রাধাচূড়ার দিনগুলি
ছবি পরিচালনার পাশাপাশি ঋতুপর্ণ ঘোষ নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন পত্রিকা সম্পাদনা ও লেখালিখির কাজ। সৃজনশীলতার এই দিকটির উপর আলোকপাত করলেন ভাস্কর লেট
সূর্য দেখানো হবে। আমাকে সূর্য দেখানো হবে। ক’দিন ধরে এই কথাটি কানের পাশে ঝোড়ো বাতাসের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল। ট্রপিক্যাল ক্লাইমেটের কোনও আধদামড়া ছেলেকে যদি কেউ বলে— সূর্য দেখানো হবে— তার ‘হাসবে না কাঁদবে’ দশা হওয়া স্বাভাবিক। মুশকিল হল, আমি মুখ ফুটে কিছু জিজ্ঞেস করতেই পারছি না।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের রিমোট আছে, ইভিএমের বোতাম আছে আপনাদের : অভিষেক
নিউমোনিয়ার লক্ষণাক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরেছে নাকি হপ্তা দুয়েক পরে। আর, মাঝের সময়টায় মরো-মরো দশায় নাকি পৌঁছে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকেরা যথাসাধ্য করেছেন। সেই প্রয়াসেরই অঙ্গ শ্বাসনালিতে কী সব নলটল ঢুকিয়ে দেওয়া। গালভরা নাম ‘ট্রাকিয়োস্টমি’। এর ফলে কথাটথা বলতে পারছি না। সারা গায়ে বেশ কিছু ‘চ্যানেল’ করা। সেখানেও নানা ধরনের নল লাগানো। এই অবস্থায় কী করে সূর্য দেখব, তাও ছাই ধরতে পারছি না। খুব ইচ্ছা করছে কাউকে ডেকে জিজ্ঞেস করি— এই সূর্য দেখার রহস্য কী?
হসপিটালের বেডে ঘোলাটে চোখ নিয়ে শুয়ে থাকি। কানের ভেতর দিয়ে কিছু তথ্য মরমে প্রবেশ করে। সবচেয়ে ঝামেলা হয়েছে, যেহেতু কথা বলতে পারছি না, জিভের কাজটি যেন বেশি করে ত্বক গ্রহণ করেছে। একটি ইন্দ্রিয় বোবা হয়ে গেলে অন্য ইন্দ্রিয় নাকি বেশি সজাগ হয়। হবে হয়তো। সামান্যতম স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠি। কিছু কিছু ‘টাচ’ তো ভয়ঙ্কর অস্বস্তিকর মনে হয়। হসপিটালে ঘড়ি থাকে না। ক্যালেন্ডারের প্রশ্ন নেই। গোলার্ধ, দিন-কাল, বডি-ক্লক সব ঘুলিয়ে একশা।
আরও পড়ুন-পরপর গ্রেফতার, ষড়যন্ত্র ফাঁস বিজেপি-হার্মাদদের
এমনই এক বিবর্ণ সকালে আমার ডাক্তারবাবু হাসি মুখে বললেন— ‘‘আজ আপনার একটি টাস্ক আছে।” যে নড়তে পারে না, সে আবার কী টাস্ক করবে? চোখে হয়তো সেই কাতর অভিব্যক্তি ধরা পড়েছিল। উনি বললেন, “আপনাকে কাগজ আর কলম দেওয়া হবে। দু’-চার কথা লিখতে হবে।”
এখানে বলে রাখি, জ্ঞান ফেরার পরে বিগত কয়েকদিন কাগজ-কলম দিয়ে কোনওক্রমে সংযোগ করছিলাম অন্যদের সঙ্গে। পাঁচ-ছ’টি শব্দ লিখতেই প্রাণান্তকর হাল। তা-ও খানিক কমিউনিকেশন তো হচ্ছে। যে কথা বলতে পারে না, হাঁটতে পারে না, তার কাছে এই কি অনেক নয়?
