যখন দুর্বলতা অসহনীয়

এখন ঘরে-ঘরে জ্বর। বোঝার উপায় নেই কোনটা ডেঙ্গি কোনটা ম্যালেরিয়া বা কোনটা সাধারণ ভাইরাল ফিভার। লক্ষণ সবার এক। তাই বিপদ অনেক বেশি। সেরে গেলেও রোগী মাথা তুলতে পারছেন না— এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ছেন। মুখে নেই রুচি। একজনের থেকে আক্রান্ত গোটা পরিবার। এমন অসহনীয় দুর্বলতা কাটাতে কী কী খাবেন? জানালেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

জ্বরে কাবু শহর থেকে গোটা রাজ্য। জ্বরের সব সিম্পটমই কিছু ক্ষেত্রে এক। চিকিৎসকের চেম্বারের লম্বা লাইন। রিস্ক নিচ্ছেন না তাঁরা। রোগীকে একবার দেখেই লিখে দিচ্ছেন ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া টেস্ট। টেস্ট রিপোর্টে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে বেড-ভরে শুধু জ্বরের রোগী। জ্বরটা বেশ ভয়ের, ছেড়ে যাচ্ছে কিন্তু এক-দুদিন পরেই আবার ফিরে আসছে। এখানেই যত বিপদ কারণ ডেঙ্গি-জ্বরেরই ফিরে আসার প্রবণতা অনেক বেশি। কাবু করে দিচ্ছে। রোগী মাথাই তুলতে পারছেন না। অনেকের আশঙ্কা করোনার নতুন কোনও স্টেন নয়তো! এত দুর্বলতা কেন? এই সময় সবচেয়ে জরুরি হল দেখভাল, সঠিক পুষ্টি এবং পথ্য।

আরও পড়ুন-পরকীয়ার জের, প্রেমিকের বাড়ির সামনে অগ্নিদগ্ধ মহিলা

জ্বরে প্রতি ডিগ্রি অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিপাকক্রিয়া প্রায় ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। তাই এই সময় খাদ্যতালিকাই হল আসল। জ্বরের রোগীর পাতে এমন খাবার থাকবে যাতে রয়েছে হাইপ্রোটিন, হাইক্যালরি আর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস, জিঙ্ক, আয়রন ইত্যাদি। এইসব খাবার দুর্বলতাই কাটাবে এমন নয় একইসঙ্গে মুখের চলে যাওয়া রুচিটাও ফেরাবে।
এই সময় সেটাই খেতে হবে যা সহজপাচ্য। কোনও ভারী বা বেশি তেল-মশলাদার খাবার কখনওই নয়। জ্বর থাকাকালীন বা জ্বরের পরে খুব বেশি করে ফ্লুইড কিন্তু খেয়ে যেতে হবে সারাদিনে। যেমন ফলের রস, ওআরএস ওয়াটার, চায়ের লিকার, ডাবের জল, মিল্কশেক ইত্যাদি।
দুপুরের লাঞ্চে ডাল মাস্ট বিশেষ করে পাতলা মুসুর ডালের জল নিয়মিত খান। ভেজিটেবল স্ট্যু সামান্য মাখনে সঁতে করে জল দিয়ে ফুটিয়ে গোলমরিচ, নুন দিয়ে রোজ খেলে দুর্বলতা অনেকটা কাটবে।

আরও পড়ুন-বাংলাই দেশের গেমচেঞ্জার: ৫ সুযোগ তুলে ধরে লগ্নির আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর

দুর্বলতার সবচেয়ে ভাল পথ্য চিকেন-স্যুপ। এই গরম ফ্লুইডে রয়েছে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন যা শরীরকে এনার্জি দেবে। চাঙ্গা করবে রোগীকে। এ-ছাড়া মটরশুঁটি, মাশরুম, সয়াবিনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন কনটেন্ট। তাই এগুলো স্যুপে অ্যাড করুন। সঙ্গে ডিমেও রয়েচে প্রচুর প্রোটিন তাই রোজ একটা বা দুটো ডিমসেদ্ধ খেতে দিন।
শরীরে দুর্বলতা কাটাতে জরুরি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার। যেমন— লেবু, আঙুর, কমলালেবু বা পালংশাক, লেটুসপাতা ইত্যাদি শরীরের দুর্বলতা কাটাবে।

আরও পড়ুন-‘এই মুহূর্তে বাংলা গোটা ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছে’, স্পেনে শিল্প সম্মেলনে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

আয়রন দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। তাই আয়রনের পরিমাণ এই সময় বাড়ানো জরুরি। রোজ সবুজ শাক-সবজি, মটরডাল, টফু, শুকনো ফল দিতে পারেন। বিকেলের দিকে ডার্ক চকোলেট দিতে পারেন। এগুলো আয়রনের ভাল উৎস।
প্রোবায়োটিক্স ন্যাচলার পদ্ধতিতে শরীরকে রিকভার করায়। দুর্বল শরীরকে উঠে দাঁড় করাতে সাহায্য করে। তাই টকদই থাকবে ডায়েটে। দইয়ে রয়েছে ল্যাক্টিক অ্যাসিড ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ ব্যাক্টেরিয়া। এ-ছাড়া সফট পনির, শাক, ছানা এবং সবুজ সবজিতেও প্রোবায়োটিকস থাকে।
নিয়মিত মাছ খেতে হবে। বিশেষ করে পাতলা ঝোল। মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও রয়েছে প্রোটিনও।
জটিল শর্করা বা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট দুর্বলতা কাটাতে কার্যকরী। ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া, পুরো গমের রুটি এবং ওটমিল দিন। রাঙা-আলু যা ভিটামিন ও খনিজেও পূর্ণ এটাও দ্রুত দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন-‘রাষ্ট্রপতি কোথায়?’ এক্সে সরব ডেরেক ও সাকেত

