ছবি সময়ের কথা বলে। ধরে রাখে মুহূর্ত। কিছু কিছু ছবি মনকে স্মৃতিমেদুর করে তোলে। কখনও হাসায়। কখনও কাঁদায়। চিত্রসাংবাদিক বন্ধুরা সারাদিন ঘুরে বেড়ান। ক্যামেরা কাঁধে। সময় বিশেষে কথা বলে ওঠে তাঁদের ক্যামেরা। মুহূর্ত লেন্সবন্দি হয়। এইভাবেই মুহূর্তে বাঁচেন তাঁরা। তাঁদের তোলা ছবি আলোকিত হয় কাগজের পাতায়। পৌঁছে যায় হাতে হাতে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে জোর চর্চা হয়।
আরও পড়ুন-পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র ছাড়াই আজ উদ্বোধন, ফের বিতর্কে কল্যাণীর এইমস
বিভিন্ন গণমাধ্যমের চিত্রসাংবাদিকদের তোলা বেশকিছু ছবি একসঙ্গে দেখার সুযোগ হল। ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি। কলকাতার ধর্মতলায়, সিধু কানু ডহরে। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে। শিরোনাম ‘চিত্র যেথা ভয়শূন্য’। আয়োজনে শহরের চিত্রসাংবাদিকরা। রাখা হয়েছিল ১১৫ জনের প্রায় ২৫০টি ছবি। মূলত প্রকাশিত। কিছু ছবি অপ্রকাশিত। মাদার টেরেজা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ধোনি, কোহলি থেকে মেসি, সবার ছবি শোভা পেয়েছে। নিউজ ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে ফিচার ফটোগ্রাফি, খেলা-বিনোদন, ছিল সব ধরনের ছবি। ফ্রেমবন্দি এক-একটি ছবি যেন আশ্চর্য রকমের জীবন্ত, প্রাণবন্ত। প্রতিটি ছবির রয়েছে নিজস্ব ভাষা। বলে দিতে পারে বহু না-বলা কথা।
আরও পড়ুন-আন্তর্জাতিক কেক উৎসব
প্রথম বছর। ফুটপাথের খোলা জায়গায় স্বল্প পরিসরে আয়োজন। আগামী দিনে এই প্রদর্শনী আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। কলকাতা প্রেস ফটোগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনে পক্ষে জানালেন পিন্টু প্রধান। তিনি বললেন, ‘‘যাঁদের ছবি আছে, তাঁরা মূলত কলকাতার চিত্র সাংবাদিক। কয়েকজন বাইরেরও আছেন। কলকাতার এই জায়গাটি মূলত হকাররাই ব্যবহার করেন। করোনার সময় থেকে আমরা কয়েকজন চিত্রসাংবাদিক, যাঁরা বিভিন্ন মিডিয়া হাউসের সঙ্গে যুক্ত, এখানে বসতে শুরু করি। ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে আমরা এখানেই শুরু করি সরস্বতী পুজো। পরের দু’বছরও হয়েছে। ২০২৪-এর সরস্বতী পুজোর আগে সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করলাম, নিজেদের তোলা ছবি নিয়ে যদি একটা প্রদর্শনী করা যায়, কেমন হয়? সম্মত হন সবাই। অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। চেয়েছিলাম সাধারণ মানুষ আমাদের ছবি দেখুন। এখানে বহু পথচারী দাঁড়িয়ে ছবিগুলো দেখেছেন। মতামত দিয়েছেন। যদিও অনেকেই এইভাবে ছবি দেখতে অভ্যস্ত নন। তবু প্রায় প্রত্যেকেই খুশি। কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন, আগামী বছর হবে তো? এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি। সবার ছবি আমরা নিতে পারিনি। পরের বছর চেষ্টা করব আরও বেশি জনের ছবি এখানে রাখতে। জেলার চিত্রসাংবাদিকদেরও যুক্ত করতে চাই। পুলিশ, প্রশাসন, পুরসভা আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’’
আরও পড়ুন-সহজ আশ্রমে মহিলাদের ডোকরা ওয়ার্কশপ
প্রথমদিন ছবির টানে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ-সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘‘চিত্রসাংবাদিকরা ফুটপাথের উপর ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। এখানেই হচ্ছে মা সরস্বতীর পুজো। আকর্ষণীয় সমস্ত ছবি রয়েছে। কোনওটির নিউজ ভ্যালু দারুণ। কোনওটির আবার ছবি হিসেবে গুণমান অসাধারণ। ছবিগুলো সময়ের দলিল, ইতিহাসের দলিল। প্রদর্শনীটি দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে।’’ এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনিও আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