একটু পরেই কাগজ এল। কলম এল। ছোটবেলায় যেমন শক্ত বোর্ডের উপর কাগজ ফেলে লিখতাম পরীক্ষায় সময়, তেমন একটি বোর্ডও এল। ডাক্তারবাবু বললেন— “আজ কত তারিখ জানেন? ৩০ মে। ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন। আপনার তো এডিটর ছিলেন। তাঁকে নিয়ে দু’-চার কথা লিখুন। আমরা কিন্তু সেটা সবাই মিলে পড়ব।”
আরও পড়ুন-প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত দিল্লি
[২]
মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের কাছে ভারতবিধৌত গঙ্গা দু’ফালি হয়েছে। একফালি এই ভারত ও বঙ্গ ঘুরে মোহানায় মিশেছে। অন্য ফালিটি অসীম প্রাবল্যে প্রবেশ করেছে পড়শি দেশে। সেখানে তার নামও আলাদা। কিন্তু নিয়তি এক। সেই মোহানায় গিয়ে মিশে যাওয়া। ভূগোলের এই সামান্য জ্ঞান ঋতুপর্ণ ঘোষের জীবনেতিহাসের সমার্থক। তাঁর একটি সত্তায় চলচ্চিত্র পরিচালকের অধিষ্ঠান। অন্য সত্তায় সম্পাদকের বসত। কিন্তু স্রোত ভাগ হয়ে গেলেও গভীরতায়, নম্রতায়, সমর্পণে নদী তো নদীই থাকে। তেমনই কর্মকাণ্ডের গতিবিধি একই মানুষের ভিতরে একাধিক প্রশাখা তৈরি করে দিলেও মূল মানুষটি কি আর আলাদা হতে পারে তার শিকড় ও সম্বল থেকে?
না। এমনটি হয় না। ঋতুপর্ণ ঘোষ, আমাদের ‘ঋতুদা’র ক্ষেত্রেও তা হয়নি, ন্যাচারালি। চলচ্চিত্র পরিচালকের অন্তঃকরণটি নিশ্চিত প্রভাবিত করেছে তার সম্পাদকের চেতনাকে। আবার সম্পাদকের দৃষ্টিকোণ অবশ্যম্ভাবী প্রভাব রেখেছে ফিল্ম নির্মাণের প্রক্রিয়াকে। তবে সেগুলি মোটা দাগে, এক-দুই-তিন-চার করে, ধরে ধরে বলার মতো বিষয় নয়।
আরও পড়ুন-মোদির রাজ্যে বেহাল দশা শিক্ষাব্যবস্থার, ১৫৭টি স্কুলে পাশ করল না কেউ
গঙ্গায় ডুব দেওয়ার আগেই সচরাচর আমরা গঙ্গার নাম জেনে যাই। অনুরূপভাবে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের আগেই ওঁর সিনেমা দেখা হয়ে গিয়েছিল আরও পাঁচজনের মতো। শুনেছিলাম ওঁর শার্প ইন্টেলেক্ট, প্রসারিত লেখাপড়া এবং ব্যক্তিগত জীবন— আরও নির্দিষ্ট করে বললে— সেক্স যাপন নিয়ে অগাধ জন-কৌতূহলের বুড়বুড়ি। মুখোমুখি হলাম প্রথমবার ‘রোববার’ জয়েনের আগে, ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে। ভারি মনোরম একটি ঘরে ঋতুদা বসত। সে-ঘরের অন্তর্সজ্জা নিজেই করেছিল। সৌভাগ্য বলব, ইন্টারভিউতে প্রায় কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। কী নাম, কোথায় থাকো, কী নিয়ে পড়েছ। মামুলি তাবিজ গলায় ঝোলানোর মতো করে ‘আইডেনটিটি’ নিয়ে নাড়াচাড়া। তারপর একসময় বলল, ‘‘আচ্ছা যাও।”
আর পাঁচজন যেটা ভাবত, আমিও সেটা ভেবেছিলাম। আসলে, আমাকে দেখেই বুঝে গিয়েছিল ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’। তাই আর অযথা এনার্জি খরচ করেনি। বাতিল হয়ে গিয়েছি। এই চাকরি আর হল না। কিন্তু জীবনে অপ্রত্যাশিত তখনই ঘটে, যখন প্রত্যাশার জন্য আর কোনও হা-পিত্যেশ থাকে না। একদিন ফোন এল অনিন্দ্যদার। জানতে চাইল, জয়েন কবে করতে পারব?
