ইন্দোর, ২ মার্চ : ভারতে আসার আগে এক সপ্তাহের ক্যাম্প করে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। এবড়ো-খেবড়ো মাঠে ব্যাট করে এসেছেন স্মিথ-খোয়াজারা। ইন্দোরে ধূলি-ধুসরিত পিচেও যার ফায়দা পাওয়া গেল।
আর একটা জিনিসও বলতে হয়। এই সফরে অস্ট্রেলিয়া কোনও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চায়নি। তার বদলে বেঙ্গালুরুতে নিঃশব্দে প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচ মানে সাধারণ মাপের পেসারদের খেলে তারপর পড়তে হত অশ্বিন-জাদেজার সামনে। কোচ ম্যাকডোনাল্ড ওই রাস্তায় হাঁটেননি।
আরও পড়ুন-প্রথমবার জোড়া মহিলা বিধায়ক পেল নাগাল্যান্ড
প্রথম দুই টেস্টে স্মিথরা হেরে যাওয়ার পর অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। সেটা তাঁদের সফর-প্রস্তুতি নিয়ে। কিন্তু সামান্য দেরিতে হলেও অস্ট্রেলিয়ার এসব পরিকল্পনা এখন ফল দিচ্ছে। এতটাই যে ইন্দোরে টেস্ট জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার সকালেই সিরিজের ফল ২-১ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের খেলার শেষে টিভি মাইক্রোফোনের সামনে এসেছিলেন চেতেশ্বর পূজারা। বলছিলেন ৭৫ রানের লিড নিয়েও তাঁরা জিততে পারেন। বলে অবশ্য হেসে ফেলেছিলেন সৌরাষ্ট্রের তারকা ব্যাটসম্যান। আসলে তিনি জানেন এমন নাটকীয় ঘটনা হয়তো হবে না। তবে বলতে হয় বললেন।
আরও পড়ুন-যৌথ ঘোষণাপত্র হল না
প্রথম দিন ১৪টি উইকেট পড়েছিল। এদিন পড়ল ১৬টি উইকেট। নাথান লিয়ন ৬৪ রানে ৮ উইকেট নিয়ে ভারতকে একাই গুটিয়ে দিলেন। প্রথম দফায় ১০৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত করেছে ১৬৩ রান। ১৪২ বলে ৫৯ রান করেছেন পূজারা। বাকিদের মধ্যে শুধু শ্রেয়স আইয়ারের অবদান ২৬। লিয়ন পরে বললেন, তিনি উইকেট নিয়ে মাথা ঘামান না। বিপক্ষের ব্যাটারকে শান্ত রাখতে পারলেই খুশি। তবে মজা করে যোগ করেছেন, তাঁর বলেই টেস্ট ক্রিকেটে সবথেকে বেশি ছক্কা হয়েছে।
অথচ, ভারত দ্বিতীয় দিনের সকালে দারুণভাবে ফিরেছিল ম্যাচে। অশ্বিন আর উমেশ যাদব মিলে অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দিয়েছিলেন ১৯৭ রানে। জাদেজা আগেরদিন চার উইকেট তুলে নেন। এদিন বাকি ছ’টি উইকেট ভাগ করে নিলেন অশ্বিন ও জাদেজা। অস্ট্রেলিয়ার লিড দাঁড়ায় ৮৮ রানের।
আরও পড়ুন-যৌথ ঘোষণাপত্র হল না
প্রথম দিনের খেলার পর ভারতের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর দাবি করেছিলেন, সকালের আর্দ্রতা অস্ট্রেলীয় স্পিনারদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। এক-আধদিন এমন ব্যাটিং বিপর্যয় নাকি হতেই পারে। তাঁরা উইকেট বুঝতে পারেননি। তাহলে দ্বিতীয় দিনের শেষে কী বলতে পারতেন ভারতীয় ব্যাটিং কোচ?
আসলে কিছুই বলার ছিল না তাঁর। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভরাডুবি দেখল ইন্দোর। ১৬৩ রানে ইনিংস শেষ করলেন রোহিত শর্মারা। তফাত শুধু এটুকু যে, প্রথম দফায় ভারতের ইনিংস স্থায়ী হয়েছিল ৩৩.২ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা গেল ৬০.৩ ওভার পর্যন্ত।
আরও পড়ুন-মেঘালয়ে বিজেপির চেয়ে বেশি তৃণমূল
রাহুলের জায়গায় শুভমনকে খেলানোর দাবি উঠেছিল। দুই ইনিংসে তাঁর রান ২১ ও ৫। ফের ব্যর্থ অধিনায়ক রোহিত (১২) ও বিরাট (১৩)। ৭৮ রানে চার উইকেট চলে যাওয়া মানে টপ অর্ডারের চরম ব্যর্থতাই। দ্বিতীয় ইনিংসেও জাদেজা (৭), শ্রেয়স (২৬) বড় রান পাননি। এবার এস ভরতকে (৩) নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তিন টেস্টেই ব্যর্থ। আমেদাবাদে ঈশানের নাম নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া এমন তিন স্পিনারকে নিয়ে ইন্দোরে নেমেছিল, যাঁরা জাদেজা-অশ্বিনের সঙ্গে সমানতালে টক্কর দিয়েছেন। তাই ইন্দোরের স্পিনিং ট্র্যাক রোহিতদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। এমনকী স্কোয়ার টার্ন নেওয়া উইকেটে ভারতীয় ব্যাটাররা যেখানে সুবিধা করতে পারেননি, সেখানে খোয়াজারা রান করে গেলেন।
আরও পড়ুন-হৃদরোগ সুস্মিতার
অস্ট্রেলিয়ার জন্য আরেকটা বড় ব্যাপার হল স্মিথের নেতৃত্ব। প্যাট কামিন্স পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে যাওয়ায় নেতা স্মিথের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। মস্তিষ্ক দিয়ে স্পিনারদের পরিচালনা করে দলকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন কেপটাউনে বল-বিকৃতি কাণ্ডের সময়কার অস্ট্রেলীয় নেতা। নেতৃত্ব বোলার কামিন্সের বোঝা হলে (যা অনেকে বলেছেন) বিকল্প স্মিথই হলেন যোগ্য উত্তরসূরি। এটা এখন প্রমাণিত সত্য।