মুম্বইয়ের প্রবীণ চিত্রসাংবাদিক পলাশরঞ্জন ভৌমিক। প্রদর্শনীটি দেখে বললেন,‘‘অল্প পরিসরে অনেকগুলো ছবি দেখার সুযোগ হল। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই পেশাদার, নামী চিত্রসাংবাদিক। বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার। সব থেকে ভাল লাগল, কোনও গ্যালারিতে নয়, খোলা জায়গায় হয়েছে এই আয়োজন। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ছবিগুলো পৌঁছে যেতে পারল। বইমেলাতেও এইরকম প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে। শুধুমাত্র কলকাতার নয়, রাখা যেতে পারে সারা বাংলার চিত্রসাংবাদিকদের হাজার হাজার ছবি। সেটা একটা স্মরণীয় ঘটনা হবে বলে আমার বিশ্বাস।’’
আরও পড়ুন-সন্দেশখালি একনজরে, রাজ্য সরকার ও দলের পদক্ষেপ
অনিরুদ্ধ পাল জানালেন,‘‘আমি অ্যামেচার ফটোগ্রাফার। ছবি তুলতে ভালবাসি। প্রদর্শনীটা দেখলাম। খুবই সুন্দর হয়েছে। আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুর ছবিও চোখে পড়ল। সেই যুগ এবং এই যুগের ছবির মেলবন্ধন ঘটেছে। আমি ন্যাচারাল ছবি ভালবাসি। তেমনই বেশ কিছু ছবি এখানে দেখতে পেলাম।’’
চিত্রসাংবাদিকদের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন কয়েকজন চিত্রশিল্পী। তাঁরা ছবি এঁকেছেন। তাঁদের কাজ দেখেছেন পথচলতি মানুষজন। চিত্রশিল্পী কুশল মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমরা ছবি আঁকি। ক্যানভাসে রং-তুলির মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রকাশ করি। এখানে মিলিত হয়েছি চিত্রসাংবাদিকদের সঙ্গে। তাঁরা তাঁদের প্রদর্শনীতে আমাদের শামিল করেছেন। ঘটছে ভাবনার আদান-প্রদান। বহু সাধারণ মানুষ, পথচারী দুই ধরনের ছবি দেখার সুযোগ পেলেন। তাঁদের এবং আমাদের মনের মধ্যে অন্যরকম ভাললাগার জন্ম হল।’’
সুধীর উপাধ্যায়, রনি রায়, হিল্টন ঘোষ এবং প্রদীপ আদক— প্রদর্শনীতে চারজন প্রয়াত চিত্রসাংবাদিককে স্মরণ করা হয়েছে। অভিনব আয়োজনের নেপথ্যে চিত্রসাংবাদিকেরা থাকলেও, এমন একটি কর্মকাণ্ড সফল হত না ফুটপাথের দোকানের তিন মালিক না থাকলে। যে জায়গায় এই প্রদর্শনীটি আয়োজিত হয়েছে, সেখানে ছিল ধোসা, শরবত এবং ফলের দোকান। প্রদর্শনীর জন্য তিন ছবি-প্রেমী দোকান মালিক জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি মহানগরের চিত্রসাংবাদিকরা।
আরও পড়ুন-বিধান পরিষদের প্রশ্নের মুখে মন্দিরে কর বসানোর বিল
কমিক্স ইন বেঙ্গল
শতবর্ষ পেরিয়েছে বাংলা কমিক্স। বহু আগেই। ছবিতে গল্প পড়তে ভালবাসেন আট থেকে আশি। তাই রমরমিয়ে বিক্রি হয় কমিক্সের বই। তবে কমিক্স নিয়ে প্রদর্শনী এতদিন চোখে পড়েনি। সেই অভাব পূরণ করল ‘কমিক্স কালচার কালেক্টিভ’। এই গোষ্ঠী কাজ করছেন বাংলা কমিক্সের ইতিহাস, যাত্রাপথ, পরিবর্তন, বিবর্তন নিয়ে। নেপথ্যে রয়েছেন বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়, পিনাকি দে, দেবাশিস গুপ্ত, ঋতুপর্ণ বসু, স্বাগত দত্ত বর্মণ। তাঁদের উদ্যোগে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি-র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি গ্যালারিতে চলছে ‘কমিক্স ইন বেঙ্গল’ শীর্ষক প্রদর্শনী। শুরু হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন দেবাশিস দেব, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, দিলীপ দাস, অধ্যাপক অভিজিৎ গুপ্ত প্রমুখ। প্রতিদিন বহু মানুষ আসছেন। ঘুরে দেখছেন। প্রদর্শনীর পাশাপাশি আয়োজিত হয়েছে আলোচনাসভা। সন্দেশ-এর কমিক্স নিয়ে একটি আলোচনাসভায় অংশ নিয়েছেন সন্দেশের সম্পাদক, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায় এবং সাহিত্যিক দেবাশিস সেন।