আরও পড়ুন-মোদির রাজ্যে বেহাল দশা শিক্ষাব্যবস্থার, ১৫৭টি স্কুলে পাশ করল না কেউ
[৩]
‘মিথ’ বলি, বা ‘আলেয়া’। দুটো শব্দই ঋতুদার জন্য সুপ্রযুক্ত। আমার সম্পাদক শুনে— কতজন যে কত কিছু জিজ্ঞেস করেছে। ‘‘হ্যাঁ রে, খুব রাগী, না শান্ত?” ‘‘কেন অমন মেয়েদের মতো করে কথা বলে?” ‘‘পোশাকের অমন ছিরিছাঁদ কেন?” ‘‘আচ্ছা, লোকটি কিপটে না দিলখোলা?” ‘‘শুনেছি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে খুব খাতির। একটা অটোগ্রাফ এনে দিবি বচ্চনের?” ‘‘বিয়ে করেনি, সত্যি?” ‘‘ওঁর সিনেমায় নায়িকারা কী সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরে! কোথা থেকে এগুলি জোগাড় হয়, জানিস?” ‘‘এক ফোনে ঐশ্বর্য রাইকে ধরতে পারে, বাপরে!”
আরও পড়ুন-বাড়িতে বাইবেল মেলায় ২ বছরের শিশুরও যাবজ্জীবন
‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ করে মুখ্যত এসবের জবাব দিতে চেষ্টা করেছি বরাবর। তবে আমার কাছে সবথেকে উপদ্রুত সময় হয়ে উঠেছিল যখন ‘মিমিক্রি’ করার ভাল-মন্দ ও শিল্পগুণ নিয়ে মীরের সঙ্গে প্রকাশ্য বাক্বিতণ্ডায় ঋতুদা জড়িয়ে পড়েছিল। কে ঠিক, কে ভুল— এই কূটতর্কে কলকাতার এলিট ও ভাবুক সমাজ প্রায় দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পেশাদার স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানের কি অধিকার নেই সেলেব ফিল্ম ডিরেক্টরের বাচনভঙ্গি ও অঙ্গসঞ্চালন নকল করে আনন্দবিধান করার? যুক্তির একটা দিক যদি এটি হয়, তাহলে ঋতুদার যুক্তি ছিল— আমাকে কে ‘নকল’ করল বা করল না, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ব্যক্তিগতভাবে মীরের কাজ আমার ভালও লাগে। কিন্তু আমি যেটা পেরেছি সেটা অনেকেই পারেনি। সাফল্য আমাকে শক্তি দিয়েছে সামাজিক জল-অচল মনোভাব ও গুজবকে পাত্তা না দিয়ে জীবননির্বাহ করার। কিন্তু যে এখনও লড়ছে, যে এখনও সফল নয়, যে প্রতি মুহূর্তে তার লিঙ্গ পরিচয় ও যৌন-অস্তিত্বের দোলাচলের কারণে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে, আমার অপমান ও হেনস্থা দেখে, সে এই যুদ্ধ থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না তো? সে পলায়নপর হয়ে পড়বে না তো? তার মনে হবে না তো, এত সাকসেস পাওয়ার পরেও যদি সেই থোড় বড়ি খাড়ার হাড়িকাঠে জবাই হতে হয়, তাহলে এই জীবন লইয়া কী করিব?
আরও পড়ুন-আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক, ৩দিনের মধ্যে চেক হাতে পেলেন বিশেষভাবে-সক্ষম ব্যক্তি
একটি আত্ম কনফেশন এখানে না দিলে অন্যায় হবে। ঋতুদার এই কথাগুলির তাৎপর্য আমি যে তখন খুব ভালমতো বুঝতে পেরেছিলাম, তা নয়। আসলে ‘মেজরিটি’র বীজ ও বংশানুক্রম যে বহন করছে— ‘মাইনরিটি’র ছোট সুখ ছোট ব্যথা তার পক্ষে অনেক সময়ই নাগালের বাইরে থেকে যায়। তবে আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছি, ঋতুদা সময়ের থেকে কতখানি এগিয়ে ছিল। ব্যাপারটা আসলে কথাবার্তা, বাচনভঙ্গি, বা হাবভাবের আদল অনুকরণ করা বা লোক-মনোরঞ্জনের পাতকুয়োয় সীমিত নয়। এটি অর্ধেক আকাশের ব্যাপ্তির চেয়েও নীল, নক্ষত্রলোকের