‘‘যে মা আমার মহাকালী
উল্লাসে দেন হাতে তালি,
সেই মা গাঁথেন বেদের গাথা
সেই মা আবার জগৎ ত্রাতা’’
করালবদনা কালী কলুষনাশিনী, কালভয় হরা কালী কৈবল্যদায়িনী। মায়ের রূপে একাধারে শঙ্কা আবার করুণা। মা কালী কখনও ভয়ঙ্করী, কখনও অভয়া। ঘোর শ্মশানচারিণী বামাকালী আবার গৃহকোণে মঙ্গলময়ী দক্ষিণাকালী। অমানিশায় মধ্যরাত্রে হয় মায়ের পুজো। সব মিলিয়ে এক রহস্যের নাম মা কালী।
আরও পড়ুন-তুমি আশেপাশে থাকলে
একাধিক অনুশাসন বিধি ভঙ্গের দায় কালীর উপর বর্তায়। একে নারী তায় বস্ত্রহীন। জানো না, পুরুষ শাসিত এ সমাজে পুরুষ বস্ত্র ত্যাগ করলে ত্যাগী হয়, নারী তো শালীনতার পরাকাষ্ঠা! কালো তায় শুকনো অস্থি কঙ্কালসার চেহারা। একলা ঘোরে, বাহন নেই। গয়নাগাটিও কেমন ধারা, মুন্ডু গেঁথে মালা, শব দিয়ে কানের দুল, হাতেও কাটা মুন্ডু। সঙ্গী-সাথী সব ডাকিনী-যোগিনী। এলো চুলে শ্মশানে ঘুরে বেড়ায়। কাটা হাত সাজানো যে কোমরের চারপাশে। পায়ের তলায় শিব, এ কেমন ধারা বেহায়াপনা! সব দেবীর পদ্ম পছন্দ, এনার আবার জবা! সব মিলিয়ে বেহায়া সৃষ্টিছাড়া তকমা একমাত্র কালীরই জুটবে সবার মধ্যে। এই একগাদা অভিযোগ আর অনুশাসন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে তোমার অজ্ঞান সন্তানেরা। সবাইকে জানাও মা তোমার প্রকৃতি ও স্বরূপ। তোমার প্রতিটি সন্তান হোক জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত।
আরও পড়ুন-যত আঙুল তুলবে ততই সংঘবদ্ধ হবে তৃণমূল: চন্দ্রিমা
আজকের দিনটা থেকে পিছিয়ে যেতে থাকলে, একটা ডাইভার্জেন্ট রশ্মির শুরুর বিন্দুটি সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে। ভাবনা পিছোতে পিছোতে পৌঁছনো যাক সৃষ্টির সূচনালগ্নে। বিজ্ঞান বলে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্ব একটি বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সেই সিংগুলারিটি, সেই সূচনা লগ্ন, সেই আদি বিন্দুটি যেহেতু সকল কিছুর উৎস তাই তিনি সকল কিছুর মাতা। সেই উৎস মাতৃসাধকের কাছে কালী। কাল অর্থাৎ সময়। কালকে কলন করে আদ্যাশক্তি হলেন কালী। কালের ডিফারেনসিয়েশন নানাবিধ সৃষ্টির মাধ্যমে। ইন্টিগ্রেশন হল জীবনের সকল প্রসার ও ব্যাপ্তি শেষে অন্তিম লগন। প্রকৃতি থেকে সকল জীবের সৃষ্টি প্রকৃতিতেই লয়। সৃষ্টির সূচনালগ্ন অন্ধকার তাই আদি মাতা কৃষ্ণবর্ণ, তামসী। কালো তাই কালী, কালরাত্রি। রাত্রি পেরিয়ে আসে উষা। জবাকুসুমের মতো সূর্য ওঠে রাত্রির শেষে। কালীর অঙ্গ জুড়ে জবার বাহার।
আরও পড়ুন-রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর, আগামী পুজোয় দু’সপ্তাহ ছুটি
আদি শক্তিরূপে প্রকৃতি আমাদের মা। প্রকৃতি তো সবার সামনে তার প্রকৃত রূপে উন্মুক্ত। আবৃত শব্দবন্ধ প্রকৃতির সাথে যায় না। সেই প্রকৃতি রূপা মাতৃকা তাই শুদ্ধ, অনাবৃত।
