প্রতিবেদন : পুজো শুরু হওয়ার একমাস আগেই পুজোর আবহ রাজ্য জুড়ে। বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো কালচারাল হেরিটেজের মর্যাদা দেওয়ায় তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাজ্য সরকার বুধবার কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে শোভাযাত্রা বের করবে। এই শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়েই বাঙালির উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়তে চলেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন কলকাতার মিছিলে হাওড়া, বিধাননগর ও রাজারহাটের সমস্ত পুজো কমিটি ওই বর্ণময় শোভাযাত্রায় যোগদান করবে।
আরও পড়ুন-ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে বাড়তি উৎসাহ মেক্সিকোতে
দলমত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে এই মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য তিনি সকলকে আমন্ত্রণ জানান। নবান্নে এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন বেলা ২টোয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের ৭টা ওয়ার্ড পরিক্রমা করে রেড রোডে পৌঁছাবে। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা ছাড়াও বিভিন্ন দূতাবাস এবং বণিক সভার সদস্য-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিটি জেলার সদরেও পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে একই ধরনের মিছিলের আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন-গরিব প্রকল্পে কোপ
কারা থাকছেন মিছিলে : কলকাতার বুকে বুধবারের মহামিছিলে পা মেলাবেন মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা, কলকাতার সমস্ত দুর্গাপুজো কমিটির প্রতিনিধিরা, পুজোপাগল মানুষেরা, থিমশিল্পীরা, প্রতিমাশিল্পীরা, আবহশিল্পীরা, পড়ুয়ারা এবং নানান সাংস্কৃতিক শিল্পীরা। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এই মিছিল এর আগে দেখেনি কলকাতা, দেখেনি ভারত, দেখেনি বিশ্ব। তাই কাল বিশ্ব দেখবে বাংলার উৎসব। তার আগে জেনে নিন সেই মহামিছিলের খুঁটিনাটি।
আরও পড়ুন-মাঙ্কিপক্সে প্রথম মৃত্যুর খবর মিলল আমেরিকায়
মিছিলের পথ : বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে থেকে শুরু হতে চলেছে মহামিছিল। শেষ হবে রানি রাসমণি রোড হয়ে রেড রোডের ওপরে। প্রজাতন্ত্র দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজের মেজাজেই সাজানো হচ্ছে রেড রোড। জোড়াসাঁকো থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। শুরু হবে ঠিক দুপুর ২টোয়। জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথ। ফলে খুব বেশি হলে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। সেই অনুযায়ী রেড রোডের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড পর্যন্ত রাস্তার দু’ধার সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ব্যানার, পোস্টার দিয়ে। মিছিলের গোটা যাত্রাপথে রাস্তার দুই ধার বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। সেই ব্যারিকেডের বাইরে থেকে সাধারণ মানুষ মিছিল দেখতে পারবেন।
আরও পড়ুন-বদলাচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনীর পতাকা
নিরাপত্তা : মহামিছিলের আয়োজন নিয়ে ইতিমধ্যেই লালবাজারে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। সেই বৈঠকে মিছিলের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পুলিশি ব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে— জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং রেড রোড। সামগ্রিক দায়িত্বে থাকবেন স্পেশ্যাল সিপি দময়ন্তী সেন। ৬ জন যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার ওই ৩টি জোনের দায়িত্বে থাকবেন। প্রতিটি জোনে ১ হাজার করে মোট ৩ হাজার পুলিসকর্মী থাকবেন। পথে নামবেন ২২ জন ডিসি এবং ৪০ জন এসি। ডোরিনা ক্রসিং এবং গিরিশ পার্কে থাকবে ৫০টি পুলিস পিকেট। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের সব থেকে নিরাপদ শহর কলকাতা। সেই কথা মাথায় রেখেই মিছিলে শামিল করা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের মহিলা বাহিনী ‘উইনার্স’কেও। থাকবে কুইক রেসপন্স টিমও। বুধবার থেকেই শহরকে পুলিশের নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-সুপারকে প্রাণনাশের হুমকি, তদন্তে নামল স্বাস্থ্য দফতর
