অন্দরমহলের তিনকাহন

প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে অন্দরমহলের রূপবদলই হল চাবিকাঠি। বিশেষ করে বসার ঘরের অন্দরসজ্জা। কারণ গল্প, আড্ডা থেকে অবসরযাপন অথবা অতিথি আগমন— দিনের বেশিরভাগ সময় ওটাই আমাদের ঠিকানা। পরিসর ছোট হোক বা বড়, বসার ঘর রুচিসম্মত করে সাজিয়ে তুলবেন কীভাবে— জানালেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার সুদীপ ভট্টাচার্য

Must read

আজ আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু বসার ঘর বা লিভিং রুম। যদিও আজকালকার ফ্ল্যাট কালচারে আলাদা করে বসার ঘর খুব কম ফ্ল্যাটেই হয়। বারোশো স্কোয়ার ফুট বা তার চাইতে কম মাপের ফ্ল্যাটে বসার ঘর আর খাওয়ার ঘর, মানে ড্রইং-কাম ডাইনিং রুম একসঙ্গেই হয়ে থাকে। অন্দরসজ্জায় বসার ঘরের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ বাইরের মানুষেরা বসার ঘরে এসেই বসেন এবং সেখান থেকেই চলে যান। একটি বাড়ির অন্দরসজ্জা কেমন বা তাদের রুচিবোধ কেমন সেটা বোঝানোর জন্য কিন্তু বাইরের ঘর বা বসার ঘরের অপশনটাই রয়েছে শুধু। বহু বছর আগেও বাঙালিদের মধ্যে বসার ঘর সাজিয়ে তোলার রীতিটাই বেশি ছিল। আগেকার সময়ে কোনও বাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশের অধিকার খুব কম লোকেরই থাকত, সেক্ষেত্রে বাইরের ঘর জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজিয়ে তাদের সচ্ছলতা আর রুচিবোধ বুঝিয়ে দেওয়া হত। যদিও আজকের সময়েও তার খুব একটা যে বেশি অন্যথা হয়েছে তা নয়। তবে এটা ঠিক, আগে যেমন মানুষের জায়গা নিয়ে খুব একটা সমস্যা ছিল না তাই খাওয়ার ঘর আর বসার ঘর সাধারণত একসঙ্গে হত না, আজ হয়, এটাই এখন প্রচলিত হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসংবাদী আবহ, অবিলম্বে অবসান আবশ্যক

শ্যু–র‍্যাক এবং পাউডার টয়লেট
ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণত বসার ঘর এসে পড়ে। প্রবেশ-দরজার বাইরে শ্যু-র‍্যাক হলে সবচাইতে ভাল হয়। তাহলে বাইরের জুতো নিয়ে ভিতরে আসার দরকার হবে না। সাধারণত বাইরের দেওয়ালের গা ঘেঁষে শ্যু–র‍্যাক হয়ে থাকে, আর একান্তই বাইরের দিকে না করা গেলে বসার ঘরে প্রবেশ করেই দরজা যেদিকে খুলছে তার ঠিক উলটো দিকে করে নেওয়া যায়৷ শ্যু–র‍্যাকের সঙ্গে একটুখানি বসবার জায়গা হলেও ভাল হয়। শ্যু–র‍্যাকের বাইরে পাল্লা হলেও একটা স্টিল বা অ্যাক্রেলিকের জালি লাগিয়ে নেওয়াটা দরকার, এটা ভেন্টিলেশনের কাজ করে। এ ছাড়াও প্রবেশ-দরজা দিয়ে ফ্ল্যাট বা বাড়িতে ঢুকে ভিতরের দিকে কমন স্পেসে একটি টয়লেট থাকা দরকার। যেটা আমরা সাধারণত পাউডার টয়লেট বলে থাকি। বসার ঘরে যাঁরা আসবেন সব সময় তাহলে ভিতরের ঘরে যাওয়ার দরকার হবে না। পাউডার টয়লেটের অ্যাক্সেস সবসময় কমন এরিয়ার দিকেই হওয়া উচিত। পাউডার টয়লেটে সাধারণত একটি কোমোড, ছোট্ট একটা বেসিন হলেই হয়ে যায়।

আরও পড়ুন-ঘরেই বাড়ুক গাছ

খাবার আর বসার ঘরের পার্টিশন
এবার প্রবেশ করবেন বসার ঘরে। সাধারণত এখনকার ফ্ল্যাটগুলোতে বসবার ঘর আর খাওয়ার ঘর একসঙ্গেই হয়। তার সঙ্গে যদি এক্সটেন্ডেড ওপেন কিচেন থাকে তাহলে তো কথাই নেই। সুতরাং এটা খুব স্বাভাবিক যে, বসার ঘর থেকে খাওয়ার টেবিল বা রান্নার জায়গা দৃষ্টি গোচর হয়। এক্ষেত্রে সামান্য কিছু ভাবনার অবকাশ আছে। একটি হাফ লেভেলের পার্টিশন দিয়ে বসবার জায়গা থেকে ভিতরের খাওয়ার জায়গার দৃষ্টি-দূরত্ব তৈরি করা যায়। এই দৃষ্টি-দূরত্ব অনেক ভাবেই করা যেতে পারে। তবে তা নির্ভর করে কত বড় জায়গা তার উপরে। বড় জায়গা হলে সারিবদ্ধ কিছু ডেকরেটিভ বাঁশ দিয়েও একটা সুন্দর পার্টিশন করা যায়। কেউ-বা একটা সুন্দর ডিসপ্লে ইউনিট তৈরি করে এই দূরত্ব তৈরির কাজটা করতে পারেন, কেউ-বা লাইব্রেরির আলমারি বানিয়ে নিতে পারেন ড্রইং রুম আর ডাইনিং রুমের মধ্যিখানে। আরও অনেক ডিজাইনের পার্টিশন ইউনিট করে নেওয়া যেতে পারে। কখনও গ্লাস ব্রিকস দিয়ে পার্টিশন বা এচিং গ্লাস দিয়ে পার্টিশনও ভাল লাগে। বড় জায়গা হলে আর্টিফিশিয়াল ডেকরেটিভ পিলার দিয়েও সুন্দর ডেকরেশন করা যায়।

