সুকুমার রুজ
স্থান : কোয়াড্রন স্কোয়ারের জেব্রা ক্রসিং। তারিখ : ১৬ মার্চ, ২০৬০। সময় : বিকেল ৪টে।
পুলিশ সার্জেন্ট ডেল্টা-থ্রি অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া গাড়িটার প্রায় তলায় ঢুকে পড়েছে। উপুড় হয়ে, সামনের চাকার পাশ দিয়ে মুন্ডু গলিয়ে, গাড়ির তলায় চাপাপড়া মানুষটার বাঁ পা-খানা হাতের নাগালে পেয়েছে।
অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া মাত্র আগের সিগন্যাল ‘পেন্টাগন স্কোয়ার’ থেকে সমস্ত গাড়ি ডাইভার্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই এ গাড়িটার পিছনে আর কোনও গাড়ি নেই। এর মধ্যে যে ক’টা গাড়ি এদিকে ঢুকে পড়েছিল, সব পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ডেল্টা-থ্রি গাড়িতে ধাক্কা খাওয়া মানুষটার রক্তাক্ত দেহটা টেনে হিঁচড়ে গাড়ির তলা থেকে বের করে ফুটপাথে রেখেছে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেছে ‘ক্যাসানোভা হিউম্যান লিম্ব সাপ্লায়ার্স’-এর লাইভ-কালেক্টর সি-নাইন নামের ছেলেটাকে।
সি-নাইন এরকম আন-অথরাইজড কিংবা ইনজিওরড লাইভ কিনতে এক্সপার্ট। কোথাও অ্যাক্সিডেন্ট-এ বডি হাফডেড হয়েছে কিংবা স্পট-ডেড হয়েছে, খবর পেলেই দশ মিনিটের মধ্যে স্পটে হাজির হয়ে যায়। অন-ডিউটি ট্রাফিক পুলিশ বা পুলিশ সার্জেন্টকে ম্যানেজ করে, কম দামে ডিসিসডকে কিনে নেয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, মক-আপ অ্যাম্বুল্যান্স আনিয়ে বডি নিয়ে সোজা অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে। অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া লোকটার বাড়ির লোক খবর পাওয়ার আগেই বডি ভ্যানিশড।
ডেল্টা-থ্রি বেশ কয়েকবার ওর কাছে এরকম রানওভার হয়ে যাওয়া বডি বেচে দিয়ে ভাল টাকা কামিয়েছে। তাই ওর মোবাইল ফোনের নাম্বারটা সেভ করে রেখেছে।
আরও পড়ুন-ইচ্ছাকৃত জটিলতা বোসের, সমাবর্তনের আগে বর.খাস্ত ভিসি
উপরমহলে যে এ খবর নেই তা নয়! কিন্তু তারা দুটো কারণে এসব জেনেও না জানার এবং দেখেও না দেখার ভান করে। প্রথম কারণ হল, রোড অ্যাক্সিডেন্ট হলে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা, সরকারি হাসপাতালে ইনজিওরড পারসনকে পাঠানো, চিকিৎসা করানো, মারা গেলে পোস্টমর্টেম করানো, তার আইডেন্টিটি খুঁজে বের করা, বাড়ির লোককে খবর দেওয়া! নানান ঝামেলা!
আর দ্বিতীয় কারণটা হল, ট্রাফিক পুলিশ বা সার্জেন্ট এভাবে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়া লোকটার বডি বিক্রি করে দিলে, সে টাকার কিছুটা অংশ তাদের পকেটেও যায়। তাই বেশিরভাগ অ্যাক্সিডেন্ট-প্রোন জোনে সিসি টিভিগুলো ডিসকানেক্ট করে রাখা হয়, যাতে বডি হাপিশ করে দেওয়ার কোনও ক্লিপিংস না থাকে।
গাড়িটার ড্রাইভার তো পথচারীকে ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বডিটা বিক্রি করার ব্যবস্থা করে ফেলতে পারলেই ট্রাফিক-গার্ডে খবর দিতে হবে রেকার পাঠানোর জন্য। গাড়িটা তো টেনে নিয়ে গিয়ে থানার গারবেজে রাখতে হবে!
