আম্মু স্বামীনাথন, দাক্ষায়ণী ভেলায়ুধন, লীলা রায়, রাজকুমারী অমৃত কউর বা সরোজিনী নাইডুদের মধ্যে সাধারণ যোগসূত্রটি কী? হঠাৎ এমন প্রশ্নে সাধারণ পাঠক একটু অবাক হতে পারেন। এই প্রজন্মের বাঙালিরা এঁদের মধ্যে, গান্ধী-পূর্ব সময় থেকে কংগ্রেসের অন্যতম বিদুষী নেত্রী, কবি, যাঁকে মহাত্মা ‘নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া’ আখ্যা দিয়েছিলেন, তথা দেশের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল সরোজিনী নাইডু-র নামের সঙ্গে হয়তো খানিকটা পরিচিত, কেউ কেউ স্মৃতি বা ইতিহাস হাতড়ে, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের মন্ত্রশিষ্যা, ঢাকা ‘দীপালি সঙ্ঘের’ প্রতিষ্ঠাতা, লীলা রায়ের (নাগ) কথাও বড় জোর মনে করতে পারেন। কিন্তু বাকিদের কথা? বা, কীভাবে এঁরা একসূত্রে গ্রথিত, সে সম্বন্ধে সম্যক ভাবে নাও জানতে পারেন। কেবল এই পাঁচজনই নয়, এমন আরও দশজন মিলে, ভারতের নানা প্রান্তের মোট পনেরো জন মহীয়সী নারী যে ঐক্যসূত্রে গ্রথিত ছিলেন— তা’হল ভারতের সংবিধান রচনার পরিষদ বা ‘গণ পরিষদ’।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীকে ডি’লিট সম্মান সেন্ট জেভিয়ার্সের
১৯৪৬ সালের জুলাই মাস থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যে-‘গণ পরিষদ’ ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর দেশের খসড়া সংবিধানটি গ্রহণ করে। এই পনেরো জন অসামান্য নারী, বিপুল সংখ্যক পুরুষ নেতার (গণপরিষদের মোট সদস্য— দেশভাগের আগে ৩৮৯, স্বাধীনতার পর ২৯৯) পাশাপাশি, ভারতের সংবিধান রচনার গৌরবময় কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সংবিধান গৃহীত হওয়ার এই দিনটি— ২৬ নভেম্বর— প্রতি বছরই ‘সংবিধান দিবস’ বলে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। আজও আর একটি ‘সংবিধান দিবস’। তাই আজ সময় এসেছে, সংবিধান রচনায় যুক্ত এই মহীয়সী নারীদের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করার এবং একই সঙ্গে ‘ভারতীয় সংবিধান’-এ ‘নারী’দের অবস্থান ও অধিকারগুচ্ছ নিয়ে কিছুটা আলোচনার।
গণপরিষদে এই উজ্জ্বল নারীদের এমন সংখ্যাল্পতা কিন্তু কেবল সেদিনের চিত্র নয়, আজও সংসদে প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে কমবেশি তেমনটাই ঘটে চলছে। প্রথম সাধারণ নির্বাচনে (১৯৫২) মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪ জন; তৃতীয় লোকসভায় (১৯৬২-৬৭) এই সংখ্যা খানিকটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭; চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ নির্বাচনে এই সংখ্যা ক্রমশ কমে হয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৩, ২৮ ও ২১।
আরও পড়ুন-বাম আমলের চেয়ে বেশি ডিএ দিয়েছে রাজ্য, ধীরে ধীরে সবটাই মিটিয়ে দেবে রাজ্য
সপ্তম ও অষ্টম লোকসভায় সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও (৩২ ও ৪৫) নবম নির্বাচনে (১৯৮৯) এই সংখ্যার লক্ষণীয় পতন ঘটে দাঁড়ায় মাত্র ২৮-এ। এরপরের নির্বাচন থেকে মহিলা প্রতিনিধিদের সংখ্যা প্রতিবারই (একবার বাদে) কিছুটা বাড়তে থাকে— দশম বারে (১৯৯১-৯৬) ৪২, একাদশ লোকসভায় একটি কমে ৪১, দ্বাদশ নির্বাচনে ৪৪ এবং ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ লোকসভায় দু’বারই ৫২। পঞ্চদশ নির্বাচন থেকে (২০০৯-১৪) এই প্রবণতা কিছুটা বলার মতো হয়— ৬৪ জন, যা ৫৪৩ সদস্যদের ১২ শতাংশ। ষোড়শ লোকসভায় আরও দুই বেড়ে মহিলা সদস্য সংখ্যা হয় ৬৬ জন। আর বর্তমান লোকসভায় (২০১৯) এই সংখ্যা ৮১ যা আগের সংখ্যাগুলির চেয়ে অনেক বেশি হলেও তা মাত্র পনেরো শতাংশের কাছে, যা বারবার বিভিন্ন জাতীয় দলগুলি প্রস্তাবিত (এখনও অধরা) এক-তৃতীয়াংশ আসনের (১৮০/১৮১) মহিলা আসন সংরক্ষণের চেয়ে প্রায় একশোটি কম!
