ছোটদের ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা ‘সন্দেশ’। একশো বছর পেরিয়েছে কবেই। আজও প্রকাশিত হচ্ছে। বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। সন্দীপ রায়ের সম্পাদনায়। নানা বিষয়ের লেখায় সমৃদ্ধ।
এই বছর শিশিরকুমার মজুমদারের শতবর্ষ।
ফিরে দেখা বিভাগে আছে তাঁর গল্প ‘দাগী’। গল্পের সঙ্গে আছে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা। সবমিলিয়ে ছোটদের বড় প্রাপ্তি। শিশিরকুমার মজুমদার স্মরণে একটি স্মৃতিকথা উপহার দিয়েছেন ভবানীপ্রসাদ দে।
আরও পড়ুন-ক্ষমতায় এলেই কৃষকদের ঋণ মকুব হবে, ছত্তিশগড়ে প্রতিশ্রুতি রাহুলের
‘পথের পাঁচালী’ প্রথম দেখার স্মৃতি উজাড় করেছেন পবিত্র সরকার— ‘আমার নানা অবান্তর কথা, আর পথের পাঁচালী দেখা’ লেখায়। পড়তে ভাল লাগে। এর পাশাপাশি সৌম্যকান্তি দত্তর ‘আমাদের দীপদা’ ও তমাল মৈত্রর ‘সুধীর মৈত্র— যেমন দেখেছি’ মন ছুঁয়ে যায়।
এই সংখ্যার বিশেষ আকর্ষণ সব্যসাচী চক্রবর্তীর ‘আফ্রিকার পাখি’, ঋদ্ধি গোস্বামীর ‘আরেক সোনার কেল্লার গল্প’। সন্দীপ রায় লিখেছেন সত্যজিৎ রায়ের উপর। শিরোনাম ‘বাবার আরেক অজানা দিক’। বই উপহার দিলে পাতায় নানারকম ভাবে পুত্রের নাম লিখে দিতেন ফেলুদা-স্রষ্টা। তার কিছু অসামান্য নমুনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিলেন মুখ্যসচিব, পরিযায়ী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা
আছে চারটি উপন্যাস। হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তর ‘জাদুকর সত্যচরণ ও ইলিশবাবা’ লেখাটি জম্পেশ। আছে টান। এক দমে পড়ে ফেলা যায়। দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যর ‘মণিপিসি ও বহুরূপী গ্যাজেট’ উপন্যাসটি বেশ মজার। পরিচয় ঘটে অচেনা জগৎ ও ভিনগ্রহীদের সঙ্গে। অনির্বাণ বসুর ‘শত্রু যখন ওরা’ ও দোলনচাঁপা দাশগুপ্তর ‘বিন্দু’ উপন্যাস দুটিও ঝরঝরে। ঘটনাবহুল। পড়তে ভাল লাগে।
যশোধরা রায়চৌধুরীর ‘আয়নার পেছনে আমরা’ বড়গল্পটি শিক্ষামূলক। সাইবাবার ক্রাইম, হ্যাকারদের নিয়ে লেখা। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও অবশ্যপাঠ্য। শিশির বিশ্বাসের ‘নাগ পাহাড়ের প্রান্তরে’, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর নাম মিসিসিপি মিসৌরী’, অমিতানন্দ দাশের ‘শিলিগুড়ি সংকট’ আকর্ষণীয়। এ ছাড়াও ভাল লাগে অনিতা অগ্নিহোত্রী, সৌরদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেশ বসু, সৈকত মুখোপাধ্যায়, অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী, দীপান্বিতা রায়, জয়দীপ চক্রবর্তী, অনন্যা দাশ, দেবাশিস সেনের গল্প।
আরও পড়ুন-খুন করে স্ত্রীর দেহ পুঁতে রাখল স্বামী!
