প্রাচীন ভারতের নগরকেন্দ্রিক পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরাই ছিলেন নারী জীবনের একমাত্র ধারক-বাহক। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এক-বিবাহ প্রথা ছিল প্রচলিত রেওয়াজ। নানা ধর্মশাস্ত্রে ও সাহিত্যে এক-বিবাহ প্রথার অনুমোদন আমরা পাই। পুরাণ অনুযায়ী মহর্ষি উদ্দালক-পুত্র শ্বেতকেতু এই বিবাহ প্রথা চালু করেন। মনু স্মৃতিতে, আট প্রকারের বিবাহ পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের কুড়ি থেকে চৌত্রিশ সংখ্যক শ্লোকে এই আট প্রকার বিবাহ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।
আরও পড়ুন-ময়দানে আর চলবে না ঘোড়ায় টানা গাড়ি! কী বলছে হাই কোর্ট
মনুসংহিতা অনুযায়ী বিবাহের আটটি প্রকার হল— ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব ও রাক্ষস ও পৈশাচ। এর মধ্যে পৈশাচ সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আবার এমনও উল্লেখ রয়েছে যে, এই আট প্রকার বিবাহের মধ্যে ব্রাহ্মণদের জন্য প্রথম ছয় প্রকার এবং ক্ষত্রিয়দের মধ্যে শেষ চার প্রকার আর শূদ্রদের জন্য আসুর, গান্ধর্ব ও পৈশাচ ধর্মসম্মত।
আরও পড়ুন-লহু
বিবিধ বিবাহ
শাস্ত্র অনুযায়ী, পিতা বা অভিভাবক যখন কোনও চরিত্রবান ও সুশীল ব্যক্তিকে স্বয়ং আহ্বান করে নিজের কন্যাকে বস্ত্র-অলঙ্কারে আচ্ছাদিত করে অর্চনাপূর্বক তাকে দান করেন তখন ওই বিবাহ ‘ব্রাহ্ম বিবাহ’ নামে জ্ঞাত।
কোনও ব্যক্তি যখন কোনও যজ্ঞ অনুষ্ঠান চলাকালীন ওই যজ্ঞের পুরোহিতকে নিজের কন্যাকে অলংকৃত করে দান করেন সেই বিবাহকে ‘দৈব বিবাহ’ বলা হয়ে থাকে।
পিতা যখন বরের কাছ থেকে গো-সম্পদের বিনিময়ে কন্যাকে পাত্রস্থ করতেন তখন সে-বিবাহকে ‘আর্য বিবাহ’ বলা হত। ধর্মশাস্ত্রকাররা এই বিবাহের বিরুদ্ধাচারণ করায় ধীরে ধীরে এই বিবাহপ্রথা লোপ পায়।
যখন কোনও পিতা বা অভিভাবক তাঁর কন্যা ও জামাতাকে ‘তোমরা একত্রে ধর্মাচরণ কর’ অথবা ‘তোমরা দুজনে গার্হস্থ্য ধর্ম পালন কর’ বলে অর্চনাপূর্বক কন্যাদান করেন, সেই বিবাহ বিধি প্রজাপত্য বিবাহ নামে খ্যাত।
জ্ঞাতিদের এবং কন্যাকে যথাশক্তি ধন দান করার পর যখন কোনও ব্যক্তিকে কন্যা প্রদান করা হয় তখন সেই বিবাহকে আসুর বিবাহ বলে। কন্যা স্বেচ্ছায় একে অপরের সঙ্গে মিলিত হন কোন ধর্মীয় আচার-আচরণের তোয়াক্কা না করেই সেটি হল গান্ধর্ব বিবাহ। শকুন্তলা-দুষ্মন্তের ক্ষেত্রেও আমরা গান্ধর্ব বিবাহ প্রথা লক্ষ্য করেছি।
বলপূর্বক অপহরণ করে যে বিবাহ তাকে রাক্ষস বিবাহ নীতি বলা হয়। জনগোষ্ঠীর মধ্যে লেগে থাকা বিবাদে জয়ী দল পরাজিত দলের নারীকে জোর করে হরণ করে উপভোগ করত। এদের মধ্যে বিশেষ করে ক্ষত্রিয়দের মধ্যে বীরত্ব প্রদর্শনের নিদর্শন হিসাবে এই বিবাহ স্বীকৃত ছিল।
