বিক্রম বেতাল-এর রূপকথা ও এক অদ্ভুত কাহিনি

স্টার জলসায় সদ্য শুরু হয়েছে ‘বিক্রম বেতাল’- এর রূপকথা-নির্ভর ধারাবাহিক। দর্শক প্রতিক্রিয়া দারুণ। অনেকেই ফেরত পাচ্ছেন ছোটবেলার স্মৃতি। কিন্তু এ-সব ছাপিয়ে যা হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে তা রূপকথাকেও হার মানায়। আত্মহত্যা করেছেন অভিনেত্রী পল্লবী দে। কিন্তু তার আগে অভিনয় করে গিয়েছিলেন এই ধারাবাহিকে। পর্দায় তাঁকে দেখে আবেগমথিত দর্শক। জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

এভাবেও ফিরে আসা যায়! মাত্রই কয়েক মাস আগে অভিনেত্রী পল্লবী দে’র আত্মহত্যার খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল টলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে। মাত্র পঁচিশের তরতাজা অভিনেত্রীর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে সকলে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। পল্লবীর চলে যাওয়া যেমন মানতে পারছিলেন না তাঁর সহ-অভিনেতারা তেমনই তাঁর গুণগ্রাহী দর্শকরাও। সেই দর্শকেরাই এবার ছোটপর্দায় আর একবার ফিরে পেলেন তাঁকে, স্টার জলসার নয়া ধারাবাহিক ‘বিক্রম বেতাল’-এর হাত ধরে। সদ্য শুরু হয়েছে ধারাবাহিকটি। পল্লবী চলে গিয়েছেন অনেকগুলো দিন। কিন্তু তারও আগে তিনি অভিনয় করে গিয়েছিলেন এই ধারাবাহিকে। আসলে শুরু থেকেই এই ধারাবাহিকের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে চ্যানেলের শর্তই ছিল যে ধারাবাহিকের সব ক’টি পর্বের শ্যুটিং সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই এটির সম্প্রচার শুরু হবে, তাই দর্শক দেখছেন এতদিনে। কথায় বলে শিল্পী বেঁচে থাকে তাঁর শিল্পের মধ্য দিয়েই। পল্লবীর ক্ষেত্রে কথাটা সম্প্রতি ভীষণভাবে খেটে গেল। ভাল লাগার পাশাপাশি তাই ফের হা-হুতাশও শোনা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, কেন হঠকারী হয়ে নিজের জীবন শেষ করলেন এই ঝকঝকে সুন্দরী প্রতিভাময়ী মেয়েটি!

আরও পড়ুন-বাগুইআটি জোড়া খুন কাণ্ড: মাস্টার-মাইন্ডের ফাঁসি চাইল অতনুর মা

আজকাল পরিবারের সবার একসঙ্গে বসে টিভি দেখার রেওয়াজ উঠে গেছে। বিশেষত ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে তা সর্বৈব সত্য। শাশুড়ি-বউমার কূটকচালি এবং ত্রিকোণ সম্পর্কের রমরমা ছোটপর্দার অন্দরমহল দাপিয়ে বেড়ায়। বয়স অনুযায়ী চ্যানেলও আলাদা হয়ে গেছে বহুদিন। এরকম আবহে স্টার জলসায় ‘বিক্রম-বেতাল’ শুরু হওয়ায় ফের আট থেকে আশির একসঙ্গে টেলিভিশন সেট-এর সামনে বসার সুযোগ হয়েছে। আসলে বেতাল পঞ্চবিংশতির গল্প পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া ভার। রাজা বিক্রমাদিত্য এবং বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বেতাল-এর মধ্যেকার কাহিনিগুলোয় শুধু যে রূপকথার আবহ তা তো নয়, আছে বুদ্ধিমত্তা, যুক্তির লড়াই, আছে সামাজিক বার্তাও। ছোট ছোট গল্প হওয়ায় একটা টানটান ব্যাপার থাকে। আর এই টানেই দর্শক বসে থাকে টেলিভিশন সেট-এর সামনে। আরও একটা মজার ফিলিং থাকে প্রতিটি গল্পেই। বেতালের কাছে বারবার হেরে যান মহারাজা বিক্রমাদিত্য। কিন্তু সে-হেরে যাওয়া কি আদৌ হেরে যাওয়া? তিনি তো আসলে প্রতিবারই জিতছেন। আর জিতছেন বলেই হারছেন বারংবার! দুজনের শর্ত ছিল বিচক্ষণ মহারাজা জেনেবুঝে কোনওভাবেই ভুল উত্তর দিতে পারবেন না। আর সঠিক উত্তর দিলে বেতাল পালাবে স্বস্থানে! তাই মহারাজা বেতালের প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়ার সময় জানেন কী হতে চলেছে, তবু তিনি অপারগ। পরিণতি জেনেও সঠিক উত্তরটাই তিনি দিতে বাধ্য হন বারবার— কারণ তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মূল কাহিনিগুলি সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল। বিকেল পাঁচটায় দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক ‘খেলাঘর’-এর জায়গায় এখন দেখানো হচ্ছে ‘বিক্রম-বেতাল’।

