প্রতিবেদন : আদানি ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতে মোদি সরকারের হাতিয়ার বিবিসি তথ্যচিত্র নিয়ে দমনমূলক পদক্ষেপ৷ মঙ্গলবার বিবিসি–র দিল্লি ও মুম্বই অফিসে আয়কর তল্লাশির পর এই অভিযোগই তীব্র হচ্ছে৷ অনেকেই বলছেন, আদানি নিয়ে জেপিসি–তে রাজি নয় সরকার, অথচ বিবিসি নিয়ে জাতীয়তাবাদী হাওয়া তুলে গুজরাতের দাঙ্গার ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর তথ্যচিত্র প্রচার নিয়ে লাগাতার বিতর্কের পর মঙ্গলবার সকালে দিল্লির কেজি মার্গে বিবিসির অফিসে ঢোকেন আয়কর কর্মকর্তারা৷ এই ঘটনাকে বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ বলে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ৷
আরও পড়ুন-বালিপাচার রুখতে ড্রোনে নজরদারি
কয়েক সপ্তাহ আগেই বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’–এর প্রদর্শন বন্ধ করার তৎপরতা শুরু করেছিল কেন্দ্র৷ দু’দশক আগে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জমানায় গোধরা-কাণ্ড এবং তারপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রে৷ আন্তর্জাতিক মহলে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় শুরু থেকেই বিবিসির তথ্যচিত্রে কড়া আপত্তি জানাচ্ছিল মোদি সরকার৷ এক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের হাতিয়ার ছিল জাতীয়তাবাদী আবেগ৷ নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে গুজরাতের হিংসার ইতিহাস বিশ্ব দরবারে বেআব্রু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কেন্দ্র দাবি করেছিল, ঔনিবেশিক মানসিকতা থেকে তথ্যচিত্র তৈরি করেছে বিজেপি৷ যদিও সেই অভিযোগ তথ্যপ্রমাণ সহযোগে নস্যাৎ করে দেয় বিবিসি৷ জানায়, যথেষ্ট গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তথ্যচিত্র নির্মাণ হয়েছে৷ পরিকল্পিত বিকৃতির অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ যদিও তাতে আমল না দিয়ে কেন্দ্রের তরফে ইউটিউট এবং ট্যুইটারকে বিবিসির তথ্যচিত্রের লিঙ্ক সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়৷
আরও পড়ুন-৭০ ক্রেশ, ৪৩ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১১৩ চা-বাগানে উন্নয়ন
এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রয়োগ করে একাধিক বিরোধী নেতা–সহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজনের বহু ট্যুইট মুছে ফেলার নির্দেশ দেয় কেন্দ্র৷ গুজরাত দাঙ্গা ও মোদির ভূমিকা নিয়ে অতীত ইতিহাস ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় যেভাবে বিবিসির তথ্যচিত্র আটকাতে নেমে পড়েছিল কেন্দ্রের সমস্ত মেশিনারি, তাকে নজিরবিহীন সেন্সরশিপ বলে উল্লেখ করেছেন বিরোধী নেতারা৷ তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মিত্র বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন, আদানির জন্য বিশেষ আতিথেয়তা আর তদন্তের মুখে বিবিসি! কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা আদানি ইস্যুতে জেপিসি দাবি করছি, অথচ সরকার বিবিসির পিছনে লেগে রয়েছে৷ একেই বলে বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি৷ জম্মু–কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, বিবিসি অফিসে অভিযানের কারণ ও প্রভাব খুব স্পষ্ট৷ বিরোধী নেতা, মিডিয়া, কর্মী বা অন্য যে কেউ হোক, যারা সত্যি কথা বলে তাদের নির্লজ্জভাবে হয়রানি করে ভারত সরকার৷ সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, এ হল আদর্শগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা৷ ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেতা ওয়াই সচিত রেড্ডি বলেছেন, আয়কর অভিযান হল, বিবিসিকে মোদির দেওয়া উপহার৷
আরও পড়ুন-গরম পড়তেই বাড়ছে পক্স
মঙ্গলবার সকালে আয়কর দফতরের কর্মকর্তারা দিল্লি, মুম্বই অফিসে তল্লাশি চালানোর আগে বিবিসির সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷ সরকারি তরফে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কর ও স্থানান্তর মূল্যের অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগে বিবিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চালান আয়কর কর্মকর্তারা৷ পরে বিবিসির পক্ষ থেকে ট্যুইট করে জানানো হয়, আয়কর কর্তাদের আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। আশা করি অতি দ্রুত এই পরিস্থিতির সমাধান হবে। সূত্রের খবর, বিবিসি অফিসে আয়কর কর্মকর্তারা অর্থ বিভাগের কিছু নথি যাচাই করেন।
আরও পড়ুন-কার্পেটশিল্পের ক্লাস্টার মালদহে
আয়কর দফতরের একটি সূত্রে বলেছে, বিবিসি অফিসের অ্যাকাউন্ট বুক চেক করা হয়েছে, এটি তল্লাশি নয়৷ প্রবল সমালোচনার চাপে মুখ বাঁচাতে আয়কর দফতর বিষয়টিকে লঘু করে দেখালেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিবিসিকে হেনস্থা করতেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সাহায্যে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নামিয়েছে মোদি সরকার৷ ঠিক যে কায়দায় রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে তদন্তের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটানো হয়, সেই একই কায়দায় এবার সরকারের তোপের বিবিসি৷ সৌজন্যে গুজরাত দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র৷