মিছিলে কে কে থাকবেন : মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন বাংলার অগ্নিকন্যা, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত থাকবেন ভারতে নিযুক্ত ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এরিক ফল্ট এবং ইউনেস্কোর ২০০৩ সালের ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ রক্ষা সম্মেলনের সম্পাদক টিম কার্টিস। এই মিছিলে কোনও রাজনৈতিক দল নয়, পুজো উদ্যোক্তারাই শরিক হবেন। তাই মিছিলে থাকবেন কলকাতা লাগোয়া হাওড়া ও সল্টলেকের পুজো উদ্যোক্তারা। মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজনেরাও পা মেলাবেন। মিছিলে শামিল হবেন প্রায় ১০০ জন বাউলশিল্পী। মিছিলে ঢাকঢোল, শঙ্খ বাজবে, দেওয়া হবে উলুধ্বনি। সকলকে রঙিন পোশাক এবং রঙিন ছাতা আনতে বলা হয়েছে। একাধিক পুজো উদ্যোক্তা নিজস্ব ড্রেস কোড ও রঙিন ছাতা-ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়ার আয়োজন করেছেন। মিছিলে থাকবে একাধিক স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও।
আরও পড়ুন-অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ঠেলাগাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা, স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন স্বামী
যানজট ঠেকাতে পদক্ষেপ : মহামিছিলের জন্য মধ্য কলকাতা কার্যত স্তব্ধ হতে চলেছে আগামিকাল, এ-নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কেননা কাল শুধু উৎসবের সূচনা নয় স্বীকৃতির উদযাপনও। তাই যানজট ও আমজনতার ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন আগামিকাল মিছিলের জন্য স্কুল, কলেজ, অফিস কাছারি বেলা ১টাতেই ছুটি হয়ে যাবে। যদিও এই নির্দেশ সব বেসরকারি স্কুল বা অফিস মানবে কিনা তা নিয়ে খটকা থাকছেই। তবুও যানজট ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। আজ, রাত থেকেই বেশ কয়েকটি রাস্তায় যান-চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। এর পাশাপাশি মহামিছিলের যাত্রাপথে থাকা শহরের ২১টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান-চলাচল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুধু যান-চলাচলই নয়, পার্কিং পর্যন্ত বন্ধ করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তার হাওড়াগামী দিক খোলা থাকবে।
আরও পড়ুন-হাইকোর্ট চত্বরে দুর্গাপুজো
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড ও আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের একাংশ খোলা থাকবে, যাতে শিয়ালদহগামী গাড়ি চলাচল করে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে যান-চলাচল বন্ধ থাকবে। এর বদলে উত্তরমুখী যান-চলাচলের জন্য স্ট্র্যান্ড রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, এজেসি বোস রোড এবং এপিসি রোড ব্যবহার করা যাবে। দক্ষিণমুখী যান-চলাচলের জন্য এজেসি বোস রোড ও এপিসি রোড খোলা থাকবে।
আরও পড়ুন-নজরে পঞ্চায়েত ভোট, নয়া মহিলা কমিটি তৃণমূলের
রেড রোডে কী হবে : মিছিল শেষে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের সম্মানিত করবে রাজ্য সরকার। রানি রাসমণি রোডে হবে সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা, থাকবেন বহু বিশিষ্টজন। মুখ্যমন্ত্রী ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের দিতে চান নাগরিক সংবর্ধনা। তাই রেড রোডে মিছিলের শেষে হবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এবং তৈরি হয়েছে বিশাল মঞ্চ। রেড রোডের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী শুভশ্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। লোকশিল্পীরাও অনুষ্ঠান করবেন সেখানে। মিছিল শুরু থেকে রেড রোডের অনুষ্ঠানের সমাপ্তির জন্য দুপুর ২টো থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। যদিও মিছিল শুরুর আগে বেলা ১১টা থেকে জমায়েত শুরু হয়ে যাবে জোড়াসাঁকোতে।