আরও পড়ুন-এখনও খোঁজ মেলেনি জলপ্রপাতে পড়া ছাত্রের
নিদ্রিতা নেশাগ্রস্ত বা মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে যখন শারীরিক নিগ্রহ করে সেই পাপকর্ম অষ্টম পৈশাচ, সর্বাপেক্ষা অধম বিবাহ রীতি। তুমুল নিন্দিত হয়েছিল এই বিবাহ পদ্ধতি।
ক্রন্দনরত কন্যাকে বলপূর্বক অপহরণ করে তাকে বিবাহ করাকে ‘রাক্ষস বিবাহ’ বিধি বলা হয়।
জাতিতে জাতিতে বিয়ে
প্রাচীন ভারতে শাস্ত্র নির্দেশিত বিবাহ রীতি অন্তর্ভুক্ত না হলেও নারীদের পতি নির্বাচনের অধিকার সম্বন্ধে শাস্ত্রকাররা সম্পূর্ণ নীরব ছিলেন। বশিষ্ঠ ধর্মসূত্রে নারীদের ঋতুমতী হওয়ার পর তিন বছরের মধ্যে পিতা বিবাহ না দিতে পারলে নিজের সমতুল্য পতি নির্বাচন করে বিবাহের অধিকার স্বীকার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-ডিসেম্বরেই বড় ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তা হাওয়া অফিসের
মানুষ সামাজিক জীব। ঘর সংসার পরিবার, সমাজ সংস্কৃতি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করে কুলোচিত আচার পালন করে মানুষ জীবনযাপন শুরু করে। তবে এর মধ্যে দেশভেদে, কুলভেদে আচার-বিচারের ভিন্নতা দেখা যায়।
ভারতে আর্যদের পূর্বে ও দ্রাবিড়দের বাস ছিল। দ্রাবিড়দের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ছিল রীতিমতো উচ্চ ধরনের। তারও আগে বহু জাতি নানারকম সভ্যতা ও সংস্কৃতি নিয়ে এদেশে বাস করে গিয়েছে। আর্যরা এদেশে এসে কতকটা নিজেদের আচার-বিচার বজায় রাখতে পেরেছে এবং চারিদিকের প্রভাবে ও জাতিগত মিশ্রণের ফলে কতকটা চারিদিকের আচার বিচার গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। যদিও আর্যপূর্ব নাগ প্রভৃতি জাতির সঙ্গে ব্রাহ্মণদের আর্য জাতির বিয়ে হত। দক্ষিণের চেররা নাগ বংশীয়, এরা ছাড়া আরও বহু নাগ বংশ এখনও ভারতের নানাস্থানে আছে। বৈদিক যুগেই বর-কন্যার বিয়ে হত যৌবনে। তখনও জাতিভেদ প্রবর্তিত হয়নি এবং প্রবর্তিত হয়ে থাকলেও তার তেমন বিধিনিষেধ ছিল না। বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিবাহ হলেও সামাজিক কোনও অসুবিধা হত না।
আরও পড়ুন-চেন্নাইয়ে আজ পরীক্ষা ক্লেটনদের
কিন্তু পরে যখন জাতিভেদ ভাল করে প্রতিষ্ঠিত হল তখন ছেলে-মেয়েদেরই পছন্দের উপর বিবাহ ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়া আর থাকল না। কারণ বর-কনের পছন্দ তো আর জাতি-কুল বেছে হওয়ার নয়। নামে বর থাকলেও বরণ প্রথাটি গেল। গুরুজনদের ব্যবস্থা অনুসারে অপ্রাপ্তবয়স্ক বর-কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার প্রথা প্রবর্তিত হল। আর্যদের মধ্যে ছিল পুরুষের প্রাধান্য। অন্যদিকে, দ্রাবিড়দের সামাজিক ব্যবস্থাতে মেয়েদেরই ছিল মুখ্যতা। মেয়েরা ফুঁ দিয়ে যজ্ঞাগ্নি জ্বালাত। এবং সেখানে