পাঁচ নম্বর দ্বারকানাথ ঠাকুরের গলির বাড়িটিতে যতবারই ফিরে আসেন, রবীন্দ্রনাথের সমস্ত অস্তিত্বের উপর যেন এক অনন্ত শৈশবস্মৃতি ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে৷ এই অযত্নলালিত বাগানটি, এই বৃহৎ ও প্রাচীন ভবনটির গলিঘুঁজি ও ক্ষুদ্রাকৃতির অন্ধকার ঘরগুলি, অন্দরমহলে যাওয়ার সিঁড়িটি— সবই তাঁকে সবলে টানতে থাকে পঞ্চাশ বছর আগে ফেলে-আসা ছেলেবেলার দিকে, যখন তিনি এক ছয়-সাত বছর বয়সি বালক মাত্র। আজকের এই বিশ্ববিজয়ী বিশ্বকবির চিহ্নমাত্র তখন কোথাও ছিল না।
আরও পড়ুন-প্রয়াত পুত্রকে গোল উৎসর্গ রোনাল্ডোর, আর্সেনালের কাছে হার ম্যান ইউয়ের
আজও শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে রবীন্দ্রনাথ যখন স্নান ও যৎসামান্য আহার সম্পন্ন করে দক্ষিণের বারান্দায় তাঁর প্রিয় কোণটিতে এসে বসলেন, তখন বেলা আর সামান্যই অবশিষ্ট আছে। শৈশবে তাঁর প্রিয় দৃশ্য ছিল বেলাশেষের রোদ পুকুরের পাড়ের প্রাচীন বটগাছটির উপরে পড়ে-আসার দৃশ্য। আজ সেই পুকুরটি অদৃশ্য হয়েছে, সেই বটগাছটিও আর নেই। তবু সেইদিকে তাকিয়ে কোলের উপর হাত দুটি রেখে চুপ করে বসে রইলেন তিনি। এটি বোধহয় কলকাতা শহরের একমাত্র নির্জন স্থান।
এমন সময় সংলগ্ন কক্ষটিতে একটি অপরিচিত পদশব্দ শুনতে পেয়ে সচকিত হয়ে উঠে বসলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সময় এই দিকে কারও আসার তো কথা নয়! তিনি তেমনই আদেশ দিয়ে রেখেছেন বনমালীকে। সেই আদেশ এতক্ষণে এই বৃহৎ পরিবারে রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার কথা। কে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করল?
বিস্মিত রবীন্দ্রনাথ আরামকেদারা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেলেন নিজের চিরপরিচিত ঘরটির দিকে। তারপর অসম্ভব বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন দ্বারপ্রান্তে।
ঘরের ভিতরে জানালার পাশে রক্ষিত কাঠের চেয়ারে বসে আছেন একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ। ইনি রবীন্দ্রনাথের ন্যায় দীর্ঘদেহী ও স্বাস্থ্যবান নন; গাত্রবর্ণও ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের ন্যায় সুগৌর নয়। কিন্তু ঈষৎ শীর্ণ ও মধ্যমাকৃতির মানুষটির তীক্ষ্ণ নাসায় ও চোখের দৃষ্টিতে এক অবিশ্বাস্য ব্যক্তিত্ব যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। দেখলেই মনে হয়, এর সামনে বাচালতা চলবে না, ইনি বিরুদ্ধাচরণ সহ্য করবেন না।
মানুষটির বসার ভঙ্গি ও মুখচ্ছবি রবীন্দ্রনাথের কোনও কারণে পরিচিত বলে বোধ হল। তবু নিশ্চিত হতে না-পেরে তিনি নিজে কক্ষে প্রবেশ করে স্বভাবসিদ্ধ মৃদুকণ্ঠে বললেন, “অপরিচিত মানুষের ঘরে প্রবেশ করার আগে তাঁর অনুমতি নিতে হয়, এমন একটি প্রথা সমাজে প্রচলিত আছে। আপনি বোধহয় সেকথা বিস্মৃত হয়েছেন। মহাশয়ের পরিচয় জানতে পারি?”
