অরবিন্দের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

Must read

প্রতিবেদন :ঋষি অরবিন্দের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ঋষি অরবিন্দ ১৮৭২ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা কৃষ্ণধন ঘোষ ছিলেন বিলেতফেরত ডাক্তার এবং মাতা স্বর্ণলতা দেবী ছিলেন কলকাতার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব রাজনারায়ণ বসুর জ্যেষ্ঠা কন্যা। পাশ্চাত্য ভাবধারায় গড়ে তোলার লক্ষ্যে পিতা অরবিন্দকে প্রথমে দার্জিলিঙে ইংরেজি স্কুলে এবং পরে বিলেতে সেন্ট পলস স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি কেমব্রিজ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কিংস কলেজে অধ্যয়ন করেন। তিনি প্রথম ভারতীয় হিসাবে ট্রাইপস পাশ করেন ৷ ১৮৯০ সালে অরবিন্দ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, কিন্তু শিক্ষানবিশকালে অশ্বচালনা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। বিলেতে থাকা অবস্থায় অরবিন্দ সংবাদপত্রের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ অপশাসনের কথা জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই তাঁর অন্তরে ভারতকে বিদেশি শাসনমুক্ত করার বাসনা জাগ্রত হয়। তিনি ১৮৯৩ সালে দেশে ফিরে বরোদা এস্টেটে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯০০ সালে বরোদা কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক এবং ১৯০৪ সালে অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অরবিন্দ বরোদায় বিপ্লবী গুপ্ত সংগঠনের সংস্পর্শে আসেন এবং অনুজ বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে বিপ্লবীমন্ত্রে দীক্ষিত করে ওইরূপ দল গঠনের জন্য বাংলায় প্রেরণ করেন। এ সময় স্বরাজ আন্দোলন-এর সূত্রপাত হলে অরবিন্দ তা পূর্ণভাবে সমর্থন করেন।

অরবিন্দের রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মপন্থার তিনটি দিক ছিল – এক : গুপ্ত বৈপ্লবিক প্রচারকার্য চালানো এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রস্তুতি হিসেবে সংগঠন গড়ে তোলা ৷ দুই : সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে প্রচারকার্য চালানো এবং তিন : অসহযোগ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করা। ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অরবিন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ ১৯০৫ সালে বরোদার চাকরি ছেড়ে তিনি বাংলায় আসেন এবং জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ৷ ১৯০৬ সালে জাতীয় কলেজের ( বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ) প্রথম অধ্যক্ষ ও ‘বন্দেমাতরম’ ইংরেজি সংবাদপত্রের সম্পাদক হন ৷ পাঁচ বছর সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থেকে তিনি কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতা ও বিপ্লবী দলের নেপথ্য নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ৷ ১৯০৮ সালের ৩ মে গ্রেফতার হন আলিপুর বোমা মামলায় ৷ ১৯০৯ সালের ৬ মে মুক্তি পান নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ৷ জেলে থাকা অবস্হায় অরবিন্দের জীবনে পরিবর্তন শুরু হয় ৷ তিনি আধ্যাত্মিক সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ১৯১০ সালে রাজনীতি ছেড়ে পন্ডিচেরী গমন করেন এবং সনাতন ধর্ম প্রচার ও আশ্রম প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেন ৷ বিপ্লবী অরবিন্দ ঋষি অরবিন্দে পরিণত হন ৷ শেষজীবন পন্ডিচেরীর আশ্রমে অতিবাহিত করেন ৷ এ সময় তিনি ধর্ম , দর্শন ও ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর বহু গ্রন্হ রচনা করেন ৷ তাঁর ৩৮ টি গ্রন্হের মধ্যে ৬ টি বাংলা গ্রন্হ ৷ তাঁর উল্লেখ যোগ্য গ্রন্হ – The Life Divine , Savitri , Essays on Gita , The age of kalidasa , পন্ডিচেরীর পত্র , ধর্ম ও জাতীয়তা , কারাকাহিনী , ভারতের নবজন্ম প্রভৃতি ৷ বেদবিদ , ধর্মজ্ঞ , মহাত্মা , জ্যোতির্ময় যোগীপুরুষ , মহাঋষি শ্রী অরবিন্দের মহাপ্রয়াণ হয় পন্ডিচেরীর আশ্রমে ১৯৫০ সালের ৫ ডিসেম্বর।

 

Latest article