ওপারের কোনও নক্ষত্রলোকের দিকে ধাবমান একটি জায়মান প্রশ্ন। যা, সম্প্রতি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হতে শুনি। সমলিঙ্গ বিবাহের শুনানিতে (‘সেম সেক্স ম্যারেজ হিয়ারিং’) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, “দেয়ার ইজ নো অ্যাবসোলিউট কনসেপ্ট অফ আ ম্যান অব অ্যান অ্যাবসোলিউট কনসেপ্ট অফ ওম্যান। ইটস নট দ্য কোয়েশ্চেন অফ হোয়াট ইয়োর জেনিটালস আর। ইট’স ফার মোর কমপ্লেক্স, দ্যাটস দ্য পয়েন্ট। সো ইভন হোয়েন স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট সেজ ম্যান অ্যান্ড ওম্যান, দ্য ভেরি নোশন অফ আ ম্যান অ্যান্ড আ ওম্যান ইজ নট অ্যান অ্যাবসোলিউট বেসড অন জেনিটাল।” অর্থাৎ কে ‘পুরুষ’ আর কে ‘নারী’ তার কোনও একচ্ছত্র সংজ্ঞা হয় না। এবং কে ‘পুরুষ’ আর কে ‘নারী’ তা পৃথক করা যায় না শুধুমাত্র জন্মগত যৌনাঙ্গের মানদণ্ডে। এই বিচার-বিশ্লেষণের কাজটি বড্ড জটিল, ফার মোর কমপ্লেক্স।
আরও পড়ুন-বর্ষা দেরিতে, বৃষ্টির দাপট আরও কমবে
[৪]
ঋতুদাকে আমৃত্যু এই ঘনপিনদ্ধ কমপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে লগি টানতে হয়েছে। নারী হল নারী, পুরুষ হল পুরুষ। উত্তর এবং দক্ষিণ দিকের মতো করে এদের আলাদা করা যায়, চেনানো যায়, পাঠ্যক্রমের অংশ করা যায় একপেশে ভাবনার এই গম্বুজ ও খিলান সামাজিক সীমানাটুকু নির্দিষ্ট করে দিয়ে ঋতুদাকে প্রান্তে ঠেলতে চেয়েছে। তারপর একসময় তীব্র একা, বিচ্ছিন্ন, বিষণ্ণ করে দিয়েছে। এ আমার মূল্যায়ন নয়। ‘ফার্স্ট পার্সন’ নামে ‘রোববার’-এর সম্পাদকীয়, যা ঋতুদার ব্যক্তিগত গদ্যের প্রবাহে সিক্ত ও সদা-উর্বর, তার অনেক নিবন্ধে এই মনখারাপের ভাইরাসটিকে শনাক্ত করা যাবে। যেমন, ৩১ অগাস্ট, ২০০৮। ‘ফার্স্ট পার্সন’-এ লিখছে ঋতুদা :
‘‘বিরহ শব্দটাও অভিমান কথাটার মতো ক্রমে ক্রমে কেমন করে যেন মেয়েদের একচেটিয়া হয়ে গিয়েছে।…
পুরুষ তার সব কষ্ট আত্মস্থ করে নেয়, সে প্রকাশ্যে অশ্রুমোচন করে না, এবং সর্বোপরি নারী তাকে পরিত্যাগ করে গেলে, তার জন্য শোকানুতাপ পুরুষকে মানায় না, তাতে নারীর একচেটিয়া অধিকার।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য পেয়ে অভিভূত খাদিকুল
আর পুরুষকবিরা নারীর জন্য বিরহের ঋতু বাছেন, বিরহের পোশাক নির্বাচন করে দেন, এমনকী জানলার পাশে বিরহিণী কেমনটি করে বসবেন— হাঁটুতে চিবুক, না জানলার গরাদ ছুঁয়ে যাবে তার অন্যমনস্ক অঙ্গুলিস্পর্শ, সমস্তটাই যেন কোনও চিত্রকরের ঠিক করে দেওয়া ভঙ্গি, যাতে দৃশ্যত বিরহের একটা চিত্র ধরা পড়ে এবং বন্দি হয়ে থাকে মানুষের মনে।….
এই অবধি লিখে যখন বড় আত্মপ্রসাদ হল, ভাবলুম বাংলা সাহিত্যের ছাত্র না হয়েও বেশ কেমন তত্ত্ব খাড়া করে ফেললুম, হঠাৎ শুনি সিঁড়িতে ঠুকঠুক আওয়াজ।
রোজদিনকার সান্ধ্যভ্রমণ সেরে বাবা বাড়ি ফিরছেন, সাবধানে, সিঁড়িতে লাঠি ঠুকে ঠুকে।
আমার ঘরের বাইরে একটা ছোট করিডর। সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসে সিঁড়ির মাথায় একটু হাঁপাল বাবা। দরজার ফাঁক দিয়ে আমার ঘরের ভেতরটায় তাকাল,
আমি ডাকলাম— আসবে?
