১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর লাতিন আমেরিকার স্বৈরাচারী শাসক রাফায়েল ট্রুজিলোর নির্দেশে প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবল নামের তিন বোন, যাঁরা মিরাবল সিস্টারস নামে খ্যাত, তাঁদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার প্রতিবাদে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকার এক নারী-সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নারী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নারী-নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী-নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু জাতিসংঘ দিবসটিকে স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী-নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। যুগ পেরিয়েছে কিন্তু নারী-নির্যাতনের রূপরেখা বিশেষ বদল হয়নি। আজও বছর বছর বিশ্বজুড়ে নারী-নিগ্রহের প্রতিবাদে পালিত হয়ে আসছে এই দিন এবং এই পক্ষকালটি, নেওয়া হচ্ছে নানা কর্মসূচি। লিঙ্গবৈষম্য, শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারে, ক্ষমতায়নে নারী আজ কোথায় দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্নই সবার মনে। তাঁরই সদুত্তরে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র নাকি সোনার পাথরবাটি
প্রশ্ন: জাতিসংঘ বলছে প্রতি তিনজনে একজন নির্যাতিতা। কোভিডকালে না কি এই পরিসংখ্যান বেড়েছে।
কোভিডের সময়টা একটু আলাদা ছিল। আগে বাড়ির পুরুষ সদস্য দিনের অনেকটা সময় বাইরে থাকত। তার এবং পরিবারের নারীটিরও নিজস্ব একটা স্পেস ছিল। কোভিডের সময় ২৪x৭ যখন বাড়িতে থাকা শুরু করল তখন সেই এরিয়াটা আর রইল না, সহজেই একে অন্যের স্পেসে ঢুকে পড়তে শুরু করল। নগরজীবনে এটা বেশি কারণ সেখানে ছোট ফ্ল্যাট, জায়গা কম। একসঙ্গে একবাড়িতে ছোট পরিসরে থাকার ফলে একে অন্যের জীবনে হস্তক্ষেপ শুরু করল। প্রত্যেক মুহূর্ত তখন অনিশ্চয়তা, কারণ সেই সময় অনেকের কাজ চলে গেছে, অথচ ফ্যামিলি প্রেশারটা কিন্তু একইরকম রয়েছে। তাহলে তার সেই হতাশা প্রথম কোথায় বেরোবে অবশ্যই বাড়িতে এবং স্ত্রীর কাছে। সে তখন স্ত্রীকে ধরেই নেয় সে টেকেন ফর গ্রান্টেড। তাকেই অ্যাটাক করতে শুরু করল। এটাই যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন তা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সে পরিণত হয়। উল্টোদিকে মেয়েটিও মানতে চায় না, শুরু হয় লড়াই। এটার থেকেই সমস্যার সূত্রপাত হয়। আমাদের কাছে তখন প্রচুর এরকম কেস আসত। আসলে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব স্পেস থাকা উচিত যা ওই সময় লঙ্ঘিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন-শতবার্ষিকী স্মরণে শোভা সেন
প্রশ্ন : তাহলে কি ধরেই নেব আমাদের দেশের বা রাজ্যের মেয়েরা এখনও বেশ অরক্ষিত?
অরক্ষিত আমি বলব না কারণ আমরা একটা টাইম ফ্রেম নিয়ে কথা বলছি এবং সবাই কিন্তু এই টাইম জোনে ঢুকছে না এর বাইরেও অনেক পুরুষ মানুষ আছে। তবে যদি স্ট্যাটিসটিক্স বলি তাহলে বলব কোভিড পিরিয়ডে এই ধরনের কেস স্টাডি অনেক বেশি এসেছে আবার কোভিডের পর কমেছেও।
প্রশ্ন : ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা দক্ষিণ এশিয়াতে যে নারী-নিগ্রহ হয় তার অধিকাংশই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। এর কারণ কী ?
