‘ভালোবাসা হল বেনারসি শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়। তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।’ লিখেছেন সমরেশ মজুমদার।
এই হল বেনারসির কৌলিন্য, গরিমা। মহার্ঘ ভালবাসার সঙ্গে তুলনীয়। বেনারসি অনন্যা তার আভিজাত্য ও বহুমাত্রিকতায়। বেনারসি ও নারী যেন সাত পাকে বাঁধা। বেনারসি ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ গাঁটছড়া। বেনারসি বাঙালির চিরকালের বর্ণময় উপমা। আর শুধু বাঙালি কেন, এই অনুপমা শাড়িটি তো সারা দেশে, এমনকী সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন-শংসাপত্র পেয়েছেন ৫০ লক্ষ মানুষ
কত গল্প, কত কবিতা, কত গান একে নিয়ে। হাল ফ্যাশনের হাজারো জেল্লাদার শাড়ির ভিড়েও বেনারসির রানিসুলভ দাপট অক্ষুণ্ণ। সাধারণ বঙ্গনারী থেকে স্বনামধন্য সেলিব্রিটি, সকলেরই যেন চিরকালীন পছন্দ হয়ে বিরাজমান এই অপরূপা। আগে বিয়েবাড়ি ছাড়া বেনারসির তেমন কদর ছিল না। কিন্তু হাল আমলে ছবিটা বদলেছে। নবীন প্রজন্মও এখন ফ্যাশনিস্টদের হাত ধরে মজেছে বেনারসির নিত্যনতুন উত্তরাধুনিক ডিজাইনে। ভারতীয় নারীর ঐতিহ্য, আভিজাত্য, সৌন্দর্য ও আধুনিকতার সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বেনারসির গল্প। ইতিহাস, সাহিত্য, পুরাণকথা থেকে শুরু করে মা-ঠাকুরমাদের মুখে শোনা অজস্র রূপকথায় সর্বত্র বেনারসির কৌলিন্যের উল্লেখ। আজ শুধু বিয়ে নয়, বিভিন্ন পালাপার্বণেও এই শাড়িটি পাচ্ছে অতিরিক্ত মর্যাদা। অতীতে দামের জন্য সাধারণ মানুষ বেনারসি এড়িয়ে যেতেন। তখন শুধুমাত্র ধনী ও অভিজাতদের দখলে ছিল এই নয়নাভিরাম শাড়ি। কিন্তু এখন সব ধরনের ক্রেতাদের হাতে এই মহার্ঘ শাড়ি তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাগালের মধ্যেই দাম রাখার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। ফলে আড়াই হাজার থেকে আড়াই লাখের বেনারসি আজ ক্রেতারা তাঁদের সাধ্যানুযায়ী কিনতে পারেন। বিবর্তনের হাত ধরে যুগের পর যুগ অতিক্রম করে আদি বেনারসি আজ আল্ট্রা মডার্ন।
আরও পড়ুন-বিজেপির আচরণ প্রতিহিংসামূলক, সাংসদ পদ খারিজে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে তোপ দাগলেন দলনেত্রী
বেনারসির সেকাল
১৬০৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় গুজরাত থেকে রেশম তাঁতিদের স্থানান্তরিত হওয়ার পরে, খুব সম্ভবত সতেরো শতকে বেনারসে রেশম কিংখাব বুনন শুরু হয়েছিল এবং আঠারো ও উনিশ শতকে উৎকৃষ্টতার সঙ্গে বিকশিত হয়েছিল। মোঘল আমলে চতুর্দশ শতকের দিকে স্বর্ণ ও রৌপ্য সুতোর ব্যবহার করে জটিল নকশার সঙ্গে কিংখাব বুনন বেনারসের বিশেষত্ব হয়ে ওঠে। বেনারস বিখ্যাত তার সিল্ক আর ব্রোকেডের জন্য।
প্রাচীন ভারতের একটি শহর বেনারস বা বারাণসী। সেখানে তৈরি এক বিশেষ প্রকারের শাড়ি হল বেনারসি। সোনা বা রুপোর জরি, সুক্ষ্ম রেশম এবং আকর্ষণীয় সূচিকর্মের জন্য খ্যাতিলাভ করেছে এই শাড়ি। রেশম তন্তু, জটিল নকশা, সোনা ও রুপোর জরি ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে এই ঐতিহ্যবাহী শাড়ি তুলনামূলকভাবে ভারী ওজনের হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে হালকা ওজনের বেনারসিও বাজারে সুলভ।
আরও পড়ুন-পাহাড়কে শান্ত রাখুন উন্নয়নের দায়িত্ব আমার: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