—না থাক।
বলে লাঠি ঠুকঠুক করতে করতে আস্তে আস্তে চলে গেল নিজের ঘরের দিকে।
আরও পড়ুন-হ্যাম রেডিও ফেরাল নিখোঁজ রাজেশ্বরকে
যেখানে ঘরে ঢুকে সুইচবোর্ডে আঙুল রেখে আলো জ্বালালেই মা’র ছবিগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আর, সেই উজ্জ্বলতার মধ্যেই মা আর বাবা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে মনে হয়তো-বা হিসেব করবে কার বিরহ বেশি? বাবাকে ছেড়ে মা’র? না মা’কে ছেড়ে বাবার?”
সাহিত্য ও সিনেমা— দু’টি শিল্পমাধ্যম এখানে যেন গলে গিয়ে ‘এক’ হয়ে গিয়েছে। ‘অ্যাবসোলিউট’ বলে সত্যিই কিছু হয়?
অবশেষে আমাকে ‘সূর্য দেখানো’ হল। টানা আইসিইউতে ভর্তি থাকে যারা, তাদের মনে-প্রাণে উষ্ণতা আনার জন্য বাইরের দৃশ্য, হাওয়া, ঝাপটা ও তোলপাড়ের সঙ্গে মোলাকাত করার প্রতীকী উদযাপনের নাম এই সূর্য দেখা। জল জমে আমার হাত-পা ঢোল হয়ে আছে। তা-ও অনেকের সহায়তায় গুটি গুটি করে বাইরে এলাম। বিশাল হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালাম। এরকমই প্রতপ্ত মে মাস। তায় ভরা করোনার মরশুম। রাস্তাঘাটে জনপ্রাণী নেই। সূর্যের গনগনে অর্চিস্মান স্বরূপ দেখে ভালও লাগে, আবার মনখারাপও করে। কবে আমি গিয়ে দাঁড়াব এই খোলামেলা চত্বরে?
আরও পড়ুন-বিশ্বে আধুনিক দাসত্বের শীর্ষে মোদির ভারত, শৃঙ্খলিত শ্রমিক ১.১ কোটি
ফের আইসিইউয়ের গহ্বরে চলে আসার আগে আচমকা চোখে পড়ল দু’টি গাছ। ফুলে ফুলে ভরা। একটি কৃষ্ণচূড়া। একটি রাধাচূড়া। কাছাকাছি দূরত্বে দাঁড়িয়ে হাওয়ার খুনসুটিতে দোল খাচ্ছে। গাছেদের তো শিকড় থাকে। তাই তারা নড়তেচড়তে পারে না। দূর থেকে একে-অপরের প্রতি শ্বাসরোধী ভালবাসার কথা চিন্তা করেই কাটিয়ে দেয়। তা কৃষ্ণচূড়া, না, রাধাচূড়া কোনটি ঋতুদার প্রিয় ছিল?
সূর্য দেখে ফিরে এলাম। তার আগে, ডাক্তারবাবুর কথা মেনে, ঋতুদাকে নিয়ে যা-হোক একটি লেখা লিখতে চেষ্টা করছিলাম। বাস্তবেই ওটা ছিল ‘টাস্ক’। আমার মগজ-হাত-স্নায়ু একযোগে কোনও কড়া কাজের ধকল নিতে পারছে কি না, তা দেখার অছিলা। ফুল জমে জমে পাথর হোক, ঋতুদার বেলায় কোনওদিন চাইনি। কিন্তু ৩০ মে বলে কথা! এই দিনেই তো ঋতুদা চলে গিয়েছিল, সবাইকে থ করে দিয়ে। সেই বোবা সকালের হিংস্র স্মৃতি হসপিটালেও আমাকে আক্রমণ করল।
আরও পড়ুন-সদ্যোজাতদের নামকরণ মুখ্যমন্ত্রীর, পরিদর্শন করলেন শালবনি হাসপাতাল
তাড়াতাড়ি লিখতে পারছি না। কেমন করে লেখাটা শেষ করব তা-ও জানি না। কিন্তু মনে মনে ঠিক করে নিলাম— যাই লিখি, আর যেমনই লিখি, একমুঠো হলুদ রাধাচূড়া আজ ছুঁড়ে দেবই দেব— এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে।
অনুকরণ নয় অনুসরণ
সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা-দর্শনের কাছে বারবার নতজানু হয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। হয়ে উঠেছিলেন যোগ্য উত্তরসূরি। কীভাবে? বিশ্লেষণ করলেন পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়
