একদিকে স্বামী, অন্য দিকে শ্বশুর। প্রথমজন অধ্যাপক, দ্বিতীয়জন শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। প্রথমজন চাইছেন তিনি এগিয়ে যান, দ্বিতীয়জন আশ্চর্যজনকভাবে তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। পিতাপুত্রের দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে তিনি বিভ্রান্ত, বিপর্যস্ত। শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। কিন্তু শেষমেশ নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন তিনি। স্থির করেন শিক্ষার যে পথে তিনি এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, যত বাধাই আসুক না কেন, সেই পথ তিনি ত্যাগ করবেন না। অসম সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসেন তিনি। রচনা করেন সাফল্যের নতুন ইতিহাস। তিনি ইরাবতী কার্বে— ভারতের প্রথম মহিলা নৃতত্ত্ববিদ।
আরও পড়ুন-হারানো দিনের স্মরণীয় নায়িকা, বিবি পটেশ্বরীতেই বাজিমাত সুমিত্রা দেবীর
অ্যানথ্রোপলজি বা নৃবিদ্যা হল মানুষ নিয়ে পড়াশোনা করা। এটি বিজ্ঞানের সেই শাখা যা মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ, তাদের আচরণ, সংস্কৃতি, তাদের নানাবিধ প্রথা, বিশ্বাস প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। ভারতবর্ষে নৃবিদ্যা পড়াশোনা খুব পুরোনো। যদিও ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে নৃবিদ্যার সূচনা বলে অনেকে মনে করেন কিন্তু এর পেছনে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। ভারতবর্ষে নৃবিদ্যার সূচনা ধরা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তি এই নিয়ে গবেষণা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নৃবিদ্যা বিভাগ প্রথম চালু হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে। মনে করা হয় প্রথম ভারতীয় নৃতত্ত্ববিদ ও নৃবিজ্ঞানী হলেন শরৎচন্দ্র রায়। তাঁকে ভারতীয় নৃতত্ত্বের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। এরপর দিল্লি, লখনউ, গুয়াহাটি প্রভৃতি জায়গায় নৃবিদ্যা বিভাগ চালু হয়। পাশাপাশি বহু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রমে নৃবিজ্ঞানকে একটি বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে। এভাবে একটু একটু করে বিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে নৃবিদ্যা বিস্তারলাভ করে। এই নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ডিন এন মজুমদার, এল কে অনন্তকৃষ্ণ আইয়ার, আর পি চন্দা, জিন এস ঘুরে, এন কে বেসি প্রমুখ। প্রথমদিকে এই বিষয়টি নিয়ে মূলত পুরুষরাই পড়াশোনা ও গবেষণা করতেন। মহিলারা সেভাবে এই বিষয়ে আকৃষ্ট ছিলেন না।
আরও পড়ুন-নিঃশব্দ বিপ্লব: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ করতে চলেছেন কাজের খতিয়ান
প্রথমত সে-সময় মহিলাদের পড়াশোনার ব্যাপার তেমন উৎসাহ দেওয়া হত না। পাশাপাশি এই বিষয়ের জন্য প্রচুর ফিল্ড স্টাডি করতে হত। যা মহিলাদের পক্ষে সেই সময় ছিল বেশ কষ্টসাধ্য ও সমস্যাজনক। ফলে মহিলারা এই বিষয়ে আসতেন না। তবে ব্যতিক্রমী ছিলেন ইরাবতী কার্বে। গতানুগতিক ভাবধারার বাইরে গিয়ে তিনি এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। শুধু তাই নয়, দেশের নৃতত্ত্ববিদ্যার ইতিহাসে নিজের একটি আলাদা স্থান করে নিয়েছেন।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর বার্মার মিয়াংগানে ইরাবতীর জন্ম। বর্মার পবিত্র নদী ইরাবতীর নামে বাবা-মা তাঁর নাম রাখেন ইরাবতী। তাঁদের পরিবার ছিল সম্ভ্রান্তশালী চিতপাবন ব্রাহ্মণ। তাঁর বাবা গণেশহরি কর্মকার ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বার্মার ‘বার্মা কটন কোম্পানি’তে তিনি কাজ করতেন। তাঁদের পরিবার ছিল শিক্ষিত। গতানুগতিক ভাবধারায় না হেঁটে তাঁর বাবা-মা তাঁকে পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন।