আরও পড়ুন-ইন্ডোরে পাল্টা লড়াইয়ের ডাক: নয়া স্লোগান- এজেন্সি নয়, চাকরি চাই

বহুবছর আগে ডিডি ন্যাশানাল-এ হিন্দিতে এবং পরবর্তীতে জি-বাংলায় কার্টুন ফরম্যাট-এ ‘বিক্রম-বেতাল’ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এই প্রথম বাংলায় ধারাবাহিক আকারে দেখা যাবে ‘বিক্রম-বেতাল’। বেতালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং বিক্রমের চরিত্রে জয় মুখোপাধ্যায়। অনেকদিন পর ধারাবাহিকে ফিরছেন জয়। শেষ তাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০২০-তে ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে। নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার দরুনই এই ব্যবধান বলে মনে করা হয়। শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ও ‘খেলাঘর’ ধারাবাহিকের প্রায় দু-বছর পর জলসার পর্দায় ফিরছেন। অভিনেতা হিসেবে তাঁকে নিয়ে চর্চার তো মানে হয় না, তবে যেটা না বললেই নয়, বেতালের চরিত্রে শুভাশিসকে মানিয়েছে দুর্দান্ত। সাদা চুল, সাদা পোশাকে অবিকল যেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা বেতাল! ‘বিক্রম-বেতাল’-এ অভিনয় করছেন আরও এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী অদ্রিজা রায়। বর্তমানে ধারাবাহিক ‘মৌয়ের বাড়ি’তে অভিনয় করছেন তিনি। কাজেই দুই চ্যানেলের দুই ধারাবাহিকেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

আরও পড়ুন-গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাকে বিরোধীশূন্য করার চ্যালেঞ্জ

‘বিক্রম-বেতাল’ সম্প্রচার নিয়েও অফ ক্যামেরা অনেক কাহিনি হয়েছে, সে-কাহিনিতেও রয়েছে অন ক্যামেরা গল্পের মতোই টালবাহানা, টানাপোড়েন, টুইস্ট! আসলে সুরিন্দর ফিল্মস-এর এই প্রযোজনাটি ‘কিরণমালা’র পর স্টার জলসায় প্রথম রূপকথাধর্মী ধারাবাহিক হলেও, মাঝে অনেকগুলি চ্যানেলে সম্প্রচারের কথা শোনা গিয়েছিল এটির। কারণ শ্যুটিং সম্পূর্ণ হলেও স্লট পাওয়া যাচ্ছিল না এতদিন স্টার জলসায়। তাই বাকি চ্যানেলগুলোর কথাও ভাবা হয়। কিন্তু কালার্স বা সান বাংলার নিজস্ব জিআরপি এতটাই কম, সেখানে এই বিগ বাজেট শো প্রচারের জন্য মনস্থির করতে পারছিলেন না প্রযোজকরা। কথা চলেছিল প্রতিদ্বন্দ্বী জি-বাংলার সঙ্গেও। কিন্তু জি-বাংলা তাদের ‘ক্ষীরের পুতুল’ ধারাবাহিকের ভরাডুবির পর আর কোনও রূপকথার রিস্ক নিতে সাহস পাচ্ছিল না। বিগ বাজেট এই শো তাই গলার কাঁটা হয়ে পড়েছিল প্রযোজকের ঘরেই। শেষমেশ এতদিনে স্লট পাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাঁরা। তবে এতসব জটিলতার কথা দর্শক জানেন না, বহুদিন পরে তাঁরা একটি সপরিবার দেখার মতো ধারাবাহিক পেয়েই খুশি।

Latest article