়ুন-এই ফল আগামীর পথনির্দেশক: ডাঃ শান্তনু সেন
তাদের দোসর সিপিএম-কংগ্রেসকে নিয়ে আদালতের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তখন তৃণমূল কংগ্রেস রয়েছে মাঠে-ময়দানে। আছে মানুষের দরজায়। তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে মানুষ আছে। মানুষই শেষ কথা বলবে। মাথা নত করতে হলে মানুষের কাছে করব। কোনও বহিরাগত শক্তি বা দিল্লির কাছে মাথা নত করব না। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বলা এই কথাগুলি অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের এই বিপুল জনাদেশ বলে দিচ্ছে, বাংলার মানুষ রামধনু জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আবারও মানুষ আশীর্বাদ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে।
আরও পড়ুন-বিজেপি রাজ্য সভাপতির দত্তকগ্রাম হাতছাড়া
এই নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাংলা ভাগের চক্রান্ত, বাংলাকে অশান্ত করে তোলার অপচেষ্টা, জাতিতে-জাতিতে বিভেদ সৃষ্টির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মানুষ। লক্ষণীয় হল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে গোর্খাল্যান্ডের আঙুর সামনে ঝুলিয়ে যে পাহাড় থেকে বছরের পর বছর ভোট নিয়েছে বিজেপি, সেখানেও এবার ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে তারা। দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের মানুষ ভরসা রেখেছেন অনীত থাপার বিজিপিএম-তৃণমূল জোটের ওপর। যে উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপির এত আস্ফালন সেই উত্তরের জেলাগুলি মুখ ফিরিয়েছে বিজেপির থেকে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের জয়জয়কার। বাম-বিজেপি সেখানে খুন-জখম-বোমাবাজি-গুলি-বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতী এনে তাণ্ডব— কী না করেছে। নিট ফল শূন্য।
আরও পড়ুন-অভিষেককে অপমানের জবাব
উত্তরের চা-শ্রমিক থেকে আদিবাসী সমাজ, যারা একটা সময় বিজেপির কথায় ভুলে তাদের ভোট দিয়েছিল, তারাও এবার তৃণমূল প্রার্থীদের ঢেলে ভোট দিয়েছে। শীতলকুচি সহ উত্তরের একাধিক সীমান্তবর্তী জায়গায়, যেখানে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে নিরীহ গ্রামবাসীর, সেখানেও মানুষ বন্দুকের বুলেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ব্যালটকেই হাতিয়ার করেছে। এমনকী দিলীপ ঘোষের বাড়ি এলাকার বুথেও নির্দলকে হারিয়ে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী। মালদা-মুর্শিদাবাদে মানুষ কংগ্রেসকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। অধীর চৌধুরী নিজের গড় সামলাতে ব্যর্থ। এত নাটক করেও মুর্শিদাবাদের মানুষের মন জয়ে ব্যর্থ। বাম-বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলকে শেষ করতে গিয়ে নিজের দলেরই কবর খুঁড়েছেন তিনি। দুই দিনাজপুরে তৃণমূলের ফল বলে দিচ্ছে, কালিয়াগঞ্জের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের তাণ্ডব মানুষ মেনে নেয়নি। বীরভূমে দলের সাংগঠনিক শক্তি ও মানুষের সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জয়জয়কার হয়েছে।
আরও পড়ুন-বাইশ বছর পর পাহাড়ে গণতন্ত্রের আর এক পথ চলা শুরু হল. পাহাড়ে তৃণমূল জোটের কাছে পরাস্ত বিজেপি
জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাদা নজর ও ধারাবাহিক উন্নয়নের সুফল পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পুরুলিয়ার মতো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে এখন কংগ্রেস বলে কিছু নেই। মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে। বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুরেও একই অবস্থা। পূর্ব মেদিনীপুরেও মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঝাড়গ্রামে তো বিরোধীরা দাঁতটুকুও ফোটাতে পারেনি। একটি পঞ্চায়েতও পায়নি তারা। আদিবাসী সমাজ মুখ ফিরিয়েছে বিজেপির থেকে। নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের জয়জয়কার। এছাড়া হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমানেও শুধুই তৃণমূল। বিশেষ করে সিঙ্গুরে তৃণমূলের জয়ের ধারা অব্যাহত আছে। হুগলির ফুরফুরা এলাকার মানুষ সর্বাত্মক ভাবে তৃণমূলের পক্ষে থেকেছে। এখানকার ২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৮টি পেয়েছে তৃণমূল। নওশাদ সিদ্দিকির ভিন্ন রাজনীতি যে ফুরফুরা শরিফ ও এ অঞ্চলের মানুষ মেনে নেননি তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের রায়ে। মতুয়া গড়েও ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-ন্যাটোয় সুইডেনের যোগদানে কোনও আপত্তি নেই তুরস্কের
এমনকী শান্তনু ঠাকুরের বুথেও হেরেছে বিজেপি। নবজোয়ার কর্মসূচির সময় ঠাকুরবাড়িতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে কুৎসিত আচরণ করা হয়েছে তার জবাব ব্যালটেই দিয়েছেন মতুয়ারা। সিপিএমের উত্থান হচ্ছে বলে যতই কমরেডরা টিভির পর্দায় চিল-চিৎকার করুক, বাংলার মানুষ হার্মাদদের অত্যাচার ভোলেনি। তাই বিজেপি-কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যতই তারা সন্ত্রাস করেছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের খুন করেছে, ব্যালট ছিনতাই করেছে, পুকুরে ফেলেছে, আগুন জ্বালিয়েছে, গ্রাম বাংলার মানুষ তার হিসেব বুঝে নিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকেই তারা ভরসা করে। তাই মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে বাংলার মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এক শ্রেণির মিডিয়ার লাগাতার অপপ্রচার-বিরোধীদের কাঙ্ক্ষিত মৃতদেহ সত্ত্বেও আটকানো যায়নি তৃণমূল কংগ্রেসকে। এই বিপুল জয় নিশ্চিত ভাবে ভিত গড়ে দিল ২০২৪-এর লোকসভার লড়াইয়ের।/