শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তাই হয়েছে। বাংলার মানুষ সহস্র প্ররোচনাতেও বিপথু হননি। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে জিতিয়েছেন। নেত্রী ঠিকই বলেছেন গণদেবতার জয়। তার কারণ আমাদের দল মানুষের আদালতকেই সবচেয়ে বেশি সম্মান করে, মান্যতা দেয়। নেত্রী এই শিক্ষা আমাদের দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ভাঙনের কারণ কেন্দ্রের বঞ্চনা
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করার জন্য আমার এ লেখা নয়। তবুও জানা কয়েকটা সাধারণ তথ্য জানানো দরকার। প্রায় সমস্ত জেলা পরিষদ (২০টি) আবার তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে। এই নির্বাচনে নিচুতলার ভোট ও আসন জেতা-হারা অনেক সময় স্থানীয় ব্যাপারে নির্ধারিত হয়। জেলা পরিষদ আসনে রাজনৈতিক চিন্তাটি ভাল ধরা পড়ে। সেই সূত্রে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একটা রাজ্যে ১২ বছর সরকার চালানোর পর অর্ধেকের বেশি ভোট পাওয়া গর্বের ব্যাপার। ইতিবাচক ভোট হিসাবে সমাজতাত্ত্বিকরা এটার মান্যতা দিয়ে থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর বলেনই, মানুষকে সরকারের প্রকল্পগুলির কথা বলুন। উন্নয়নের জন্য মানুষ আমাদের ভোট দেবে। তাঁর কথা যে কতখানি বাস্তব তা আবার প্রমাণিত হল।
আরও পড়ুন-বাদল অধিবেশন
নির্বাচন সময়কালের কথাগুলো উল্লেখ করা জরুরি। সমস্ত বিরোধ দল একজোট হয়ে গেল। একজন আর একজনের পতাকা নিয়ে আদালতের দরজায় পৌঁছে গেলেন। কথাটা বললাম এই কারণে যে, বিরোধীরা নির্বাচন যাতে বানচাল হয় তারজন্য আদালতে একটার পর একটা মামলা ফেঁদে বসলেন। বিরোধীরা মানুষের সামনে যাওয়ার সাহস হারিয়েছেন অনেক আগে। সেই কারণে নানা বাহানায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করার কথা বললেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও আপত্তি ছিল না। তবে বিষয়টি একান্তই নির্বাচন কমিশন নির্ভর। তাঁরাই ঠিক করবেন কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা হবে। রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। এটাই সংবিধানসম্মত রাস্তা। কিন্তু বিরোধীরা সেসব কথা না শুনে আদালত চত্বরে কান্না জুড়ে দিলেন একসঙ্গে। কিছু বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যমের অযৌক্তিক সমর্থন তাঁরা পেলেন। প্রতিদিন সন্ধাবেলায় এমনসব রোমহর্ষক কাহিনি তাঁরা ফাঁদতে বসলেন যাতে মনে হতে লাগল পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস হারবে এবং সরকার পড়ে যাবে। কাকস্য পরিবেদনা! কিছুই হল না। ঢ্যাং ঢ্যাং করে মানুষ জিতিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসকে।
আরও পড়ুন-পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি তৈরিতে হবে প্রশিক্ষণ
বিরোধীরা প্রায় প্রতিদিন যাচ্ছিলেন আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বাদ দেননি। সেই সঙ্গে চালালেন সন্ত্রাস। সাধারণ মানুষের উপর বোমাবাজি। কয়েক লক্ষ বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সারা রাজ্যে প্রত্যেক থানাতে বিরোধীরা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন। বাইরের রাজ্য থেকে ভাড়া করে নিয়ে আনলেন গুন্ডা। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সন্ত্রস্ত করে তুললেন। এই সময়কালে অনেক প্রাণ ঝরে গিয়েছে। যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। বিরোধীরা সন্ত্রাস কোন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল সেটা বোঝা গেল নির্বাচনের দিনে কাটোয়ার একটা বুথ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন কর্মীকে টেনে এনে খুন করা দেখে। খড়গ্রামে এক বৃদ্ধ তৃণমূল কর্মীকে নির্বাচনের রাতে খুন করে লুকিয়ে ফেলা হল জঙ্গলে তাঁর দেহ। সারা রাজ্য জুড়ে এমন ঘটনা ছড়িয়ে আছে। নিজেদের জীবন দিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার শপথ নিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। নেত্রীর নির্দেশ ছিল তেমন। কর্মীরা সেটা পালন করেছেন। এর বড় প্রভাব পড়ল বাংলার মানুষের উপর। মা-বোনেদের উপর। তাঁরা সন্ত্রাস চান না। তাঁরা শান্তি চান।
আরও পড়ুন-স্নায়ুর জটিল রোগ গবেষণায় অনুদান
তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রীকে শান্তির দূত হিসাবে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন বাংলার মানুষ। নির্বাচনের ফলাফল সে কারণেই এমন হয়েছে। গ্রামেগঞ্জ মানুষ সন্ত্রাসীদের হারাবার জন্য জোট করেছেন। সমস্তরকম অশুভ জোটকে পরাজিত করেছেন। আসলে বিরোধীরা বুঝতেই পারছেন না অথবা মেনে নিতে পারছেন না যে তাঁদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলার সব বুুথে তাদের কোনও লোক নেই। মানুষ আর তাদের কাছে ফিরতে চাইছেন না। মরীয়া হয়ে তারা সন্ত্রাসের পথে ফিরতে চাইছে। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসকে আরও সমর্থন দিয়েছে গণদেবতা।
আরও পড়ুন-পঞ্চায়েতের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করল কমিশন
এই প্রসঙ্গে মহামহিম রাজ্যপালের কথা একটু বলতে হয়। দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে তিনি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে শুরু করলেন। রাজভবনকে বিজেপির কন্ট্রোল রুমে পরিণত করলেন। তথাকথিত অভিযোগ বাক্স খুললেন। ভুলে গেলেন আইনশৃঙ্খলা সর্বতো রাজ্যের বিষয়। তিনি প্রধান সচিব বা স্বরাষ্ট্রসচিবকে ডাকতে পারতেন। তাঁর উষ্মা বা অভিমত জানাতে পারতেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। তা না করে রাজ্য সফর শুরু করলেন। বিরোধীরা উৎসাহিত হল। শান্তি ফিরল না। অশান্তি বেড়ে গেল। নিজে বড় বড় সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। ভোটের দিনও সফর থামালেন না। নির্বাচন কমিশনার সর্ম্পকে এমন মন্তব্য করলেন যাতে প্রায় সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মহামহিম রাজ্যপালকেও নিরাশ করলেন বাংলার সংগ্রামী জনগণ। বিরোধীরা কতখানি দেউলিয়া হয়ে গেছে সেটা বোঝা যায় মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা পর তাদের আচরণে।
একটা সভার জন্য জলপাইগুড়ি থেকে উড়ান নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী চপার প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পড়ে। সেবক আর্মি ক্যাম্পের হেলিপ্যাডে জরুরি অবতরণ করতে হয়। ঝাঁকুনি ও নামার সময় পা ও কোমরে আঘাত পান তিনি। তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি আর যেতেই পারেননি। বিরোধীরা একটা সমবেদনা জানালেন না। যা বাংলার সংস্কৃতি। উল্টে বললেন ‘গিমিক’। কতখানি নিম্নস্তরের রাজনীতি করতে পারলে এমন কথা কেউ বলতে পারে। অপপ্রচার ও সন্ত্রাসের পাহাড়গুলোকে আমাদের ডিঙোতে হয়েছে। আমাদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধান সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়— সঙ্গে আছে কোটি কোটি বাংলার মানুষ। যাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা পাহাড় পেরিয়েছি। লিলিপুটরা সেই কারণে পরাজিত। বিরোধিতা সেই কারণে হতাশ। বাংলার মানুষের সামনে অন্ধকার নয়, আলোর যাত্রা শুরু হয়েছে।