আরও পড়ুন-যানজট এড়াতে নয়া উড়ালপুল বাইপাসে, ১ হাজার কোটিতে ৬ কিমি দীর্ঘ ফ্লাইওভার
একটু পা চালিয়ে রাস্তাটা পার হলে গাড়ির ধাক্কা খেতে হত না। ছেলেটার বয়স বেশি নয়, ত্রিশ-বত্রিশ হবে। মাথাটা ফেটে গিয়েছে। নাক-মুখ থেকে রক্ত বেরিয়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এখনও বোধহয় বেঁচে আছে! বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলটা তুড়ুক তুড়ুক করে নড়ছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো সারভাইভ করবে! কিন্তু পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সের তো একশো কুড়ি মিনিটে ঘণ্টা! পৌঁছতে পৌঁছতে প্যাসার-বাইয়ের প্যাশন-প্লে প্যাথস এন্ড হয়ে যাবে। পাওয়ার অব পারসেপটিবিলিটি সুপ্রিম পাওয়ারের কাছে পৌঁছে যাবে।
গাড়ির তলা থেকে একা বডিটা বের করতে ডেল্টা-থ্রি-র বেশ পরিশ্রম হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পাবলিক হেল্প করতে আসে না। তারা শুধু গাড়ির ড্রাইভারটাকে প্যাঁদানি দিতে আসে। তাই বেশিরভাগ ড্রাইভার সে সুযোগটা দেয় না। অ্যাক্সিডেন্ট হলেই নিমেষে গাড়ি ছেড়ে উধাও হয়।
আরও পড়ুন-সুরে ভাসবে তিলোত্তমা, ২৫-এ শুরু সঙ্গীতমেলা
সার্জেন্ট ডেল্টা-থ্রি রুমাল বের করে ঘাম মুছছেন আর রাস্তার তিনদিকে পর্যায়ক্রমে তাকাচ্ছেন। কোনদিক থেকে ক্যাসানোভার অ্যাম্বুল্যান্স আসবে কে জানে! এমন সময় আগের সিগন্যালের দিক থেকে স্পটে একটা মক-আপ অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়ায়। ওটার গায়ে লেখা ‘জুপিটার হিউম্যান লিম্ব সাপ্লায়ার্স’। ঠিক তখনই ওপাশের ফুটপাথ থেকে ডেল্টা-থ্রির সামনে এসে দাঁড়ায় এক সৌম্যদর্শন যুবক। সে মাথা ঝুঁকিয়ে বলে— স্যার! আমি জে-ইলেভেন, জুপিটারের লাইভ-কালেক্টর। বলছি যে, আপনাদের অ্যাম্বু আসতে তো দেরি হয়! বডিটা যদি…!
যুবকটা কথা শেষ না করে চোখ কুঁচকে একটা ইঙ্গিত করে। ডেল্টা-থ্রি বুঝে যান ও কী বলতে চাইছে। কিন্তু ঝট করে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারেন না। কেননা, ইতিমধ্যে ক্যাসানোভার ছেলেটাকে কল করে ফেলেছেন। তাই বলেন— আর সম্ভব নয়। অন্য একজনকে আসতে বলেছি।
কিন্তু স্যার! সে তো এখনও আসেনি! আমাদের অ্যাম্বুল্যান্স আগেই পৌঁছে গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ক্লিয়ার করা দরকার, তাই না! তাছাড়া আমি এখানেই ছিলাম পুরো ঘটনা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে স্যার।
আরও পড়ুন-টেট পরীক্ষার্থীরা নিশ্চিন্ত থাকুন, থাকবে প্রচুর বাস : স্নেহাশিস
ডেল্টা-থ্রি ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। কী বলবে, ভাবতে কিছুটা সময় নেয়। এর মধ্যে যুবকটা আরও কাছে এসে বলে, বডিটা বের করতে আপনার খুব কষ্ট হল স্যার। আপনার ইউনিফর্মেও ধুলো লেগে গেছে।
কথা বলতে বলতে জে-ইলেভেন ডেল্টা-থ্রির বুকের ধুলো ঝেড়ে দিতে থাকে। ডেল্টা-থ্রি বলে— ঠিক আছে, কত দাম দিতে পারবে?