জীবনের চরম আশ্চর্য আর চরম সত্য একই– মৃত্যু। মৃত্যু ভয়ের, এর হাত থেকে রেহাই নেই কারও। সেই মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করা যায় কালী নামে। প্রকৃতিসঞ্জাত জীব প্রকৃতিতেই বিলীন হয়ে যায়– সন্তান যেন মৃত্যুর পর মায়ের কোলে ঠাঁই পায়। এই শাশ্বত চিরন্তন সত্য কে ‘‘শস্যমিব জায়তে মর্ত্য শস্যমিব অজায়তে পুনঃ’’ ভাবনায় ভাবলে জীবনকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যায়। ভাবতে হয় মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন আনন্দ আর কর্তব্য পালনের সাধনার মধ্যে দিয়ে জীবনকে উপভোগ করে একসময় মায়ের কোলেই ফিরে যাব। এভাবে মৃত্যুর সাথে কালীকে এক করে মাতৃসাধক মৃত্যুকে অতিক্রম করে অমরত্ব লাভ করতে পারেন। মৃত্যুকে মা পাত্তাই দেন না, পায়ের তলায় দাবিয়ে রাখেন। আর সেই শব মায়ের স্পর্শে শুদ্ধ শিবে পরিণত হয়। মৃত্যু হল একমাত্র শাশ্বত সত্য, অর্থাৎ জগজ্জননী মা কালী শাশ্বত সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। এটাই শক্তি পথের প্রধান বল।
আরও পড়ুন-দমবন্ধ অবস্থা থেকে সাময়িক স্বস্তি মিলল বৃষ্টিস্নাত দিল্লিতে
মায়ের কটিতে হাতের মেখলা। জন্মস্থানকে ঢেকে আছে হাত অর্থাৎ কর্ম। জন্ম পরিচয় ঢাকা পড়ে যায় কর্মের আড়ালে। গলায় মুণ্ডমালা। মুণ্ড, মাথা, মস্তিষ্ক, মগজ জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রতীক। বর্ণমালার পঞ্চাশটি বর্ণে আমাদের জ্ঞানের বীজ– সেই জ্ঞান মায়ের কণ্ঠে। কালীর বাম হাতে ধরা নরমুণ্ডটি আবার আলাদা। মানুষের মধ্যে যোগীর দৃষ্টিতে যে চক্র তার অন্যতম সহস্রার। সহস্রারের অবস্থান বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞানের আধার মস্তিষ্ক। কালীর হাতেই চেতনার রাশ। তিনিই যে চৈতন্যময়ী।
আরও পড়ুন-নজরদারি চালাতে নয়া ফন্দি কেন্দ্রের
মায়ের জোগানদার হলেন যোগিনী। খুব জ্ঞানী পণ্ডিত, যিনি ডঙ্কা বাজিয়ে বা ডেকে নিজের আগমন প্রচার করতেন তিনি ডাকিনী। মোটেই পুরুষকে ফাঁসানোর কিংবা বুক চিরে রক্ত খাওয়ার কনসেপ্ট-এর ডাকিনী-যোগিনী নয়। অতীত মানুষের হাতে অনেক অস্ত্র ছিল না, ছিল না মগজে বুদ্ধির রাশি। দেখেছে প্রকৃতি আগলে রাখে সব জীবকে তাই প্রকৃতি মা। পাখিরা বুক দিয়ে ডানার ছায়ায় আগলে রাখে তাই পক্ষী মাতৃকা। বলাকা বা পক্ষী মাতৃকার উপাসক ছিল ভারতের আদি হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা। এখনকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়শই পক্ষীমাতৃকা, যিনি বাঙালির প্রথম উন্নত নগর সভ্যতা পাণ্ডু রাজার ঢিবিতেও পূজিত হতেন এবং এক মাতৃকার উপাসনায় এক বাঙালি জাতি গঠনে যাঁর আদি ভূমিকা অপরিসীম। ঐতরেয় আরণ্যক আমাদের বাঙালিদের মানে তখনকার বঙ্গ, বগধ ও চের জাতিকে আখ্যা দেয় বয়াংসি। বৈদিক আর্য আমাদের ব্রাত্যধর্মীয় তন্ত্রাশ্রয়ী মাতৃকা উপাসক সভ্যতাকে পক্ষীবৎ বলেছেন, ঐতিহাসিকের ব্যাখ্যায় যা পক্ষী উপাসক। কালিদাসের রচনায় মা কালী বলাকিনী নামে আখ্যাত। পক্ষী বা পাখির চঞ্চু বিবর্তনে মায়ের জিভ। বাঙালির মা কালী তার ভয়ঙ্করী রূপকে আড়ালে রেখে, ভয়কে ছাড়িয়ে মাকে করেছে অভয়া। কৃষ্ণা ঘোরা, ‘শুষ্ক মাংসাতিভীষণা’ ভয়ঙ্করী দেবী বাঙালির লাবণ্যময়ী শ্যামা মা যিনি সন্তানদের অভয় দান করেন।