আছে সুনির্বাচিত ছড়া-কবিতা। বিশেষভাবে উল্লেখ্য করতে হয় রেবন্ত গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্ত, আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়, শ্যামলকান্তি দাশ, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সুখেন্দু মজুমদার, অনির্বাণ ঘোষ, চন্দন নাথ, রূপক চট্টরাজ, প্রদীপ আচার্য, দেবাশিস বসু, হাননান আহসানের নাম।
এ ছাড়াও আছে ভ্রমণ, খেলা, কার্টুন, কমিকস, ক্যুইজ প্রভৃতি বিভাগ। সবমিলিয়ে জমজমাট। পড়তে পড়তে মনে হল, সন্দেশ ছাড়া পুজো জমে না। প্রচ্ছদ সত্যজিৎ রায়ের। দাম ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন-বড়মার একশো বছরে নতুন মন্দিরে কষ্টিপাথরের মূর্তি
৫৬ বছরের পত্রিকা ‘কিশোর ভারতী’। আজও দারুণ জনপ্রিয়। বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। লিখেছেন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকেরা।
দুষ্প্রাপ্য গল্প বিভাগটি আকর্ষণীয়। আছে দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, আশাপূর্ণা দেবী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, অনীশ দেবের লেখা। দুষ্প্রাপ্য ছড়া-কবিতায় আছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, অন্নদাশঙ্কর রায়, নবনীতা দেবসেন। দুষ্প্রাপ্য স্মৃতিকথায় সমরেশ মজুমদার। এঁদের ফিরে পড়া গেল, যা বড় প্রাপ্তি। জাদু কবিতা উপহার দিয়েছেন পবিত্র সরকার, সুবোধ সরকার, দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজাত।
আরও পড়ুন-জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারে বিজেপির চক্রান্ত নিয়ে ফুঁসছে ক্ষুব্ধ মন্তেশ্বর
আছে কয়েকটি উপন্যাস ও উপন্যাসিকা। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখার শিরোনাম ‘স্বপ্ন’। দারুণ মজার। যেমন গল্প, চরিত্রনির্মাণ, তেমন সংলাপ। এককথায় অসাধারণ। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের জগুমামা পাঠকদের খুব প্রিয়। তাঁকে নিয়ে আগের লেখাগুলো সমাদৃত হয়েছে। এবারেও পাঠকের দরবারে হাজির জগুমামা। লেখার শিরোনাম ‘জ্বলন্ত উপত্যকায় জগুমামা’। গ্যাং অফ ফোরের কাহিনি টানটান। পড়ে ফেলা যায় এক দমে। এ ছাড়াও সৈকত মুখোপাধ্যায়ের ‘মন্দিরে কঙ্কালপক্ষী’, হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তর ‘রক্তের দাগ’, অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর ‘কঙ্গোর জঙ্গলে অনিলিখা’, দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ‘হারাণবাবুর রাজভবন’ পড়তে ভাল লাগে।
আছে অন্য জগতের তারকাদের লেখা। নচিকেতার কবিতা, সুরজিৎ চ্যাটার্জির ছড়া-নাটিকা, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর স্মৃতিকথা মন ছুঁয়ে যায়।
আরও পড়ুন-কাজাখস্তানে আগুন, মৃত্যু
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘ডন’ এককথায় অসাধারণ। ডন কারা? তিনি লিখেছেন, ‘ডন হল মস্তানদের মস্তান, গুন্ডাদেরও গুরুদেব। নেতাটেতারাও এদের খাতির করে চলে।’ গল্পটি সব বয়সিদের আনন্দ দেবে। এ ছাড়াও প্রফুল্ল রায়ের ‘আজব রূপকথার শহরে’, বাণী বসুর ‘পোকাপুকি খোকাখুকি’, চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অচেনা ছেলেটা’, বীথি চট্টোপাধ্যায়ের ‘কুহেলির হলুদ ফাইল’, জয়ন্ত দে-র ‘তিনের গেরো’, নির্বেদ রায়ের ‘টোপ’, দীপান্বিতা রায়ের ‘নীল আংটি’, সাগরিকা রায়ের ‘ছায়া সব জানে’ গল্পগুলো পড়তে ভাল লাগে।
বড়গল্পে দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যর ‘চিল্লাস’, জয়দীপ চক্রবর্তীর ‘গ্যানচেপমো গুম্ফার লামা’, মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যর ‘গুমো’, অভীক মুখোপাধ্যায়ের ‘সে পিশাচ হয়ে আছে’ নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।
আরও পড়ুন-কাতারে ৮ ভারতীয়র মৃত্যুদণ্ড: দিল্লির সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ
ছড়া-কবিতায় উল্লেখ করতে হয় শ্যামলকান্তি দাশ, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মৌ রায়চৌধুরী, অরুণাচল দত্ত চৌধুরী, সুস্মেলী দত্ত, দেবাশিস বসু, প্রদীপ আচার্য, গৌতমেন্দু রায়ের নাম।