তারা দেবতার বরে অপ্রতিবারিতা স্বৈরিণী— এসব কথা বলা হত। ইতিহাসবিদ অনন্ত কৃষ্ণ আইয়ার মনে করেন যে, স্বেচ্ছাবিহারিণী দ্রাবিড়কন্যাদের মধ্যে বিয়ের আগে যে ব্যভিচার দেখা যেত তা দেখেই হয়তো এ-দেশে আর্য বর-কন্যাদের বিয়ের বয়স সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তবে বিয়ের সময় বধূর মধ্যে পাঁচটি আকাঙ্ক্ষিত গুণ চাওয়া হত। বিত্ত, রূপ, শিক্ষা, বুদ্ধি এবং সদ্বংশ।
আরও পড়ুন-মরুরাজ্যে চলছে ভোট
পুত্রেষণা বিত্তৈষণাই
বিবাহ প্রথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে ধীরে-ধীরে গৃহপরিবার সুবিস্তৃত হল। আর্যদের মধ্যে পিতাই পরিবারের কর্তা। স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধের মধ্যেও স্বামীর স্থান প্রধান। দ্রাবিড় সভ্যতায় নারীদের প্রাধান্যের যতটা পরিচয় মেলে আর্য সভ্যতায় ততটা দেখা যায় না। সে-সময়ে সকলেই পুত্র কামনা করতেন। বৃহদারণক্যের এইসব বাণী আমরা দেখেছি—
প্রিয় তাহা পুত্র হইতেও প্রিয়… তদেতৎ প্রেয় পুত্রাৎ এবং পত্রানাং কামায় পুত্রাঃ প্রিয়া ভবন্তি। সেখানে আরও দেখি ‘প্রতিরূপঃ পুত্রো জায়তে’… দশম মণ্ডলে ঋগ্বেদ দশম মণ্ডলে একশো তিরাশি সূক্তে আগাগোড়াই পুত্রের মহত্ত্ব ঘোষিত। এই অথর্ব বেদের মন্ত্রে, ঋগ্বেদের মন্ত্রে, অথর্ব বেদের মন্ত্রে এবং আরও বহু বহু জায়গায় পুত্রের জন্যই প্রার্থনা। ‘পুত্রেষণা বিত্তৈষণাই’ গৃহীর ধর্ম। কন্যাকে দুহিতা বলে। কন্যা স্নেহের কিন্তু পুত্রের মতো নয়। মনুসংহিতায় ‘কন্যা বাল্যে পিতার আশ্রিতা, পিতার অভাবে ভাইয়ের আশ্রিতা এবং বিবাহ হইলে পতির আশ্রয়’ এমনটাই বলা হয়েছে স্পষ্ট ভাবে।
আরও পড়ুন-এখনই মৃত্যুদণ্ড নয় ৮ প্রাক্তন নৌসেনার, ভারতের আর্জিতে সাড়া কাতারের
বৈদিক যুগে বিবাহ
আবার বৈদিক সমাজে নারীরা সেসময়ে সহজেই বিচরণ করতেন। যাগ-যজ্ঞে অংশগ্রহণ করতেন এমনটাও দেখা যায়। নারীরা বেদমন্ত্র রচনা করেছেন। অথর্ব বেদে নারীদের উপনয়ন ও ব্রহ্মচর্যের কথা আছে। বেদে নারীদের শিক্ষার অধিকার ছিল। উপনিষদে ব্রহ্মবিদুষী নারীদের কথা পাই। নৃত্য-গীতে নারীর শিক্ষা হত। জাতিভেদ প্রথা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত নারী-পুরুষের পছন্দের বিবাহ চলত।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন সফরের জের, নবান্নে মাদ্রিদের প্রতিনিধিরা