১৯২১ সালে সন্দেশ পত্রিকায় একটি কমিক্স এঁকেছিলেন সুখলতা রাও। শিরোনাম ‘যেমন কর্ম তেমনি ফল’। ১৯২২ সালে সন্দেশ-এ প্রকাশিত হয়েছিল সুকুমার রায়ের কমিক্স ‘বুঝবার ভুল’। দীর্ঘদিন মনে করা হয়েছে, এইগুলোর মধ্যে দিয়েই বাংলা কমিক্সের সূচনা হয়েছে। পরে জানা গিয়েছে, তারও আগে, ১৮৯৮ সালে, মৌচাক এবং মুকুল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে দুটো কমিক্স। যদিও শিল্পীদের নাম অজানা। মনে করা হচ্ছে, এইগুলোই বাংলা কমিক্সের আদি রূপ। তার আগে কোনও বাংলা কমিক্সের হদিশ পাওয়া যায়নি। প্রদর্শনীতে কমিক্সগুলো দেখার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে চাকরির আকাল ডিগ্রি পুড়িয়ে আত্মঘাতী তরুণ
কয়েকটি বিভাগ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। যেমন, প্রারম্ভ বিভাগ, মজার কমিক্স, অ্যাডভেঞ্চার ও কল্পবিজ্ঞান, ডিটেক্টিভ ও হরর, ঐতিহাসিক, সাহিত্যকেন্দ্রিক, জীবনীভিত্তিক, পুরাণ ও রূপকথা, বিজ্ঞাপনের কমিক্স, অনুবাদ, সামাজিক বার্তামূলক কমিক্স। প্রায় ৫০ জন শিল্পীর কমিক্স প্রদর্শিত হচ্ছে। তাঁরা হলেন সুখলতা রাও, সুকুমার রায়, সুবিনয় রায়, সূর্য রায়, নারায়ণ দেবনাথ, ময়ূখ চৌধুরী, তুষার চট্টোপাধ্যায়, শৈল চক্রবর্তী, শক্তিময় বিশ্বাস, রেবতীভূষণ, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, কাফি খাঁ, প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল ঘোষ, অলয় ঘোষাল, সুফি, বিমল দাস, গৌতম কর্মকার, দিলীপ দাস, উজ্জ্বল ধর, ভার্গব চৌধুরী, জুরান নাথ, অরবিন্দ দত্ত, প্রমথ সমাদ্দার, পল্লব পুততুন্ড, অজিত গুপ্ত, অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী, ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য, বিজন কর্মকার, সুযোগ বন্দোপাধ্যায়, স্বপন দেবনাথ, সম্বরণ দাস, সর্বজিৎ সেন, শঙ্খ ব্যানার্জি, শান্তনু মিত্র, গৌতম বেনেগাল, মধুজা মুখার্জি প্রমুখ। মুকুল, মৌচাক, সন্দেশ-এর পাশাপাশি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে সচিত্র ভারত, আনন্দবাজার পত্রিকা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, আনন্দমেলা, এবেলা, পক্ষিরাজ, ঝলমল, দেব সাহিত্য কুটির পূজাবার্ষিকী, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, কিশোর বাংলা, শিশুসাথী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত কমিক্স। সবমিলিয়ে প্রায় ২৫০টি কমিক্স প্রদর্শিত হয়েছে। তার সঙ্গে আছে প্রায় ৪০টি অরিজিনাল কমিক্সের বই।
আরও পড়ুন-২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ মিলবে একশো দিনের টাকা
চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, আমার কমিক্সের হাতেখড়ি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর। তার বেশ কয়েক বছর বাদে পেশাদার হিসেবে কমিক্স আঁকা শুরু করি। যুক্ত হই পত্রভারতীর সঙ্গে। চিত্রনাট্য লিখতেন ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। ছবি আঁকতাম আমি। আমাদের কাজ সমাদৃত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কমিক্সের কাজ খুব বেশি করার সুযোগ হয়নি। এই প্রদর্শনীতে এসে খুব ভাল লাগছে। এক কথায় অসাধারণ। কমিক্স নিয়ে এইরকম প্রদর্শনী ভারতবর্ষে খুব কম হয়েছে। বাংলায় এই প্রথম। একসঙ্গে বহু শিল্পীর কাজ দেখার সুযোগ হল। আমি মুগ্ধ। আমার বেশ কিছু কাজ এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেছেন অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, খুবই ভাল উদ্যোগ। একটা সময় বাংলায় প্রচুর