দাবদাহে

নিদারুণ গরম, ঘাম, অস্বস্তি। লাগামহীন তাপমাত্রার পারদ। এক দমবন্ধকর পরিস্থিতি। কোথাও স্বস্তি নেই। হিট জ্বর, হিট স্ট্রোক, ডায়েরিয়া, বমি এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। কী করবেন আর কী করবেন না। কীভাবে বাঁচবেন এই ভরা-গরমের প্রকোপ থেকে, জানালেন মালদা মেডিক্যাল কলেজের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও অধ্যাপক পল্লব বসু। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

কমবেশি প্রতিবছরই এমন ঘটনা ঘটে তবে এবার তাপমাত্রার পারদের এই ছন্নছাড়া মনোভাব এবং বাড়াবাড়ির কারণ বৃষ্টির পরিমাণ বেশ কম। যতদিন না বর্ষা আসছে ততদিন এইরকম হিট ওয়েভটা চলবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন-‘এবার আর ধর্মের ভিত্তিতে ভোট নয়’ BSF-নিশীথকে নিশানা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

সতর্ক থাকুন
এই সময় সকাল এগারোটা থেকে বিকেল চারটে— যতটা সম্ভব বাড়ির বাইরে না বেরনো ভাল। রোদ এড়িয়ে চলুন।
সারাদিন এক তাপমাত্রায় থাকলে ভাল। অনেকেই এই সময় খুব এসি এবং বাইরে করেন। অফিসে রয়েছেন খুব ঠান্ডার মধ্যে হঠাৎ বেরিয়ে পড়ছেন প্রচণ্ড রোদে, এটা করতে গিয়ে শরীর খারাপের সূত্রপাতটা হয়।
পথে-ঘাটে কোনও খোলা ফল, খোলা খাবার একেবারেই খাবেন না। কাঁচা বরফ দেওয়া শরবত কখনওই খাবেন না। এতে ডায়েরিয়া, হেপাটাইটিস এ বা অন্যান্য ভাইরাল ইনফেকশন জাতীয় রোগ হতে পারে।

আরও পড়ুন-জুন নয়, তবে কবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ?

হাইড্রেশন মেন্টেন করা খুব জরুরি। জল সঙ্গে রাখুন। অনেকেই মনে করেন এই সময় ঠান্ডা জল খাওয়া ভাল নয় এটা ভুল বরং এই পরিস্থিতিতে ঠান্ডা জল ক্যারি করা উচিত এবং যাতে জলটা ঠান্ডা থাকে তার ব্যবস্থা করা উচিত। শুধু জল খাওয়া নয়, একটা স্প্রে বোতল নিয়ে সঙ্গে রাখুন যাতে মাঝে মাঝে মুখ-চোখে স্প্রে করতে পারেন। রুমাল ভিজিয়ে সঙ্গে রাখুন। মাঝে মাঝে চেপে নিন মুখে, গলায়।
ফুল স্লিভ, হালকা রঙের সুতির জামা পরুন। স্কিন এক্সপোজড যাতে না হয়।
গ্রীষ্মকালে টুপি মাস্ট। বারান্দা-টুপি বা চারদিকে ঘেরা থাকে যে টুপিগুলো সেগুলোই উপযুক্ত।
যাঁরা বাইক চালাচ্ছেন তাঁদের হেলমেটের কাচ নামিয়ে রাখতে হবে। ইউভি প্রোটেক্টেড সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। সস্তার সানগ্লাসে উল্টো ফল হবে।

আরও পড়ুন-‘কেন্দ্র অর্থ না দিলে, আমরা দেব’ সমস্যায় জর্জরিত মানুষকে বার্তা অভিষেকের

মুখের অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এসপিএফ তিরিশ হল এই সময় উপযুক্ত। এর কম এসপিএফ মানে ন্যূনতম ১৫-র নিচে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বা না-করা সমান।
এই সময় কাপড়ের জুতো পরতে হবে যাতে হাওয়া-বাতাস খেলে সঙ্গে সুতির মোজা। খোলা চটি কখনওই নয়।
এখন আর জলতেষ্টা পেলে তবে খাওয়া অর্থাৎ রিহাইড্রেশন নয়, তার পরিবর্তে প্রিহাইড্রেশন জরুরি অর্থাৎ বেরনোর আগে অনেকটা জল খেয়ে নেওয়া এবং পথে যেতে যেতে অল্প অল্প করে জল খেতে থাকা। গরমের দিনে এক থেকে দেড় লিটার জল ঘামের মাধ্যমেই বেরিয়ে যায়। শীতে যেখানে মাত্র চারশো থেকে ছ’শো এমএল জল বেরয়। রাস্তায় জলের অভাব হলে কলের জল খাবেন না, পরিবর্তে মিনারেল ওয়াটার খান।
যেগুলো আমাদের ইউরিনের ভলিউম বাড়ায় সেগুলো এই গরমে কম খান। যেমন কোল্ড ড্রিঙ্ক বা সোডা ওয়াটার এবং চা-কফি। গরম থেকে রক্ষা পেতে এগুলোই খান বেশিরভাগ মানুষ। এতে ইউরিনের ভলিউম বেড়ে যায় এবং বেশি ইউরিন হয় ফলে শরীর থেকে ফ্লুইড বেরিয়ে যায় অনেকটা। কাজেই এগুলো এড়িয়ে চলুন। মদ্যপান এই সময়ে একেবারেই এড়িয়ে চলুন।

