নতুন ছন্দে বিজয়া বৈঠক

বাঙালি জীবনের সঙ্গে সম্বৎসর জড়িয়ে থাকা চ্যানেলটির নাম জি বাংলা। বৈচিত্রে, বৈভবে, ভাবনায় কিংবা অনুভবে, বিশেষত এর নন-ফিকশন অনুষ্ঠানগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হাঁফ ধরে যায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের। তেমনই একটি মনোজ্ঞ বাৎসরিক অনুষ্ঠান ‘বিজয়া বৈঠক’। গল্পে-গানে-খেলায়-নাচে এবং সর্বোপরি খাওয়া-দাওয়া ও আড্ডায় চ্যানেলের সব সংসার একত্রিত হয় এখানে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

পুজো আসে, পুজো যায় আর আমরা থাকি অপেক্ষায়। এ অপেক্ষা বাঙালির নিজস্ব। তেত্রিশ কোটি দেবতা-দর্শনে বিশ্বাস করলেও পুজো বলতে বাঙালি মাত্রেই বোঝে দুর্গাপুজোর কথা। কিন্তু আক্ষেপটা হল, অপেক্ষা যত দীর্ঘায়ত, উপভোগ যেন ততই সংক্ষেপিত। দেবী দুর্গার পিতৃগৃহে পদার্পণের পর নির্ঘণ্ট মেনে সময় যেন হু হু দৌড়য়। তাতেই মন ভার মানুষের। আর এই ভার হালকা করতেই ফি বছর এগিয়ে আসে জি বাংলা আর বিজয়া দশমীর সপ্তাহান্তে বসায় বিজয়া বৈঠক। জমাটি এই বৈঠকে অংশ নেন চলতি বছরের ধারাবাহিকগুলির সংসারের সদস্যরা। সঙ্গে অবশ্য থাকেন আরও গুণী অতিথি যাঁদের কথা শুনতে, পারফরম্যান্স দেখতে মুখিয়ে থাকেন দর্শক।

আরও পড়ুন-লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নথির আরও সরলীকরণের পথে রাজ্য সরকার

এবার বিজয়া বৈঠকের সঞ্চালনাতেই চমক। দুই নায়িকা ইশা সাহা ও দিতিপ্রিয়া রায় যুগ্মভাবে পুরো অনুষ্ঠানটির সূত্রধরের কাজ করেছেন। ইশার এই প্রথম কোনও অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হিসেবে কাজ। তাই ব্যাপক নার্ভাস ছিলেন, সেটা অকপটে জানালেন। ‘‘রীতিমতো ভয় লাগছিল শুরুর দিকে, একদিকে টকব্যাগে নির্দেশ সামলানো, অন্যদিকে ফুল এনার্জি নিয়ে সারাদিন ক্যামেরা ফেস করা, সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করা বেশ কঠিন কাজ। তবে খুব এনজয়ও করেছি আর দারুণ একটা অভিজ্ঞতা, এটা বলতেই হবে’’, ইশার বক্তব্য। আর বয়সে ছোট হয়েও সংসারের গুরু দায়িত্ব সামলানো যার দীর্ঘদিনের অভ্যেস, ‘রাসমণি’-খ্যাত সেই দিতিপ্রিয়ার বক্তব্য, ‘‘এ তো আমার নিজের জায়গায় ফিরে আসা, তফাত একটাই, গত চারবছর এসেছি সংসারের সদস্য হয়ে আর এবার সঞ্চালকের ভূমিকায়। কিন্তু আনন্দ করেছি একইরকম। সত্যি বলতে কী, সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করাটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। আর এরকম আনন্দ-অনুষ্ঠান সঞ্চালনার মজাও যে দারুণ সেটাও এবার বুঝলাম।” দুই সঞ্চালকই যদি কাজের মধ্যে এত উচ্ছ্বসিত হন, তবে যাঁরা অনুষ্ঠানের গানে, গল্পে, খেলায় ভরপুর অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা কীরকম ভাবাই যায়। এবার যাঁরা বিজয়া বৈঠকে আছেন, তাঁরা হলেন ‘মিঠাই’, ‘কড়ি খেলা’, ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’, ‘অপরাজিতা অপু’, ‘আমাদের এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘জীবন সাথী’, ‘উমা’র সংসারের সদস্যরা।