মুণ্ডক উপনিষদে কালীর উল্লেখ পাওয়া যায় অগ্নির সপ্ত জিহ্বার এক হিসাবে।
আরও পড়ুন-দীর্ঘদিন বিল আটকে রাখায় পাঞ্জাবের রাজ্যপালকে ভর্ৎসনা করল শীর্ষ আদালত
পরবর্তী বর্ণনায় মাতৃকাদের অমঙ্গলকর ও বিপজ্জনক দেবী বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালের পুরাণগুলিতে তাঁদের রক্ষাকর্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। তবে এই সকল বর্ণনাতেও তাঁদের কয়েকজন অমঙ্গলকর এবং ভয়ানকই রয়ে যান। এইভাবে তাঁরা প্রকৃতির সৃষ্টিকারিণী এবং ধ্বংসকারিণী উভয় রূপেরই প্রতীক হয়ে ওঠেন। মা কালী প্রসঙ্গে দুটি কথা সমান ভাবে প্রয়োগ করা যায়, ‘তুমি ছিলে সৃজনের প্রথম দিনের ভোরে’ এবং ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, শ্যামা মা, অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে’।
গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। সভ্যতা সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে বন্ধনী শক্তির নাম ধর্ম। ধর্ম সংকট বারবার হয়েছে, বারবার ঘটেছে মাতৃকাদূষণ। শক্তিপীঠগুলিতে মাতৃশক্তির সাথে শিব অবশ্যই থাকে। মন্দিরের বা পীঠ রক্ষক ভৈরব কালক্রমে হয়েছেন শিব। শৈবদের প্রাধান্য দিতে মা কালীর বিবাহ দেওয়া হয়েছে শিবের সাথে। শক্তি যদি এক ও অভিন্ন হয় তাহলে বিবাহ কি নিজের সাথে নিজেই! আত্মরতি? আর দেবী যদি জগৎ কারণ হন তাহলে তিনি সকলের মাতা– তাহলে তার সাথে কার বিবাহ! সন্তানের? অজাচার!!
আরও পড়ুন-জনমত নিতে চান সাকেত
অজ অর্থাৎ পশু— সময়ের ফেরে ছাগল। নিজের মঙ্গলে অতএব ছাগল বলি। মা কালী কখনওই নিজের মঙ্গলের জন্য অন্যের জীবন নেওয়া অনুমোদন করেন না। মা বলিপ্রিয়া। সে বলি পরহিতার্থে আত্মবলিদান। কিংবা সেবক হিসেবে নিজেকেই মায়ের চরণে উৎসর্গ করা। ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর নারী-পুরুষ ভেদ নেই। বিশ্বব্যাপী এক অনন্ত অখণ্ড শক্তির নাম ঈশ্বর। তিনি অরূপ। তাঁকে মাতৃ আখ্যা দিলে, রূপে বন্দি করে শান্ত করলে সাধকের সাধনা সহজ হয়। তাই জগৎব্যাপী সেই অখণ্ড জগৎ কারণের নাম জগন্মাতা, বিশ্বপ্রসবিনী মা কালী। কোথাও তো মা কালী পুরুষ রূপে রয়েছেন— মহাকাল।
আরও পড়ুন-হামাসের হত্যালীলার ছবি তোলা চিত্রসাংবাদিকদের শাস্তির দাবি