আরও পড়ুন-মানবিক মন্ত্রী, কলকাতায় চিকিৎসা ক্যান্সার-রোগীর
বার্মায় জন্ম হলেও ইরাবতীর পড়াশোনা এবং বেড়ে ওঠা পুনেতে। সাত বছর বয়সে তাঁকে পুনার হুজুরপাগায় একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯২২-এ স্কুলের পড়া শেষ করে ফার্গুসেন কলেজে তিনি দর্শনে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্নাতক হন। এরপর দক্ষিণা ফেলোশিপ পেয়ে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের জি এস ঘুরের অধীনে সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘দ্য চিতপাবন ব্রাহ্মণস–অ্যান এথনিক স্টাডি।’ ১৯২৮-এ তিনি এমএ পাশ করেন।
এমএ পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয় ড. দিনকর ধন্দু কার্ভের সঙ্গে। ড. দিনকর ব্রাহ্মণ হলেও এই বিয়েটা ইরাবতীর বাবার মনোমতো হয়নি। তিনি চেয়েছিলেন রাজপরিবারের কারও সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে। ড. দিনকর ছিলেন ডেকান কলেজের রসায়নের অধ্যাপক। পরে তিনি ফার্গুসেন কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে জই নিম্বকর একজন ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। ছোট মেয়ে গৌরী দেশপাণ্ডে খ্যাতনামা মারাঠি কবি ও গল্পকার। ছেলে আনন্দ কার্বে পুনেতে ‘আরতি’ নামে একটি এনজিও চালান। তাঁর নাতনি ঊর্মিলা দেশপাণ্ডেও একজন লেখিকা।
আরও পড়ুন-রাজ্যে অগ্নিগর্ভ অগ্নিপথ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষোভ-অবরোধ
প্রসঙ্গত বলার, ড. দিনকর ধন্দু কার্বে ছিলেন ধন্দু কেশব কার্বের সন্তান। ধন্দু কেশব কার্বে ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। মহর্ষি কার্বে নামে তিনি বেশি পরিচিত। দেশের মহিলাদের শিক্ষা ও প্রগতি নিয়ে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। বিধবা বিবাহের সমর্থক ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় গোদুবাই নামে এক বিধবাকে বিয়ে করেছিলেন। গোদুবাই ছিলেন পণ্ডিত রমাবাইয়ের স্কুল সারদা সদন-এর প্রথম ছাত্রী। মহিলাদের শিক্ষা বিস্তারে তাঁর ভূমিকা ছিল বিশাল। সমাজ সংস্কারমূলক কাজের জন্য ভারত সরকার ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত করেন। একশো বছর বয়সে তিনি এই সম্মান পেয়েছিলেন।
বাবার মতো সমাজ সংস্কারক না হলেও ড. দিনকর ধন্দু কার্বে স্ত্রীর উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তাঁকে উৎসহিতই শুধু করেননি, সবরকম সাহায্য নিয়ে তাঁর পাশে ছিলেন। দিনকর পাশে না থাকলে ইরাবতীর শিক্ষার পথচলা কখনওই মসৃণ হত না।
আরও পড়ুন-রাজ্যে অগ্নিগর্ভ অগ্নিপথ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষোভ-অবরোধ
ড. দিনকর কার্বে জৈব রসায়ন নিয়ে জার্মানিতে পিএইচডি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ইরাবতীকে জার্মানি থেকে পিএইচডি করাতে। এই ব্যাপারে বাবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আশ্চর্যের বিষয় যিনি নারী শিক্ষার ব্যাপার নিয়ে সংস্কার আন্দোলন করেছিলেন তিনি ছেলের এই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। বিদেশে পড়তে যাওয়া খরচাবহুল। তা ছাড়া ইরাবতীর যা ডিগ্রি তাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ পেয়ে যাবেন। এই যুক্তি দেখিয়ে তিনি তাঁর জার্মান যাওয়ার বিরোধিতা করেন। কিন্তু দিনকর ইরাবতীকে জার্মানিতে পড়ানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিলেন। নিজের উদ্যোগে ইরাবতীকে জার্মানিতে পড়ানোর খরচ জোগাড় করেন। তাঁকে টাকা ধার দিয়েছিলেন জীবরাজ মেহেতা যিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সদস্য ছিলেন।