১৯৮০ থেকে ১৯৯০— এই এক দশক বাংলা সিনেমা থেকে এক পচনশীল অস্তিত্বহীনতার গন্ধ বেরোচ্ছিল। বাংলা সিনেমা আস্তে আস্তে তার ঐতিহ্য, বনেদিয়ানা এবং ইতিহাসের কথা প্রায় ভুলে গিয়ে ঠুনকো বাণিজ্যিক সিনেমাকে আঁকড়ে ধরে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অক্ষম প্রচেষ্টায় মেতেছিল। সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিক, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার ঋদ্ধ বাংলা সিনেমা যখন শুধুমাত্র বাণিজ্যের দাসত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, শিক্ষিত, মেধাবী, মধ্যবিত্ত বাঙালি দর্শক যখন সিনেমা হলে যাওয়া একরকম বন্ধই করেছেন, ঠিক তখনই ঋতুপর্ণ ঘোষ নামক এক চলচ্চিত্রকারের আবির্ভাব বাংলা সিনেমাকে নতুন করে অক্সিজেন দিল। বাংলা সিনেমা আবার একই সঙ্গে শিল্প এবং বাণিজ্যের এক মায়াবী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হল। সংস্কৃতিমান সাহিত্যবোদ্ধা, সিনেমাপ্রেমী বাঙালি দর্শক যেন ‘হীরের আংটি’ থেকে ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’-এর মধ্যে তাদের সবচেয়ে প্রিয় সত্যজিৎ রায়ের উত্তরসূরিকে খুঁজে পেলেন।
আরও পড়ুন-ওয়েবে ভিন্ন স্বাদ, দর্শক মাত
১৯৯২ সালে মৃত্যু ঘটে সত্যজিৎ রায়ের। সেই বছরই মুক্তি পায় ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম কাহিনিচিত্র ‘হীরের আংটি’। যা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের চলচ্চিত্রায়ণ এবং এক অনন্য শিশু চলচ্চিত্র হিসেবে বাঙালির খুব কাছের ছবি। যে ছবিতে বাঙালি দর্শক আবার নতুন করে সত্যিদের স্পর্শ, বর্ণ এবং গন্ধের স্বাদ পায়। গুপি-বাঘা এবং ফেলুদার সেই নস্টালজিক দ্বিপ্রহরগুলি বাঙালি আবার নতুন করে অনুভব করতে শুরু করে এই ছবির মধ্যে দিয়ে।
খুবই ফুরফুরে অ্যাডভেঞ্চারধর্মী শিশুসুলভ ‘হীরের আংটি’র দর্শক যখন আবার অমন হালকা সত্যজিৎ-মেজাজ আশা করছেন ঋতুপর্ণ ঘোষের কাছে তার পরের ছবিতে, ঠিক তখনই ‘উনিশে এপ্রিল’ নামক এক অনন্য চমক বাঙালির অস্তিত্বকে এক প্রকার নাড়িয়ে দিল। বাঙালি বুঝতে পারে ঋতুপর্ণ ঘোষ নামক এই চলচ্চিত্রকার তাঁর গুরু সত্যজিৎকে অনুকরণ করতে আসেননি, এসেছেন অনুসরণ করতে। সত্যজিতের অমন অনন্য গুণমুগ্ধ হয়েও তাঁকে সিনেমা শিক্ষার এক অনন্য শিক্ষক হিসেবে মেনে নিয়েও ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর বিষয় নির্বাচনে, চিত্রনাট্য রচনায়, ক্যামেরা ছন্দে, রূপ-রস-গন্ধে ভরা চলচ্চিত্র চিত্রণে কোথাও একবারের জন্যও তাঁর ভগবানের কাছ থেকে কিছু মাত্র ধার করেননি। শুধুমাত্র সত্যজিতের সিনেমা-দর্শনের কাছে নতজানু হয়েছেন বারবার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তবুও কেন আমরা ঋতুপর্ণ ঘোষকে সত্যজিৎ-এর যোগ্য উত্তরসূরি বলে থাকি। তার কতগুলি কারণ আজ বিশ্লেষণযোগ্য।
আরও পড়ুন-কবি নজরুলের জীবনে নারী
বিষয় নির্বাচন
