অবহেলা নয় কোষ্ঠকাঠিন্যে

ভারতের প্রায় ৩০ শতাংশের উপর প্রাপ্তবয়স্করা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় আক্রান্ত। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই সিভিয়ার কনস্টিপেশনের শিকার। এই তালিকায় রয়েছেন শিশু এবং কমবয়সিরাও। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও রোগটি আসলে তা নয়। গোটা ডিসেম্বর হল কনস্টিপেশন অ্যাওয়ারনেস মান্থ। এই মাস পালনের উদ্দেশ্য রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি যাতে সময় থাকতে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়। কীভাবে। জানাচ্ছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

শব্দটা শুনতেও অস্বস্তি, বলতেও অস্বস্তি। কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য। এটা আবার কোনও রোগ না কি! অনেকের কাছেই খুব হাস্যকর একটা বিষয়। আর যাঁর এই রোগ রয়েছে তিনি নিজের জ্বালায় জেরবার। সকালে দুপুরে রাতে দীর্ঘক্ষণ বাথরুমেই কেটে যায় এমন মানুষদের। অসম্ভব কষ্টের অনুভূতি। সারাদিনের অশান্তি। অথচ এই রোগটিকে কেউ বড় একটা পাত্তা দিতে নারাজ।

আরও পড়ুন-নিলামে মরুঝড়, টাকার অঙ্কে ইতিহাস কেকেআরের, স্টার্কের গতিতে হার কামিন্সের

কিন্তু জানেন কি কনস্টিপেশন অবহেলা করলে ঘটতে পারে বিপদ। কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত ব্যক্তি একাধিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যেতে পারেন মুহূর্তে, হতে পারে একাধিক ক্রনিক রোগ। তাই একটানা কনস্টিপেশনের সমস্যায় ভুগছেন যাঁরা তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে একটানা নিয়ম মেনে ডায়েট এবং ওষুধ খাওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন-পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য একগুচ্ছ ওষুধ বাতিল

কেন হয়
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সিংহভাগ দায়ী হল আমাদের ডাইজেসটিভ সিস্টেম বা হজম প্রক্রিয়া। ঠিকভাবে খাবার হজম না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। কারণ হজমের জন্য জরুরি হল মানবদেহের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতার। আমরা যখন খাবার খাই, সেই খাবার একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্য দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছয়। সেখানে একাধিক পাচক রসের সংমিশ্রণে খাবার হজম হয় এবং সেখান থেকে পুষ্টিগুণ গ্রহণ করে শরীর এবং বাকি পদার্থ মল হিসেবে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে মল বেরিয়ে যাওয়ার আগে তা কোলনে জমা থাকে। এবার শরীর যদি ডিহাইড্রেটেড থাকে অর্থাৎ জলের পরিমাণ কমে যায় মল শক্ত হয়ে যায়। ফলে কোলন থেকে পায়ুদ্বারের মধ্যে দিয়ে তা বেরোতে পারে না। জমে যায়। এর ফলে গ্যাস-সহ এবং পেটব্যথা, পেটফাঁপা ইত্যাদি আরও নানান সমস্যা সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন-স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে পড়ুয়াদের নিয়ে মিড ডে মিল খেতে বসে গেলেন বিডিও

এছাড়া ফাইবার জাতীয় খাবারের ঘাটতি থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, অন্ত্রের কোনও গুরুতর সমস্যা, যেমন টিউমার ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। স্নায়বিক কোনও ক্ষতি এবং হরমোনাল ইমব্যালান্সের কারণেও কনস্টিপেশন হয়।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। কারণ, এই সময় হরমোনের পরিবর্তন হয় যা হজমে বাধা দেয় এবং জরায়ুর ভিতরে বৃদ্ধি পেতে থাকা শিশুর চাপ বাড়তে থাকে ফলে এমনটা হয়। কাজেই এই পিরিয়ডে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, অবসাদ এবং নিয়মিত অ্যালকোহল নেওয়ার অভ্যেস থাকলে, অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
কিছু ওষুধ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম-সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের ব্যথার ওষুধ বা পেনকিলার ইত্যাদি দীর্ঘদিন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
এ ছাড়া খাদ্যনালির কিছু জটিল রোগের কারণেও হতে পারে।
অতিরিক্ত নিষ্ক্রিয় জীবনযাত্রা। কোনও শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে না থাকা, স্থবিরতা, আলস্য, ওবেসিটি কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন-কানপুরে দ.লিত অনুষ্ঠানে ভাঙ.চুর, গু.লি চালাল দুষ্কৃ.তীরা, গ্রেফতার ৫

