আমরা মাথা নোয়াব না !

এতদিন শুনেছে ওরা মূষিকের কিচ্মিচ্। এবার শুনল সিংহের গর্জন। আপসহীন সংগ্রামের শপথ। নতশির না হওয়ার অঙ্গীকার। জেদি চোয়ালে স্পষ্ট উচ্চারণ। কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে, চমকে-ধমকে, কুৎসার চাষ করেও তৃণমূল কংগ্রেসের শিরদাঁড়া কেনা তো দূরঅস্ত্, বেঁকানোও যাবে না। লিখছেন মইনুল হাসান

Must read

তখন বিকেলের মরা আলো শেষ হয়ে অন্ধকার নামার সময় হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আলোকময় হয়ে উঠল বাংলার আকাশ। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার একই সুরে টানটান হয়ে উঠল আমাদের কর্মীরা— তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। টানা আট ঘণ্টা ইডির জিজ্ঞাসাবাদের পর দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধায় (WB MP Abhishek Banerjee) বেরিয়ে এলেন এক অদ্ভুত ঋজুতা নিয়ে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের সামনে অকম্প দৃঢ়তায় বললেন, ‘আমরা মাথা নোয়াব না’। এক মুহূর্তে সারা বাংলা ভেসে গেল তাঁর এই বাক্যে। দলের আগামী দিনের পথ এভাবেই ঠিক হয়ে গেল। যাঁরা নিজকর্ম ভুলে সারাদিন টিভির পর্দায় কুৎসিত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা মুহূর্তে আবর্জনার স্তূপে নিক্ষেপিত হলেন।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (WB MP Abhishek Banerjee) বারবার বলেছেন— মাথা নত করব সাধারণ মানুষের কাছে। আমাদের গুরুজনদের সামনে। বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হুমকির কাছে নয়। আবারও সেই কথা দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন তিনি।
বিভিন্ন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে। যে গরু চুরি বা কেলেঙ্কারির কথা বলা হচ্ছে তার আসল গুরুঠাকুর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও মন্ত্রী। গরু আসছে বিহার, ইউপি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে। আসছে ট্রেনে করে অথবা জাতীয় সড়ক দিয়ে। পার হচ্ছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে। যেখানে বিএসএফ আছে পাহারায়। পুরো দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। তাঁকে কেন ইডি ডাকছে না? কেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের ডাকা হচ্ছে? এই কুৎসিত কর্মকাণ্ডে সব চাইতে বেশি লাভবান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁকে এর জবাব দিতে হবে। রাজ্যের আমলাদের অযথাই দিল্লিতে ডাকা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আমলা ও বিএসএফ প্রধানরা এই কাজে যুক্ত। তাঁদের কেন ডাকা হচ্ছে না? আর আছেন এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত হয়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। সবাই জানেন তিনি কীভাবে মালদহ-মুর্শিদাবাদে পার্টির কাজের নামে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। মালদহ, মুর্শিদাবাদের মাটিতে কান পাতলেই তাঁর কুকীর্তির কথা শোনা যাবে। ইডি, আর সিবিআই জানে। কিন্তু বিরোধী দলনেতাকে একবারও কোনও তদন্তকারী সংস্থা ডাকছে না। কেন? কারণ তিনি বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ধৌত হয়েছেন। দেশজোড়া মানুষ তাঁকে হাত পেতে টাকা ঘুষ নিতে দেখেছে। তিনি বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

অমিত শাহ চাইছেন ভারতে একটা ফাঁকা মাঠ তৈরি করতে। মহারাষ্ট্রের ঘটনা তারই চিত্র। শিবসেনা ভাঙিয়ে বিজেপি ও শিবসেনার সরকার করেছে। এর পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে বিজেপি এবং তার বশংবদ সংস্থাগুলি। একই তালিকায় আছে ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন বলে ঝাড়খণ্ড সরকার টিকে গেল। খবর পেয়ে অতি-দ্রুত টাকা আদান-প্রদানকারীদের তিনি গ্রেফতদারের নির্দেশ দেন। দিল্লিতে উপমুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের পিছনে সিবিআই লাগানো হয়েছে। প্রত্যেক বিধায়কের দাম উঠেছে ২০ কোটি। ভাবা যায়!