কমিক্স-শিল্পী ছিলেন। তাঁদের কাজ সচরাচর দেখার সুযোগ হয় না। এখানে সেগুলো দেখতে পেলাম। আমার বাবা শৈল চক্রবর্তীর প্রচুর কাজ রয়েছে প্রদর্শনীতে। দু’-একটা কমিক্স চোখে পড়ল, যেগুলো আগে দেখিনি। আমার জন্মের আগে আঁকা। বাবার এই স্টাইলটা আমার অচেনা। পুরো প্রদর্শনীটা ঘুরে দেখেছি এবং খুব এনজয় করেছি। আমার আঁকা বেশ কিছু কমিক্স বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেইগুলো সম্ভবত এঁদের সংগ্রহে নেই। প্রদর্শনীতে দেখলাম না। থাকলে আরও ভাল লাগত। যাই হোক, আমি চাই বহু মানুষ আসুন, প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখুন।
প্রদর্শনী কক্ষে কথা হল কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে। অধ্যাপক সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, প্রদর্শনীটি চমৎকারভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কম্পিউটার আসার আগে বাংলা কমিক্স নিয়ে হয়েছে বহু কাজ। সেই কাজগুলো এখানে দেখার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ঘরানার কাজ। প্রতিনিধিত্বমূলক একটি ভাল কালেকশন। দেখে শ্লাঘা বোধ করছি। এই সময় যাঁরা কমিক্স নিয়ে কাজ করছেন এবং যাঁরা কমিক্স ভালবাসেন, তাঁদের অবশ্যই দেখা উচিত।
আরও পড়ুন-রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন উদ্যোগ রাজ্য সরকারের, অর্থ দফতরে চালু হচ্ছে পৃথক সেল
সমন্তক চট্টোপাধ্যায় জানালেন, প্রদর্শনীতে বাংলা কমিক্সের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত ধরনের কাজ হয়েছে, তার বিষয়ভিত্তিক এবং প্রয়োগভিত্তিক সবকিছুর একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ধারাবাহিকতাকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কাজটা খুবই ভাল হয়েছে। এখানে দেখলাম সদাশিব কমিক্সটি। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প থেকে আধারিত। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন তরুণ মজুমদার। ছবি এঁকেছিলেন বিমল দাস। প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দমেলায়। কমিক্সটি শুরুর আগে আনন্দমেলার তৎকালীন সম্পাদক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, তরুণ মজুমদার এবং বিমল দাস মহারাষ্ট্র এবং আশপাশের সেই অঞ্চল ঘুরে দেখেছেন, যে অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে জন্ম নিয়েছিল কাহিনি। সেখানে গিয়ে বিমল দাস ধারণা করেছিলেন ছবিগুলো কীভাবে আঁকবেন। তারপর ফিরে এসে কাজ শুরু করেন। কমিক্সটি প্রদর্শিত হয়েছে দেখে কথাগুলো মনে পড়ল। বিভিন্ন কার্টুন দল কমিক্স নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছে, বেশকিছু ছোট ছোট সভা হয়েছে, তবে কমিক্স নিয়ে ব্যাপক আকারে কোনও প্রদর্শনী এর আগে বাংলায় সম্ভবত হয়নি। উদ্যোক্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি ভবিষ্যতেও এরকম প্রদর্শনী আয়োজিত হবে।
বাঁটুল, হাঁদাভোঁদা, নন্টে ফন্টে, ডাকু, শুঁটকি মুটকির পাশাপাশি হাজির টারজান, অরণ্যদেব, ইন্সপেক্টর বিক্রম, রোভার্সের রয়, দস্যুমোহন, বোকা হীরু, ব্যোমকেশ বক্সী, সদাশিবরা। পাশাপাশি আছে পথের পাঁচালী, চারমূর্তি, চাঁদের পাহাড়, হুল, বিপিনবাবুর বিপদ, গ্যাংটকে গন্ডগোল, প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউএফও, বর্গী এলো, তেল দেবেন ঘনাদা, ইতিহাস-পলাতক প্রভৃতি কাহিনির চিত্ররূপ। এ ছাড়াও আছে ছবিতে মহাভারত, জাতকের গল্প, আরব্য রজনীর গল্প প্রভৃতি। সবমিলিয়ে কমিক্স- প্রেমীদের জন্য আনন্দ আয়োজন। প্রদর্শনীটি চলবে ৯ মার্চ পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬টার মধ্যে গেলে ঘুরে দেখা যাবে।