বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার অধীন এলাকাগুলো মূলত নদীপ্রধান এবং কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এখানকার জলবায়ু অনুযায়ী আবহাওয়াতে আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে। এখানে সাপ দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া বর্ষার মরশুমে সাপখোপ, পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। ফলে সাপের কামড়ের দুর্ঘটনাও বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এ রাজ্যে সাপ
পশ্চিমবঙ্গে গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, কালাচ, শঙ্খচূড় এবং শাখামুটি সাপ দেখতে পাওয়া যায়। শঙ্খচূড় বীরভূম-পুরুলিয়ার পাথুরে এলাকায় এবং বসিরহাট এবং শহর সংলগ্ন এলাকায় মূলত কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া এবং কালাচের দেখা মেলে।
সাপ থেকে বাঁচতে
সাপ থেকে বাঁচতে সাপের স্বভাবটা জানা জরুরি। তাহলে আত্মরক্ষা করতে পারবেন সহজেই। সাপ কিন্তু গৃহস্থ বাড়িতে ঢোকে খাবারের খোঁজে। যে বাড়িতে ইঁদুর আছে সেই বাড়িতে সাপ আসবেই। সাপ হয় ভয় পেয়ে কামড়ায়, না হয় লেজে পা পড়লে কামড়ায়। ঘরে-বাইরে কিছু জায়গায় সাপ লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে, যেমন ইটের পাঁজা। হাঁস-মুরগির যে বাসস্থান সেখানে ডিম খেতে ওরা আসে, সেখানেও লুকিয়ে থাকে।
শীতকালে কয়লার গাদা এবং ঘুঁটে রাখার জায়গা, উনুনের আশপাশে যেখানে উত্তাপ পাবে সেখানে ওরা লুকিয়ে থাকে। অসাবধানতায় এই সব স্থানে হাত দিয়ে দিলে ইরিটেড হয়ে কামড়ে দেয়। খেত-খামারেও হাঁটাচলার সময় সতর্ক না হলে দংশনের সম্ভাবনা প্রবল।
আরও পড়ুন-লক্ষ্য বিজিবিএস, সফরের লগ্নিচুক্তি রূপায়ণে কাজ শুরু
তবে কালাচের কামড়ানোর ধরনটা পৃথক। রাত ছাড়া এই সাপ সচরাচর কামড়ায় না। এর একটা অভ্যেস মাটিতে বিছানা থাকলে সেখানে নিঃশব্দে উঠে বসে থাকে। কেউ যখন শোয় সেই বিছানায়, কালাচ তখনও আক্রমণ করে না। এবার সে যখন এপাশ বা ওপাশ ফেরে তখন সাপটা চাপা পড়ে গেলে কামড় দেয়। গ্রামাঞ্চলে এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটতে দেখা যায়। সেখানে ঘরে বা ঘরের বাইরে যাঁরা শোন তাঁরা যদি মশারি না টাঙান তাহলে কালাচ সাপ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মেনে দেগঙ্গায় যুদ্ধকালীন তৎপরতা, হানি হাব তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে
সাপের কামড়
সত্তর শতাংশ সাপের কামড় হল ড্রাই বাইট অর্থাৎ তারা বিষ ঢালে না। এই সব ক্ষেত্রেই ওঝারা আক্রান্তকে বাঁচাতে সক্ষম হয় আর মানুষ ভাবে ওঝা বুঝি বিষ নামিয়েছে। বিষহীন সাপের কামড়েও মানুষ মারা যায়। সেক্ষেত্রে প্রচণ্ড ভয় থেকে অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
সাপ সচরাচর যেখানে কামড়ায় সেখানে স্থানীয় বিষক্রিয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা তীব্র ব্যথা, জ্বালা অনুভূত হয়। ওই অংশের রং বদলে যায়, ফোসকার মতো তৈরি হয়, মনে হয় পুড়ে গেছে।
কেউটে, গোখরো ইত্যাদির বিষক্রিয়ার প্রধান লক্ষণ শিবনেত্র অর্থাৎ চোখের পাতা পড়ে আসে। খোলা যায় না।
চন্দ্রবোড়ার কামড়ে জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি ওই অংশের চামড়া এবং চামড়ার তলার টিস্যুগুলোকে নষ্ট করে দেয়। চামড়া খুলে বেরিয়ে আসে, কিছুক্ষেত্রে চামড়া প্রতিস্থাপনও করতে হতে পারে। রক্ত তঞ্চনকে তছনছ করে দেয়। ফলে শরীরের ভিতরে এবং বাইরে ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়। বেঁচে ফিরলেও পরবর্তীকালে ভয়াবহ ঘা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশে তৈরি দুর্গা পূজিত হন মালদহে
