নেত্রীকে প্রণাম, হাজারো কণ্ঠে উঠল জয় বাংলা ধ্বনি

দিঘার সমুদ্রসৈকতে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সৈকত সরণির দুই দিকে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

Must read

শান্তনু বেরা, দিঘা: দিঘার সমুদ্রসৈকতে হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সৈকত সরণির দুই দিকে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’, আবার কখনও ‘জয় বাংলা’। একটু কম বয়সিরা অতি উৎসাহে স্লোগান দিচ্ছে ‘খেলা হবে’। হঠাৎ মালদা থেকে আসা মাঝবয়সি এক পর্যটক হাতজোড় করে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে এলেন। কাতর আবেদন করলেন, “আপনাকে একটিবারের জন্য প্রণাম করতে চাই।” আর্জি শুনে হেসে ফেললেন তৃণমূলনেত্রী।

আরও পড়ুন-হাওড়া-কাণ্ডের জেরে কড়া পদক্ষেপ পুলিশের, ভাড়াটিয়ার তথ্য না দিলে ৬ মাস জেল

ততক্ষণে সৈকত সরণির উপরেই, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের কাছে, কয়েক হাজার জনতার সামনেই একেবারে সাষ্টাঙ্গ প্রণামের ভঙ্গিতে শুয়ে পড়েছেন সেই পর্যটক। তাঁর দেখাদেখি আরও এক পর্যটক একই ভঙ্গিতে প্রণাম সারলেন। আবার কোচবিহার থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন সুলতা রায়। পরিবারের সবাই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই ‘দিদি জিন্দাবাদ’ বলে আবেগে লাফিয়ে উঠলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দিকে মুচকি হেসে হাত নাড়লেন। আবার সৈকতের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র। দলনেত্রীকে দেখেই হাতজোড় করে প্রণাম করতে এগিয়ে গেলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীও হাত জোড় করে প্রণামের প্রত্যুত্তর দিলেন হাসিমুখে। মঙ্গলবার বিকেলে এভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে একেবারে হাতের নাগালে পেয়ে বেজায় খুশি দিঘায় আসা পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতবারই দিঘা এসেছেন, সমুদ্রসৈকত বরাবর কয়েক কিমি হেঁটেছেন। এবারও তিনি হাঁটলেন। আর তাঁর জনসংযোগ ও জনমোহিনী হাসিতে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল পর্যটকদের মধ্যে। জগন্নাথ মন্দির থেকে বেরিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী সটান চলে যান ওল্ড দিঘার মাইতি ঘাটের সমুদ্রসৈকতে।

আরও পড়ুন-বেসরকারি হাতে যাচ্ছে রাজ্যের দুই বন্দর

জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজিকে নিয়ে এখান থেকে পায়ে হেঁটে সৈকত বরাবর যান জগন্নাথ ঘাটের জগন্নাথ মন্দিরে। গতবারে দিঘা এসে এখানেই এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে এখানেই মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের জগন্নাথ মন্দির গড়ার কথা ছিল। জায়গা সংকুলনের জন্য যা হয়ে ওঠেনি। মন্দিরে তখন পুরোহিত ছিলেন। তাঁকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নতুন মন্দিরে রথ রাখার বড় জায়গা করে দিচ্ছি। রথের সময় এই মন্দির কি মাসির বাড়ি হবে?” তারপর তৃণমূলনেত্রী যান সৈকতের দ্বিতীয় বিশ্ববাংলার পাশে ঘটের আকৃতি বিশিষ্ট একটি বুক স্টলে। সেই স্টলটির উদ্বোধন করেন। স্টলের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বিভিন্ন বই স্তরেস্তরে সাজানো ছিল। তার মধ্যে থেকে ‘আজব কবিতা’ বইটা নিয়ে নিজের কবিতা পাঠ করে শোনান তৃণমূলনেত্রী। তারপর ফের হাতজোড় করে একেবারে ওল্ড দিঘার ১ নম্বর ঘাট পর্যন্ত সরণির দুই দিকে দাঁড়ানো জনতার সঙ্গে জনসংযোগ করতে করতে হাঁটেন তিনি। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত স্বপ্নের প্রকল্প মেরিন ড্রাইভের সিহক গোলা থেকে দিঘা মোহানা পর্যন্ত হাঁটেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-বিজেপি-ঘনিষ্ঠ রাজুর খুনে মূল চক্রীর খোঁজ

সৈকতে রাখা নৌকা দেখে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সম্পর্কে জেলাশাসকের কাছ থেকে খোঁজখবরও নেন। দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দিঘা বেড়াতে এসেছিলেন অমিয় রাজ। জানালেন, “মেয়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সপরিবারে দিঘা বেড়াতে এসেছিলাম। দিঘা আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও সুন্দরী হয়ে উঠেছে। আর যাঁর জন্য দিঘা এত রূপসী হল, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এত কাছ থেকে দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেল।” সমস্বরে বারবার পর্যটকদের ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’ স্লোগান যেন এই কথাটিরই প্রমাণ দিল।

Latest article