ইতিমধ্যে ধন্দু কেশব কার্বে পুনে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ইরাবতীর জার্মানি যাওয়ার তারিখ স্থির হওয়ার পর ড. দিনকর বাবাকে চিঠি লিখে তা জানান এবং বাবার আশীর্বাদ চান। কিন্তু ইরাবতীর শ্বশুরমশাই চিঠি দিয়ে জানান যেহেতু এই সিদ্ধান্তে তাঁর মত নেই তাই তিনি কোনও আশীর্বাদ করবেন না।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পের কাজে বাড়ল গতি, ১ বছরে ৪৫৮ মৌজায় জল
ইরাবতীর জীবনে এ-ছিল এক তিক্ত অধ্যায়। শ্বশুর মহাশয়ের এমন আচরণ তিনি মানতে পারেন না। ধন্দু কেশব কার্বে নারীশিক্ষার জন্য অনেক আন্দোলন করেছিলেন। অনেক মেয়েকে বিদেশে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। তার জন্য আর্থিক সংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই তিনি নিজের বউমার বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে এমন আচরণ করবেন এটা কিছুতেই মানতে পারেননি ইরাবতী। তবে স্বামী পাশে থাকায় বিদেশে পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে কোন সমস্যা হয়নি।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ইরাবতী একাই জার্মানি আসেন। এখানে কাইজার উইলহেলম ইনস্টিটিউট অব অ্যানথ্রোপোলজিতে ভর্তি হন। ইউজিন ফিসারের আন্ডারে তিনি গবেষণা করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল হিউম্যান হেরিডিটি অ্যান্ড ইউজোনিকস। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিফিল ডিগ্রি প্রদান করে।
আরও পড়ুন-রাহুলের বদলে সম্ভবত মায়াঙ্ক, ইংল্যান্ডে রোহিত
ডক্টরেট করার পর দেশে ফিরে আসেন ইরাবতী। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বোম্বের শ্রীমতী নাথিভাই দামোদর থ্যাকারসে (এসএনডিটি) মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। শুধুমাত্র ভারত নয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে মহর্ষি ধন্দু কাশ্যপ ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ইরাবতী এখানে তিনি ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পুনের ডেকান কলেজে রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এখানে কাজ করেছেন। ডেকান কলেজের সোশিওলজি ও অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে বেশ কিছু বছর কাজ করেছেন তিনি। পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অন্যথ্রপলজি বিভাগ চালু করেছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি।
১৯৫১-’৫২-তে তিনি ইংল্যান্ডের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে আমন্ত্রণ পান। এখানে থাকার সময় তিনি তাঁর প্রথম বই ‘কিনশিপ অর্গানাইজেশন ইন ইন্ডিয়া’র খসড়া রচনা করেন। আমেরিকার রকারকেলার ফাউন্ডেশনের ইউম্যানিটিজ ডিভিশন থেকেও আমন্ত্রণ পান তিনি। ১৯৫৯-’৬০-এ তিনি বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।