কালাচের তীব্র বিষ। কালাচের কামড় ধরার উপায় নেই। ভোর রাত থেকে বমি, পেটব্যথা, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, গলার স্বর বদল হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই একমাত্র এর লক্ষণ ধরতে পারেন।
বাচ্চা সাপ কামড়ালে কম বিষ ঢালে এটা ভ্রান্ত ধারণা। বড় সাপ বিষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু ছোট সাপের তার বালাই নেই, পুরো বিষটাই ঢালবে এবং তাদের বিষ থলিতে এতটাই বিষ থাকে যে সেই সাপ একজন বড় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সাপের কামড় থেকে বাঁচতে
সাপ রয়েছে জানলে রাতের অন্ধকারে লাঠি ঠুকে আওয়াজ করে যাওয়া।
হাঁস-মুরগির ঘরে হাত ঢোকানোর আগে ভাল করে দেখে নেওয়া।
সাপ উপদ্রুত এলাকায়, খেত-খামারে, আলে হেভি ডিউটি গ্লাভস, গামবুট ইত্যাদি পরতেই হবে।
বাড়িতে একেবারেই ইঁদুরের আস্তানা হতে না দেওয়া।
কামড়ালে কী করণীয়
সাপের কামড়ের দাগ বা সাপ খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। আমাদের ধারণা বিষধর সাপ কামড়ালে পাশাপাশি দুটো ফুটো দেখা যাবে। কিন্তু কালাচের কামড় অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুঁজেই পাওয়া যায় না। দাঁতের সেই দাগ খুঁজতে গিয়ে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই ওর ওপর নির্ভর না করে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া দরকার।
আক্রান্তকে প্রথমেই বারবার আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁর কিছু হবে না। আতঙ্কিত হবেন না।
ওঝার কাছে কোনও অবস্থাতেই নিয়ে যাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন-বাংলার বকেয়া আদায়ে কেন্দ্রকে ৫০ লক্ষ চিঠি, সরব অভিষেক
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একসঙ্গে তৈরি করা একটা অ্যাপ রয়েছে যেটা বলে দেবে আপনার নিকটবর্তী সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র কোনটা যেখানে পর্যাপ্ত সাপের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিস্নেক ভেনিম রয়েছে, পাওয়া যাবে।
কোনওভাবে সাপে কেটেছে মনে হলে শরীর একেবারেই বেশি নাড়ানো যাবে না। কারণ বেশি নড়লেই বিষ শরীরে ছড়াতে থাকবে।
অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য অপেক্ষা না করে মোটরসাইকেলে বসিয়ে রোগীকে নিয়ে চলে আসতে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। হাসপাতালে এনেই বেডে শুইয়ে দিতে হবে।
ওই ক্ষত অংশে কাপড় বা দড়ির বাঁধন দেওয়া যাবে না। কারণ সাপের বিষ যায় আমাদের লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি দিয়ে ফলে সেই লিম্ফ চ্যানেলকে আটকাতে কষে বাঁধন দিলে সেই অংশে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গ্যাংগ্রিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কষে বাঁধন দিয়ে কেউ নিয়ে আসার পর হাসপাতালে সেটা খোলা হলেই সঙ্গে সঙ্গে একটা রক্তের রাশ ওই অংশে তীব্র ভাবে ঢুকে পড়ে। যার ফলে বিষটা সুনামির মতো সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন-এশিয়ান গেমস: ৩ দিনে ভারতের ঝুলিতে ১৪টি পদক! শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
সাপের কামড়ে প্রথম একশো মিনিট হল গোল্ডেন টাইম অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে এলে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব।
সাপের বিষের প্রতিষেধক নিতে বহু মানুষ ভয় পান, সেটা ভুল ধারণা। এতে কোনও রিঅ্যাকশন হয় না বললেই চলে।
চন্দ্রবোড়ার কামড়ে রক্ত আর বন্ধ হয় না। সবচেয়ে এফেক্টেড হয় কিডনি। ফলে রিকভারি খুব চাপের। এক্ষেত্রে আক্রান্তকে সিসিইউতে শিফট করতে হয়। তাই যত দ্রুত হাসপাতালে এলে প্রাণহানি থেকে বাঁচবে মানুষ।