প্রাথমিক স্তরে যখন কারণটা গুরুতর নয় তখন জল খাবার অভ্যেস বদল করলে অর্থাৎ এতদিন জল কম খাচ্ছিলেন। জলের পরিমাণটা শরীরে পর্যাপ্ত হলে সঙ্গে বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমতে থাকে কিন্তু অনেক সময় পরিস্থিতি জটিল আকার নেয়। কিছু মানুষের ধাত থাকে কোষ্ঠবদ্ধতার আবার কিছু মানুষের দীর্ঘদিন কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কনস্টিপেশন দেখা দেয়। যা মারাত্মক আকার নিতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
মলের সঙ্গে রক্ত বেরোলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এর পাশাপাশি ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজের (IBD) কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, কনস্টিপেশন থেকে ক্যানসারও হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় মলের সঙ্গে রক্ত বের হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
অনেক সময় দেখা যায় প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে বাওয়েল ক্লিয়ার হচ্ছে না। তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কারণ একাধিক ওষুধ রয়েছে যার দ্বারা এই কঠিন পরিস্থিতি সামলে দিতে পারেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
এর পাশাপাশি প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হলে, প্রবল জ্বর হলে, হার্টবিট আচমকা বেড়ে গেল, বমি-বমি ভাব দেখা দিলে দেরি করবেন না চিকিৎসকের কাছে যেতে।

আরও পড়ুন-সংসদ হা.নার ঘটনা বাড়িয়েছে উদ্বেগ, বাড়ছে রাজ্য বিধানসভা এবং নবান্নের নিরাপত্তা

কী খাবেন
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কম ফাইবার যুক্ত খাবারকে দায়ী করা হয়। সাধারণত দু’ধরনের ফাইবার রয়েছে— দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয়। দ্রবণীয় ফাইবার যা পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে কোলেস্টেরল এবং সুগার কমাতে সাহায্য করে। কলা, ওটস, মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর এই ধরনের ফাইবার।
অদ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের গতিবিধি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। গোটাশস্য, শাক-সবজি, লেবু জাতীয় খাবার অদ্রবণীয় ফাইবারের ভাল উৎস।
কয়েক বছর আগের একটি গবেষণায় কিছু সংখ্যক মানুষকে ৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ২০ গ্রাম কাঁচা ব্রোকলি বা ২০ গ্রাম স্প্রাউট খাওয়ানো হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছিলেন যে, রোজ যাঁরা ব্রোকলি খেয়েছেন তাঁদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ কম।
প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর খাবার খান অল্প অল্প করে। এতে হজম ভাল হবে।
খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকতে হবে কিন্তু মনে রাখা দরকার অত্যধিক ফাইবারও কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
ছোলা, চানা, মুসুরডাল, মটরশুঁটি, শিম, পালংশাক, বিট, গাজর ইত্যাদি সবজি খেতে হবে অল্টারনেট করে। সবটা একসঙ্গে নয়।
কুমড়ো বীজ, চিয়া সিডস, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, গোটা শস্য, গম, বাদাম, পেস্তা ইত্যাদি খুব ভাল ফাইবারের উৎস।
জল তো খাবেনই সঙ্গে ফলের রস, লস্যি জাতীয় পানীয় খেতে হবে।
স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত মাছ যেমন সার্ডিন মাছ, ম্যাকরেল, বাদাম, অলিভ অয়েল হজমে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।

Latest article