চুলের আমি চুলের তুমি

আমাদের চুলও অসুস্থ হয়। তারও জন্ম, বৃদ্ধি আর মৃত্যু আছে। আর এই গোটা সাইকল জুড়ে চুলের জীবনধারণে মাঝেমধ্যেই আসে নানান সমস্যাও। শীতকালে সেই সমস্যা বাড়লেও কোনও একটি ঋতুতে নয়, বছরভর চুলের যত্ন জরুরি। চুলের কয়েকটি সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান জানালেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

চুল কী
চুল তৈরি হয় কেরাটিন নামক একটি বিশেষ প্রোটিন দিয়ে। চুলের জন্ম, তার বৃদ্ধির থেকে ঝরে পড়া পর্যন্ত তিনটি ধাপ, যাকে বলা হয় অ্যানাজেন, কেটাজেন এবং টেলোজেন। চুলের নিজস্ব তিনটি ভাগ রয়েছে। একেবারে বাইরের যে স্তর তাকে বলা হয় কিউটিকল, তারপরের স্তরটি কর্টেক্স, একেবারে ভিতরের স্তরটি হল মেডুলা। কর্টেক্সের উপর কিউটিকলের আস্তরণ চুলকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর আপনার চুল কতটা ঘন হবে এবং তার রং, গড়ন কেমন হবে সবটা নির্ভর করে মেডুলার উপর। প্রত্যেকদিন পঁচিশ থেকে একশোটা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক ঘটনা। একেক জনের চুল একেক রকমভাবে বাড়লেও প্রতিমাসে চুল বাড়ে মোটামুটি গড়ে দেড় ইঞ্চি। স্ট্রেট হেয়ার বা সোজা চুল তুলনায় স্বাস্থ্যকর হয়, কোঁকড়া ও সোজা চুলের মাঝামাঝি টেক্সচারের চুল, খুব কার্লি হেয়ার এবং ফ্রিজি হেয়ারের চেয়ে অন্য টেক্সচারগুলো কিছুটা দুর্বল প্রকৃতির হয়।

আরও পড়ুন-সাঁতরাগাছি সেতু খুলছে সময়ের আগেই

চুলের বিভিন্ন সমস্যা

হেয়ার ফল বা চুল পড়া
চুলপড়া হল সবচেয়ে কমন অথচ গুরুতর একটি সমস্যা। কমবেশি চুল সবার পড়ে। রোজ পঁচিশ থেকে একশোটা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু তার চেয়ে বেশি পড়া শুরু হলে সচেতন হওয়া দরকার। চুল পড়ার একাধিক কারণ হতে পারে, যেমন, জিনগত কারণ। কোনও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা পরিবর্তন। কোনও ছত্রাকের সংক্রমণ। দীর্ঘদিন কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলেও চুল পড়ে। কেমোথেরাপি চললে বা অ্যান্টি ডিপ্রেসিভ ওষুধ চললেও খুব চুল পড়ে। পুষ্টির অভাব হলে যদি শরীরে ভিটামিন-ই, জিঙ্ক, সেলেনিয়ামের অভাব থাকে এবং স্ট্রেসের কারণেও হেয়ার ফল হয়। চুলে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট হলে পরবর্তীতে চুল পড়তে শুরু করে। বয়সজনিত কারণ, মেনোপজ, ঋতুপরিবর্তনও চুল পড়ার অন্যতম কারণ। খুশকি থাকলেও খুব চুল পড়ে।

আরও পড়ুন-বঙ্গোপসাগরে বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত, বাড়বে গরম

সমাধান
শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন সপ্তাহে তিনদিন। কন্ডিশনার দিন শুধু চুলের লম্বা অংশে। পাঁচমিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। টাওয়েল ড্রাই হেয়ারে সিরাম দিন। স্নানের পর জোরে ঘষে চুল মুছবেন না। এই রিজিমটা মেনটেন করুন সারাবছর। পুরো শুকিয়ে গেলে চুলটা উল্টে নিয়ে হেয়ার ব্রাশ দিয়ে হালকা করে আঁচড়ে নিন।
মেহেন্দি ১০০ গ্রাম এবং সরষে তেল ২৫০ গ্রাম মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবার ওই মিশ্রণ ভাল করে ছেঁকে তেলটি চুলে লাগান। একঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করে নিন।
চুলের জন্য নিমপাতা খুব ভাল। নিমে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড। পনেরোটা নিমপাতা নিয়ে বেটে নির্যাস বের করে নিন, এরপর সেই রস আমন্ড অয়েল বা নারকেল তেলে মিশিয়ে রাখুন। একদিন পর থেকে মোটামুটি সপ্তাহে দু’দিন ওই তেল সামান্য গরম করে ম্যাসাজ করুন।

