শ্রেয়স-রাহুলে চারশো পার, অনায়াস জয়

ভারত ৪১০/৪ (৫০ ওভার) নেদারল্যান্ডস ২৫০ (৪৭.৫ ওভার)

Must read

বেঙ্গালুরু, ১১ নভেম্বর : ন’বছর লেগে গেল তাঁর দ্বিতীয় উইকেট নিতে! মাঝখানে ৩৪টা সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। বিরাটকে নিয়ে এমন অদ্ভুত তথ্য সামনে এল তিনি স্কট এডওয়ার্ডসের উইকেট নেওয়ার পর।
৪১১ রান তোলা যাবে না সেটা ডাচ ড্রেসিংরুম জানত। তাই ওরা পঞ্চাশ ওভার খেলার চেষ্টা করল। হার্দিক না থাকায় সিক্সথ বোলার নেই। হাত ঘোরালেন বিরাট, শুভমন, রোহিত, সূর্যও। তাতে বিরাট ডাচ অধিনায়ককে তুলে নিলেন। দ্রাবিড় কলকাতায় বলেছিলেন, গ্যালারি বিরাটের বোলিং দেখতে চায়। সেটা দেখল তাঁর সেকেন্ড হোম। ডাচদের সবথেকে বেশি রান করা তেজা নিদামানারুর (৫৪) উইকেট অবশ্য নিয়েছেন রোহিত।
এটা দেখার ছিল ভারত (India- Netherlands ) কত বড় ব্যবধানে জেতে। রোহিতরা জিতলেন ১৬০ রানে। শ্রেয়স, রাহুলের জোড়া সেঞ্চুরি ও শুভমন, রোহিত, বিরাটের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে চারশো পার করেছিল ভারত। জবাবে ডাচরা ২৫০। রোহিত ও বিরাটকে বাদ দিলে বাকিদের সবার দুটি করে উইকেট। এদিকে, এই জয়ে নয়ে নয় করে ফেললেন রোহিতরা। পয়েন্ট টেবলে অপরাজিত থেকে মুম্বইয়ে মিশন সেমিফাইনাল। তারপর ফাইনাল। ২০১১-র ২ এপ্রিলের পর ২০২৩-এর ১৯ নভেম্বর ভারতীয় ক্রিকেটের সোনার খাতায় উঠে যাবে কি না সেটা এখন সময় বলবে। তবে দাবি উঠে গিয়েছে ‍‘ইসবার কাপ তিসরি বার’।
শুভমন গিল কেন বারবার উইকেট দিয়ে আসছেন, সেটা প্রশ্ন। কিন্তু চিন্নাস্বামীতে কেউ শুভমনের (৫১) আউট নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ পাননি। ততক্ষণে বিরাট কোহলিকে নামতে দেখা গেল। এটা তাঁর আইপিএল হোম গ্রাউন্ড। বিরাটের ভাষায় সেকেন্ড হোম। গ্যালারি কোহলিতেই মাতবে। শুভমন কেন ৩২ বলে গোটা চারেক ছক্কা আর তিনটি বাউন্ডারি মেরে পল ভ্যান মিকারেনকে উইকেট দিয়ে গেলেন, তা নিয়ে গ্যালারির মাথা ঘামাতে বয়ে গিয়েছে! পরের দিকে শ্রেয়স আইয়ার (১২৮ নট আউট) ও কে এল রাহুল (১০২ নট আউট) সেঞ্চুরি করে প্রচারের সব আলো কেড়ে নিয়ে গেলেন। রাহুলের ৬২ বলে সেঞ্চুরি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে দ্রুততম। দু’জনের এটা বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি।
রোহিত শর্মা টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন হয়তো সেমিফাইনালের আগে ব্যাটারদের পঞ্চাশ ওভার ব্যাট করে নেওয়ার সুযোগ দিতে। অধিনায়ক নিজে শুভমনের মতোই মারমার করে শুরু করেছিলেন। দ্বাদশ ওভারে ১০০ রান উঠে যাওয়ার পর প্রথমে শুভমন ও পরে রোহিত (৬১) ফিরে গেলেন। অথচ রোহিতকে দেখে মনে হচ্ছিল বড় রানের দিকে যাচ্ছেন। চিন্নাস্বামীর সহজ উইকেট, আরও সহজ বোলিং লাইন-আপ। ভ্যান ডার মেরওয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন। আর মিকারেনের শর্ট বল কিছুটা বিপজ্জনক। সাকুল্যে এই হল ডাচদের আক্রমণভাগ। যাদের বিস্তর ঝামেলায় ফেলে ৫০ ওভারে ভারত ৪১০-৪ করেছে।