আরও পড়ুন-মিলেমিশে কাজ করুন বীরভূমে,বললেন অভিষেক
অথচ, আমাদের সংবিধান শুরু থেকেই দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদেরই— ধনী-নির্ধন, জাতপাত, লিঙ্গগত পরিচয়, ধর্মীয় সম্প্রদায়, ভাষা, অঞ্চল নির্বিশেষে— সর্বজনীন ভোটাধিকার দেওয়ায়, প্রথম সাধারণ নির্বাচন থেকেই লোকসভা ও বিধানসভায় দেশের আপামর মহিলারাই ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন, যা পরাধীন দেশে ভাবাই যেত না। কেবল, পরাধীন ভারতেই নয়, যে দেশের কাছ থেকে আমরা আধুনিক সাংবিধানিক আইন, সংসদীয় ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র প্রভৃতি রাষ্ট্র পরিচালনার সব বিষয়েই হাতেখড়ি নিয়েছি, সেই ঔপনিবেশিক গ্রেট ব্রিটেনেই, কোনও ভেদাভেদ ছাড়া দেশের সব মেয়ে সর্বজনীন ভোটাধিকার পেয়েছে ১৯২৮ সালে, শতাব্দীব্যাপী বহু সংগ্রামের বিনিময়ে। এর ছিয়ানব্বই বছর আগে ১৮৩২-এর রিফর্ম (সংস্কার) অ্যাক্ট লাগু হলে ব্রিটেনে মেয়েদের ভোটাধিকার অত্যন্ত সীমিত হয়ে অতি উচ্চ-আয়ের হাতেগোনা দু’একজন ‘স্বাধীন’ (অর্থাৎ, বাবা, স্বামী ইত্যাদি পুরুষ-নির্ভর নয়) ও ধনী মহিলা বাদে প্রায় কেউই ভোট দেওয়ার অধিকারী রইল না।
অথচ, উনিশ শতক থেকেই শিল্প বিপ্লবের পথ বেয়ে বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে, বিশেষত, ডার্বিশায়ারের ক্রমফোর্ড মিলের মতো কাপড়ের কলগুলি গড়ে উঠতে লাগল মুখ্যত কম-মজুরি-পাওয়া ও অবর্ণনীয় শোষণমূলক কর্মপরিবেশে আবদ্ধ মহিলা-শ্রম ভিত্তি করেই। কিছুদিন পর থেকে ক্রমশ বাড়তে থাকা এই শ্রমিক নারীদের অনেকে তাদের পক্ষে কর্মসহায়ক আইনপ্রণয়নের জন্য নানা স্তরে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে লাগল— এই দাবিরই যৌক্তিক সম্প্রসারণ হল, মেয়েদের সর্বজনীন ভোটাধিকারের (‘সাফ্রেজ’-এর) দাবি। যেসব মহিলা এই দাবির সপক্ষে আন্দোলনে যুক্ত, তারা অচিরেই ‘সাফ্রেজিস্ট’ (ভোটাধিকারপন্থী) নামে পরিচিত হয়। ১৮৭২ সালে ন্যাশনাল সোসাইটি ফর উইমেন্স গড়ে ওঠে এবং ১৮৯৭ সালে এই ধরনের নানা সংগঠন মিলে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ উইমেন্স সাফ্রেজ সোসাইটিজ— যার নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন ও জনমত গঠনের ফলশ্রুতিতে ১৯২৮ সালে ব্রিটেনে নারীদের সর্বজনীন ভোট দেওয়ার অধিকার সিদ্ধ হয়।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় বিজেপিকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর, বললেন কেন্দ্রে এজেন্সি-সরকার
ভারতেও স্বাধীনতার আগে ভোটদানের অধিকার ছিল সীমিত। কিন্তু ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে ‘খসড়া’ সংবিধানটি গৃহীত হলে ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারি ভারতের সাধারণতন্ত্র দেশের আপামর প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের জন্য ভোটাধিকারের ‘খুলে দিল দ্বার’, সকলের সঙ্গে মেয়েরাও এই অধিকার পেল। সেদিক থেকে দেখলে পশ্চিমের নানা দেশের মেয়েদের যে-অধিকার লাগাতার সংগ্রামে অর্জন করতে হয়েছে, স্বাধীন ভারতে তা নারীরা এক লহমায় পেল। দিল আমাদের সংবিধান। এইদিক থেকে আমাদের সংবিধান নিঃসন্দেহে এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটাল। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, মেয়েদের সাংবিধানিক/আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চয়ই ‘সামনের দিকে’ একটা বড় পদক্ষেপ, কিন্তু কেবল আইন করা মানেই কি নারীদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা নিশ্চয়ই খুঁজব, তবে তার আগে দেখা যাক, সংবিধানে কীভাবে মেয়েদের বিষয়গুলি এসেছে।