এটা সত্যি কথা, সারা পৃথিবী জুড়ে নারী-নিগ্রহ নানা রূপে আছে। তবে নিগ্রহের যে জায়গাটা মূল সেটা হল গৃহহিংসা। এই ক্ষেত্রে প্রশাসন, কমিশন বা অন্যরা যত চেষ্টাই করুন না কেন, ঘটনাটা ঘটে। দুটো মানুষ যখন একসঙ্গে থাকে তাঁদের মাঝে অন্য তৃতীয় ব্যক্তি তো আর ঢুকে পড়তে পারে না। তাদের প্রতি মুহূর্তের যে ক্রাইসিস এবং সেই ক্রাইসিস থেকে ওভারকাম করবার ইচ্ছে অথবা অনিচ্ছে এগুলোই তাঁদের চালিত করে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের দিকে। এর পাশাপাশি লিঙ্গবৈষম্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর যেটা ছোট থেকে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে তৈরি করে দেওয়া হয়। সেটা কিন্তু একজন নারীর ক্ষেত্রে আর একজন নারীই করেন। বড় মাছের টুকরোটা দাদাকেই দেওয়া হয়। মেধা না থাকলেও ধরে নেওয়া হয় দাদাই চাকরি করবে এবং সমমেধা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও মেয়েটিকে স্যাক্রিফাইস করতে হয়। এগুলোই ছেলেটিকে সুপিরিয়র ভাবতে শেখায় যে আমি মেয়েদের প্রোটেক্ট করি। এই হিরোইজম থেকেই পরের দিকে সে আর সমমানসিকতা বজায় রাখতে পারে না। যদিও ব্যতিক্রম সব ক্ষেত্রেই আছে। আদিবাসী বেল্টেও কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সেখানে মেয়েরা উপার্জন করে, ছেলেরা করে না তাও চিত্রটা একই।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীকে ডি’লিট সম্মান সেন্ট জেভিয়ার্সের
প্রশ্ন : গৃহহিংসাকে অনেকেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক সমস্যা বলে মনে করে এড়িয়ে যায় এটা কতটা ঠিক?
গৃহহিংসার আইন তৈরি হয়েছে ২০০৫ সালে। এটা শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা বলে এড়িয়ে যাবার আর কোনও উপায় নেই। এখন মেয়েরা চাইলে রুখে দাঁড়াতে পারে। বিচার চাইতে পারে। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সবাই মিটিয়ে নিতে পারে না তখন তৃতীয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দরকার হয়।
প্রশ্ন : কেন শান্তি, নিরাপত্তা এবং অধিকারের প্রশ্নে নারী পুরুষের সমকক্ষ নয়?
আমার তা মনে হয়নি কখনও কারণ মেয়েরা সুযোগ পেলে পুরুষের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। এখানে দুটো প্রশ্ন— সুযোগটা পাচ্ছি কি না বা সেই সুযোগ পেলে তা নিচ্ছি কি না। সুযোগ পেলেও কী আমরা সেটা নিই! বহু মেয়েকেই আমি দেখেছি যাদের কাছে বিয়েটা এখনও একটা অপশন। বিয়ের পর আর কিছু না করলেও চলে। ছেলেরা তো এইভাবে ভাবে না কখনও! তাহলে বোঝাই যাচ্ছে মাইন্ডসেটের কোথাও একটা সমস্যা আছে। এর জন্য সচেতনতা বাড়ানোর দরকার। একটি ছেলের কাঁধেই কেন দায়িত্বটা থাকবে, একটি মেয়েই বা কেন সংসারের দায়িত্ব নেবে না। মেয়েটি শুধু দরকার থাকলেই রোজগার করবে, নিজের সম্মানের জন্য করবে না। মেয়ের সেন্স অফ রেসপন্সিবিলিটিটাও নেই। যদিও অনেক মেয়ে রয়েছে যারা সংসারের দায়িত্ব নেয়। তবে তা সংখ্যায় কম।
আরও পড়ুন-মিলেমিশে কাজ করুন বীরভূমে,বললেন অভিষেক
প্রশ্ন : বেসরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর দশ লক্ষের বেশি শিশু ও নারী-পাচার হয়। এই রাজ্যেও সবচেয়ে বেশি। বর্তমান চিত্রটা ঠিক কী?
পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব একটা স্ট্যাটিসটিক্স রিপোর্ট রয়েছে। আমি যেটা জানি সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের পাচারের স্ট্যাটিসটিক্স এমন কোনও বেসরকারি তথ্যকে সাপোর্ট করে না। কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে নারী বা শিশুপাচার হয়— বিশেষ করে কিছু চা-বাগান অঞ্চল বা বর্ডার এলাকায়। তবে পাচারের সংখ্যা সেখানে বদলে গেছে। আগে যেভাবে একটা টিম বা এজেন্সি কাজ করত পাচারের ক্ষেত্রে এখন সেভাবে হয় না। এখন ছেলেমেয়েরা প্রেমে পড়ে। মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখায় এবং সে বেটার লিভিংয়ের জন্য ঘর ছাড়ে। তখন এটা চালিত হয় পাচারের দিকে। কারণ বহু ছেলেই সেই মেয়েকে বিয়েটা করে না এবং পাচার করে দেয়।
আরও পড়ুন-কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে মোদি-মন্ত্রী, টুইটারে জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রশ্ন : রাজ্য সরকার তথা কমিশন পাচার রুখতে কতটা ভূমিকা নিচ্ছে?
