প্রতিযোগিতা ভাল কিন্তু প্রতিযোগিতা-সর্বস্ব হয়ে ওঠা যে কী ভয়ানক তা বুঝি হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন টলিউডের টেলিভিশন দুনিয়া। আরও সুনির্দিষ্ট হলে, বলা উচিত ছোটপর্দার বিনোদন জগৎ। একটা বড় অংশের মানুষ ধারাবাহিকের নিয়মিত দর্শক আর তাঁদের জন্যই যত কাণ্ড! কে কীভাবে তাঁদের দখলে রাখবেন, কিসে সন্তুষ্ট করবেন, তার জন্য চলে মরিয়া প্রতিযোগিতা। তাঁরা জানতেও পারেন না, সন্ধেবেলা তাঁদের হাতের রিমোট, কন্ট্রোল করছে একটা পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে! কারণ দর্শক কোনও গল্প পছন্দ করা মানে রেটিং আসা আর তাঁরা প্রত্যাখ্যান করা মানে রেটিং তালিকায় পিছিয়ে পড়া। আর ধারাবাহিকের জীবনে এই ‘রেটিং’ অতি বিষম বস্তু! ধারাবাহিকের গল্প, মেকিং-এর মান, অভিনেতাদের অভিনয়, কলাকুশলীদের পরিশ্রম কোনও কিছুরই কোনও মূল্য থাকে না, যদি টিআরপি দেবতা সন্তুষ্ট না হন। আপাতত এই চক্করে চরকি কাটছে প্রতিটি চ্যানেল। সময়-সুযোগ-সৌজন্যের বালাই উঠে গেছে। রেটিং এলে আয়ু আছে, রেটিং না এলে প্যাক আপ!
আরও পড়ুন-ক্লাউড এখন ওদেরও!
এমতাবস্থায় আগামী কয়েক মাসে শুরু হতে যাচ্ছে বেশ ক’টি ধারাবাহিক এবং বন্ধও হতে চলেছে কয়েকটি। মূল টক্কর প্রধান দুই চ্যানেলের মধ্যে, অর্থাৎ স্টার জলসা ও জি বাংলা। টিআরপি তালিকায় খুব ওপরের দিকে না থেকেও শুধুমাত্র স্লট লিডার হওয়ার দৌলতে টিকে যাচ্ছে কিছু ধারাবাহিক। তবে তাদের কাঁধের কাছেও নিঃশ্বাস ফেলছে নতুনরা। দুই চ্যানেল চেষ্টার কসুর রাখছে না অবশ্যই। নতুন ভাবনা, নতুন কনসেপ্টের পাশাপাশি ট্র্যাডিশনাল কনসেপ্ট, নতুন জুটির পাশে পুরনো হিট জুটি, দর্শকের মন পাওয়ার চেষ্টায় মরিয়া উভয়েই। সঙ্গে রয়েছে, এর জুটি ওর কেড়ে নেওয়া তো ওর হিরোইন বা হিরোকে ছিনিয়ে আনার খেলা। আর এভাবেই স্টার জলসায় শুরু হতে চলেছে জি বাংলার একদা হিট ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’র হিট জুটি ‘নীল ভট্টাচার্য-তিয়াসা লেপচা’র নতুন ধারাবাহিক, ‘বাংলা মিডিয়াম’। ২০১৮-য় শুরু হয়ে টানা চার বছর চলেছিল ‘কৃষ্ণকলি’, শেষ হয়েছে এ বছরের গোড়ায়। ঠিক ন’মাসের মাথায় সেই জুটিকে নিয়েই নতুন ধারাবাহিক শুরু করল প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেল স্টার জলসা। এত দ্রুত কোনও জুটিকে রিপিট করা সত্যি রেকর্ড।
আরও পড়ুন-কমলাদেবী মহিয়সী এক নারী