রোহিত অবশ্য তাঁর ৫৪ বলের ইনিংসে গোটা আষ্টেক চার ও দুটি ছক্কার পাশাপাশি এক বছরে সবথেকে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ডও করে ফেললেন। ২০১৫-তে এবি ডি’ভিলিয়ার্স ৫৮টি ছক্কা মেরেছিলেন। ২০১৯-এ ৫৬টি ছয় মেরে তালিকায় তৃতীয় ক্রিস গেইল। চতুর্থ ৪৮ ছক্কা মেরে শাহিদ আফ্রিদি। রোহিত এই ক্যালেন্ডার বছরে ৫৯টি ছয় মেরেছেন। এছাড়া অধিনায়ক হিসাবে একটি বিশ্বকাপে সবথেকে বেশি ছয়ের রেকর্ডও হয়ে গেল রোহিতের। তিনি এবার ২৩টি ছক্কা মেরেছেন। এর আগে ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসাবে ইয়ন মর্গ্যান ২০১৯ বিশ্বকাপে মেরেছিলেন ২২টি ছক্কা। রোহিত-শুভমনের জুটিতে এবছর সবথেকে বেশি সেঞ্চুরি পার্টনারশিপও হয়ে গেল এদিন।
ডাচরা এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দিলেও রবিবারের ম্যাচে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। ভারতীয় টপ অর্ডারের সামনে আরিয়ান, ভ্যান বিক, অ্যাকারম্যান, মিকারেন, মেরওয়ে, ডি লিডরা সবাই অনেক রান দিলেন। এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। শুরুতে রোহিত আর শুভমন ঝড় তোলার পর বিরাট করেছেন ৫১ রান। রাহুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৪ রান। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন শ্রেয়স ও রাহুল। অপরাজিত এই জুটিতে উঠেছে ২০৮ রান। শ্রেয়স আর রাহুল এই পার্টনারশিপ না করতে পারলে ভারত চারশো পার করতে পারত না। শ্রেয়স তাঁর ৯৪ বলের ইনিংসে দশটি চার ও পাঁচটি ছক্কা মেরেছেন। রাহলের ৬৪ বলের ইনিংসে বাউন্ডার ১১টি, ছক্কা ৪টি।
রোহিতরা (India- Netherlands ) এদিন উইনিং কম্বিনেশন না ভেঙেই মাঠে নেমেছেন। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে টানা ম্যাচ খেলা কয়েকজনকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট একই দল নিয়ে স্কট এডওয়ার্ডসদের বিরুদ্ধে নেমেছিল। আসলে টানা জয়ের মধ্যে থাকা রোহিতরা সেমিফাইনালের আগে দলের মোমেন্টাম নষ্ট করতে চাননি। আর এখন যা পরিস্থিতি তাতে সেমিফাইনাল তো বটেই, ভারত ফাইনালে গেলেও এই দলই আমেদাবাদে নামবে। ব্যাটিংয়ে শুভমন ছাড়া টপ অর্ডারে সবাই এই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। বোলাররাও নিজেদের ছন্দের মধ্যে রয়েছেন।

আরও পড়ুন- শহরের গতি বাড়াতে তিনটি ট্রাম রুট বন্ধের প্রস্তাব পুলিশের

Latest article