প্রতিবেদন : বিধানসভায় মুখ পুড়ল বিজেপির। নিজেদের পাতা ফাঁদে পড়ল নিজেরাই। খুলে গেল বিজেপির প্যান্ডোরার বাক্স। শুক্রবার বিধানসভায় নবান্ন অভিযান নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব পড়ার পরেও আলোচনা না করেই কার্যত লেজ গুটিয়ে পালালেন বিজেপি বিধায়করা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মুলতুবি প্রস্তাব পড়তে দিলেও বিজেপি এটা নিয়ে আলোচনা চায়নি। কারণ হিসেবে এক বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘মুড’ নেই। আসলে শুক্রবার বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন না। এমন অবস্থা তৈরি হয় যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলোচনাটা করবে কে? সবজান্তা বিরোধী দলনেতা এদিন উপস্থিত ছিলেন না।
আরও পড়ুন-ইডেনে ক্রিকেট আছে, প্রাণ নেই
এই ঘটনার পরে বিজেপির অন্দরে ও রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত স্তম্ভিত সকলে। আসলে বিজেপি বিধানসভায় হই-হট্টগোল চিৎকার-চেঁচামেচি করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। গঠনমূলক বিরোধিতা করার জন্য যে পড়াশোনা, মনন ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দরকার হয় তা এঁদের কারওরই নেই। হট্টগোল ওয়াক-আউট করে বাইরে বেরিয়ে গাড়ি বারান্দায় টিভি ক্যামেরার সামনে মুখ দেখাতেই এঁরা বেশি ব্যস্ত থাকেন। বিজেপির পরিষদীয় দল ও বিধায়কদের অবস্থা কতটা শোচনীয় ও সার্বিকভাবে কতটা খোকলা এদিন তা সর্বসমক্ষে চলে এসেছে।
আরও পড়ুন-শংসাপত্রের বিল পেশ
বলা হয় বিধানসভা বিরোধীদের জায়গা। বিরোধীরা সেখানে সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করবেন, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে হাউসের মধ্যে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা জবাব চাইবেন। এটাই দস্তুর। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও গঠনমূলক সমালোচনা-সহ বক্তৃতা বিধানসভায় করতে দেখা যায়নি। সেটা করতে গেলে যে পড়াশোনা করতে হয়, বিষয়ের গভীরে ঢুকতে হয়। সারাক্ষণ হম্বিতম্বি-লাফালাফি-হুপহাপ— এসব করার পর কি হাতে সময় থাকে পড়াশোনা করার! তা-ও আবার পরিষদীয় রাজনীতি, আইন-কানুন— ওরে বাবা। তার চেয়ে বরং হই-হট্টগোল করে হাঙ্গামা বাধিয়ে গাড়ি বারান্দায় গিয়ে ফুটেজ খেয়ে কেটে পড়াই ভাল। এখনকার বিজেপি এটাই। পছন্দ না হলেও শুভেন্দু অধিকারীর এই তুঘলকি আচরণকেই মেনে নিতে হচ্ছে বাকি বিজেপি বিধায়কদের। আড়ালে আবডালে অবশ্য তাঁরা এ-নিয়ে ঘনিষ্ঠমলে যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করছেন।
আরও পড়ুন-বিজেপির লালবাজার অভিযান ফ্লপ শো
বর্ষীয়ান পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টপাধ্যায় এ-বিষয়ে জানান, এরা পরিষদীয় রীতিনীতির কিছুই জানে না। শেখার ইচ্ছেও নেই। হই-হট্টগোল করতেই বেশি চায়। তাঁর সংযোজন, বিরোধী দলনেতা হিসেবে অনেক দায়িত্ব নিতে হয়। বিধানসভার রীতিনীতি জানতে হয়। বিরোধী দলনেতা এসব জানে না। ও কোনও দিন এসব করেছে নাকি? বিরোধী দলনেতা হতে গেলে যে রাজনৈতিক মান ও উচ্চতা দরকার হয় তা ওর নেই। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
আরও পড়ুন-মহালয়ায় মাতৃরূপে প্রথমবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে সর্বত্রই বিজেপিকে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে বিরোধী দলনেতা। এর বাইরে অন্য কিছু নয় তা এখন জলের মতো পরিষ্কার। বিজেপির ভাল-মন্দ নিয়ে শিশিরবাবুর ছেলেটার মাথাব্যথা নেই।