জমে উঠেছে নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলা

অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ চলছে ৩৯তম নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলা। আগামিকাল শেষদিন। কী কী নাটক মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই দু’দিনে, জানালেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

শীত মানেই উৎসব, মেলা। নানারকম মেলার ভিড়ে বঙ্গজীবনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে নাট্যমেলা। সেটা যদি ৩৯তম নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। ঐতিহ্যবাহী এই নাট্যমেলা চলছে কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। ২০ ডিসেম্বর হয়েছে সূচনা। চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

আরও পড়ুন-রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আবাস যোজনা ঘর পাচ্ছেন সাত হাজার

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করা হয় বিজয়লক্ষ্মী বর্মনকে। তাঁর হাতে উপহার তুলে দেন কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।
ওইদিন পরিবেশিত হয় নান্দীকার-এর ‘নাট্য গানের পরম্পরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। নাটকের গান শোনান সোহিনী সেনগুপ্ত এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্য। পরবর্তী দিনগুলোতে মঞ্চস্থ হয়েছে বিভিন্ন দলের নাটক।
৩৯তম নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলার আর দু’দিন বাকি। আজ এবং আগামিকাল। কী কী নাটক মঞ্চস্থ হবে, একটু দেখে নেওয়া যাক।
আজ দুপুর তিনটে নাগাদ দেখা যাবে ‘নদীয়া নাট্য’ প্রযোজিত ‘চৈতন্য বিমঙ্গল’। বিকেল পাঁচটায় দেখা যাবে ঝাড়খণ্ডের দিনকর শর্মা নিবেদিত ‘টিকিটও কা সংগ্রহ’। সন্ধে সাড়ে ছ’টায় পরিবেশিত হবে গৌতম হালদারের ‘নয়ে নাটুয়া’র নাটক ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’।
আগামিকাল, নাট্যমেলার শেষ দিনটা পুরোটাই নান্দীকারের দখলে। সকাল দশটায় দেখা যাবে ছোটদের তিনটি নাটক ‘আহারে শৈশব’, ‘তোতাকাহিনী’, ‘লাল নীল রাজার দেশ’। দুপুর তিনটেয় সপ্তর্ষি মৌলিক পরিচালিত ‘এক থেকে বারো’। সন্ধে সাড়ে ছ’টায় সোহিনী সেনগুপ্ত পরিচালিত ‘মানুষ’ নাটকের মাধ্যমে শেষ হবে এই নাট্যমেলা।

আরও পড়ুন-সর্বজয়া

আলোকপাত করা যাক এই দু’দিনের নাটকগুলোর উপর। নদিয়ার ৪৮টি দলের থিয়েপরিবার ‘নদীয়া নাট্য’। যৌথতার ইতিহাসে যোগ করেছে নতুন পালক। দলের প্রথম প্রযোজনা ‘চৈতন্য বিমঙ্গল’। চন্দন সেন রচিত কৌশিক চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছে গত ২ ডিসেম্বর, কল্যাণী ঋত্বিক সদনে। পরে মঞ্চস্থ হয়েছে আরও কয়েকবার। হয়েছে উচ্চপ্রশংসিত। ব্যতিক্রমী নাটকটি ঘিরে নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলায় আগ্রহ রয়েছে।
এবারের নাট্যমেলায় বাংলার বাইরের প্রযোজনা একটিই। দিনকর শর্মার ‘টিকিটও কা সংগ্রহ’। এই নাটকটি নিয়েও বহু নাট্যপ্রেমী উৎসাহী।
বহু বছর পর নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলায় দেখা যাবে গৌতম হালদারের অভিনয়। বলা যায়, এই দলেই তাঁর অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রযোজনায় অভিনয় করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই নাট্যমেলার স্বাদ আলাদা, বর্ণ আলাদা, গন্ধ আলাদা, রং আলাদা।