আরও পড়ুন-সরকারি হাসপাতালে আরও নজরদারি, ভাঙা হবে দালালচক্র
সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুচ্ছের প্রথমেই আছে ‘সাম্যের অধিকার’ (ধারা ১৪-১৮)। এর মধ্যে ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে যে রাষ্ট্র কখনওই লিঙ্গগত কারণে কোনও নাগরিকের মধ্যে তফাত করবে না। ১৫(৩) ধারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে রাষ্ট্রকে নারীদের পক্ষে যেকোনও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা দেয় বা বলা যায়, অন্য (পুরুষ) নাগরিকদের চেয়ে মেয়েদের পক্ষে সদর্থক তারতম্য ঘটাতে অনুমতি দেয়। ১৬(২) ধারা রাষ্ট্রের অধীন কোনও দফতরে চাকরির ক্ষেত্রে লিঙ্গগত ভিত্তিতে কোনও নাগরিককে (পড়ুন, মেয়েদের) ভেদাভেদ/তারতম্যের শিকার করা যাবে না, বা, সেই ভিত্তিতে কাউকে অযোগ্য বলা যাবে না। এ ছাড়া, ‘শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার’-এর (ধারা ২৩ ও ২৪) অন্তর্গত ২৩(১) ধারায় মানুষের ‘পাচার’ ও ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে খাটানো’-কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এইধরনের শোষণ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকলেও, এর শিকার যে মুখ্যত মেয়েরাই তাতে সন্দেহ কী!
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি ৫১-এ ধারায় যুক্ত হয়েছে মৌলিক কর্তব্যগুচ্ছও—যার মধ্যে [৫১-এ(ই) ধারায়] নাগরিকদের নারীদের মর্যাদার পক্ষে অবমাননাকর যেকোনও আচরণ/প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়াও ধারা ৩৯-এর (এ, ডি এবং ই-তে) বলা হয়েছে— রাষ্ট্রকে নারীপুরুষ নির্বিশেষে জীবনধারণের উপকরণ লাভের সমানাধিকার রক্ষা করতে হবে; একই কাজে নারীপুরুষের একই মজুরি/বেতন নিশ্চিত করতে হবে; পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে যাতে কর্মক্ষেত্রে মহিলা কর্মীদের স্বাস্থ্য ও শক্তির অপব্যবহার না হয় এবং দেখতে হবে যাতে তারা অর্থনৈতিক বাধ্যতার কারণে তাদের শক্তির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনও (ভারী কাজের) পেশায় না যুক্ত হয়। আর, ৪২ নং ধারায় কর্মক্ষেত্রে ন্যায়যুক্ত ও মানবিক পরিবেশ রক্ষা করা ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে মেয়েরা সবচেয়ে বড় সাংবিধানিক অধিকার পেয়েছে ১৯৯২ সালের ৭৩তম ও ৭৪তম সংবিধান সংশোধনের ফলে আহৃত পঞ্চায়েত ও পুর ব্যবস্থায় (মিউনিসিপ্যালিটি ও কর্পোরেশন-এ) মেয়েদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণে [২৪৩-ডি(৩) ও ২৪৩-টি(৩) ধারা]। পঞ্চায়েতের সব দপ্তরের মোট চেয়ারপার্সনদেরও এক তৃতীয়াংশ এবং রাজ্য বিধানসভার ব্যবস্থা অনুযায়ী পুরসভার দফতরগুলির চেয়ারপার্সনদের মধ্যে মেয়েদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে [২৪৩-ডি(৪) ও ২৪৩-টি(৪) ধারা]। এগুলি ছাড়াও, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে : প্রথমে জাতীয় স্তরে (১৯৯২) ও পরে রাজ্যস্তরের নারী কমিশন গঠন, কর্মস্থলে মেয়েদের যৌন হয়রানি নিরোধক আইন (২০১৩), সমবেতন আইন (১৯৭৬), পণবিরোধী আইন (১৯৬১), শিশুবিবাহ নিরোধক আইন (২০০৬) প্রভৃতি।
আরও পড়ুন-লাভ জিহাদের অভিযোগ: গুজরাতে সংখ্যালঘু ৩ ছাত্রকে বেদম মার