আরও পড়ুন-১৩ জুন সর্বদল, নিরাপত্তায় কড়া ব্যবস্থা

বসার ঘরের আসবাব
বসার ঘর খোলামেলা হওয়া দরকার। ক্রস ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকলে খুব ভাল হয়। যাতে হাওয়া যাতায়াত করতে পারে ঘরের মধ্যে। সোফা-সেট ঘরের মাপ অনুযায়ী হওয়াটা জরুরি। সোফাসেটের পরিবর্তে লো-হাইট খাট বা চৌকিকে সুন্দর ডেকরেশন করে রাখা যেতে পারে। এত সুন্দর ডেকরেশন করা যায় যে বাইরে থেকে বোঝাই যাবে যা এটা সামান্য একটা চৌকি। আজকাল অনেকে মেঝেতে গদি পেতেও বসার ব্যবস্থা করেন। যদিও সেটা খুব ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ। মেঝেতে গদি পাতার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটা বসার টুল, মোড়া বা চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা দরকার। কারণ সবাই মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসতে পারেন না শারীরিক কিছু অসুবিধের জন্য। সোফার ক্ষেত্রে এল শেপ, ইউ শেপ বা আলাদা আলাদা থ্রি-সিটার উইথ সিঙ্গল সিটার সোফাও রাখা যায়। অটোমেটিক বা ম্যানুয়াল রিক্লাইনার অনেকে বসিয়ে নেন বসবার ঘরে, বেশ আরাম করে বসার জন্যে।

আরও পড়ুন-নন্দীগ্রামে বিজেপির তিনবারের প্রার্থী, তৃণমূলে যোগ দিয়ে গদ্দারকে তোপ

বসার ঘরের সেন্টার টেবিলটি একটু বড় এবং চওড়া হলে ভাল। যাতে দরকার হলে সেখানে বসে খেয়ে নেওয়াও যায়। উচ্চতায় সোফার সিটের থেকে বেশি নয়। সেন্টার টেবিলের ভিতরের দিকগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। বইয়ের র‍্যাক খুব ভাল হয়। অনেকে ভারী করতে চান না। তবে এখনকার এই কম জায়গার জন্যে সেটুকু অ্যাক্সেস করা যেতে পারে।
সোফার দু’পাশে বা দেওয়ালের কোনায় সাইড টেবিল রাখলে ভাল। সাইড টেবিলের উচ্চতা সেন্টার টেবিলের উচ্চতার থেকে একটু বেশি হবে। সাইড টেবিলে ড্রয়ার রাখা যাতে পারে।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক মুখ দেখে অভিভূত স্বামীহারা সুলতানা

বসার ঘরে প্রকৃতি
বসার ঘরের দেওয়ালে বড় অয়েল পেন্টিং কিংবা ফটোগ্রাফি রাখা যেতে পারে, যার বিষয় হবে নেচার। এ ছাড়াও কাস্টমাইজড ওয়াল পেপার বা পেন্টিং করা যেতে পারে, প্রকৃতিকে বিষয়বস্তু রেখে। মোট কথা, বসার ঘরে বাইরের আবহটা ধরে রাখা দরকার।
বসার ঘরে আলো এবং রং
বসার ঘরের আলো অবশ্যই উজ্জ্বল হবে। ফলস্‌ সিলিং বা ট্রে সিলিং কিংবা কাঠের কিছু ফ্রেম বানিয়ে নিয়ে সিলিং লাইট লাগানো দরকার। চোখের জন্য ভাল ওয়ার্ম হোয়াইট এলইডি। একটা দশ বাই দশ একশো স্কোয়ার ফুট ঘরে বারো ওয়াটের বারোটার মতো লাইট ব্যবহার হলে তবে আলো যথাযথ হয়। তবে সবসময় এত আলো জ্বালিয়ে রাখার দরকার হয় না, একটা সুইচে তিন বা চারটে লাইটের কানেকশন থাকে। এই তিন-চারটে লাইটই এমনি সময়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বাড়িতে লোক এলে বা অনুষ্ঠানে সব লাইট জ্বালিয়ে দিলে দারুণ একটা অ্যাম্বিয়েন্স তৈরি হয়। আর রঙের ক্ষেত্রে একটু অফ হোয়াইট, ক্রিম হোয়াইট বা সামান্য ইয়েলো হোয়াইট রং সমস্ত দেওয়ালে করে দিলে খুব ভাল লাগে, সিলিং হবে হোয়াইট। ঘরের সৌন্দর্য খোলে আসবাবের কালার, ওয়াল প্যানেলিংয়ের সৌন্দর্য— এসবে। রং তাই এলিগ্যান্ট হোয়াইট বা ক্রিম-বেস হওয়াই ভাল।

Latest article