এই সময় হলুদ, আদা, দারুচিনি রান্নায় দিন। এই মশলাগুলো দুর্বল শরীরকে সবল করবে ধীরে ধীরে।
এ-সময়ে ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি করে। কারণ ফাইবার আমাদের স্নায়ুকে সতেজ করে এবং সেইসঙ্গে বাড়ায় মানসিক ও শারীরিক কার্যক্ষমতা। কলমিশাক, লাউশাক, কুমড়োশাক, পুঁইশাক, গোটা আপেল, আটার রুটি ইত্যাদি খাবার রাখুন প্রতিদিনের খাবারে। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার।

আরও পড়ুন-প্রথম দফায় লগ্নি ২৫০ কোটি, ধীরে ধীরে আরও বড় বিনিয়োগ, মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া মিত্তালের

শরীরকে সবল করতে মাল্টি ভিটামিন খুব কার্যকরী। যদি সাপ্লিমেন্টের দরকার হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন। এ-ছাড়া গাজর, মিষ্টি কুমড়ো, টম্যাটো, ব্রকলি, পেঁপে, ফুলকপি, কলা, সি-ফুড, তরমুজ, আনারস ইত্যাদি রাখুন খাদ্যতালিকায়।
বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ই, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং রাইবোফ্লাভিন। এ-ছাড়াও, বাদাম পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি, নিয়াসিন, থায়ামিন এবং ফলিক অ্যাসিডের একটি দারুণ উৎস। ভেজানো বাদাম দিন রোগীকে। এই সময় সবচেয়ে উপকারী।

আরও পড়ুন-কোটায় উত্তরপ্রদেশের পড়ুয়ার মৃত্যু

জ্বরের মুখে অরুচি হলে
জ্বরে বিস্বাদ মুখের স্বাদ ফেরাতে ১০ থেকে ১৫টা পুদিনা পাতা গরম জলে ভেজান। তারপর সেই জল দিনে দু’বার পান করুন।
আদা, রসুন, গোলমরিচ, লেবুর রস, জোয়ান এগুলো খাবারে দিয়ে খেতে পারেন।
মাউথওয়াশ দিয়ে এই সময় মুখ ধুয়ে নিন দিনে অন্তত দু-তিনবার। এতে মুখে তেতো, বিস্বাদভাব অনেকটা কেটে যাবে।
পেয়ারাপাতা ভাল করে ধুয়ে চিবিয়ে নিন দেখবেন অরুচি কেটে গেছে মুহূর্তে। এক টুকরো লেবু নিয়ে ভাল করে মুখে দিয়ে রসটা নিন। অম্লস্বাদ মুখের রুচি ফেরায়।

আরও পড়ুন-সরকারি হিসেবের খাতায় বিরাট গরমিল, ক্যাগের রিপোর্টে ফাঁস হল মোদি সরকারের কারচুপি

ডেঙ্গি! লক্ষণ বুঝে সাবধান হন

ডাঃ অনুপম ভট্টাচার্য
উপ-মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক (২)
বসিরহাট স্বাস্থ্যজেলা

আরও পড়ুন-শপিংমল-নার্সিংহোমে নিজস্ব পার্কিং জোন না থাকলে বাতিল হবে লাইসেন্স

 জ্বর হলেই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে রক্তপরীক্ষা করান।
 ডেঙ্গি-জ্বরের বৈশিষ্ট্য তৃতীয় থেকে সপ্তম দিন প্রাণঘাতী হয় কারণ এই জ্বর সচরাচর দ্বিতীয় দিনে কমে যায়। তাই অনেকেই অবহেলা করেন।
 ২০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ডেঙ্গি বেশি ফেটাল হয়ে উঠতে পারে কারণ শরীরে জোর থাকে বলে জ্বর হলে এমনিতেই সেরে যাবে ভেবে পাত্তা দেন না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নয়।
 ডেঙ্গির দুটো প্রাণঘাতী জটিলতা। প্রথমত রক্তে অণুচক্রিকা কমে যায়। রক্ত জমাট বাঁধে না। শরীরের বাইরে এবং ভিতরে রক্তপাত শুরু হয়। শরীরের রক্তরস রক্তনালি থেকে বেরিয়ে পেটে, বুকে চলে আসে। এর ফলে ব্লাড প্রেশার হু-হু করে পড়ে যায়, রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হার্ট, কিডনি, লিভারের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। একে ডেঙ্গি-শক সিনড্রোম বলে।
 তাই প্রি-শক স্টেজেই রোগীকে চিহ্নিত করতে পারলে এবং চিকিৎসা শুরু করলে রোগী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারে।
 সর্দি-কাশি আছে মানেই ডেঙ্গি হবে না এটা ভাবা ভুল। জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। পরীক্ষা করিয়ে নিন।
 জ্বর কমে গেলেও দিনে যদি তিনবারের বেশি বমি হয়।
 অসহ্য পেটব্যথা সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা।
 রোগীর অসংলগ্ন আচরণ বা ঝিমিয়ে পড়লে।
 বিগত ৬ ঘণ্টায় ইউরিন না হলে।
 রোগীর অত্যধিক দুর্বলতা থাকলে। উপরিউক্ত লক্ষণগুলি যদি থাকে তবে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
 ডেঙ্গি হলে জ্বরের সপ্তম দিন পর্যন্ত মশারিতে থাকতে হবে এতে রোগটা ছড়াবে না।
 জ্বরের সপ্তম দিন পর্যন্ত রোগী স্বাভাবিক যে জল খায় তার চেয়ে এক লিটার ফ্লুইড বেশি খাবে। ফলের রস, ডাবের জল, ডালের জল, চায়ের লিকার ইত্যাদি খেতে পারে।

Latest article