প্রতিবেদন : ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বিজেপি তাদের সাংসদদের মুখ বদলাতে চলেছে। দিলীপ ঘোষ-লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো দু’একজন বাদ দিয়ে বেশিরভাগ জেতা আসনেই নতুন মুখ (প্রার্থী) আনতে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই ফরমুলায় না এগোলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি যে নিশ্চিত, এমনকী উত্তরবঙ্গের আসনেও আর পুরনো প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত নয়, সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট নাড্ডা-শাহদের হাতে আসায় আগামী লোকসভায় নতুন মুখকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন-রক্তের কালোবাজারি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ রাজ্যের
অনেকটা ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করার মতো ফরমুলায় এগোতে চাইছে দিল্লি বিজেপি। সম্প্রতি এরাজ্যের বিজেপির জেতা ১৮টি লোকসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গোপন সমীক্ষা চালায়। আর তাতেই উঠে এসেছে এমন সব তথ্য যা দেখে চোখ কপালে উঠেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিজেপির জেতা ১৮টি আসনের বেশিরভাগই ২০২৪-এ হাতছাড়া হতে চলেছে বিজেপির। কারণ পুরনো অধিকাংশ বিজেপি সাংসদই টিকিট পেলেও জিততে পারবেন না। এঁদের মধ্যে অনেকেরই আবার জামানত জব্দ হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সোজা কথায় ২০২৪-এর লোকসভায় বাংলায় ডুবতে চলেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-৬ বিঘা জমির গাছ পোড়াল দুষ্কৃতীরা
কিন্তু কেন হল এই পরিস্থিতি? কারণ হিসেবে সমীক্ষার রিপোর্টে একাধিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল সাংসদ হওয়ার পর নিজের লোকসভা কেন্দ্রে সময় দেননি তাঁরা। মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। এমনকী নিজের দলের জেলা নেতৃত্ব-মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গে যোগাযোগহীনতা। জেলায় জেলায় বিজেপির কোনও সংগঠন নেই দেখেও হাত গুটিয়ে থাকা, বেশিরভাগ জেলাতেই বুথের কর্মী বলে কিছু নেই, অঞ্চল কমিটি নেই, বহু জেলায় কর্মীরা নিষ্ক্রিয় কারণ সামনে কোনও নেতা নেই, সবটাই কলকাতা-নির্ভর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুভেন্দু-সুকান্ত-দিলীপদের লাগাতার লবিবাজি। যা ছাপ ফেলেছে সংগঠনে। একা শুভেন্দুকে বঙ্গ বিজেপির মুখ হিসেবে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় যে আদতে দলেরই ক্ষতি হয়েছে সেই রিপোর্টও উঠে এসেছে সমীক্ষায়। শুভেন্দু-সুকান্তদের চূড়াম্ত দিশাহীনতা-আমিত্ব-সবটা নিজের দখলে রাখার মানসিকতায় ক্ষতি হয়েছে সংগঠনের। বহু পুরনো নেতা-কর্মী বসে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী লোকসভায় দল নতুন সাংসদ তুলে আনতে চাইছে জানতে পেরে পুরনো কয়েকজন সাংসদ নিজের আসন ধরে রাখতে ও লোকসভার টিকিট নিশ্চিত করতে দিল্লিতে পরিচিত নেতাদের প্রায় পায়ে ধরছেন। এদিকে শুভেন্দু-সুকান্তরাও এই মওকায় নিজেদের লোককে লোকসভায় টিকিট পাইয়ে দিতে তৎপর হয়েছেন। কিন্তু দিল্লি এঁদের ওপর ভরসা করতে রাজি নয়। কারণ ২০২১-এর নির্বাচনে এঁরাই দিল্লির নেতাদের কাছে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছিলেন।
আরও পড়ুন-মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকার চেক
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল, এই সমীক্ষা পর্বে বঙ্গ বিজেপির নেতা-নেত্রীদের যুক্ত করা দূরে থাক, তাঁদের ন্যূনতম পরিকাঠামোও ব্যবহার করা হয়নি। এরকম একটা সমীক্ষা যে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা চালাচ্ছেন সেই খবরও বঙ্গ বিজেপির বীরপুঙ্গবদের কাছে ছিল না। দু-চারদিন আগে দলের তরফে সব সাংসদদের তাঁদের এলাকায় পড়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বা দল ডেকে না পাঠালে কলকাতা বা দিল্লিতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচমকা এই নির্দেশ পেয়ে কয়েকজন সাংসদ খোঁজখবর নিতে শুরু করেন এর আসল কারণ জানতে। তখনই তাঁরা জানতে পারেন তাঁদের অজান্তেই তাঁদের লোকসভা কেন্দ্রে সমীক্ষা করে সেই রিপোর্ট পৌঁছে গেছে জে পি নাড্ডা-অমিত শাহদের কাছে৷ বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বে থাকা দু-একজন পর্যবেক্ষক সমীক্ষার একেবারে শেষ পর্বে গোটা বিষয়টি জানতে পারলেও তাঁদের ওপর নির্দেশ ছিল এরাজ্যের কোনও বিজেপি নেতা-নেত্রী যেন তা জানতে না পারেন। কেউ জানতেও পারেনি। দু-একদিন হল সব ফেলে বিজেপি সাংসদরা এখন নিজেদের বাঁচাতে এখন মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। মাথায় বাজ পড়েছে সাংসদদের। কিন্তু খেলা এখন তাঁদের প্রায় হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।