স্যার, দু’কোটি নিন। স্পট-পেমেন্ট করে দিচ্ছি।
ডেল্টা-থ্রি ঠোঁট ওল্টান— মাত্র দু’কোটি! ক্যাসানোভার ছেলেটা দশমিনিটে ক্লিয়ার করে। তিন কোটি দেয়। তুমি যদি চার কোটি দাও, তাহলে তোমাকে দিতে পারি।
স্যার! চা-র কোটি! এ তো লিগ্যাল অ্যান্ড লাইভ বডির রেট। আজকাল তিন কোটিতে একদম ওকে মাল পাওয়া যায়! মা-বাবার এজ সেভেন্টি প্লাস হলেই তো ছেলেমেয়েরা সস্তা দামে মা-বাবাকে বেচে দেয়। বয়স হলেও নন-ইনজিওরড লাইভ তো! তাই হার্ট, কিডনি, লাং সব ঠিকঠাক কেটেকুটে বের করে নেওয়া যায়। অ্যাক্সিডেন্ট-বডিতে তো রিস্ক থেকেই যায়! হয়তো দেখা গেল, লাংস বার্স্ট করেছে। কিংবা প্যাটেলা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। ওগুলোর তো কোনও দাম পাওয়া যাবে না! ওসব ফেলে দিতে হবে। তাই বলছিলাম, সাড়ে তিন কোটি দিচ্ছি স্যার আমাকে দিয়ে দিন!
আরও পড়ুন-হাওড়ায় প্রতিবাদ মিছিলে মানুষের ঢল
এমন সময় ক্যাসানোভার অ্যাম্বুল্যান্স এসে ঘ্যাঁচ করে শব্দ তুলে দাঁড়ায় ওই অ্যাম্বুল্যান্সের পাশে। ওটা থেকে নেমে আসে ক্যাসানোভার লাইভ-কালেক্টর সি নাইন। একমুখ হেসে বলে— একটু দেরি হল স্যার। আপনার ফোন পাওয়ার পর মাত্র ইলেভেন মিনিটস হয়েছে। এই নিন প্যাকেটটা! থ্রি ক্রোড়স গোনা আছে।
ডেল্টা-থ্রি কিছু বলার আগেই জুপিটারের কালেক্টর জে-ইলেভেন বলে ওঠে— ওয়েট ওয়েট! আমি আগে এসেছি। এ বডি আমি নেব।
কিন্তু স্যারের সঙ্গে আমার আগে কন্ট্যাক্ট হয়েছে, আমারই পাওয়ার কথা!
ডেল্টা-থ্রি বলেন— ঠিক আছে, একটা বডি তো আর দু’জনকে দিতে পারব না। দু’জনেই যখন নিতে চাইছ, যে বেশি দাম দেবে, তাকেই দেব। তোমরা তো এটা থেকে ভাল কমিশন পাবে!
আপনি কি স্যার অকশন করতে চাইছেন?
না ঠিক তা নয়। তবে আমি রিস্ক নিয়ে আপনাদেরকে বডি দেব, আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি হতে পারে! আমার প্রফিটটাও তো দেখতে হবে!
সি-নাইনের গলায় কম্প্রোমাইসিং অ্যাটিটিউড— ঠিক আছে স্যার! আমি তাহলে থ্রি ফিফটি দিচ্ছি। আমাকে আপনি কল করেছেন, বডি আমাকেই দেওয়া উচিত!