বৈঠক শুরু হবে দিতিপ্রিয়ার দারুণ একটি নাচ দিয়ে, যেখানে ইশাও ওঁকে সঙ্গ দেন। সংগীতশিল্পী জোজো দুটি জনপ্রিয় লোকসংগীত গেয়ে স্বমহিমায় মাত করেছেন যার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন সন্দীপ্তা। গায়ক অনীক ধরের কণ্ঠে শোনা যাবে একটি হিন্দি গান যার সঙ্গে নাচ করেছেন ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ এর নায়ক-নায়িকা ঊর্মি ও সাত্যকি। প্রাক্তন সারেগামাপা চাম্পিয়ন অঙ্কিতা ও শো-এর মেন্টর রথীজিৎ ভট্টাচার্য হিন্দি ও বাংলা দুটি সংগীত পরিবেশন করেছেন। এছাড়াও বর্তমান চাম্পিয়ন অর্ক ছাড়াও সারেগামাপা-র জনপ্রিয় তিন গায়িকা পৌষালি, জ্যোতি, অনুষ্কার গানও শোনা যাবে এবারের বৈঠকে। স্পেশাল গেস্ট হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সোনালি চৌধুরী, নাচে ও আড্ডায় বরাবরের মতোই জমিয়ে দিয়েছেন তিনি, থাকবেন বিশ্বনাথ বসু, ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’ গান গেয়ে-নেচে মাতিয়ে দিয়েছেন যিনি। বিশ্বনাথ জানালেন, ‘‘কাজ, সময়ের মধ্যে ফুটেজ এসবের চক্করে আড্ডা মারা তো আমাদের হয়েই ওঠে না, কিন্তু এই ধরনের অনুষ্ঠানে দুটোই একসঙ্গে হয়। কাজও হয় ,সঙ্গে দেদার আড্ডা, মজা, কুশল আদান-প্রদান, সবার সঙ্গে দেখা হওয়া, সব। আর আমি যেহেতু একটু মিশুকে স্বভাবের তাই কেউ শুধু হাই-হ্যালো করে বসে থাকলে নিজেই উদ্যোগী হয়ে কথা এগোতে থাকি! সব মিলিয়ে দারুণ ব্যাপার। আর খাওয়া-দাওয়া থাকলে বিশ্বনাথ বসুর খুশি যে দ্বিগুণ হয়ে যায় এ তো ইন্ডাস্ট্রিতে সবারই এখন জানা!’’

খাওয়া-দাওয়ার প্রসঙ্গ যখন উঠল তখন জানিয়ে দেওয়া যাক, সেটেই ফুচকা কাউন্টার, দোসা কাউন্টার তৈরি হয়েছিল খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিযোগিতার জন্যও। সঙ্গে বিজয়ার মিষ্টিমুখ তো ছিলই। শোনা যাচ্ছে, ‘রানি রাসমণি’ ও ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ এই দুই সংসারের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলেছে কারা কত কম সময়ে দোসা খাওয়া শেষ করতে পারবে তা নিয়ে। তেমনই আছে ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা, কত কম সময়ে কে ক’টা ফুচকা খেতে পারে তার প্রতিযোগিতা।

প্রতিযোগিতার পাশাপাশি পারফরম্যান্সও জমাটি এবার। টিআরপি’র শীর্ষে থাকা ‘মিঠাই’-এর সংসার রোজকার মতোই জমিয়ে দিয়েছে এখানেও। জানা যাচ্ছে, মিঠাই নিজে ‘পরম সুন্দরী’ গানের সঙ্গে নেচেছে আর সিড গেয়েছে গজল, দাদু বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীও পাল্লা দিয়ে গেয়েছেন একটি পুরাতনী বাংলা গান। আর দাদুকে নাচিয়ে-গাইয়ে মাতিয়ে দিয়েছে মিঠাই ও সংসারের অন্যরা। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী দারুণ খুশি এই জমাটি অনুষ্ঠানে সারাদিন কাটিয়ে, বললেন, ‘‘আমার গান নিয়ে বলাটা হাস্যকর। আদৌ ওটা গান হয়েছে কি না জানি না। তবে বাচ্চাগুলো সত্যি আমায় নাচিয়ে ছেড়েছে আর আমার অনস্ক্রিন বউ স্বাগতা নিজে দুর্দান্ত নাচে কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে ওর নাচ স্পয়েল করে ছেড়েছি যাকে বলে!’’

আরও পড়ুন-চেন্নাই থেকে গ্রেফতার তৃণমূল নেতার খুনি

এছাড়াও রয়েছে ধারাবাহিক ‘কড়ি খেলা’র নায়ক-নায়িকা অপূর্ব ও পারমিতার ডুয়েট নাচ। ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ গানের সঙ্গে তাৎক্ষণিক নাচে নিজেদের রসায়ন নাকি নতুনভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন দু’জন! জীবন সাথী’র সালঙ্করা ইন্দ্রাণী দত্ত ‘দোলা রে’ নেচে মুগ্ধ করেছেন। সঙ্গে প্রিয়ম ও সংকল্প জুটি, ‘যমুনা ঢাকি’ ধারাবাহিকের নায়ক-নায়িকা শ্বেতা ও রুবেল, ‘অপরাজিতা অপু’র দীপুও জমিয়ে নাচ করেছে। সব মিলিয়ে প্রতিবারের মতোই এবারের বৈঠকও জমে যাবে সন্দেহ নেই। তিনঘণ্টার এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন সুপ্রিয় বেদজ্ঞ। প্রচারিত হবে, আগামিকাল, রবিবার, দুপুর তিনটে থেকে।

 

Latest article