নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত বিখ্যাত সমাজ সংগঠক লরা জেন অ্যাডামস লিখেছিলেন, “Of all aspects of social misery nothing is so heartbreaking as unemployment” (সব ধরনের সামাজিক দুর্দশার মধ্যে বেকারত্বে মতো প্রাণঘাতী অন্য কিছুই নয়)। ২০১৭-১৮ সালে ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল ভারতে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশ, যা ছিল গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। সারা দেশের ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে চরম প্রাণঘাতী। গ্রামে এই হার ছিল ৫.৩%, শহরে ৭.৮%। দেশের যুবসমাজের মধ্যে এই হার ১৩% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৭%। ২০১৬ সালে মোদি সরকার নোটবন্দি ঘোষণা করার পর এটাই ছিল প্রথম সরকারি সমীক্ষা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের সময়ে তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি এই সমীক্ষা চালানো হয়।
আরও পড়ুন-৪৮ গেরুয়া কর্মীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা
২০১৭-১৮ সালের এই সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার ছিল ৪.৬%। সর্বনিম্ন বেকারত্বের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল তৃতীয়। ভারতের সমস্ত শিল্পপ্রধান রাজ্যগুলির বেকারত্ব ছিল পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। এমনকী গুজরাত রাজ্যেও বেকারত্বের হার (৪.৮%) ছিল পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক সরকারি সমীক্ষাগুলোতেও স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব শুধুমাত্র ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট কম নয়, এমনকী ভারতের অধিকাংশ শিল্পোন্নত রাজ্যের তুলনায়ও পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব কম। একটি তালিকায় এটি দেখানো হল।
আরও পড়ুন-কংগ্রেস-বিজেপি থামাতে পারল না তৃণমূলকে, বিধি ভাঙলেন গেরুয়া প্রার্থী
জানুয়ারি-মার্চ, ২০২২-এর ত্রৈমাসিক পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের তথ্যে দেখা যাচ্ছে সারা ভারতে বেকারত্বের হার (গ্রাম ও শহর একত্রে) ৮.২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে এই হার ৬%। ভারতে বড় ২২টি রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন বেকারত্বের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের স্থান তৃতীয়। সবচেয়ে কম গুজরাত (৪.৪%), দ্বিতীয় কর্নাটক (৪.৯%), তৃতীয় পশ্চিমবঙ্গ (৬%)। সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের হার হরিয়ানায় (১৩.৫%), দ্বিতীয় কেরল (১৩.২%)।
আরও পড়ুন-অবসরের ইঙ্গিত দিলেন শিখর
জানুয়ারি-মার্চ, ২০২২-এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে ভারতের ৬টি শিল্পোন্নত রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র গুজরাত ও কর্নাটক রাজ্যদ্বয়ের বেকারত্বের হার পশ্চিমবঙ্গের থেকে কম। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ (৮.৩%), তামিলনাড়ু (৮.৩), মহারাষ্ট্র (৭.০%) এবং তেলেঙ্গানা (৬.৬%) রাজ্যগুলির বেকারত্বের হার পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি।
এবারে আসা যাক ২০২১-২২ অর্থবছরের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও)-এর তথ্যে। শুধুমাত্র শহরগুলির ক্ষেত্রে এই সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজ্যভিত্তিক বেকারত্বের তথ্য প্রকাশ করেছিল। সারা ভারতে ২৭টি রাজ্যের ক্ষেত্রে শহরভিত্তিক বেকারত্বের হার প্রকাশ করা হয়েছিল। এই তথ্যে পশ্চিমবঙ্গের শহরে প্রতি হাজারে বেকারত্বের হার ৪৪। অর্থাৎ শতকরা ৪.৪%। একমাত্র কর্নাটক (৩৮) বাদে ভারতের অন্যান্য শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার কম। এই তথ্যে দেখা যাচ্ছে গুজরাতে শহরভিত্তিক বেকারত্বের হার (৪.৬%) পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। কয়েকটি ছোট রাজ্য ছাড়া প্রায় সমস্ত বড় রাজ্যে শহরভিত্তিক বেকারত্বের হার পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি। সারা ভারতের শহরভিত্তিক বেকারত্বের হার (৬.৭%) পশ্চিমবঙ্গের (৪.৪%) থেকে অনেক বেশি।
আরও পড়ুন-স্টেফির সঙ্গে নাম জড়ানোয় গর্বিত : জকো
এবার আসা যাক বেসরকারি স্বনামধন্য সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) জানুয়ারি, ২০২৩-এর তথ্যে। এবছর জানুয়ারি মাসে সারা ভারতের বেকারত্বের হার ৭.৬%। পশ্চিমবঙ্গে এই হার ৫%। এই বেসরকারি তথ্যে শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির মধ্যে গুজরাত, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব বেশি হলেও বাকি তিনটি শিল্পোন্নত রাজ্যের (মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা) থেকে কম। এমনকী ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব যথেষ্ট কম। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি হরিয়ানায় (২১.৭%)। ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার ১৬%।
আরও পড়ুন-বক্স বাজিয়ে দলীয় কর্মসূচি বন্ধ করলেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা
সরকারি তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার সারা ভারতের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে প্রায় সমস্ত রাজ্যের তুলনায় কম। এমনকী অধিকাংশ শিল্পোন্নত রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার গত ১১ বছরের সর্বদাই কম থেকেছে। বেসরকারি সিএমআইএ-র বাৎসরিক ও মাসিক বেকারত্বের তথ্যেও পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার অধিকাংশ রাজ্যের তুলনায় এবং সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় বরাবরই অনেক কম বজায় থেকেছে। সরকারি নিয়োগ ছাড়াও গত ১১ বছরে রাজ্যে এমএসএমই-র সংখ্যা (৯০ লক্ষ) প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি যেখানে ব্যাঙ্ক ঋণ ১৬ গুণের বেশি বৃদ্ধি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ৯৩ হাজার থেকে ৬৭৭ লক্ষে বৃদ্ধি, বানতলা চর্মনগরীতে ৩ লক্ষ কর্মংস্থান, উৎকর্ষ বাংলার প্রসার ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ বৃদ্ধির জন্যই পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলে বেকারত্বের হার অনেক কম।