জুপিটারের জে-ইলেভেন বলে— আমি থ্রি সিক্সটি দিচ্ছি স্যার। আমার অ্যাম্বুল্যান্স আগে স্পটে এসেছে। আমাকেই বডি দিতে হবে।
আরও পড়ুন-আইএসআইয়ের নিরাপত্তায় বহাল তবিয়তে টাইগার
সি-নাইন একটু থমকায়। বডিটা তো নিলামে চড়ে গেল! দাম বাড়তেই থাকবে। কোম্পানির নির্দেশ আছে, ম্যাক্সিমাম চার কোটির মধ্যে আন-অথরাইজড বডি কেনা যেতে পারে। সেটাও বডি চেকআপ করে তবে। আজকাল কম্পিটিটিভ মার্কেট, কম মার্জিন রেখে বিজনেস করতে হয়। কেউ কেউ এখন ত্রিশ লাখে হার্ট ছেড়ে দিচ্ছে। কিডনি কুড়ি লাখে। একটা বডি কিনে অ্যাম্বুল্যান্স কস্ট, ল্যাবের খরচ, সেফটি প্যাকেজিং, এসব মিলিয়ে প্রায় ছয়-সাত কোটি পড়ে যায়। তার মধ্যে লাং, কিডনি কিংবা অন্য কোনও লিম্ব ড্যামেজ থাকলেই লস। তখন লাইভ-কালেক্টরের কমিশন থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। তাই ও সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ধরে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভকে। একটু কনসাল্ট করে নিতে চায়। সংক্ষেপে ঘটনাটা বলে।
মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বলেন— অন্য কোনও লিম্ব সাপ্লায়ার্স হলে তোমাকে ক্যুইট করতে বলতাম। কিন্তু ক্যাসানোভা আমাদের নেক টু নেক কম্পিটিটর। ওদেরকে এক সেন্টিমিটার প্ল্যাটফর্মও ছাড়া যাবে না। তাহলে ওরা সেটাকেই ক্যাশ করে আমাদেরকে ডমিনেট করবে। তাই পারমিশন দিলাম, চার কোটি অবধি ওঠো। তার আগে একবার বডিটা চেক করে নাও!
ও কে স্যার! দেখছি।
আরও পড়ুন-বেঙ্গালুরুতে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে স্কুলের শৌচালয় পরিষ্কার করানোর ভিডিও ভাইরাল
সি নাইন মোবাইল ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে সার্জেন্ট-এর কাছে আসে— স্যার! বলছিলাম, আমাকেই তো আপনি কল করেছিলেন! আমি থ্রি সিক্সটি দিচ্ছি। আমাকেই দিন, এর বেশি আর দেওয়া সম্ভব নয়।
জে-ইলেভেন তেড়েফুঁড়ে বলে ওঠে— আমি স্যার আগে থ্রি সিক্সটি দাম দিয়েছি। অকশনের রুল অনুযায়ী আমার পাওয়ার কথা।
সার্জেন্ট ডেল্টা-থ্রি বলে— ওহ! শিট! কে নেবে তাড়াতাড়ি ডিসিশন নাও। বেশি দেরি করা যাবে না।
সি নাইন বলে— ঠিক আছে, বডিটা একটু দেখে নিই।
দু’জন কালেক্টরই ফুটপাথে পড়ে থাকা রক্তাক্ত মানুষটার দিকে এগোয়। প্যান্ট-শার্ট পরা একজন হ্যান্ডসাম যুবক। মাথাটা ফেটে গেছে। নাকমুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। সি-নাইন বডিটার বুকে হাত রাখে। হালকা ওঠানামা টের পায়। পালস বিট আছে মনে হচ্ছে। তার মানে এখনও বেঁচে আছে। শার্ট তুলে পেট-টেট একবার টিপে দেখে নেয়। ভাবে, বেশিকিছু ড্যামেজ হয়নি মনে হচ্ছে। হাত-পাও ভাঙেনি।