এক্ষেত্রে আমাদের তরফে অনেক সাজেশন রয়েছে। সরকারকে সেই সাজেশন দেওয়াও হয়েছে। তা অনেক জায়গাতেই ফলো করা হচ্ছে। যেমন, যখন একটি মেয়ে বাইরে যাচ্ছে সেই মেয়েটিকে তার এলাকায়, তার লোকাল থানায় জানিয়ে যেতে হবে যে সে কোথায় যাচ্ছে। প্রত্যেক ব্লকে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকে তারা এবং আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যায় তারা প্রতিটা পরিবারের হাঁড়ির খবর জানে। কোথাও চাইল্ড ম্যারেজ হলে এরাই সবার আগে জানতে পারে। এরাই খবর দেয়। আমি বাড়ির লোককে বলতে চাই, বলাও হয়েছে যে তাঁদের মেয়ে কোথাও যাচ্ছে সেই ইনফরমেশন নিজের কাছে রাখতে। পঞ্চায়েত অফিসের একটি খাতা মেনটেন করা হয়। থানায় জানানো যায়। পুলিশের নজরদারি থাকলে পালিয়ে ট্র্যাক করার সুবিধা হবে।
আরও পড়ুন-বিধানসভার স্মারক ভবন উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর, বললেন বিরোধীরা এলে খুশি হতাম
প্রশ্ন: বাল্যবিবাহ রুখতে একাধিক প্রকল্প চালু করেছে সরকার। কতটা আটকানো গেছে এই সমস্যা?
ইতিমধ্যেই অনেকগুলো জেলাকে চাইল্ড ম্যারেজ ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু কিছু জেলায় এখনও পুরো শেষ করা যায়নি। যেমন মুর্শিদাবাদ। ওখানে একটা বিশেষ কমিউনিটিতে খুব চাইল্ড ম্যারেজ হয়। কারণ ছেলেমেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। যতই সুযোগ-সুবিধা থাকুক আপনাকে পরিবারকে তো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু আবার এটাও ঠিক ওই কমিউনিটি থেকে কিছু মানুষ উঠে এসছেন এবং চেষ্টা করছেন যাতে ওদের মধ্যে বাল্যবিবাহ না হয়। এ ছাড়া সরকারি তরফে স্তরে স্তরে কাজ হচ্ছে। অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম, কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি হয়েছে। নজরদারি রয়েছে। অনেকে স্কুল ড্রপ আউট হয় বিয়ের জন্য তখন স্কুলের দিদিমণিরাই সেটা আটকান, প্রশাসন, চাইল্ড রাইটস কমিশন, মহিলা কমিশন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সিভিক ভলান্টিয়ার, আশাকর্মী প্রত্যেকে থাকে এবং চেষ্টা করে। চাইল্ড ম্যারেজের খবর এলেই তারা সেখানে পৌঁছে যায়। পুলিশও খুব সক্রিয়। এইভাবে বাল্যবিবাহ রোখা গেছে অনেকটাই।
আরও পড়ুন-ডিপেই আজ বাজি নেদারল্যান্ডসের, সামনে ইকুয়েডর
প্রশ্ন : নারীপাচারের সঙ্গে জোর করে দেহব্যবসায় নামানোর একটা যোগ রয়েছে। এটা কীভাবে রোধ করা সম্ভব?
যেহেতু পাচারটাই রোধ করা হচ্ছে তখন আর পরের অংশটার প্রশ্ন ওঠে না। প্রচুর অ্যান্টি ট্রাফিকিং মুভমেন্ট হচ্ছে। তবে একটা সমস্যা রয়েছে যেটা হল আঠারো বছরের উপরে যদি কেউ বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তখন তার ব্যক্তিগত ইচ্ছেকে অসম্মান করে জোর করে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত না সাপোর্টিভ ডকুমেন্ট খুব স্ট্রং থাকে। বহু মেয়ে ভুয়ো বয়সের প্রমাণপত্র দিয়ে বেটার লিভিংয়ের জন্য বাড়ি থেকে পালায়। তাই সবার আগে জানতে হবে পরিবারকে যে, তাদের মেয়ে কোথায় যাচ্ছে সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
প্রশ্ন : আর্থিক অসাম্যই এর মূলে। তাহলে কী ব্যবস্থা গ্রহণীয় যাতে মেয়েরা এমন পদক্ষেপ না নেয়?