আরও পড়ুন-আঞ্চলিক ভাষার ছবি গুরুত্ব পাচ্ছে, খুশি বীরবাহা

চুলের ডগা ফাটা এবং ভঙ্গুর চুল
চুলের ডগা ফাটার বা ভঙ্গুর চুলের মূল কারণ হল রুক্ষতা। শীতকালে চুলের ডগা বেশি ফাটে এবং মাঝখান থেকে ভেঙে যায়। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন ভুল চিরুনি দিয়ে খুব বেশিবার চুল আঁচড়ানো। আমরা অনেক সময় ভেজা চুল আঁচড়াই, এর ফলে খুব চুল ওঠে, ডগা ফাটে, চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যায়। অপরিচ্ছন্ন চুল, যত্নের অভাব এবং পুষ্টির অভাবে চুলের ডগা ফাটে। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট খুব ক্ষতিকর। এটিও অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুন-কাঁকসা গ্রামে ডিজেল-নদী, তেল কুড়ানোর ধুম

সমাধান
শীতকালে সপ্তাহে একটা দিন চুলে ভাল কোনও মেডিকেটেড অয়েল, কোকোনাট অয়েল অবশ্যই সুগন্ধ নেই এমন তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। চুল আঁচড়ানোর সময় মোটা দাঁড়ার চিরুনি বা হেয়ার ব্রাশ ব্যবহার করুন। শরীরে প্রোটিনের অভাবে চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। মিনারেলের অভাবেও এমনটা হয়। মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল চুলের জন্য উপকারী। এটি খাওয়া যেতে পারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে। প্রতি ছ’সপ্তাহ অন্তর চুল ট্রিম করা দরকার। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে থাকলে পরবর্তী যত্ন খুব জরুরি। পনেরোদিন অন্তর একটা ট্রিটমেন্ট স্পা নিতে পারলে ভাল।

আরও পড়ুন-দুষ্কৃতীকে ধরতে গিয়ে গুলিতে জখম এসআই

খুশকি
বিশেষজ্ঞের মতে, খুশকির কারণ স্ক্যাল্পে একধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন। শুষ্ক স্ক্যাল্পের সাদা সাদা ফ্লেক্স যা চুলের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ত্বকেরও ক্ষতি করে এবং চুলের গড় আয়ু কমিয়ে আনে। তাই শীতে খুশকি বাড়ে ড্রাই স্ক্যাল্পের কারণেই। শীতকালে স্নানের সময় মাথাতেও গরম জলই ঢালেন তাঁদের খুশকির প্রবণতা বাড়ে। এছাড়া মাথার তৈলগ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণে স্ক্যাল্প খুব তৈলাক্ত হয়ে যায় সেই কারণেও খুশকি বাড়ে। মাথায় ঘাম এবং তার সঙ্গে ধুলোময়লা জমে খুশকি হয়। যাঁর খুশকি রয়েছে তাঁর তোয়ালে বা চিরুনি শেয়ার করলেও খুশকির প্রবণতা দেখা দেয়। ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্প রুক্ষ হয়ে যায়। হেয়ার ফলিকলগুলো শুকিয়ে যায় ফলে চুল ড্রাই হতে থাকে। যত বেশি ড্রাইনেস ড্যানড্রফের সম্ভাবনা তত বেশি।

আরও পড়ুন-পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা চৈতালি

সমাধান
শীত যতই পড়ুক মাথায় গরম জল দেবেন না। অয়েল ম্যাসাজ করুন সপ্তাহে একদিন। চুলের গোড়ায় ঘাম না বসে। চুল পরিষ্কার রাখুন। নারকেল আর লেবু সমপরিমাণে নিয়ে মিশিয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করুন। একটা রাত রেখে পরেরদিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিন। রিঠা সিদ্ধ করে সেই জলটা দিয়ে চুলে শ্যাম্পু করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যাবে।

টাকপোকা বা অ্যালোপেশিয়া
অ্যালোপেশিয়া এক ধরনের অ্যালার্জি বা অটোইমিউন ডিজিজ, যাতে হেয়ার ফলিকলগুলোকে একেবারে গোড়া থেকে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মাথার কিছু কিছু অংশে গোল গোল চাকার মতো চুল শূন্য প্যাচ তৈরি হয়। যাঁদের থাইরয়েড বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রয়েছে, আলসারেটিভ কোলাইটিস রয়েছে, মেনোপজ সঙ্গে হরমোনাল চেঞ্জ, স্ক্যাল্প ইনফেকশন ইত্যাদি সমস্যা থাকলে অ্যালোপেশিয়া রোগটি হতে পারে। এছাড়া স্ট্রেস বা অ্যাংজাইটি এর অন্যতম কারণ। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিডের অভাবেও টাকপোকা হয়।

আরও পড়ুন-প্রকল্পের সুবিধে না পেলে দুয়ারে সরকারে আনুন, খানাকুলে কর্মী সম্মেলনে মন্ত্রী শশী পাঁজা

সমাধান
অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্টে যেতে হবে। লেজার থেরাপির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়। চুল যখনই খুব পাতলা হতে থাকবে তেল দিয়ে মাথার তালু ম্যাসাজ করুন। গরম জল সরাসরি চুলে দেবেন না। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হবে। তার জন্য দরকার পরিশ্রম। মানসিক চাপ কমাতে হবে অতি অবশ্যই।

Latest article