এ ছাড়াও আছে বিশ্বসাহিত্য, ভ্রমণ, কমিকস প্রভৃতি বিভাগ। উৎসব উপলক্ষে আন্তরিক আয়োজন। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদ বরাবরের মতো সুন্দর। দাম ২১০ টাকা।
আরও পড়ুন-দিনভর উত্তর ২৪ পরগনার প্রতিটি ব্লকে হল ধিক্কার মিছিল-পথসভা
শরৎশশী
শিশু-কিশোরদের পত্রিকা ‘শরৎশশী’। ৪০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এবারের সংখ্যাটি নানা দিক থেকেই উল্লেখ্য। বিগত বছরগুলিতে পত্রিকার শুভেচ্ছা জানিয়ে যে-সমস্ত বিশিষ্টজন পত্র পাঠিয়েছিলেন সেইসব শুভেচ্ছা বাণী থেকে সংকলিত কয়েকটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাণীগুলি পাঠিয়েছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন, সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন, গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়, শিশুসাহিত্যিক স্বপনবুড়ো, বেতার সাংবাদিক বরুণ মজুমদার প্রমুখ। সম্পাদক অরূপ দাস পত্রিকার প্রথম অংশে কয়েকটি শীর্ষকে লেখাগুলি উপস্থাপিত করেছেন।
আরও পড়ুন-লিলি
পুরাতনী অংশে সুবিমল মিশ্রের লেখা প্রিয়ংবদা দেবী সম্পর্কিত রচনা এবং লেখিকার একটি গল্প রয়েছে। ফিরে পড়া অংশে মানিক মুখোপাধ্যায়, শচীন দত্ত, বীণা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের লেখা সংকলিত হয়েছে। এরপর রয়েছে বিশেষ রচনা ও ছোট গল্প অংশ। লিখেছেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, নলিনী বেরা প্রমুখ। ছোটদের জন্য ছড়া-কবিতা-লিমেরিক অংশটি বিশেষ সমৃদ্ধ। আছে অমিতাভ চৌধুরী, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, পবিত্র সরকার, প্রমোদ বসুর লেখা। কমিকস অংশে দিলীপ দাস, সুদর্শন মুখোটি এবং তুলিকা মিত্রর ছবিতে গল্প বেশ উপভোগ্য। একটি লেখায় শিশু সাহিত্যে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপক ‘মৌমাছি’ (বিমলকুমার ঘোষ, ১৯১০-১৯৮২) স্থাপিত ‘মণিমেলা’র ইতিহাস শুনিয়েছেন পত্রিকা সম্পাদক। পত্রিকার শেষ অংশটি একান্তই কিশোর-পাঠকদের। সেখানে রয়েছে তাদের লেখা ছড়া-কবিতা ও ছবি। সুদর্শন মুখোটির করা পত্রিকার প্রচ্ছদ বেশ ভাল। সবমিলিয়ে দামি কাগজে ছাপা প্রায় চারশো পাতার এই পত্রিকাটি শুধু শিশু-কিশোরদের নয়, বড়দেরও সহজেই মন কেড়ে নেবে।
আরও পড়ুন-তোমরা যে বলো, লক্ষ্মী মেয়ে লক্ষ্মী মেয়ে, লক্ষ্মী মেয়ে কারে কয়?
মৈত্রীদূত
৮ অক্টোবর কল্যাণী ঋত্বিক সদন সেমিনার হলে সাড়ম্বরে প্রকাশিত হল কুশল মৈত্র সম্পাদিত ‘মৈত্রীদূত’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা ১৪৩০। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন নজরুল গবেষক বাঁধন সেনগুপ্ত, কবি সৈয়দ কওসর জামাল, পত্রিকার সভাপতি জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, কবি রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কথাশিল্পী আনসারউদ্দিন, কবি রামকিশোর ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক দেবনারায়ণ মোদক, গল্পকার সুকুমার রুজ প্রমুখ। ১৯০ জন কবি-সাহিত্যিকের কলমে সেজে উঠেছে এবারের শারদীয় সংখ্যা। রয়েছে কবি মৃদুল দাশগুপ্তর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার।
আরও পড়ুন-দুঃখবিলাসী উমার দালান
লিখেছেন জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, কিরণশঙ্কর মৈত্র, রমেন আচার্য, পবিত্র সরকার, কালীকৃষ্ণ গুহ, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীজাত, নলিনী বেরা, বীথি চট্টোপাধ্যায়, গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, তৈমুর খান, বিপ্লব মাজী, যশোধারা রায়চৌধুরী, অরণি বসু, সৌমিত বসু, অজিতেশ নাগ, সুখেন্দু মজুমদার, রতনতনু ঘাটী, সৈয়দ হাসমত জালাল, দুর্গাদাস মিদ্যা, তৃষ্ণা বসাক, নিত্যরঞ্জন দেবনাথ, দ্বিজেন আচার্য, প্রগতি মাইতি, গোলাম রসুল, চন্দন নাথ, ফটিক চৌধুরী, তাজিমুর রহমান, মুরারি সিংহ, কাজল মহান্ত, কিঙ্কি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কবি ও প্রচ্ছদ শিল্পী দেবার্ঘ্য সেনকে বিশেষভাবে সংবর্ধিত করা হয়। কবি-গল্পকার সুখেন্দুবিকাশ মৈত্র ‘স্মৃতি স্মারক’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকেরা। সঞ্চালনা করেন দেবাশিস রায়।