জড়ানো ফুল ও পাতাযুক্ত নকশা, কলকা ও বেল, পাড়ের বাইরের অংশ ঝালর বা ঝাল্লর নামে ওপর দিকে ওঠা পাতার একটি ঝাড় এই শাড়ির অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে সোনার কাজ, ঘন বুনন, অতি-জটিল অথচ দারুণ নান্দনিক নকশা, নন্দিত আঁচল, ধাতব চাক্ষুষ প্রভাব (ভিস্যুয়াল এফেক্টস) এবং জালি কাজ।
নকশা এবং বিন্যাসের জটিলতার ওপর নির্ভর করে একটি বেনারসি শাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ হতে ১৫ দিন থেকে এক মাস এবং কখনও কখনও ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সুতি বস্ত্রশিল্পের অন্যতম সেরা ও সমৃদ্ধশালী ক্ষেত্র হিসেবে বেনারস কয়েক শতক ধরে প্রসিদ্ধ। গোরক্ষপুর, চান্দৌলি, জৌনপুর, ভাদোহি এবং আজমগড় জেলাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের হস্ত ও তাঁত রেশম শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ১.২ মিলিয়ন মানুষের কুটির শিল্পের হাত ধরে বেনারসি শাড়ির কাজ করা হয়।
আরও পড়ুন-লোক আদালতের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না
বাঙালি বাড়িতে বিয়ে মানেই তো বেনারসি। বিয়ের সেরা মরশুম শীত। শীতের হাওয়ার নাচন লাগার সঙ্গে বিয়ের ফুল ফোটার সম্পর্ক আজকের নয়। ইদানীং অন্য অনেক কিছুই বেনারসির জায়গা কিছুটা দখল করে নিলেও ঐতিহ্যপ্রিয় বাঙালির কাছে বেনারসির কদর আজও অটুট। অপরূপ বয়নশৈলীর হাত ধরে ক্রমবিবর্তন এই শাড়ির প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা নিয়েছে। বাংলা তথা ভারতের নানা অঞ্চলে বিবাহ ও পূজার্চনা এবং বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে পরিধেয় তাঁত-সহ নানান ধরনের শাড়ি বোনার ট্র্যাডিশন বহুকালের। আজও তা অব্যাহত। এই ভূখণ্ডের বয়নশৈলী না হয়েও জগদ্বিখ্যাত এই শাড়ি সময়ের বিবর্তনে মিশে গেছে বাংলার ভাললাগা ও ভালবাসায়, জলে ও হাওয়ায় এবং ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে বাংলা কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আরও পড়ুন-কিউ আর কোডে মিলবে সাগরমেলার তথ্য
অনবদ্য পরিধান
নৈপুণ্য এবং প্রয়োজন-বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য ও সঙ্গতি রেখেই হয়ে থাকে এই শাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের সুষ্ঠু বিন্যাস। এই বিস্ময়কর সৃজন শিল্পের নেপথ্যের কুশীলবরা আমাদের অর্থাৎ গর্বিত ভারতীয়দের পূর্বপুরুষ, যাঁরা শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন। তাঁদেরই অনুপম শিল্পবোধের ধারায় ক্রমবিকশিত ও বিনির্মিত মনোমুগ্ধকর এই শাড়ির ঔজ্জ্বল্যে ভারতীয় নারী মাত্রেই অপরূপা ও অতুলনীয়া। প্রকৃতপক্ষে বেনারসিতে রয়েছে সৌন্দর্যের সহজ পাঠ। কনে দেখা আলোয় নয়, ঝলমলে বেনারসির ছটায় যে কোনও নারীই যেন সেরা সুন্দরী।
রাফেল ফিচ-এর বিবরণ থেকে বেনারসির ইতিকথা যেমন জানা যায়, ঠিক তেমনই কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, পানিনির রচনা এবং আরও পরে ফ্রাঁসোয়া তেভারনিয়েরের বিবরণেও বেনারসের বস্ত্রবয়ন শিল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়। তেভারনিয়ের বেনারসকে প্রাচ্যের এথেন্স আখ্যা দেন। এরপর নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও আজও স্বমহিমায় বিরাজমান বেনারসি শাড়ি।
