ভূতপরী

বাংলা ছবিতে ভূত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট নেহাত কম হয়নি গত কয়েক দশকে। যদিও সেইসব ছবি হাতে-গোনা। তবু তার মধ্যে সাম্প্রতিককালের কিছু ভূতের ছবি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই আজ বড়পর্দায় মুক্তি পেল পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের ছবি ‘ভূতপরী’। শুধু হরর নয় তার সঙ্গে রহস্য এবং ক্রাইম থ্রিলারের মিশেলে তৈরি এই ছবির মুখ্যচরিত্রে রয়েছেন জয়া আহসান, ঋত্বিক চক্রবর্তী— লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ঘোতন’কে মনে আছে? আর তার সেই ‘গণ্ডারিয়া’ মামা, ‘পপিনস’, পরীপিসি, সেই জাদুর রান্নাবান্না? ঠিক ধরেছেন পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের ছবি ‘রেনবো জেলি’র কথা বলছি। ২০১৮-সালের সেই ‘রেনবো জেলি’ দাগ কেটেছিল বহু সিনেমাপ্রেমীদের মনে। সৌকর্যের প্রত্যেকটি ছবিই সব সময় একটার চেয়ে আর একটা সম্পূর্ণ আলাদা, ভিন্ন স্বাদের হয়। এই তরুণ পরিচালক খুব সুন্দর করে গল্প বলেন যা সবাইকে ভাবায়, হাসায় এবং কাঁদায়। সেটা ‘রেনবো জেলি’ হোক বা ‘পেন্ডুলাম’ বা ‘রক্তরহস্য’। সেই রেশ ধরেই এবার ‘ভূতপরী’ আজ অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি ছবিটি বড়পর্দায় মুক্তি পেল।
‘মানুষ মরে ভূত হলে, ভূত মরে কী পরী হয়’।

আরও পড়ুন-পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন, জেল থেকেই ভোট ইমরানের, ফের কি কুর্সিতে নওয়াজ শরিফ?

এটাই ছিল ‘ভুতপরী’র ক্যাপশন। অদ্ভুত ক্যাপশন যেটা দেখে শুরু থেকেই বাংলা দর্শকেরা কৌতূহলী ছিলেন। ভূত আবার মরে! সেও কি সম্ভব! আবার সেই ভূত মরে পরী হয় সেটাই বা কীভাবে? ট্রেলার লঞ্চে সেই উৎসাহ আরও বেড়েছিল। অবশেষে এবার সেই কৌতূহল অবসানের পালা। হরর, রহস্য এবং ক্রাইম থ্রিলারের মিশেলে তৈরি পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের ছবি ‘ভূতপরী’ দেখতে আজ লম্বা লাইন পড়বে প্রেক্ষাগৃহে।
কেমনতর ছবি এই ‘ভূতপরী’। এটা একটা আদ্যোপান্ত ভূতের ছবি। যাকে বলে ভূতের আত্মকথন। আবারও এক ভিন্নস্বাদের গল্প এবং ছবি দর্শকদের উপহার দিলেন পরিচালক। কিন্তু কেন হঠাৎ ভূত জোন-এ প্রবেশ? প্রশ্ন করলে পরিচালক বললেন, হরর জোন নিয়ে কাজ করার খুব ইচ্ছে ছিল বরাবর। কিন্তু ভেবেছিলাম এই কাজটা যখন করব তখন হরর বা ভূতের ছবির যে ফরম্যাট রয়েছে সেই ফরম্যাটে করব না। ভয়াল ভয়ঙ্কর হরর ছবি প্রচুর রয়েছে মার্কেটে কিন্তু বাংলাসাহিত্যে ভূতের ইমেজটা তো আসলে তেমন নয়। যদি আমরা সাহিত্যের ইতিহাস দেখি তাহলে দেখব সেখানে লীলা মজুমদার, সত্যজিৎ রায়, ত্রৈলোক্যনাথ, বিভূতিভূষণ, শীর্ষেন্দু এঁদের ভূত নিয়ে প্রচুর কারবার। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর ‘ভূতের রাজা’ আমার বরাবরের অনুপ্রেরণা। সেই কারণেই মানুষ আর ভূতের এই ফ্যান্টাসির সঙ্গে আমি নিজেকে কানেক্ট করতে পারি। বাংলাসাহিত্যের ভূতেদের এক অদ্ভুত তেজ রয়েছে যেখানে ভূত গল্প বলে, ঝগড়া করে, কথা বলে, পিছনে লাগে, কাঁদে, বিপদে ফেলে। এই ভূতেরা একেবারে মাটি-ঘেঁষা। এরকম একটা ভূতের গল্প নিয়ে সিনেমা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। যেখান থেকেই ‘ভূতপরী’ তৈরি। আর নিজের লেখা গল্প নিজে পরিচালনা করলে একটা সুবিধা আমি যা চাইছি যেভাবে চাইছি সেটা নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পারি।