আরও পড়ুন-সংঘরূপ নির্মাণে শ্রীমা সারদা দেবী

নয়ে নাটুয়ার হালের উপস্থাপনা ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ নিয়ে তিনি উপস্থিত হবেন। নামে দলীয় প্রযোজনা। তবে এটা হয়ে উঠেছে তাঁর একক উপস্থাপনা। নাট্যরূপ, সংগীত, নৃত্যসৃজন, মঞ্চভাবনা, আলোকভাবনা এবং নির্দেশনা, সমস্ত কিছুই গৌতম হালদারের। এই প্রযোজনায় তিনি অসাধারণ। মঞ্চ জুড়ে আলো ছড়ান, প্রায় একা। ইতিমধ্যেই নাট্যমোদীদের প্রশংসা অর্জন করেছে প্রযোজনাটি। ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ আজকের প্রধান আকর্ষণ, বলার অপেক্ষা রাখে না।
আগামিকাল তিনটি ছোটদের নাটক দিয়ে দিনের সূচনা। ‘আহারে শৈশব’, ‘তোতাকাহিনী’, ‘লাল নীল রাজার দেশ’। অভিনয়ে মূলত ছোটরা।
দ্বিতীয় নাটক সপ্তর্ষি মৌলিক পরিচালিত ‘এক থেকে বারো’। এটাই নান্দীকারের নবতম প্রযোজনা। মূল নাটক ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’। বাংলায় রূপান্তর করেছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। তাঁর মৃত্যুর পর শুরু হয় কাজ। এই নাটকে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন দলের নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। আছেন সিনিয়র কয়েকজন। ভুলকে ঠিক বলার পরিবর্তে এই কোর্ট রুম ড্রামায় কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যেগুলো এই সময় বড় বেশি প্রাসঙ্গিক। নাটকটি ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন-ডাললেকের মতোই এবার শিকারাবিহার তিস্তায়

নাট্যমেলার শেষ নাটক ‘মানুষ’। প্রফুল্ল রায়ের ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি নাটকটি পরিচালনা করেছেন সোহিনী সেনগুপ্ত।
শহর এবং গ্রামের দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে নাটকে। এই দ্বন্দ্ব চিরকালীন। এটাও ঠিক, বহু ক্ষেত্রে গ্রাম এবং শহরের মানুষরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। নাগরিক বা গ্রামীণ নয়, যে-কোনও মানুষের মূল পরিচয় তিনি একজন মানুষ। এই পরিচয় তাঁকে অন্য সমস্ত কিছু থেকে বড় করে তোলে। এটাই দুই অঙ্কের পূর্ণাঙ্গ নাটকটির মূল ভাবনা। নাট্যরূপ দিয়েছেন সপ্তর্ষি মৌলিক এবং অনিন্দিতা চক্রবর্তী।
নাটকে তুলে ধরা হয়েছে বিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র জনগণের কথা। যারা পায় না বেঁচে থাকার রসদ, পায় না পর্যাপ্ত খাবার। না আছে বিদ্যুৎ, চিকিৎসা-ব্যবস্থা। অন্ধকারে দমবন্ধ হয়ে আসে তাদের। কেউ কেউ সমস্যার সীমা লঙ্ঘন করে পৌঁছতে চায় শহরে। বাধা হয়ে দাঁড়ায় সবুজ অরণ্য-ঘেরা দুর্গম শেরমুন্ডি পাহাড়। তবু চলে অতিক্রমের আপ্রাণ চেষ্টা। কোথাও কোথাও কাজ করে প্রবল আবেগ। তবে সবকিছুকে অতিক্রম করে বড় হয়ে দাঁড়ায় কর্তব্যবোধ। কী হয় শেষপর্যন্ত? পেরোনো যায় শেরমুন্ডি পাহাড়? জানার জন্য দেখতে হবে হিন্দি ও বাংলায় রচিত দোভাষী নাটক ‘মানুষ’।

আরও পড়ুন-ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের সাহায্য মন্ত্রী ও রাজ্যের

নাটকে ভরোসালাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সপ্তর্ষি মৌলিক। পাশাপাশি অভিনয় করছেন দলের জনা তিরিশেক তরুণ-তরুণী। সংগীতের দায়িত্বে রয়েছেন গৌতম ঘোষাল। এটাই ‘নান্দীকার’-এর সঙ্গে তাঁর প্রথম কাজ। বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে। তবু আগ্রহের শেষ নেই নাটকটি ঘিরে।

Latest article