বৈদিক যুগেও বিবাহ অনুষ্ঠানে ঘটা করে নানা রকমের আচার-আচরণ হত। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে পঁচাশি সূক্তটির বিষয় হল সূর্যার বিবাহ। এই সূক্তটি বেশ দীর্ঘ। কারণ এতে সাতচল্লিশটি ঋক্ আছে। কন্যাকে সজ্জা-আভরণ প্রভৃতি উপহার দিয়ে দেওয়া হত। বিয়ের রথটি সুন্দর করে প্রস্তুত করা হত এবং তা ফুলে, পাতায় সাজানো হত। ঋগ্বেদের সূর্যা বিবাহ দেখলে বোঝা যায় পতিকুলে কন্যা যাতে ধ্রুব হয় তা প্রার্থনা করে মন্ত্রপাঠ হত। কন্যাকে তাই ধ্রুব প্রতিষ্ঠা স্বরূপ শিলাতে আরোহণ করে যুগলে অগ্নি প্রদক্ষিণ করানো হত। সেসময়ে ছিল বিয়ের প্রধান তিনটি অঙ্গ। সেসবই অবশ্য বর-কন্যার পরস্পরকে বরণ করবার পর অনুষ্ঠিত হত। একত্র গমন— তা হয় সপ্তপদীতে। স্বামী গৃহের অগ্নিতে একত্রে যোজন (যজ্ঞ) ও পতিগৃহে সকলের সঙ্গে একত্রে ভোজন (বউভাত)। বিবাহে উভয়ের ঘনিষ্ঠযোগ, দীর্ঘজীবন, সুখ, সৌভাগ্য এবং পুত্র-পৌত্রাদির প্রার্থনা থাকত। ধনজন বৃদ্ধির জন্যও প্রার্থনা করা হত। তবে বিবাহ অনুষ্ঠানের সর্বপ্রধান এবং সর্বপ্রথম কথাই হল বরণ (নারদীয় মনু সংহিতা)। তারপরই একত্রে গমন, যোজন, ভোজন। এই তিনটি প্রথাই ছিল বিবাহ অনুষ্ঠানের মুখ্য অঙ্গ।
আরও পড়ুন-শীতের আমেজে সৃজনশীলতার বিকাশ, ইকোপার্কে শুরু হস্তশিল্প মেলা
অথর্ব বেদে
অথর্ব বেদে সূর্যার বিবাহের আদিতেই সত্যে ও বিশ্বে ও দেবতার মধ্যে বিবাহের প্রতিষ্ঠামন্ত্র দেখা যায়। পূর্বকৃত কোনও অন্যায় যদি থাকে তবে তা থেকে মুক্তির জন্য বরুণের কাছে নিষ্কৃতি প্রার্থনা হয়। স্বামীর পক্ষে কন্যা যাতে বরের আনন্দদায়িনী হয় তাই সকলে চাইতেন।
স্বামীর গৃহে যাতে কন্যা গিয়ে গার্হপত্য ধর্মে সদা জাগ্রত থাকে, দীর্ঘজীবী হয়ে পুত্র-পৌত্র-সহ সুখী হতে পারে তাই প্রার্থনা করা হত। স্বামী-স্ত্রী নিত্য যেন উভয়ের কাছে উভয়ে নবীন থাকে, বিচ্ছেদ বা মতান্তর না ঘটে, স্ত্রী যেন দীপ্ত গৌরবে শোভমানা হয়। সমস্ত প্রকৃতি যেন বধূর কল্যাণকরণী হয়, এই আশীর্বাদ করা হত। স্বামীও সৌভাগ্য, কল্যাণ কামনা করে স্ত্রীর হাত গ্রহণ করতেন। স্বামী বলতেন, ‘তোমাকে নীতির দেবতা বরুণের পাশ হইতে মুক্ত করিলাম। হে সুন্দরী, পুষ্পশোভিত সুকিংশুক বিচিত্র সজ্জায়, হিরণ্যবর্ণ সুবৃত, সুচক্র রথে আরোহণ করিয়া পতির পক্ষে এই রথকে আনন্দময় করিয়া অমৃতলোকে যাত্রা আরম্ভ কর। সর্বদিকে ব্রহ্ম পরিবৃত হইয়া, হে কল্যাণী আনন্দময়ী তুমি দেবপুরে গিয়া প্রতি লোকে বিরাজমানা হও।’
আরও পড়ুন-যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যে জোর পরিবহণ দফতরের, কলকাতা-শিলিগুড়ি বিলাসবহুল বাস চালু
অথর্ব বেদের দ্বিতীয় সূক্তে পঁচাত্তরটি মন্ত্র। তাতে মূলত অকল্যাণ দূর করে নানা সৌভাগ্য কামনা করা হয়েছে।
যেমন— ‘বিধাতাই নারীকে সংসার দিয়াছেন, সে এখানে কল্যাণী হউক। বিষ্ণুর সরস্বতীর মতো এখানে তুমি প্রতিষ্ঠিত হও। তুমি বিরাট হও। সকলের আনন্দ কল্যাণ বিধান করো, গ্রার্হপত্য অগ্নি, পিতৃগণ ও সরস্বতীকে নমস্কার করো, বিদায় লইবার পূর্বে সমবেত সকলে এই সুমঙ্গলী নববধূকে আশীর্বাদ করুন। হে নববধূ আজ হইতে ইন্দ্রাণীর ন্যায়, ঊষার ন্যায় শোভমানা হও। নবচেতনায় সকলকে জাগ্রত করো।’
স্বয়ম্বরা