আরও পড়ুন-‘মোদীর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি ও বালাকোটের নামে আর ভোট নয়’ কেন্দ্রের বঞ্চনাকে নিশানা অভিষেকের

গরম খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। শসা, তরমুজ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে সঙ্গে ক্যারি করা যেতে পারে। সারাদিন ঠান্ডা স্যালাড, টক দই ইত্যাদি খান এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে। বারে বারে খান অল্প করে।
হিট জ্বর
হিট থেকে জ্বর বা হাইপারথারমিয়া খুব কমন একটা সমস্যা। শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার চেয়েও বেশি হয়ে যেতে পারে। শরীরের চামড়া রক্তবর্ণ, মাথা ঝিমঝিম করা বা ঘোরা, শরীর অবশ হয়ে চোখে অন্ধকার দেখা, রক্তচাপ কমে যাওয়া ও হৃদ্স্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া— এগুলো হল এই জ্বরের লক্ষণ। রোগীর বমি শুরু হতে পারে।
ঠান্ডা জলে স্নান, ছায়ার নিচে বসান, আইস প্যাক শরীরে ঘষা, ঠান্ডা জল খাওয়ানো বা অবস্থা বিশেষে শিরায় ফ্লুইড চালানো— এগুলোই হল প্রধান চিকিৎসা। এই অবস্থায় হিট-ডায়েরিয়া হলে বারবার ওআরএস খেতে হবে। বমি পেলে বা বারবার বমি হলে বমির ওষুধ খেতে হবে।

আরও পড়ুন-কলকাতা পুরসভার আওতায় ছোট দোকানদারদের আর দিতে হবে না জল, আবর্জনা ফি

হিট স্ট্রোকের পূর্বাবস্থা

শরীরে ছিটেফোঁটা কোনও ঘাম নেই, ড্রাই হয়ে গেছে সম্পূর্ণ। ঘাম হওয়া কিন্তু সবসময় ভাল। জ্বালা-জ্বালা ভাব। শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, আগুন বেরচ্ছে। মাথা ঝিমঝিম করছে— এটাই হিট স্ট্রোকের পূর্বাবস্থা। এমন অবস্থা বুঝলে মাথায়-গায়ে ঠান্ডা জল ঢালতে হবে, আইস প্যাক ঘষতে হবে সারা শরীরে, প্রয়োজনে বরফ জলও ঢালতে পারেন। আর যতবেশি সম্ভব জল খাওয়াতে হবে।
হিট স্ট্রোক হলে
হিট স্ট্রোক হলে রোগী সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়বে। কথা বলার মতো অবস্থায় থাকে না। রোগীর ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়, না হলে কমতে থাকে। কোল্যাপ্স করে যায় রোগী। সারা শরীর লাল হয়ে যায়। পালস পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং একটানা বরফ ঘষতে হবে মাথায় এবং শরীরে।

আরও পড়ুন-বোলারদের দাপটে জয় দিল্লির

পথে-ঘাটে হিট স্ট্রোক
রাস্তায় কারও হিট স্ট্রোক হয়েছে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে কোথাও ছাওয়ায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে অথবা শুইয়ে দিন। এবার জামাকাপড়গুলো ঢিলে করে ঠান্ডা জল ঢালুন মাথায়, ঘাড়ে, গলায়। জল খাওয়াতে হবে অল্প অল্প করে। হিট স্ট্রোকের আসল প্রয়োজন হচ্ছে ঠান্ডা জল। যে তাপমাত্রার জল গায়ে ঢালা হবে সেটাই শরীর অ্যাবজর্ব করবে। শরীরের তাপমাত্রাকে সেই শীতলতার পর্যায়ে নিয়ে যাবে। তাই যত ঠান্ডা জল তত শরীর ঠান্ডা হবে।
ডায়েরিয়া
কারও হিট ডায়েরিয়া হলে বারে বারে ওআরএস খেতে হবে। বমি পেলে বা বারবার বমি হলে বমির ওষুধ খেতে হবে।

Latest article