মণীশ কীর্তনিয়া, দিনহাটা: তৃণমূল কংগ্রেসের ‘নবজোয়ারে’ জনজোয়ার। অভিনব এই কর্মসূচি শুরুর প্রথম দিনেই তিনটি জনসভায় কোচবিহার দেখল জনসমুদ্র। মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষ্যে যে পাহাড়প্রমাণ রাজনৈতিক কর্মসূচি মঙ্গলবার কোচবিহার থেকে শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম দিনেই তা ঝড় তুলে দিল কোচবিহারে। সঙ্গে দিনভর গোটা বাংলাও চোখ রাখল টিভির পর্দায়-ডিজিটাল মাধ্যমে। সকালের প্রথম জনসভা বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা সাহেবগঞ্জে। বেলা সাড়ে এগারোটায় প্রবল রোদের মধ্যেই তুমুল ভিড়। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সকাল সাড়ে ৮টা-৯টা থেকে মানুষ সভায় আসতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন-‘এবার আর ধর্মের ভিত্তিতে ভোট নয়’ BSF-নিশীথকে নিশানা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রান্নাবান্না সেসব বাড়ি ফিরে হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলবেন শুনতে হবে। উপচে পড়া সভায় অভিষেক বললেন, সোমবার এখানে আসার সময় কোচবিহারবাসী— দিনহাটার মানুষ যে ভালবাসা দিয়েছেন তা ভুলব না। গরমে কষ্ট হচ্ছে জানি। আগামী পাঁচ বছর মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে হলে এই কষ্টটা একটু সহ্য করতে হবে। তুমুল হাততালি সভা জুড়ে। তাঁর সংযোজন, কোনও শাসকদল এভাবে রাস্তায় নামে না। সাধারণত বিরোধীরা নামে। আমরা নেমেছি পঞ্চায়েতে কাদের আপনারা চান তা জানতে৷ আগামী পঞ্চায়েতে কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগ নয়। নিজের ছেলে-মেয়েদের ভবিষতের কথা ভেবে, কেন্দ্রের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে, নিজের ভোট নিজে দিন। নিজের প্রার্থী নিজে বেছে নিন। সাফ কথা অভিষেকের। একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস এ-কথা বলে। আগামী দিন দুর্নীতিমুক্ত শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন হবে। মানুষের পঞ্চায়েত গড়ব আমরা। ৭৮৮৭৭-৭৮৮৭৭ এই ফোন নম্বরটি জনতাকে দিয়ে বলেন, এই নম্বরে ফোন করেও আপনারা প্রার্থীদের নাম বলতে পারেন। এরপর সীতাইয়ের সভায় যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুকছেন তখনও পাশের জমির আলপথ ধরে সারি দিয়ে রোদ মাথায় নিয়ে পুরুষ-মহিলারা এগিয়ে চলেছেন নবজোয়ারে-জনজোয়ারে। এদিন তিনটি সভাতেই ব্যালট পেপার দেওয়া হয়। একটি করে ব্যালট বাক্স রাখা হয়েছিল যেখানে প্রার্থীদের নাম লিখে জমা দেওয়ার জন্য। তবে সীতাইয়ে একদল অতি-উৎসাহী মানুষ ব্যালট বাক্স নিয়ে নাড়াচাড়া করায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ-খবর জানতে পেরে জেলা সভাপতির কাছ থেকে রিপোর্ট জানতে চান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে শীতলকুচির সভা থেকে তিনি বলেন, বুধবার সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আবার ঐ মাঠে ভোট হবে। তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, সীতাইয়ে ব্যালট বাক্স নষ্ট করা হয়েছে। এই কারণেই তো ‘নবজোয়ার’ শুরু করেছি। বুধবার সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাক্স থাকবে। ভোটের রিপোর্ট আমি নেব। আমি জানি কারা কী করতে পারে। অতি-উৎসাহী হয়ে যারা করেছে তারা ঠিক করেনি। কেউ যদি মনে করে প্রভাব খাটিয়ে দাদাগিরি করে গায়ের জোরে নিজেদের লোকের নাম ঢোকাবেন তা চলবে না। জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক আর ওখানকার নেতৃত্বকে বলব পুরোটা দেখতে। আজ সীতাইয়ে যা করেছে তাতে ২ ঘণ্টার ভোটের ব্যবস্থা ছিল। কাল ৭ ঘণ্টা ভোট করাব। এরপর চলে গেলেন কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গে। তাঁর কথায়, বাংলায় হেরে গেছে বলে টাকা আটকে রেখেছে। এবার ধর্মের জন্য নয়, নিজের বাড়ির জল- কল-মাথার ওপর ছাদের জন্য ভোট দেবেন।
আরও পড়ুন-জুন নয়, তবে কবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ?
আপনারা পাশে থাকুন দিল্লির বুক থেকে আপনাদের বকেয়া ছিনিয়ে আনব। ১ কোটি চিঠি নিয়ে আমি দিল্লির বুকে যাব। দৃপ্ত ঘোষণা অভিষেকের। এরপর নিজেই বলে দিলেন নতুন স্লোগান, ‘নিয়ে উন্নয়নের অঙ্গীকার তৃণমূলে নবজোয়ার’। ‘আমার বুথে প্রার্থী আমার আগামী দিনে উনয়নের জোয়ার’। ‘আমার বুথে আমি পাহারাদার তৃণমূলে নবজোয়ার’। আমার উন্নয়নে আমার অধিকার তৃণমূলে ‘নবজোয়ার’। শীতলকুচির সভা থেকে বিএসএফের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাদের অত্যাচার, নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন তিনি। বিজেপির মন্ত্রী-বিএসএফের মন্ত্রী কোচবিহারের মানুষের ভোট নিয়েও কোনও কাজ করেননি।
আরও পড়ুন-‘মোদীর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি ও বালাকোটের নামে আর ভোট নয়’ কেন্দ্রের বঞ্চনাকে নিশানা অভিষেকের
এদিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ বামনহাটের তাবুতে বিএএসএফের গুলিতে নিহত প্রেমকুমার বর্মন ও মোজাম্মেল হোসেনের পরিবারের লোকজন অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের পাশে দল ও সরকার সব সময় থাকবে বলে আশ্বাস দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এরপর বামনহাট গ্রামে জনসংযোগ শুরু করেন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা আবাস যোজনার ঘর পাননি বলে জানালে অভিষেক বলেন, কেন্দ্র জোর করে টাকা আটকে রেখেছে। কিন্তু আপনারা ভরসা রাখুন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দেবেন। এরপর ঐ গ্রামের মাধাই খাল কালীমন্দিরে পুজো দেন।