আরও পড়ুন-বিজেপি বিধায়কদের অসভ্যতা, ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রীর

এই ছবির গল্পটা বেশ অন্যরকম। এক নারী যার নাম বনলতা, সে মৃত। পরনে লাল শাড়ি, গয়না। এই বেশেই গ্রামে ঘুরে বেড়ায় বনলতার আত্মা। কেউ তাকে দেখতে পায় না। সে সকলকে দেখতে পায় কিন্তু ছুঁতে পারে না। আবার ক্ষতিও করতে পারে না। একদিন বনলতা আবিষ্কার করে সে একটি বাচ্চা ছেলেকে স্পর্শ করতে পারছে। আর স্পর্শ করেই সে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু ভূত কেন মানুষকে ভয় পাবে! বাচ্চা ছেলেটিরও সেই প্রশ্ন। যার হাত ধরে সে তার মারা যাওয়ার রহস্য খুঁজতে শুরু করে। সেই ছোট্ট ছেলেটির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়, রাগারাগি, ঝগড়া সবই হয়। আবার সেই ছেলেটিই কিন্তু তাকে সাহায্য করে ভূত থেকে পরী হয়ে উঠতে। কীভাবে? সেটাই দেখার। এই ভূতপরীর চরিত্রেই দেখা যাবে বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসানকে আর ছোট্ট ছেলেটির চরিত্রে রয়েছে বিশান্তক মুখার্জি।
এই ছবির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ‘ভূতপরী’র চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেছেন পরিচালক নিজে। সঙ্গীত পরিচালক নবারুণ বোস। রেনবো জেলি, রক্তরহস্যর সঙ্গীতও করেছিলেন নবারুণ। ছবির এডিটিং-এ অর্ঘ্যকমল মিত্র, কস্টিউম পূজা চট্টোপাধ্যায়, ক্যামেরায় আলোক মাইতি, আর্ট ডিরেক্টর আনন্দ আঢ্য। এই ছবির নির্মাতা সুরিন্দর ফিল্মস।
শ্যুটিং হয়েছে বর্ধমান, বোলপুর এবং কলকাতায়। শ্যুটিং সম্পর্কে পরিচালক জানান, শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা খুব ভাল। খুব কঠিন শিডিউলে কাজ হয়েছে। সবাই খুব এনজয় করেছি। জয়া খুব পরিশ্রমী এবং ডেডিকেটেড অভিনেত্রী তাই কাজটা অনেক সহজ হয়েছে।
ভূতপরী সম্পর্কে অভিনেত্রী জয়া আহসান জানান, আগে এই ধরনের ছবি করিনি। একদম নতুন ধরনের কাজ করলাম। খুব ভাল লেগেছে। এই ছবি শুধু ভূত আর ভয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নারী চরিত্রের মৃত্যুরহস্যের মাধ্যমে ক্রাইম থ্রিলার ঘরনাকেও ছুঁয়ে যাবে।

আরও পড়ুন-পানীয় জল ও রাস্তা নিয়ে অভিযোগ জানাতে নয়া পরিষেবা, চালু হল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর

মানুষ মরে ভূত হয় আর ভূত মরলে পরী হয়— এটাকে একটা ট্রানজিশন হিসেবে দেখেছেন পরিচালক। তিনি ছবির চরিত্রদের দিয়ে বলাতে চেয়েছেন কোনও কিছুর শেষ নেই। মনুষ্যজন্ম যেমন একটা রূপান্তর আবার মৃত্যুর পরেও পরবর্তী জন্ম বা জীবনের দিকে যাওয়াও একটা রূপান্তর এবং স্থানান্তর। তেমনই ভূত মরে পরী হয় এও এক ট্রানজিশন। ভূতকে পরী করে তুলতে শুধু ছোট ছেলেটি নয় রয়েছে আরও বেশ কিছু মানুষের হাত। গ্রামের এক চোর যে-চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। এ-ছাড়া বাচ্চাটির মা, গ্রামের এক তান্ত্রিক— সবার হাত রয়েছে। সবমিলিয়ে একটা ভূতের জীবনের সঙ্গে মানুষের জীবন কীভাবে জড়িয়ে যায় সেটাই দেখবে দর্শক এই ছবিতে।

Latest article