বিবাহ প্রথা যত জনপ্রিয় হতে লাগল মেয়েদের কুক্ষিগত করে সন্তান উৎপাদনের কাজে তাদের ব্যবহার করা হতে লাগল। বিবাহকে সে-সময় একটি সামাজিক ও ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করা হত।
আরও একটি বিবাহ পদ্ধতি সুপ্রাচীন মহাকাব্যে নাট্যসাহিত্যে, কাব্যসাহিত্যে আমরা দেখেছি বা উল্লেখ পেয়েছি।
আরও পড়ুন-অনিশ্চিত বোরহা, চোট নিয়ে চিন্তা কুয়াদ্রাতের
সে-সময়ে স্বয়ম্বর প্রথার মাধ্যমে অভিজাত সম্প্রদায়ের মেয়েরা নিজেদের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী স্বামী নির্বাচন করত। এও এক ধরনের বিবাহ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কন্যার মতামতই ছিল শেষ কথা। কালের নিয়মে স্বয়ম্বর বিবাহ গ্রহণযোগ্যতা হারায়। বাল্যবিবাহ শুরু হয়। চিরকালই নারীর মতামতকে সমাজ খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। তাই ক্রমশ বাল্যবিবাহের কন্যার মতামতের যেহেতু ব্যাখ্যা করা হত না তাই এই বিবাহ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ধর্মশাস্ত্রের মধ্যে যতই মেয়েদের পূজনীয়, মেয়েরা গৃহের আলো, তবু বিবাহের শপথ বাক্যের মধ্যে নারীর অথবা বলা ভাল স্ত্রীর কোনও স্বতন্ত্র সত্তার স্বীকৃতি নেই। সে-সময়ে শাস্ত্রে গোসম্পদের সঙ্গে নারীর তুলনা রয়েছে। নারীকে স্বামীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির অংশ হিসেবেই দেখা হত। ব্যক্তিগত সম্পদের মতো তার ওপর প্রভুত্ব করা যায়। প্রয়োজনে ভালবাসা যায়, অপ্রয়োজনে হস্তান্তর বা কেনা-বেচাও করা যায় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পাশা খেলায় বাজি রাখা যায়। অর্থের সঙ্কুলানে কখনও কখনও স্বামীর অনুমতিতে নারীদেহ ভাড়া খাটানোও যায়। মহাভারতে এর অজস্র উদাহরণ আমরা দেখেছি। এক বিবাহ প্রথা নারীর জন্য নির্দিষ্ট হলেও পুরুষের জন্য বহুবিবাহ চিরকালই ছিল। একাধিক বিবাহ শুধু নয় বহুগামিতাও পুরুষের পক্ষে নিষিদ্ধ নয়। পুরুষ বিনোদনের উপকরণ হিসেবে সমাজে ভূমিকা-ব্যক্তির উদ্ভব ঘটে— ঋগ্বেদে উল্লেখ রয়েছে। আমরা এ-কথা মানি যে, বিবাহ সমাজের এক চিরকালীন শাশ্বত রূপ। সমাজে বহুত্বতা নিজস্ব ছন্দেই এসেছে। রয়েছে বহুগামিতার মতো দুষ্ট ব্যাধিও।
আরও পড়ুন-আরও নামল কলকাতার তাপমাত্রা! রাজ্যে জাঁকিয়ে শীত পড়ার পূর্বাভাস
তাহলেও ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম’র পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ এবং অগ্নিদেবকে সাক্ষী রেখে সাতপাকের বন্ধন যে শুদ্ধ একগামিতাকেই ম্যানিফেস্ট করে তা বোধ হয় আজও বিকল্পহীন।
তথ্যসূত্র:
প্রাচীন ভারতে নারী (ক্ষিতিমোহন সেন)।
প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ (সুকুমারী ভট্টাচার্য)।