বলে রাখা ভাল, এই শাড়ির ডিজাইন ও মানোন্নয়নে মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা এই বয়নে পারস্যের নকশা সংযোজন করে। কল্কা বা পেইজলি এর অন্যতম উদাহরণ।
আরও পড়ুন-কল্যাণের যুক্তিতে খেই হারালেন অধ্যক্ষ
বিয়েতে বেনারসির অপরিহার্যতা নিয়ে মাঝেমাঝেই প্রশ্ন ওঠে। এর সঠিক উত্তর না মিললেও অনুমান করা হয় এই শাড়ির বুননে একসময় সোনার জরি ব্যবহার করা হত বলেই বেনারসিকে পবিত্র মনে করা হত। ধর্মীয় আচার ও রীতিনীতির সঙ্গে নির্দিষ্ট পোশাক ও গয়নায় পবিত্রতা রক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে প্রায় সমস্ত ভাষা-সম্প্রদায়েই। বাঙালিরা যেমন বিয়েতে লাল বেনারসিকেই সবচেয়ে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। এই শাড়ি বাঙালির পরম্পরায় মিশে গেছে।
ভারী বেনারসি, হালকা বেনারসি, ঘন নকশা, হালকা নকশার শাড়ি আজকাল সুলভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেনারসির রঙেও এসেছে বেশ বৈচিত্র। আগে বেনারসি ছিল মাত্র কয়েকটি রঙে সীমাবদ্ধ। এখন সময় বদলেছে। লাল, নীল, সবুজ, কমলার সঙ্গে প্যাস্টেল শেড এবং গাঢ় রঙের বদলে হালকা মিশ্রণের নানা রং এখন সহজেই পাওয়া যায়। জরির মান ও শাড়ির কোয়ালিটি অনুযায়ী নির্ধারিত হয় দাম। ভাল কোয়ালিটির দাম বেশি হয় সব ক্ষেত্রেই। শুধু পাড় আর আঁচলে জরির কাজ আছে, এমন শাড়ির চাহিদা এখন বেশ বেড়েছে। গাঢ় ও ঘন রঙের ভারী শাড়ির বদলে বর্তমান প্রজন্মের পছন্দ হালকা রঙ ও ওজনের ছিমছাম বেনারসি। বলিউডের দীপিকা ও কাজল থেকে শুরু করে টলিউডের অনেক নায়িকারই মন মজেছে বিবর্তিত বেনারসির মোহনীয় রূপে। সব মিলিয়ে বলা যায় বাঙালি কন্যাদের কাছে বেনারসির কদর একটুও কমেনি।
আরও পড়ুন-অকাল বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে ধান, আলু আশঙ্কায় চাষিরা, নবান্নে জরুরি বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী
আসলে নকলে বেনারসি
বেনারসির কিন্তু আসল-নকল আছে। ক্রেতাদের সেটা জানা উচিত। ডিজাইন পছন্দ হওয়ার পর শাড়ি হাতে নিয়ে যাচাই করতে হবে। শাড়ির বহিরঙ্গের চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই ঠকে যান। আসল বেনারসি শাড়ির দু’পিঠেই ঘন সুতোর কাজ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু নকল বেনারসির উল্টোপিঠ খসখসে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উন্নত মানের বেনারসিতে মোঘল মোটিফ পাওয়া যায়। আমরু, দোমাক, আবমি ইত্যাদি মোটিফ দেখা যায়। এ ছাড়া থাকে ফুলের নকশা যা বেনারসির জমিনে খুবই জনপ্রিয়। আসল বেনারসি শাড়ির আঁচলে ছয় ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চির প্যাচ থাকে। কাঁধের কাছে অংশটি পড়ে।
নকল শাড়িতে এমন থাকে না।
নানা নামের বেনারসিতে রয়েছে নানান স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
গঙ্গা-যমুনা বেনারসিতে রয়েছে সোনালি ও রুপোলি দু’ধরনের শেড এবং ঘন নীলের গায়ে জরির সুতোর কাজ। শাড়ির সূক্ষ্ম কাজ ও বুননে থাকে চোখে পড়ার মতো পার্থক্য। তাঞ্চই বেনারসি শিল্পময় সূক্ষ্মতায় হালকা কাজে মোড়া। এর বুনন-পদ্ধতি বেশ জটিল যা এসেছে চিন থেকে। এতে পাঁচরকম রঙের ব্যবহার উল্লেখ্য।
