বিজেপি নেতাদের কাছে একটাই নাম যথেষ্ট ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের সেরা তরুণ নেতা অভিষেক রাজ্য তথা দেশের বিজেপি নেতাদের কাছে আতঙ্ক। পঞ্চায়েত কিংবা ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে অভিষেকের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাকে যথেষ্ট সমীহ করছে রাজনৈতিক মহল। পঞ্চায়েত ও ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে হারের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এগিয়ে দিচ্ছে বারবার।
আরও পড়ুন-কাপ-যুদ্ধে বিরাটরাই ফেভারিট : পিটারসেন
ইডির তদন্তকারীর মুখে ঝামা ঘষে বেরিয়ে আসার পর দৃপ্তকণ্ঠে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন অভিষেক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ করলেন তিনি ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু থাকলে গ্রেপ্তার করো। আমি যে স্টেটমেন্ট দিয়েছি তা আদালতে জমা করুক।’ তাহলেই তদন্তকারী সংস্থার দৌড় কতদূর বোঝা যাবে। এভাবে সিবিআই ও ইডিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার মতো নেতা সারা ভারতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি বলছেন, ‘সাড়ে ন’ঘণ্টা কেন চব্বিশ ঘণ্টা জেরা করলেও মেরুদণ্ড বিক্রি হবে না, বাংলার মানুষ মাথা নত করতে জানে না।’ স্বীকার করতেই হবে বুকের পাটা আছে অভিষেকের, বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করছেন।
আরও পড়ুন-শুরুতেই পাঁচ গোল খেল ভারত
১৩ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয়ে কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে না পারার জন্য সিবিআই ও ইডিকে ব্যবহার করছে বিজেপি সরকার। প্রতিহিংসার রাজনীতি বলেই বিবৃতি দিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে অভিষেকের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। এটা যে কোনও নেতার কাছে অত্যন্ত সম্মানের। আসলে ইন্ডিয়া জোটকে ভাঙতে বিজেপি সিবিআই ও ইডিকে ব্যবহার করছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ৩২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। আবার কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বাড়িতে পাঁচিল টপকে ঢুকেছিল সিবিআই, গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। আম আদমি পার্টির নেতা মন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকেও গ্রেফতার করে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন ‘কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’! তাহলে এখন সিবিআই বা ইডিকে কী বলা হবে? জগাই-মাধাইরা গদাইদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এত কিছুর পরও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই-এর চোখে চোখ রেখে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-সময় বাঁচাতে ভার্চুয়াল মাধ্যম
বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডির তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। বিজেপি নেতা তথা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা ঘুষ কেলেঙ্কারি ও চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার পরেও তদন্তকারী সংস্থা চুপ! বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা— জমি ও খনি কেলেঙ্কারি, রমেশ পোখরিয়াল— জমি কেলেঙ্কারি, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নারদা স্টিং অপারেশনের ভিডিওতে হাত পেতে টাকা নেওয়ার পরেও ইডি কিংবা সিবিআই একবারও ডাকার সময় পেলেন না। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন চিঠি দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ জানানোর পরেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চুপ! আসলে সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার বিজেপিতে যোগ দিলেই সাত খুন মাফ। দশ বছর কেটে গেলেও বিচার শুরু হয়নি সারদা মামলার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সারদার প্রতারিত মানুষদের টাকা ফেরাতে শুরু করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তভার নেবার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে গ্রেপ্তার হবে শুভেন্দু— অভিষেকের এই বক্তব্যে হইচই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
আমাদের রাজ্যে আত্মহত্যা করলেও সিবিআই তদন্ত কিংবা টাকার গন্ধ থাকলে ইডির তদন্ত শুরু হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন-সময় বাঁচাতে ভার্চুয়াল মাধ্যম
কেন্দ্রীয় সংস্থা ক্যাগের রিপোর্টে সাড়ে সাত লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে। এই সাড়ে সাত লক্ষ টাকার দুর্নীতি করার জন্য কেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত হল না? এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে খরচ হয়েছে আড়াইশো কোটি টাকা! আর আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-৩-কে চাঁদে পাঠানোর জন্য খরচ করছেন মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। এক কিলোমিটার রাস্তার জন্য টেন্ডারে বরাদ্দ ছিল ১৬ থেকে ২৫ কোটি টাকা সেখানে কী করে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হল? অন্যদিকে, করোনা অতিমারির সময় দিনের আলোয় পি এম কেয়ার ফান্ডের নাম করে হাজার হাজার কোটি টাকার কোনও হিসাব দেওয়া হল না— সেখানে ইডি ও সিবিআই কোথায়?
আরও পড়ুন-কোটায় উত্তরপ্রদেশের পড়ুয়ার মৃত্যু
নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে? বিজেপি-বিরোধী হলেই সিবিআই ও ইডি তদন্ত করবে— এই জিনিস চলতে পারে না। লিপস অ্যান্ড বাউন্সের অফিসে গিয়ে তল্লাশির নামে ষোলোটা ফাইল ডাউনলোড করলেন ইডি অফিসার— সাফাই দিতে গিয়ে বলছেন, ইডি আধিকারিক মেয়ের হোস্টেলের খোঁজ করছিলেন! তা হলে ছেলেদের হোস্টেলের আবাসিকদের তথ্য ডাউনলোড করার কারণ কী? অভিজ্ঞ মহলের মতে আসলে অভিষেকের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ না থাকায় ইডি অফিসার চক্রান্ত করার কোনও ছক কষেছিলেন। নবজোয়ার কর্মসূচির মাঝপথে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কর্মসূচি থামিয়ে তিনি তদন্তকারী সংস্থার কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। যতবার তদন্তকারী সংস্থা ডেকেছেন ততবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে গেছেন। কেন অভিষেককে বারবার ডাকতে বাধ্য হচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই? আসলে মোদি-অমিত শাহ-সহ বাংলার বিজেপি নেতাদের খুশি করতেই এই কাজ করছে ইডি ও সিবিআই।