আরও পড়ুন: দুজনের বিরুদ্ধেই শুধু অভিযোগ, ৯৮ জনকে বদনাম করা হচ্ছে, খয়রাসোলে শতাব্দী

পশ্চিমবাংলাতেও সেই খেলাতে অভ্যস্ত হতে চাইছে বিজেপি। বারবার এ রাজ্যের মানুষের কাছে পরিত্যক্ত হয়েও তারা ক্ষান্ত হচ্ছে না। বিধানসভা নির্বাচনে তাদের প্রধানমন্ত্রী-সহ সব নেতার নাকে ঝামা ঘষেছে বাংলার মানুষ। পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির বীরপুঙ্গবরা লেজ গুটিয়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছে। বাংলার মানুষ তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে। বেশি বেশি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ও তাঁর দলকে সমর্থন দিয়েছে। এতেও বিজেপির শিক্ষা হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য বাংলায় একটা একনাথ শিন্ডে বের করতে হবে। সেইজন্য ইডি, সিবিআই-সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী একটা সভায় যথার্থ বলেছেন, ‘ওরা জানে না এখানে বাংলার বাঘিনি আছে।’
বাংলার মাটি ও মানুষ কোনওটাই চেনে না বিজেপি। মধ্য তিরিশের যুব আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরীরী ভাষা দেখে বাংলার সাধারণ মানুষ শিক্ষা নিয়েছে। তারা মনে করেছে এটাই পথ। মানুষ দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছে। ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছে। পথের পাশে কিছু নোংরা সব সময়ই পড়ে থাকে। তাদের উপেক্ষা করতে হয়। এড়িয়ে যেতে হয়। নতুন উদ্যমে, নতুন আহ্বান, নতুন ভরসায় পথ চলতে হবে। বাংলার মানুষের ভাল করাটা একমাত্র উদ্দেশ্য। পিছনে তাকাবার কোনও সুযোগ নেই। এর জন্যই বাংলার মানুষ আমাদের দলকে, আমাদের নেতৃত্বকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এত আশীর্বাদ, এত দোয়া করেছেন।
বিজেপি এই কারণে জ্বলেপুড়ে মরছে। সাধারণ সম্পাদক যে প্রশ্নগুলো করেছেন তার একটাও উত্তর দিতে পারছে না। কথায় কথায় তাদের মামলা করা অভ্যাস। যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অসত্য অভিযোগ করেন তাহলে আদালতে যান। সে সাহস নেই। বরং দূরদর্শনের সামনে তোতলাচ্ছেন।
আমাদের নেতারা কেউ পালিয়ে যাচ্ছেন না। যতবার ইডি ডাকবে ততবার তাঁরা যাবেন। কিন্তু বিজেপি নেতাদের দরজায় কেন ইডি নেই সেটা জানবার সময় এসে গিয়েছে। এর জবাব মানুষ চায়। আগামী দিনে সারা ভারতে বিজেপিকে এই জবাব দিতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর গুণধর (!) পুত্রের জন্যও ক্ষমা চাইতে হবে। জাতীয় পতাকাকে অপমান করার জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ-ব্যাপারে অতি-দ্রুত পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। কিন্তু তা করছেন না। করবেন কী করে! জাতি বা দেশের প্রতি কোনও ভালবাসা না দেখিয়ে তিনি গরু বা কয়লার প্রতি অত্যধিক ভালবাসা দেখাচ্ছেন। জবাব তাঁকেই দিতে হবে। আমরা মানুষের সামনে দাঁড়াতে, সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাই না। ভয় পায় বিজেপি। তাই প্রধানমন্ত্রী কোনও দিন সাংবাদিক সম্মেলন করেন না। এখন তাঁদের কাজ হয়েছে ইডি আর সিবিআই দেখানো। ওঁরা বাংলা চেনেন না। তৃণমূল নেতাদের চেনেন না। আমরা প্রাণ দেব। মাথা নত করব না। বাংলার মানুষ আমাদের পক্ষে।

Latest article