সত্যজিৎ যে সময় ছবি করতে শুরু করলেন সেই সময় তিনি প্রথম থেকেই ঠিক করে নিতে পেরেছিলেন যে তিনি তাঁর শিল্পের কাছে, বোধ এবং শিক্ষার কাছে কমিটেড থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। কোনও বাণিজ্যিক হাতছানির কাছে মাথা নোয়াবেন না। সেটা তিনি শেষ দিন পর্যন্ত করে গেছেন। তার একটা প্রধান কারণ সেই সময়ের দর্শক। দর্শকের সামনে তখন বাণিজ্যিক ছবি বলতে অজয় কর, অসিত সেন, তপন সিনহা এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে তরুণ মজুমদার ,অরবিন্দ মুখার্জি, অগ্রদূত— এইসব পরিচালকদের ছবি, যা মূলত ছিল সাহিত্যনির্ভর, ঝরঝরে, রুচিশীল বাংলা এবং বাঙালি ধারণার সিনেমা। যা বাঙালি শিক্ষিত দর্শককে সত্যজিতের শিল্প-স্নিগ্ধ ছবির সঙ্গে আলাপন ঘটাতে অনেকটা সাহায্য করেছিল। তার সঙ্গে সত্যজিতের সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে এসে গেলেন মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটক। যাঁরা সিনেমাকে শুধুমাত্র একটি শিল্পের মাধ্যম হিসেবেই দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। ফলে সত্যজিৎ তাঁর বিষয় নির্বাচনে থাকতে পেরেছিলেন কমিটেড। কিন্তু ঋতুপর্ণ ঘোষ যে-সময় ছবি করতে এলেন সে-সময় মূলধারার বাংলা বাণিজ্যিক ছবি তার চিন্তাধারার চলচ্চিত্র থেকে প্রায় আলোকবর্ষ দূরে বিচরণ করে। তাতে না আছে কোনও আত্মা, না আছে শরীর, সে এক হাড়-জিরজিরে দুর্বল অস্তিত্ব। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত দর্শক সেইসব ছবি থেকে পাচ্ছেন না তাঁদের মন এবং মস্তিষ্কের খোরাক, ফলে তাঁরা থিয়েটারে যাওয়া একরকম বন্ধই করেছেন। এই সময় ঋতুপর্ণর আবির্ভাব। তিনি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। বিষয় নির্বাচনে তিনি বাঙালির মধ্যবিত্তের অস্তিত্বের সংকটকে কখনও কাব্যিক দ্যোতনায়, কখনও গথিক গদ্যের কেকোফোন নিতে প্রাঞ্জল করে তুলেছেন।
আরও পড়ুন-চড়া রোদ, প্রবল ঝড়বৃষ্টিতেও উন্মাদনা তুঙ্গে, অভিষেকের প্রতীক্ষায় পুরুলিয়া
অভিনেতা নির্বাচন
‘জলসাঘর’ এবং ‘নায়ক’-এর মতো ছবি করতে গিয়ে সত্যজিৎবাবু ইন্ডাস্ট্রির স্টারডম এবং সিনেমা যে একটি স্টার সিস্টেমের দাস তা মাথা নত করে মেনে নিয়েছেন। ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমারকে বেছে নেওয়ার আগে দু’বার ভাবেননি। এক্ষেত্রে তাঁর অভিনেতা নির্বাচনে ঋতুপর্ণ সত্যজিতের এই থিওরিটিতে বেশি আস্থা রেখেছেন। ‘উনিশে এপ্রিল’-এ প্রধান দুই চরিত্রে তিনি বাংলা সিনেমা দুই কালের দুই সুপারস্টারকে নির্দ্বিধায় কাস্ট করলেন। অপর্ণা সেন এবং দেবশ্রী রায় দু’জনের রূপে গুণে এবং গ্ল্যামারে স্টারডমে বাঙালির কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। একটি ক্যামিও চরিত্রে তিনি আরেকজন সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে কাস্ট করলেন এবং সেই সময়ের বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী রায়ের জুটি প্রায় উত্তম-সুচিত্রার জনপ্রিয়তার সমতুল্য। তাই প্রসেনজিৎ-দেবশ্রীর রসায়নকে তিনি ঋতুপর্ণীয় ভঙ্গিতে রূপায়িত করলেন। পরে নিয়েছেন আরও অনেক তারকাকে।
আরও পড়ুন-প্রতি সপ্তাহে কোভিডে ৬ কোটি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চিনে!
রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ
এবং ঋতুপর্ণ
বাঙালি মননের অন্তরালে ডুব দিতে সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের কাছে ফিরে গেছেন চারবার। ঋতুপর্ণ ঘোষ গেছেন দু’বার। ঋতুপর্ণ নিজে রবীন্দ্রনাথের এত বড় গুণমুগ্ধ পাঠক, আদ্যোপান্ত রাবীন্দ্রিক মানুষ হয়েও ‘চোখের বালি’ ও ‘যোগাযোগ’ ছাড়া রবীন্দ্রনাথকে তাঁর চলচ্চিত্রের ভিত্তি করেননি। সেক্ষেত্রের কারণ একটাই, পরিচালকের সমসময়। ঋতুপর্ণর চলচ্চিত্রে প্রধান থিম হিসেবে যে দুটি বিষয় ছিল খুব কমন তা হল ফেমিনিজম এবং মধ্যবিত্ত সমাজের নারীদের উপর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। যার শুরুটা হয়েছিল সতীদাহ প্রথা এবং বিধবাবিবাহ দিয়ে। ‘চোখের বালি’ তাই বিনোদিনীর সংকটকে বিনোদিনীর অস্তিত্বের অ্যানাটমিকে ব্যবচ্ছেদ করার এক সাহসী প্রয়াস বলা যেতে পারে। এবং এক্ষেত্রেও এই সাহস তিনি গুরুর কাছ থেকেই পান। আমরা দেখি, নষ্টনীড়ের ডিকনস্ট্রাকশন করতে সত্যজিৎ ভয় পাননি। পূর্বসূরির মতো ঋতুপর্ণ রবি ঠাকুরের গানকে তাঁর ছবিতে এমনভাবে এনেছেন এমন স্বাভাবিক এবং সাবলীলভাবে এনেছেন যা দেখে বাঙালির বারবার মনে হয়েছে এ গান গুরুদেব যেন ঋতুপর্ণর জন্যই লিখে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ঝাড়গ্রামে নবজোয়ার, প্রস্তুতি তুঙ্গে
সত্যজিৎ এবং ঋতুপর্ণ
আরও তিনটি বিষয়ে ঋতুপর্ণ তাঁর পূর্বসূরিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন, তা হল ছবি বানাতে গিয়ে তাঁর প্রধান তিনটি ডিপার্টমেন্টকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। ছবির সিনেমাটোগ্রাফি অর্থাৎ ক্যামেরা, শিল্পনির্দেশনা আর তৃতীয়টি হল প্রতিটি চরিত্রের লুক অ্যান্ড ফিল অর্থাৎ পোশাক এবং মেকআপ। এই বিষয়গুলো নিয়ে ঋতুপর্ণ ছিলেন তার পূর্বসূরির মতোই অসম্ভব খুঁতখুঁতে এবং খানিকটা পাগল।
জীবনের শেষের দিকে ছবিগুলোতে সত্যজিৎ ছবি বানাচ্ছেন খুব সহজভাবে গল্প বলার মধ্যে দিয়ে। নিজের বক্তব্য পেশ করছেন এই সমাজের প্রতি, জীবনের প্রতি, সমাজের ভণ্ডামির প্রতি, দুর্নীতির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে। ঋতুপর্ণও তেমনি তাঁর পূর্বসূরির মতোই জীবনের শেষ কয়েকটি ছবিতে নিজের জীবন এবং শিল্পকে একাকার করে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ এবং মানুষ ঋতুপর্ণ একাকার হয়ে চিত্রাঙ্গদা থেকে আবহমান হয়ে, হয়ে উঠছেন সোচ্চার। যৌনতা নিয়ে সমকামিতা নিয়ে বাঙালি মধ্যবিত্তের ট্যাবু এবং গোঁড়ামিকে তিনি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন— দেখিয়ে দিচ্ছেন, বাঙালি চিন্তার দৈনতাকে এবং সেটা আরও স্পষ্ট করে নির্ভীকভাবে বলার জন্য তিনি নিজেই এসব চরিত্রে অভিনয় করতে নেমে পড়েছেন। মানুষ ঋতুপর্ণ এবং শিল্পী ঋতুপর্ণ যে এক, তাঁর জীবনবোধ এবং তাঁর শিল্পবোধের কোথাও কিছুমাত্র বিরোধ নেই, সেটা দর্শকের কাছে এক ভয়ঙ্কর সত্য হিসেবে নথিবদ্ধ করে যাচ্ছেন।