জগন্মাতার উপাসনা, মাতৃ ধর্মাশ্রয়ী মাতৃতন্ত্র বিভিন্ন যুগে নানা আগ্রাসন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। নানাভাবে ঘটেছে মাতৃকাদূষণ। মধ্যযুগে মাতৃ ধর্মাশ্রয়ী তন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। গুপ্ত যুগে তন্ত্রের প্রামাণিক গ্রন্থ শ্রীশ্রীচণ্ডীর লিখিত রূপ পাওয়া যায়। দেবীকে বধ করতে শুম্ভ চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে পাঠান। দেবীর দেহকোষ থেকে এক পরম রূপবতী দেবী নিষ্ক্রান্ত হলেন। সুন্দর চলে যাওয়ায় মহাদেবী হলেন কালী। তিনি চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই মহাপশুকে হত্যা করে চামুণ্ডা নামে খ্যাত হন। রক্তবীজ বধ কালে দেবীর শরীর থেকে নির্গত শক্তিসমূহ নানা রূপে রক্তবীজকে বধ করতে পারে না। এক ফোঁটা রক্ত থেকে অনেক রক্তবীজের সৃষ্টি হচ্ছে। নিউক্লীয় বিভাজনের মতো চেন রিঅ্যাকশন চলছে। এগিয়ে এলেন মা কালী। মুখ বিস্তার করে গ্রহণ করলেন রক্তবীজের রক্ত। নিরক্ত হয়ে রক্তবীজ হল বিনষ্ট। যুগে যুগে রক্ত বীজের রক্ত গ্রহণ করে অত্যাচারীকে বলি দিয়ে মা রক্ষা করেছেন ভক্তকে। সেই অর্থে মা যোদ্ধা, রুধিরপ্রিয়া, বলিপ্রিয়া।
আরও পড়ুন-অগণতান্ত্রিক-অনৈতিক-অসাংবিধানিক, অভিযুক্ত আদানির চ্যানেলের ফুটেজই কিনা প্রামাণ্য তথ্য!
পাল যুগে চামুণ্ডার বড় আদর। মুখাবয়ব তাঁর যাই হোক না, একটি আঙুল গালে রেখে বড়ই লীলায়িত ভঙ্গি তাঁর। বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে তন্ত্রের তখন সুবর্ণ যুগ। কলিকাপুরাণে কালীর ব্যাখ্যা, বর্ণনা, পুজো, আচার রীতি-নীতি বড়ই জটিল, আচার-সর্বস্ব। নরবলি, মৈথুন ভিত্তিক সাধনা মানুষকে তন্ত্র ও মহাশক্তি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। মা হয়ে উঠছেন একটি বিশেষ শ্রেণির আরাধ্যা। বামাচার কালীপুজোর মূল মন্ত্র হয়ে উঠছে। বাম অর্থাৎ বিরুদ্ধ বা বিপরীত, বামা অর্থে মহিলাঘটিত। সেনযুগ কালীর পুনরুত্থানের যুগ। বল্লালসেন প্রতিষ্ঠিত অনেক কালীমূর্তি যার মধ্যে ঢাকেশ্বরী কালীবাড়ি অন্যতম। এর পর আসছেন নবদ্বীপের কৃষ্ণচন্দ্র আগমবাগীশ। রূপ কল্পনা নয়, সেটা আগেই পাওয়া গেছে ত্রয়োদশ শতকের বৃহদ্ধর্ম পুরাণে। সহজ করে দেখা। কল্যাণময়ী দক্ষিণ কালীর রূপে গৃহে গৃহে প্রতিষ্ঠিত হলেন আদ্যাশক্তি। সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, শ্রীরামকৃষ্ণ এবং বামাক্ষ্যাপা শ্মশানবাসিনী মাকে করলেন ঘরের মেয়ে, প্রাণের ঠাকুর।
আরও পড়ুন-চালের গুঁড়োয় ১ ফুটের কালী গড়ে চমক কিশোরের
শক্তি পূজার ঢেউ বাংলার একান্ত বৈশিষ্ট্য। একান্ত নারীশক্তির বা মাতৃশক্তির জয়গান গাওয়া একটি জাতি হল বাঙালি। একটি ইতিহাস বিস্মৃত, নকলনবিশ জাতির সবই চলে গেছে, শুধু রয়ে গেছে এক মা কালী। যাকে কেন্দ্র করে আজও বাঙালি এক রাতের জন্য হলেও বাঙালি হয়ে ওঠে। যুগে যুগে বিবর্তনের ফল হিসাবে আজকের প্রাপ্ত মাতৃপূজার মধ্যে অনেক মিশ্রণ, অনেক প্রক্ষেপণ। মা দুর্গাকে বাণিজ্য গ্রাস করছে আর রীতিতে ছায়া ফেলছে অবাঙালি নবরাত্রি কালচার। কিন্তু একা মা কালী আজও খাঁড়া নিয়ে লড়ে চলেছেন। ভবিষ্যতেও একা কালী লিখবেন সমগ্র এক জাতির ইতিহাস।