ইরাবতী নিজস্ব ভাবনাচিন্তার মাধ্যমে নিজের গবেষণার কাজ করেছেন। ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য এবং দর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে তিনি তাঁর কাজ করেছেন। তিনি মূলত ফিজিক্যাল অ্যানথ্রপলজি নিয়ে কাজ করেছেন। পাশাপাশি কালচারাল অ্যানথ্রপলজিতেও তাঁর অবদান ছিল। তাঁর অধীনে পঁচিশজন ছাত্রছাত্রী ডক্টরেট করেছেন। একশোর বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে তাঁর।
ইরাবতী একজন ভাল লেখিকা ছিলেন। মারাঠি এবং ইংরাজি ভাষায় তিনি অনেক বই লিখেছেন। তাঁর গবেষণা এবং লেখায় বারে বারে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন জাতপাত, পারিবারিক সম্পর্ক, ধর্ম, পুরাণ প্রভৃতি নিয়ে। তাঁর লেখা কিছু উল্লেখযোগ্য বই হল, কিনশিপ অর্গানাইজেশন ইন ইন্ডিয়া, দ্য ভিলস অব ওয়েস্ট খান্দেশ, মহারাষ্ট্র : ল্যান্ড অ্যান্ড পিপল, যুগান্ত : দ্য এন্ড অব অ্যান এপোক, হিন্দু সমাজ, পরিপূর্তি, সংস্কৃতি, গঙ্গাজল প্রভৃতি। ‘যুগান্ত : দ্য এন্ড অব এন এপোক’ বইটির জন্য ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারাঠি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের প্রথম লেখিকা হিসেবে এই সম্মান পান তিনি। এই গ্রন্থে মহাভারতের কুন্তী, গান্ধারী, ভীষ্ম প্রমুখ প্রধান প্রধান চরিত্রগুলিকে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরে সেই আলোয় তাদের উপস্থাপিত করেছেন তিনি। বইটি প্রথমে মারাঠি ভাষায় লেখেন। পরে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন।
আরও পড়ুন-রাহুলের বদলে সম্ভবত মায়াঙ্ক, ইংল্যান্ডে রোহিত
ইরাবতী নারী স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন। ঘোমটা দিয়ে মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে এমন ভাবনার মানুষ তিনি ছিলেন না। গতানুগতিক ভাবধারা থেকে তিনি ছিলেন অনেক এগিয়ে। পুনের রাস্তায় বাইক চালিয়ে যাতায়াত করতেন তিনি। কোনও মহিলা বাইক চালিয়ে যাতায়াত করবে, পাঁচের দশকে ব্যাপারটা অনেকটা অকল্পনীয় ছিল। আমাদের দেশে একটা সময় মহিলারা স্বামীদের নাম ধরে ডাকা দূরে থাক, তাদের নামও মুখে উচ্চারণ করত না! বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী-লেখিকা রাসসুন্দরী দেবীর আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’ পড়লে আমরা দেখতে পাই, স্বামীর সামনে দূরে থাক তিনি তাঁর স্বামীর ব্যবহার করা ঘোড়ার সামনে এলেও লজ্জায় মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকতেন। এমনটাই ছিল মহিলাদের অবস্থা। যাক সে কথা, ইরাবতী স্বামীকে নাম ধরে ডাকতেন। স্বামীকে তিনি ‘দিনু’ বলে ডাকতেন আর দিনকর তাঁকে ‘ইরু’ বলে। ইরাবতী যে সময় বড় হয়ে উঠেছেন, সেই সময় নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজেদের সমানাধিকারের দাবি নিয়ে লড়াই শুরু করেছেন। ইরাবতী বলেছিলেন, অধিকারের জন্য যদি লড়াই করতেই তাহলে সমান অধিকারের জন্য কেন করবে? লড়াই হোক আরও বেশি কিছুর জন্য। তিনি বলেছিলেন, “Ladies, while fighting with men for rights, why fight for only equal right. Always fight for more right.” ১৯৭০-এর ১১ অগাস্ট তিনি মারা যান।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিকতার শেকল ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। শিক্ষা ও গবেষণার জগতে নিজের জন্য আলাদা একটা স্থান করে নিতে পেরেছিলেন। অ্যানথ্রোপলজির মতো একটা বিষয়, যেখানে মহিলাদের তেমন উৎসাহ ছিল না, সেই বিষয়ে কেবল গবেষণাই করেননি, পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের মহিলাদের কাছে নিজেকে পথিকৃৎ হিসাবে তুলে ধরেছিলেন।