কিন্তু এত কিছু আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাও কি সত্যি সত্যিই নারীদের ক্ষমতাবান করছে? আমাদের চারপাশে সৎ ও মরমিভাবে তাকালে উত্তরটা অনেকক্ষেত্রেই হতাশাব্যঞ্জক। পণবিরোধী আইন তো ছ’দশক আগেই প্রবর্তিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে? বাস্তবটা এমনই যে সমাজের তথাকথিত আলোকিত সমাজেরও অনেকে আজও মনে করেন, এটা বিবাহের প্রাক্ শর্ত। ‘ক্যাশে তো নিচ্ছি না, মেয়ের বাবা যদি ভালবেসে একটা চারচাকা দেন তো…’— ইত্যাকারের সাফাই শিক্ষিত পাত্রদের মুখেও শোনা যায়। একইভাবে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে, দৈনিক মজুরির শ্রমিক নেওয়ার সময় নারী-শ্রমিক যে কম মজুরি পান, এটা তো সবাই জানি। প্রসবের আগে সন্তানের লিঙ্গনির্ণয় তো বেআইনি, তবু চুপিসারে চলে কন্যা-ভ্রূণ হত্যার খেলা।
আরও পড়ুন-বিধানসভার স্মারক ভবন উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর, বললেন বিরোধীরা এলে খুশি হতাম
এইসব অধিকারের মধ্যে, লোকসভা/বিধানসভায় না হতে পারলেও, পঞ্চায়েত ও পুরসভায় এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ নিঃসন্দেহে গুরুত্ব দাবি করে। কিন্তু সেখানেও বহুক্ষেত্রে পদাধিকারী নারীর পরিবারের ক্ষমতাবান পুরুষরাই (স্বামী বা বাবা) ‘আসল’ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এতটাই যে, উত্তর ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে ‘প্রধান-পতি’ (অর্থাৎ, মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানের পতিদেব) নামটি বেশ চালু। তবু, ধীরে ধীরে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে আসছেন, ভাল কাজও করছেন। প্রসঙ্গত, সাংবিধানিকভাবে এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হলেও এ-রাজ্যে তার পরিমাণ ৫০ শতাংশ। পাশাপাশি, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উজ্জ্বল উদ্যোগে সর্বস্তরে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মেয়েরা অনেক বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সর্বস্তরের পাঠরতা মেয়েরা পাচ্ছে কন্যাশ্রীর মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত স্কলারশিপ, সবুজসাথী-র সাইকেল; বিবাহযোগ্যা মেয়েরা ‘রূপশ্রী’র অর্থ; স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পাচ্ছে পরিবারের কর্ত্রীরা; সাধারণ গৃহবধূরা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা এবং আরও অনেক কিছু।
আরও পড়ুন-‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’র প্রযোজক সুরেশ জিন্দল প্রয়াত
তবে, শেষ বিচারে, আইন ও সরকারি প্রকল্পের চেয়ে বড় হল, সমাজের মানসিকতা। কাব্য করে নারীদের আমরা ‘অর্ধেক আকাশ’ বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করি। ভারতের জনসংখ্যার প্রতি হাজার পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা ৯২৫— অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা কম। অথচ শিক্ষা, কারিগরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ম্যানেজমেন্ট, শিল্পকলা, খেলাধুলো, রাজনীতি এমনকী সেনাবাহিনীতেও মেয়েরা আজ পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগোচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি আমরা মন থেকে মেয়েদের ‘সমান’ মনে করি? সমাজ কি একজন কন্যাসন্তান জন্মালে খুশি হয়? সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে সরোজিনী নাইডু-লীলা রায়দের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। সেই স্বপ্নপূরণই হোক এবারের ‘সংবিধান দিবস’-এর শপথ।