গ্রামের বাংলা মিডিয়ামে পড়া মেয়েকে পাত্রপক্ষ নাকচ করে সে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করেনি বলে। মেয়েটি অর্থাৎ তিয়াসা গ্রামেরই বাচ্চাদের বিজ্ঞান পড়াত। এরপর শহরের নামকরা এক স্কুল থেকে চাকরির অফার আসে তার কাছে। সে চাকরি পায় শহরের এক নামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে। সে স্কুলের মালিক নীল। গল্প শুরু হয় এইভাবেই। দুই মিডিয়াম মুখোমুখি হলে কী কী হতে পারে পরবর্তী গল্পে তা নিয়েই ড্রামা থাকবে। তবে তার আগে নীল-তিয়াসা জুটির ভক্তরা অন্য এক আশঙ্কায় ভুগছে। কারণ এভাবেই স্টার জলসার ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের স্টার জুটি রাজা-মাম্পি অর্থাৎ রাহুল-রুকমাকে নিয়ে জি বাংলা সম্প্রতি শুরু করেছিল ‘লালকুঠি’। কিন্তু সেই ধারাবাহিক কয়েক মাস যেতে না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। জুটি কিন্তু বাঁচাতে পারেনি ধারাবাহিকের জীবন।
আরও পড়ুন-উদ্যান পালনে স্বনির্ভর
পাশাপাশি জি বাংলায় খুব শিগগিরি শুরু হবে ‘সোহাগ জল’। এই ধারাবাহিকে আবার দর্শক দেখবেন দুই পরিচিত মুখের এক নতুন জুটিকে। ‘যমুনা ঢাকি’ খ্যাত শ্বেতা ভট্টাচার্য জুটি বাঁধছেন ‘গ্রামের রানি বীণাপাণি’ খ্যাত হানি বাফনার সঙ্গে। দূরে গিয়েও কাছে আসার এক নতুন ধরনের গল্প বলবে এই ধারাবাহিক। সাধারণত ধারাবাহিকে প্রাথমিক দূরত্ব মিটিয়ে নায়ক-নায়িকা পরস্পরের কাছাকাছি আসেন, শুরু হয় নতুন জার্নি। কিন্তু ‘সোহাগ জল’-এ শুভ্র আর জয়ীর বিয়ে ভাঙা দিয়ে গল্প শুরু হচ্ছে। প্রোমো দেখে দর্শকের উৎসাহ তৈরি হয়েছে। বাড়ির আদরের বউমা জয়ী। সব দিকে তার খেয়াল, সবার প্রতি তার যত্ন। কিন্তু যাকে ঘিরে এই সংসার, যার সূত্র ধরে এই সব সম্পর্ক, সেই স্বামী শুভ্রর সঙ্গেই সম্পর্ক যেন দানা বাঁধে না জয়ীর। আর তাই নিজের প্রিয় সংসার, প্রিয় মানুষজন, গড়ে ওঠা সম্পর্ক, রোজকার দায়িত্ব, টান, মায়া, আত্মিকতা এসব ছেড়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে জয়ী। কারণ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জয়ী-শুভ্র। শেষবেলায় জেঠিমা শাশুড়ির আক্ষেপ, এই ছাড়াছাড়িটা না হলেই বোধহয় ভাল হত। এই রেশ ছড়িয়ে যায় নায়ক শুভ্রর মনেও। শেষ মুহূর্তে সেও বলে জয়ীকে, আর কিছুক্ষণ থেকে গেলে হয় না? জয়ী জানায়, “এমনিতেই আমাদের অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।” নিঃসন্দেহে ধারাবাহিকের ভাবনায় অভিনবত্ব আছে। আশপাশের ভাঙনের ছায়া টেলিভিশনের গল্পে দেখা গেলেও দর্শক আশাবাদী, মেয়েদের উত্তরণের গল্প হবে এই ‘সোহাগ জল’। টেলিকাস্টের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানানো না হলেও দুই ধারাবাহিকই আগামী মাসেই দেখতে পাবেন দর্শক এমনটাই শোনা যাচ্ছে।