ব্যবস্থা কিন্তু নেওয়া হয়েছে। বেসিক খাওয়াদাওয়ার বিষয়টা সরকারের পক্ষ থেকে কিন্তু করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি করার মতো ব্যবস্থাও আছে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে, বিভিন্নভাবে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সহায় সম্বলহীনদের। একটা প্রাথমিক সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে তোলা গেছে। কিন্তু যদি কেউ এর উপর যেতে চায় যে আমি সন্তুষ্ট নই, আরও বেটার লিভিং দরকার তাহলে তো তার কোনও মাপকাঠি নেই— তাই না। তাই আমি মনে করি এটা রুখতে পরিবারের অ্যাওয়ারনেস সবার আগে দরকার। মেয়েদের স্কুলস্তরে অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন-বহু ট্রেন বাতিল দমদম-নৈহাটি লাইনে, ভোগান্তি যাত্রীদের
প্রশ্ন : পাচার হওয়া শিশু ও নারীর পুনর্বাসনের কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
যদি খোঁজ পাওয়া যায় তাহলে শর্ট স্টে হোম আছে সেখানেই রাখা হয় কারণ, অনেক ক্ষেত্রে খোঁজই পাওয়া যায় না। সেই হোমে রাখার পর তাদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর এবং রিহ্যাবিলিটেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রশ্ন : মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলার এই দেশে জনসংখ্যার নিরিখে ৬৪.৫০ শতাংশ। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের গ্রাফ অনেকটাই ঊর্ধ্বে। কেন? রাজ্যের মেয়েরা কতটা সুবিচার পাচ্ছে?
এটা তো একদিক থেকে পজিটিভ। কিন্তু এখানকার মেয়েরা তো বেরিয়ে আসতে পারছে, থানায় বা কমিশনের কাছে আসছে, মামলা করছে, প্রতিবাদ করতে পারছে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মেয়েদের উপর যে অত্যাচার হয় তার খবরটা অনেক ক্ষেত্রে বাইরেই আসে না। তবে পাশাপাশি এটাও বলব সেই মামলার বিচার পেতে দেরি হচ্ছে। কোথাও একটা বিচারব্যবস্থার খামতি রয়েছে। সুবিচার পেতে এত দেরি হচ্ছে যে সেই মামলা এগিয়ে নিয়ে যাবার সদিচ্ছা থাকছে না অনেক মহিলারই। মাঝপথেই ছেড়ে দিচ্ছে। অনেক মেয়ের লিগাল এড নেবার ক্ষমতা থাকে না তখন আমরা ব্যবস্থাও করে দিই।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় বিজেপিকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর, বললেন কেন্দ্রে এজেন্সি-সরকার
প্রশ্ন : নারী-নিগ্রহ রুখতে কমিশন কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
কমিশনের পক্ষ থেকে সারাবছর অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম চলে। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে যে সচেতনতা কর্মসূচি তার মধ্যে পশ্চিমবাংলার সমস্ত সরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে চারশো কলেজ রয়েছে। যেহেতু আমরা আঠারো-ঊর্ধ্ব নিয়ে কাজ করি। দু-বছর ধরে চলছে এই প্রোজেক্ট। মেন্টাল হেল্থ ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। যাঁরা খুব স্ট্রেসফুল জব করেন এবং ভালনারেবল যে-সব ছেলেমেয়ে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই প্রোজেক্টে যাতে তাঁরা মনের আগল খুলে কথা বলতে পারে এবং কোনও ভুল না করে। শুধু মহিলা নয় ছাত্রদের নিয়েও কাজ করছি।
প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক নারী-নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসটির রূপায়ণে আগামী দিনে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
এই দিনটাতে আমরা কমিশন থেকে প্রোগ্রাম শুরু করি সেখান থেকে সব জেলাতে অনুষ্ঠান হয়। আমরা যাইও সেখানে। পনেরোদিনের একটা পক্ষকাল ধরে এই দিনটা পালিত হয়। নানাধরনের কর্মসূচি থাকে। অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামে একে অপরের সঙ্গে ইন্টারাক্ট করে ফলে অনেক কিছু তারা বুঝতে পারে।