এজেন্সি নামিয়ে রাজনীতি, ভয়ানক নজির তৈরি হচ্ছে

চমকানো ধমকানো ভয় দেখানোর রাজনীতিতে দেশকে অভ্যস্ত করে তুলছে মোদি সরকার। মনে হচ্ছে যেন এই সরকারের দুটি অস্ত্রই আছে বিরোধীদের ঘায়েল করার জন্য। ইডি আর সিবিআই। কিন্তু যুগপৎ জমছে আশঙ্কার মেঘ। এই ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত আগামীর ভারতকে অন্য বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না তো! লিখছেন উত্তর বারাকপুর পুরসভার কাউন্সিলর শ্রীপর্ণা রায়

Must read

ভারতবর্ষের রাজনীতিতে স্বৈরতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারী রাজনীতির এক নবতম অধ্যায়ের সংযোজন হয়েছে কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দলের হাত ধরে দিল্লির ক্ষমতা অলিন্দে। সর্বগ্রাসী এই রাজনীতির মূল নির্যাস যে কোনও উপায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আরও ক্ষমতা দখল! অদ্ভুতুড়ে ভয়ঙ্কর এই নেশায় তাদের মূল অস্ত্র হচ্ছে নিয়ন্ত্রণে থাকা কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। বিশেষকরে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই জোড়া ফলায় শিকারকে বিদ্ধ করে তাকে নিজেদের আজ্ঞাবহতে পরিণত করাই বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক দলের মূল কৌশল।

আরও পড়ুন-ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, সম্মান ও সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আদিবাসীদের পাশে আছেন মুখ্যমন্ত্রী

সারা দেশে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, সমস্ত রেকর্ড ভেঙে বিগত পঁয়তাল্লিশ বছরে বেকারত্বের সর্বোচ্চ হার, নাগালের বাইরে চলে যাওয়া রান্নার গ্যাসের দাম সাধারণ মানুষের দুর্দশা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে তখন কেন্দ্রের শাসক দল সুচারুভাবে দেশবাসীর প্রতিবাদের প্রতিটি হাতিয়ারকে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে দাবিয়ে রেখে নিজেদের সার্বিক ব্যর্থতাকে লুকোতে চাইছে। গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কণ্ঠস্বর রোধ করতে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে ইডি সিবিআইকে। গণতন্ত্রের আর এক স্তম্ভ সংবাদমাধ্যমের একাংশ আজ জনতার বদলে গদি মিডিয়ার কণ্ঠস্বর! স্বাধীনতা নিলাম হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই নেপথ্যে সেই এজেন্সির ভয়! সবমিলিয়ে সাধারণ দেশবাসীর নিত্যদিনের অব্যক্ত যন্ত্রণা আজ দিল্লি নিয়ন্ত্রিত এজেন্সির প্রতাপে নীরবে নিভৃতে কাঁদছে প্রতিনিয়ত। সুবিচার দেওয়ার কেউ নেই!!

আরও পড়ুন-দুর্যোগ মোকাবিলায় তৈরি জেলা প্রশাসন

একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, দিল্লির এই স্বৈরাচারী শাসক দল সিবিআই ও ইডির মতো এজেন্সিগুলোকে জনতার চোখে ধুলো দিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজে লাগায়। যে কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অথবা পরে। ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে পরিস্থিতির ওপর বিচার করে তারা সেই সময় রাজ্যের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশানা করে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা-নেত্রীদের ঘরে ইডি কিংবা সিবিআই ঢুকিয়ে দেয়, এবং অন্য ট্র্যাকে তাদের কাছে সন্ধিপ্রস্তাব পাঠায় বিভিন্ন লোভনীয় শর্তে। যাঁরা এই সন্ধিক্ষণে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারেন না, সহজেই নতিস্বীকার করে বিক্রি হয়ে যান, তাঁরা পরবর্তীতে ইডি সিবিআইয়ের ঘরে রাখা ওয়াশিং মেশিনে ধৌত হয়ে পবিত্র নিষ্পাপ সাধুবেশে বিজেপি শিবিরে নিরাপদ আশ্রয় নেন এবং ইডি, সিবিআই তাঁদের ঠিকানা সানন্দে ভুলে যান। আর যাঁরা মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ওঁদের কাছে মাথা নোয়াতে নারাজ হন তাঁদের ঘরে ইডি, সিবিআইয়ের ঘন ঘন যাত্রা অব্যাহত থাকে, মামলা হয়, গ্রেফতার চলে, মিডিয়া ট্রায়ালে বিরুদ্ধ ও বিক্ষুব্ধ জনমানস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মুখরোচক সিলেক্টিভ ইনপুট লিক করানো হয়! আইনের চোখে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই ইডি, সিবিআইয়ের কৌশলগত প্রচেষ্টায় তাঁরা মানুষের মনে অপরাধী হয়ে যান!

আরও পড়ুন-অভিষেকের হাত ধরে আজ জলপ্রকল্পের যাত্রা শুরু

ক্ষমতা দখলের জন্য নিয়ন্ত্রণে থাকা এজেন্সিগুলিকে লেলিয়ে দিয়ে এই রকম নগ্ন প্রতিহিংসার রাজনীতি ভারতেবর্ষের মাটিতে আজ কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দলের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হল। হয়তো সাময়িকভাবে তারা উপকৃত হল, কিন্তু এই ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্হাপনে যে বিষবৃক্ষের চারা তাঁরা আজ বপন করলেন ভারতবর্ষের রাজনীতির ময়দানে, সেই বিষবৃক্ষ একদিন মহীরুহ হয়ে তাঁদেরকেই গিলে খাবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ চিরকালের জন্য প্রাসঙ্গিক তা প্রমাণ করার পালা আগামীতে বিজেপির এবং শর্তহীনভাবে এই ইডি, সিবিআইয়ের হাত ধরে তা প্রমাণিত হবেই, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র।

Latest article