ও উঠে দাঁড়ায় বলে— স্যার! লোকসান হয়ে যাবে। বডি খুবই ড্যামেজ হয়ে গেছে। তবুও ম্যাটার অফ প্রেস্টিজ। আমাদের কোম্পানির একটা নাম আছে। তাছাড়া আপনি যখন আমার কথা ভেবে আমাকে কল করেছেন, আমি ম্যাক্সিমাম থ্রি সেভেন্টি দিচ্ছি।
সঙ্গে সঙ্গে জে-ইলেভেন বলে ওঠে— আমার কোম্পানিরও রেপুটেশন কম নেই স্যার! আমি থ্রি এইট্টি দিচ্ছি।
সি-নাইনের যেন ইগোতে লাগে। ও ঠোঁট চেপে বলে— থ্রি নাইনটি।
আরও পড়ুন-বেঙ্গালুরুতে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে স্কুলের শৌচালয় পরিষ্কার করানোর ভিডিও ভাইরাল
জে-ইলেভেনের জোরালো গলা— পুরো চার কোটি। আর কোনও কথা হবে না। আমার অ্যাম্বুল্যান্সে বডি তুলে নিচ্ছি স্যার! তার আগে আপনাকে ফোর ক্রোরস ‘জিগল পে’ করে দিচ্ছি। নাম্বারটা বলুন।
এমন সময় কোথায় থেকে প্যাঁ-পোঁ প্যাঁ-পোঁ করতে করতে পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স এসে একদম জেব্রা ক্রসিং-এর উপর থামে। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে দু’জন স্ট্রেচার নিয়ে নেমে আসে। তা দেখে সার্জেন্ট ডেল্টা-থ্রি চমকে ওঠে। ট্রাফিক কন্ট্রোলকে তো জানায়নি যে, রোড-অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে! সিসি টিভিরও তার কাটা আছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারকেও কল করে অ্যাম্বুল্যান্স চায়নি! তাহলে অ্যাম্বু এল কার নির্দেশে! ও জিজ্ঞেস করে— এই! তোমাদের কে পাঠাল?
স্যার ‘কোয়াড্রন স্কোয়ার’ থানার ওসি পাঠালেন। তাকে নাকি এখানকার কোনও দোকানদার ফোন করে অ্যাক্সিডেন্টের খবর দিয়েছে। তাড়াতাড়ি রিকভারির জন্য রিকোয়েস্ট করেছে। ও সি বললেন, ‘বিজি ক্রসিং, ফাস্ট অ্যাকশন!’ তাই হেডকোয়ার্টার থেকে ডাইরেক্ট স্পট-এ এলাম।
আরও পড়ুন-করোনা নিয়ে বিশেষ নির্দেশ স্বাস্থ্য দফতরের
উল্টোদিকের ফুটপাথের একটা দোকানদার বেরিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের কাছে আসে— একটু পা চালিয়ে ভাই! তাড়াতাড়ি করুন। এখনও বেঁচে যাওয়ার চান্স আছে। কখন খবর দিয়েছি, আপনারা এতক্ষণে এলেন।
দোকানদারের তাড়ায় ঝটপট দু’জন অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে এসেছে। তারা বডিটাকে চ্যাংদোলা করে স্ট্রেচারে তুলতে থাকে। সার্জেন্ট ডেল্টা-থ্রি, লাইভ-কালেক্টর সি-নাইন ও জে-ইলেভেন সেদিকে আফসোস ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। দোকানদারের ঠোঁটের কোণে তখন মিটিমিটি হাসি। বডিটা অ্যাম্বুল্যান্সে ঢুকে যাওয়ার পর ডেল্টা-থ্রির মুখ থেকে একটা কাঁচা খিস্তি বেরিয়ে আসে। তখনও আহত যুবকটার বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলটা তির তির করে নড়ছে। অঙ্কন : শংকর বসাক