ঘুরপথে জ্বালানি শুল্ক, রেলভাড়া বাড়িয়ে টিকা নিয়ে এরপর কীসের বড়াই?

Must read

অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : করোনা সংকটে দেশের মানুষের কল্যাণে কী কী পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, তার নিয়মিত ফিরিস্তি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। প্রচার করা হচ্ছে দেশবাসীকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার গুরুদায়িত্ব বিজেপি সরকার ছাড়া আর কেউ পারত না। কিন্তু এই প্রচারের আড়ালে আসল সত্যিটা চমকে দেওয়ার মতো। আসলে মাছের তেলে মাছ ভাজার চতুর নীতি নিয়েছে মোদি সরকার। তাই জনগণের পকেট কেটে নেওয়া টাকাতেই টিকার খরচ তুলে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। করোনা টিকাকরণকে নিজেদের রাজনৈতিক সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে লাগাতার প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। এক্ষেত্রে ডিজেল-পেট্রোল-রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুকে কায়দা করে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে করোনা টিকাকরণের সঙ্গে। জ্বালানি তেলের দাম কেন বেড়ে চলেছে, এই প্রশ্নের সামনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যুক্তি দিচ্ছেন, নিখরচায় টিকার সুবিধা পেলে জ্বালানির জন্য কিছুটা বেশি দাম দিতে অসুবিধা কোথায়?

আরও পড়ুন-পুলিশের কাছে রাতে যাবেন না! প্রশ্নে যোগীরাজ্যে নারী সুরক্ষা

এই পরিপ্রেক্ষিতে একটু গভীরে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে কার্যত দেশের মানুষ বিনামূল্যে কিছুই পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের কন্ট্রোলার জেনারেল অফ অ্যাকাউন্টস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরের (২০২১-২২) প্রথম চারমাস অর্থাৎ এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য থেকে কেন্দ্রীয় সরকার উৎপাদন শুল্ক বাবদ সংগ্রহ করেছে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ আর্থিক বছরের প্রথম চারমাসে সংগ্রহ হয়েছিল ৬৭, ৮৯৫ কোটি টাকা। করোনা ভ্যাকসিনের টাকা সরাসরি জনগণের কাছ থেকে না নিয়ে চুপচাপ অন্য পণ্যের দাম হিসাবে পকেট কাটা হচ্ছে। তারপর ঘুরপথে তা দিয়ে টিকার খরচ তুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস নয়, কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘জনস্বার্থবাহী’ সমস্ত ক্ষেত্র থেকেই নানা অছিলায় অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে করোনা সংকটের নামে। যেমন, ভারতীয় রেল। করোনার প্রথম লকডাউনে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর ট্রেন যখন পুনরায় চালু হয় তখন অনেক নিয়মিত ট্রেন নম্বরের সামনে শূন্য জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই শূন্য চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ট্রেনটি নিয়মিত ছিল তা বিশেষ ট্রেনে পরিণত হয়েছে। যার জেরে বেড়েছে জেনারেল, স্লিপার ও এসি শ্রেণির ভাড়াও। কৌশলে অতিরিক্ত হাজার হাজার কোটি টাকা সাধারণ যাত্রীদের পকেট থেকে বের করে নিচ্ছে রেল। এ সম্পর্কে সরকারি তথ্য পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি একটি হিন্দি দৈনিক পত্রিকায় বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, একমাত্র উত্তরপ্রদেশ থেকেই চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ‘বিশেষ ট্রেন’-এর নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকা আদায় করেছে ভারতীয় রেল। লখনউয়ের চারবাগ স্টেশনকে নমুনা হিসাবে নিয়ে ওই আর্থিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। চারবাগ রেলওয়ে স্টেশন থেকে সাধারণত ১৬৫টি ট্রেন যাতায়াত করত বা চলত। কিন্তু করোনার পর প্রায় ৪০টি মেমো ও যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ১২৫টি ট্রেন এখান দিয়ে যায়। এই ১২৫টি ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ জন যাতায়াত করেছেন। এই যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিভাগ অনুসারে রেল দফতর স্পেশাল ট্রেনের নামে ১২৫ টাকা বেশি নিয়েছে। এভাবে এক মাসে রেল তাঁদের কাছ থেকে ২৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করেছে। অর্থাৎ ১০ মাসে ২৮০ কোটি টাকা, একমাত্র চারবাগ স্টেশন থেকে। রেলের এক আধিকারিকের মতে, করোনা সময়কালে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। এরকমভাবে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দেশের মানুষের থেকে টাকা নেওয়ার পরেও ‘বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন’ দেওয়ার প্রচার মানুষের সঙ্গে নির্মম রসিকতা ছাড়া কিছুই নয়।

Latest article