আরও পড়ুন-প্রশ্নের মুখে দেশের নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, এনসিআরবি রিপোর্ট
সুদূর চিন থেকে আগত তিন ভাই সুরাতের তাঁতিদের এই বুনন-পদ্ধতি শেখান। কারুয়া বেনারসি নামটি এসেছে কড়া ও হুয়া শব্দদ্বয় থেকে। এর অর্থ এমব্রয়ডারি করা। সনাতনী তাঁতে বোনা এই শাড়ির ঔজ্জ্বল্য আকর্ষণীয় এবং এক-একটি শাড়ি বুনতে মাস দুই সময় লাগে। বিশেষ রকম মসলিন সুতোয় বোনা হয় জামদানি বেনারসি। সিল্কের ফ্যাব্রিক থাকে এর গায়ে, সঙ্গে মেশানো থাকে সূতির ব্রোকেড। বুটিদার বেনারসি গঙ্গা-যমুনা বেনারসিরই অপর নাম। সিল্ক ও বিভিন্ন ধরনের বুটির ব্যবহার এর বৈশিষ্ট্য। রেশম বুটি, আশরফি বুটি, লতিফা বুটি, ঝুমর বুটি ইত্যাদি। জারদৌসি বেনারসি বিশেষ ধরনের কারুকলায় এবং শিল্পময়তায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
ওয়র্ক অফ আর্ট
বেনারসির বিবর্তনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল ক্রেতাদের স্বপ্ন-সাধ ও সাধ্যের সার্থক মেলবন্ধন ঘটানো। আগে ‘অপশন’ প্রায় ছিলই না বেনারসি বাছাই ও পছন্দের ক্ষেত্রে, কিন্তু আজ মূলত বিবর্তনের ফলেই ক্রেতাদের কাছে বেনারসি বাছাইয়ের অঢেল ‘অপশন’।
আরও পড়ুন-বিজেপির আচরণ প্রতিহিংসামূলক, সাংসদ পদ খারিজে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে তোপ দাগলেন দলনেত্রী
সূক্ষ্ম বুনন, বাহারি রং, সোনা ও রূপা রঙের জরিন সুতোর বুনোটে যেন নানান ওঠাপড়া ও সুখদুঃখের আখ্যান চিত্রায়িত বেনারসির বুকে। বিবর্তনঋদ্ধ এক-একটা শাড়ির পিছনে লুকিয়ে থাকে কত নাম না-জানা শিল্পীর রূপদক্ষ চোখ আর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। এই সময়ের সৃজনে তৈরি এক একটা বেনারসি শাড়ি যেন হাতে বোনা এক একটা ক্যানভাস, যা দেখে দেখে আঁখি না ফিরে। বেনারসের মাঝগঙ্গায় দাঁড়িয়ে পুরো শহরটাকে দূর থেকে যেমন দেখায়, হুবহু সেই ছবিও ফুটিয়ে তোলা হয় আজকের বিবর্তিত বেনারসির ক্যানভাসে। বেনারসির এ এক আশ্চর্য রূপান্তর। আধুনিক বেনারসির প্রত্যেকটিই নিঃসন্দেহে এক একটি ‘ওয়র্ক অফ আর্ট’।
আমাদের পুরাতন শিল্পধারার নব রূপায়ণের অতুলনীয় উজ্জ্বল উদাহরণ।
আরও পড়ুন-প্রয়াত জুনিয়ার মেহমুদ
এখন তো এসে গেছে মডার্ন থ্রি ডি বেনারসি, যার গায়ে একাধিক রঙে রাঙানো ত্রিমাত্রিক ছবির আদলে একের পর এক জিওমেট্রিক শেপ। সনাতনী বেনারসির বাইরে যাঁরা নতুন ধরনের খোঁজ করেন, বিশেষত তাঁদের জন্যই প্রস্তুত করা হয় এই অভিনব সম্ভার। রামায়ণে উল্লিখিত ‘স্বর্ণবস্ত্র’ই সম্ভবত যুগের পরিবর্তনে চেহারা পাল্টে আজকের আধুনিক বেনারসি, আধুনিকাদের জন্য। বৌদ্ধ যুগেও সোনার ব্রোকেডের চলন ছিল। ত্রিপিটকে তখনকার দামি রেশম বস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে।
আর মুঘল ঘরানার মহার্ঘ নকশা তো বেনারসির শরীরে বারবার উঠে এসেছে। ফলে পুরাণ ও ইতিহাস ছোঁয়া প্রাচীন বেনারসির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে আজকের হাল ফ্যাশনের আল্ট্রা মডার্ন বেনারসি, নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে। বৈদিক যুগের হারিয়ে যাওয়া হিরণ্য শাড়িও এখন আধুনিকাদের হাতের মুঠোয়। সব মিলিয়ে চাহিদার চিরকালীন উত্থান-পতনের মাঝেও শাড়ির বিস্তীর্ণ আকাশে আজও ধ্রুবতারার মতো দীপ্যমান বেনারসি। কালজয়ী। অপরাজিতা।