সংঘকেও মানছে না মোদির বিজেপি?

সব মসজিদে শিবলিঙ্গ খোঁজার কী দরকার? মন্তব্য ভাগবতের

Must read

প্রতিবেদন : এবার কি তাহলে সংঘকেও আমল দিচ্ছে না মোদি-শাহর বিজেপি? রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) মন্তব্য থেকে জল্পনা বাড়ছে। বিজেপির অবস্থানের উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে ভাগবত (Mohan Bhagwat) বলেছেন, মসজিদে মসজিদে শিবলিঙ্গ খুঁজতে যাওয়ার কী দরকার? বিশেষ কিছু জায়গা নিয়ে আবেগ থাকতেই পারে। তা বলে রোজ বিতর্ক বাড়ানো হবে কেন? ইতিহাসকে এভাবে পাল্টানো যায় না। ভাগবতের (Mohan Bhagwat) এই মন্তব্যের পরেই জল্পনা, তাহলে কি সংঘের অনুমোদন না নিয়েই বিজেপি নেতারা সংখ্যালঘুদের উপাসনাস্থলগুলিতে হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন খুঁজতে নেমে পড়েছিলেন?

সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন মসজিদে শিবলিঙ্গের অস্তিত্বের কথা বলে কোর্টে কোর্টে মামলা ঠুকছে। একদিকে কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ প্রাপ্তির নাম করে পুজোপাঠের দাবি উঠেছে। অন্যদিকে মথুরার শাহি ইদগাহ সরানোর দাবিতে সরব অত্যুৎসাহী হিন্দুত্ববাদীরা। উত্তরপ্রদেশের ‘গেরুয়াধারী’ মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ তো বলেই দিয়েছেন, অযোধ্যার পর এবার অন্যত্র কোথায় কোথায় দেবতা বিরাজমান তা খুঁজে দেখা হবে। রামমন্দিরের রায় পক্ষে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের দাবি ওঠার পিছনে সক্রিয় মদত রয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের। বিভিন্ন জায়গায় মামলাকারীরা সকলেই গেরুয়া দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দেশে একের পর এক জনবিরোধী নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে মোদি সরকার। কর্মসংস্থান তলানিতে, জ্বালানিতে ভরতুকি ছাঁটাই থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণ-সহ দেশবেচা নীতির জেরে আমজনতার ক্ষোভ চরমে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ যাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য রাজনৈতিক পরিকল্পনামাফিক ধর্মের ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। হিন্দু ভাবাবেগকে উসকে দিয়ে সমাজে আরও বিভাজন তৈরির লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের উপাসনাস্থলগুলিকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। আর এই উদ্যোগকে পিছন থেকে হাওয়া-বাতাস দিচ্ছেন শীর্ষ বিজেপি নেতারা। এই পরিপ্রেক্ষিতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্যে গেরুয়া শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্বই প্রকট।

আরও পড়ুন: ট্রেন ডাকাতির শিকার বাংলার জিমন্যাস্টরা

জ্ঞানবাপী প্রসঙ্গে নাগপুরে সংঘপ্রধান বলেছেন, ইতিহাসকে পাল্টানো যায় না। আজকের কোনও হিন্দু বা মুসলিম এটা তৈরি করেননি। অতীতে যা হয়েছিল তা নিয়ে আমাদের আদৌ বিতর্ক বাড়ানো উচিত নয়। ভাগবতের কথায়, বহিরাগত আক্রমণকারীদের মাধ্যমেই ইসলাম এদেশে এসেছিল। বিদেশি শত্রুরা অনেক মন্দির ধংস করেছে একথা সত্যি, কিন্তু তার জন্য আজ দেশের মুসলিমদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় কি? অর্থাৎ অতীতে যা হয়েছে তার দায় এখনকার প্রজন্মের কোনও ধর্মাবলম্বীর উপর বর্তায় না বলে স্পষ্ট করেছেন ভাগবত। তাঁর মতে, মন্দির-মসজিদ বিতর্ক পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই মেটানো উচিত। ভাগবতের মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে গেরুয়া শিবিরের বিভাজনরেখা।

ভারতে ধর্ম নিয়ে হেনস্তা বাড়ছে, সরব আমেরিকা

প্রতিবেদন : আমেরিকার চোখে ক্রমশই খাটো হচ্ছে ভারতের ভাবমূর্তি। মোদি জমানায় একাধিকবার নানা কারণে বিশ্বমঞ্চে মুখ পুড়েছে দেশের। অসহিষ্ণুতার ইস্যুতে সমালোচনা হয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও নিন্দা কুড়োতে হয়েছে। ফের এই জমানার ধর্মীয় বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা আর হানাহানি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ল দিল্লি। মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন একটি প্রতিবেদন পেশ করে বলেছেন, ২০২১ সালে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বেনজির হামলার শিকার হয়েছে। হেনস্তা-হুমকি তো আছেই, ঘটেছে হত্যার ঘটনাও। ব্লিঙ্কেনের দাবি, ভারতে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে নেই। এমনকী, ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপরও হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাঁর সংযোজন, আমেরিকা বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সওয়াল জারি রাখবে। ভারতের পাশাপাশি মার্কিন কর্তার কথায় উঠে আসে পাকিস্তান আর চিনের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চিনের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এবং নারীরা রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন।
ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। তখনই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এই প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার হালহকিকত এবং সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা করে অধ্যায় রয়েছে। এর আগেও অসহিষ্ণুতা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছিল ভারত। তখন বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কোনও দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে মন্তব্য আদতে অনধিকার চর্চা। অন্য কোনও দেশ সেটা করতে পারে না। যথারীতি এবারও এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ভারতের বিদেশমন্ত্রক বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিদেশমন্ত্রকের তরফে ট্যুইটে বলা হয়েছে, এমন মন্তব্য আসলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির উদাহরণ। রিপোর্টটি অভিসন্ধিমূলক এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলেও অভিযোগ করেছে দিল্লি।

Latest article