প্রতিবেদন : টানা ধরনা। জনস্রোত। আমজনতার ক্ষোভ। শেষে প্রবল চাপ কাটাতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলকে। রাজ্যপালের কাছে চিঠি গিয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সেই চিঠি পাওয়ার পরেই আজ, সোমবার রাজভবনে বিকেল ৪টেয় বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন-শীতের আগেই কলকাতার বাস ট্রাম হবে নীল সাদা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনামঞ্চ থেকে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন রাজ্যপালের উদ্দেশে। একটি হল, ২২ লক্ষ মানুষ মনরেগায় কাজ করেছেন। রাজ্যপাল বলুন তা ঠিক না ভুল। ঠিক হলে তাদের প্রাপ্য বিগত দু’বছরের মজুরি মিটিয়ে দেওয়া হোক। কেন্দ্রকে এখনই সুপারিশ করুন রাজ্যপাল। আর যদি উল্টোটা হয় অর্থাৎ রাজ্যপাল যদি গরিব মানুষকে হকের টাকা দিতে না চাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন, তাহলে তৃণমূল আদালতে যাবে। সেখানেই কেন্দ্রের বঞ্চনার ফয়সালা হবে। আজ বিকেলের বৈঠকে এই দুটি প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর চাইবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জবাব দিতে হবে কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপালকে। কেন্দ্রের লজ্জাহীন বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লিতে আন্দোলন হয়েছে। দিল্লির বিজেপি নেতারা রাজনৈতিক লজ্জাহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। মারধোর করেছেন প্রতিনিধিদের। সময় দিয়েও পিছনের দরজা দিয়ে মন্ত্রীরা পালিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবাদ থামেনি। বাংলায় এসে ধরনা চলছে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যপালের দায়িত্ব বঞ্চনার টাকা বাংলার গরিব মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া। তাই রাজভবন চলো অভিযান, ধরনা এবং প্রবল চাপের জেরে রাজ্যপালের বৈঠক।
আরও পড়ুন-শ্লীলতাহানির মামলায় নওয়াজ পরিবারকে পুলিশের ক্লিনচিট
রবিবার রাতে রাজভবনের বৈঠকের আমন্ত্রণ আসার আগে দিনভর তৃণমূলের ধরনায় জনস্রোত ক্রমশ বেড়েছে গোটা এলাকায়। প্রতিবাদী মানুষের ভিড় সঙ্গে বঞ্চিতরা। রাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন এবং সে-নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে দেন। একটি রাজ্যপালের চিঠি এবং অন্যটি হল বঞ্চিতদের পাওনা টাকা। সেই বকেয়া বরাদ্দ সুদে আসলে যে ক্রমশ বেড়েছে এবং কী কারণে বেড়েছে, তা যুক্তির পাশাপাশি মনরেগার আইন তুলে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-বন্ধুর কাছে পাঠালেন ২০০০, নিজের অ্যাকাউন্টে এল ৭৫৩ কোটি টাকা
বোসের চিঠির জবাব : রীতিমতো বছর-তারিখের পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করেছেন অভিষেক। বলেন— ১০ অগাস্ট ২০২১, ২২ জুলাই ২০২২, ১৫ জুন ২০২১, ১০ অক্টোবর ২০২২, ২৮ এপ্রিল ২০২৩ এবং ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, এই দিনগুলিতে বিজেপির নেতা-বিধায়কেরা মিছিল করে রাজভবনে এসেছে। তখন ১৪৪ ধারার কথা একবারও কেন মনে হয়নি রাজ্যপালের?
আরও পড়ুন-বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, মৃত ১৩ শ্রমিক
সুদও দিতে হবে : অভিষেক মনরেগার বই থেকে সাংবিধানিক অংশ তুলে ধরে (২৬ নং পাতা-২৯ ধারা) অভিষেক দেখিয়ে দেন, এই আইন অনুযায়ী, কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকের টাকা না দিলে ১৬তম দিন থেকে ওই শ্রমিককে ০.০৫ শতাংশ হারে সুদ দেবে কেন্দ্র। সেই হিসেব অনুযায়ী গত দু-বছরে আটকে রাখা টাকার ওপর মোট ৩৬ শতাংশ সুদ দিতে হবে বাংলার ২১ লক্ষ ৭৫ হাজার বঞ্চিতদের। অভিষেকের কথায়, আমি দিল্লিতে ১০ শতাংশ সুদের কথা বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন আইন বলছে ৩৬ শতাংশ সুদ দিতে হবে। হিসেবমতো এবার ৩৮০০ কোটি টাকার ওপর ৩৬ শতাংশ সুদ যোগ করে সেই টাকা দিতে হবে বঞ্চিতদের। এই বিষয়টিও রাজ্যপালকে জানাবেন অভিষেক।
আরও পড়ুন-সিকিমে নিখোঁজ ১০
বাংলা থেকে কত টাকা : রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় উপচে-পড়া জমজমাট ধরনামঞ্চে দাঁড়িয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও একটি বিষয় সকলের নজরে আনেন। এ-ক্ষেত্রেও তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩-এর এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছে বাংলা থেকে। হিসেব বলছে, ২০১৮ সালে ৮৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা নিয়েছে। ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে নিয়েছে ৮৪ হাজার ১৪ কোটি টাকা। ২০২০-’২১ সালে নিয়েছে ৭৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। ২০২১-’২২ সালে ১ লক্ষ ১ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩ সালে ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। অভিষেকের কথায়, কেন্দ্র এখান থেকে টাকা নিচ্ছে কিন্তু আমাদের প্রাপ্য দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন-সিকিমে মৃতের পরিবারের পাশে তৃণমূল
এজেন্সি-রাজনীতি : এদিন, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতে সিবিআইয়ের হানা নিয়েও তোপ দেগেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, বিজেপির ওপর চাপ বাড়ছে তাই এজেন্সি-হানা। আমাকে তো সকাল-বিকেল নোটিশ দিচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল দলটা এমনই, সিবিআই বেরিয়ে যেতেই মদন মিত্র ধরনামঞ্চে চলে এসেছেন। ফিরহাদ হাকিমও সোমবার আসবেন। এটাই তৃণমূল কংগ্রেস। রথীন ঘোষের বাড়িতেও তো গিয়েছিল!
আবাসে বিজেপি : আবাস যোজনায় দুর্নীতি হয়েছে বলে বিজেপি চিলচিৎকার করছে। এদিন আবাসে বিজেপি নেতা-নেত্রী ও তাদের পরিবারের কাদের আবাসে নাম রয়েছে তা জানান। সেই তালিকায় যেমন নিশীথ প্রামাণিকের বাবার নাম রয়েছে। তেমনই পুরুলিয়ার গোপীবল্লভপুর- রঘুনাথপুর-ঝাড়গ্রামেরও বিজেপির প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান ও তার পরিবারের লোকেদের নামও রয়েছে।