কালনায় ৪ হাতের দুর্গা, নেপথ্যে কী কাহিনী রয়েছে?

Must read

চন্দন মুখোপাধ্যায়, কালনা: দশভুজা নয়। কাটোয়া শহরের জেলেপাড়ার দাসচৌধুরি পরিবার আর বাদলা পঞ্চায়েতের কুলটি গ্রামের চৌধুরি পরিবারের দুর্গা চতুর্ভুজা (Kalna- Durga Puja)। কাটোয়ার তাঁতি সম্প্রদায়ের চতুর্ভুজা দুর্গাপুজোর বয়স ২৫০ বছরেরও বেশি। কালনার পুজোটি চলে আসছে প্রায় ৩০০ বছর ধরে। দুটি পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানা অধ্যায়।কাটোয়ার দুর্গা মহিষমর্দিনী নন। প্রতিমার নীচে মহিষ থাকে না।

বলিদানহীন এই পুজোর সূচনা করেছিলেন জমিদার পাঁচুগোপাল দাসচৌধুরির বাবা ভৈরব দাস। এভাবেই হারানো ইতিহাসকে হাজির করে কাটোয়ার প্রাচীন ইতিহাস গবেষক রণদেব মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ যে এই পুজোকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ হিসেবে নবাবের পাঞ্জা পরিবারের সিন্দুকে সযত্নে রক্ষিত।’ রণদেববাবু যোগ করেন, এককালে পরিবারটি ছিল বেশ ধনী। খিদিরপুর ডকের মালিকানাতো ছিলই, সেইসঙ্গে বর্ধমান শহরের অনতিদূরে ঢেঁড়িয়া মৌজায় প্রচুর দেবত্র সম্পত্তি ছিল। সেসব সম্পত্তির সিংহভাগ এখন বেহাত হয়ে গিয়েছে। পুজোর পত্তনকারী জমিদার ছিলেন বৈষ্ণবভক্ত। তাই বলিদান নিষিদ্ধ। বৃন্দাবনের চতুর্ভুজা দুর্গার আদলে তৈরি এখানকার দুর্গা। এখানে দুর্গার সঙ্গেই কালী আর জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করে নিতে হয় বলে আলাদা করে আর কালী ও জগদ্ধাত্রী পুজো হয় না। বৈষ্ণব চেতনার পুজো বলে ঢাক-ঢোলের সঙ্গে চলে হরিনাম সংকীর্তন।

আরও পড়ুন: ঘোড়ানাশের জমিদার বাড়ি: পুজোর চারদিন গাছে বাঁধা থাকেন খেপি মা

আর কালনার কুলটি গ্রামের জমিদার চৌধুরি পরিবারের দুর্গা একসময় দশভুজাই ছিল। একবার বিসর্জনের সময় বেহারাদের কাঁধ থেকে প্রতিমা পড়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটল। ৬টি হাত ভেঙে খান খান। চার হাতের দুর্গাই বিসর্জন করা হল। পরিবারের সদস্যদের মনে হল, দুর্গা বোধহয় চাইছেন, চার হাতেই পূজিত হতে। সেই থেকেই এখানকার দুর্গা চতুর্ভুজা। পরিবারের আদি পুরুষ নীলরতন আঢ্য পুজোটির সূচনা করেন। তখন রাজ্যের নানা প্রান্তের সঙ্গে চলছে বর্গী হাঙ্গামা। বর্গীদের ঠেকাতেই দুর্গার শরণ নেয় চৌধুরি পরিবার। শুরু হয় দুর্গাপুজো। অদ্ভুত ব্যাপার, তারপর কুলটি গ্রামের ত্রিসীমানায় ঘেঁষেনি বর্গীদস্যুরা। সেই থেকে তামাম এলাকার সমীহ আদায় করে নেয় পুজোটি। পরিবারের সদস্যরা জানান, একসময় মহাষ্টমীর ক্ষণ নির্ণয় হত বন্দুক ফাটিয়ে। মহিষ বলি দেওয়া হত। মহিষের রক্ত গিয়ে পড়ত মন্দির লাগোয়া ডোবায়। তাই ডোবাটির নাম মহিষগড়িয়া। পরবর্তীকালে অবশ্য বলিদান বন্ধ হয়ে যায়। প্রতীক হিসেবে বলি দেওয়া হয় আখ আর চালকুমড়ো। সম্পন্ন পরিবার। কিন্তু মন্দিরটি ভাঙাচোরা। কেন? মাটির মন্দির ভেঙে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল একবার। কিন্তু স্বপ্নাদেশে দেবী জানান, আমি এই মন্দিরেই থাকব। তাই আধা সংস্কার হওয়া মন্দিরে আজও পূজিত হন চৌধুরিদের চতুর্ভুজা দুর্গা (Kalna- Durga Puja)।

Latest article