আরও পড়ুন-জিতেই শেষ চারে যেতে চায় বাংলা সন্তোষ ট্রফি
“অপরিচিত?” চেয়ারে বসে অতিশয় বিস্মিত ও ঈষৎ বিরক্তকর কণ্ঠে বললেন মানুষটি, “এই ঘরে আমি বাস করেছি একাদিক্রমে আঠারোটি বছর। তুমি দেবেনের ছেলে রবি না?”
প্রবল বিস্ময়-অভিভূত হয়ে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর প্রয়াত পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেউ এইভাবে সম্বোধন করতে পারে, তা তাঁর কল্পনারও বাইরে। আর নোবেলবিজয়ী বিশ্বকবিকে এমনভাবে তাঁর ডাকনাম ধরে সম্বোধন করার সাহস এঁকে কে দিল?
পরক্ষণেই রবীন্দ্রনাথের মনে হল, তিনি এঁর ছবি অতি-সম্প্রতি কোথাও দেখেছেন। মানুষটির তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে স্পর্ধিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকার ভঙ্গিটি তাই তাঁর এত চেনা বোধ হচ্ছে। দ্বিধান্বিত ভঙ্গিতে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলুম না।”
ধীরে ধীরে চেয়ারটি ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে ভদ্রলোক বললেন, ‘‘এই চেয়ার আমার। সারাজীবন ধরে আমি বিশ্বাস করি এসেছি, বিলাসিতা আর কর্ম কখনও একসঙ্গে চলতে পারে না। তাই বিষয়কর্ম করার সময় আমি এই কাঠের চেয়ারটিতে বসেই সমস্ত দিন পরিশ্রম করতাম। সেই পরিশ্রমের ফল তোমরা এখনও ভোগ করে চলেছ।”
আরও পড়ুন-বিরাট হার আরসিবির
সহসা রবীন্দ্রনাথের মস্তিষ্কে একটি কূট চিন্তার উদয় হল। কম্পিতকণ্ঠে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি—?”
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অসম্ভব অহংকারের সঙ্গে ভদ্রলোক উত্তর দিলেন,“আমি দ্বারকানাথ ঠাকুর। এই ঘর আমার শয়নকক্ষ ছিল বহুকাল।” তারপর বিপরীত দিকের বিশাল অথচ মলিন বাড়িটির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে তিনি বললেন, “পরবর্তীকালে আমি ওই বাহিরবাটী নির্মাণ করিয়ে সেখানে চলে যাই। আমার শখের বাড়িটির এ কী অবস্থা করেছ তোমরা? যত্ন নাও না বুঝি? নাকি সেই কল্পিত অর্থাভাব এখনও দূর হয়নি? অবশ্য হবেই বা কী করে? অর্থ যে উপার্জন করতে হয়, তা তো তোমাদের শেখাই হয়নি কখনও!” রবীন্দ্রনাথের মনে হচ্ছিল, তিনি নিশ্চয় ক্লান্তিতে বিচিত্র কল্পনা করে সেই কল্পদৃশ্য দেখছেন। তাঁর পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রয়াত হয়েছেন সুদূর ইংল্যান্ডে, ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে। সহসা এই বিংশ শতাব্দীর কলকাতায় তিনি ফিরে আসতে পারেন না!
কিন্তু তাঁর বিস্ময় ছাপিয়ে উঠল অন্য একটি তিক্ততা। ‘কল্পিত অভাব?’ এই মানুষটির বিলাসিতার বোঝা বহন করতে গিয়েই তাঁদের শৈশব এমন দরিদ্র হয়ে গিয়েছিল। একটি সাদা জামার উপরে আরেকটি সাদা জামা— এই ছিল শীতকালের একমাত্র পরিধান। আর উনি বলছেন সেই অভাব সত্য নয়?
আরও পড়ুন-লগ্নির লগ্ন এখন বঙ্গে
পিতামহের সম্মুখে উচ্চকণ্ঠে কথা বলার প্রশ্নই ওঠে না তবুও এ-কথার প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ তাই শান্তকণ্ঠে বললেন, “আপনি জানেন না আপনার মৃত্যুর পর আমাদের কী অবস্থা হয়েছিল। পিতৃদেবের উপর তখন এক কোটি টাকার ঋণ। কী অপরিসীম কষ্ট করে যে তিনি সেই ঋণ শোধ করেছেন, তা আমাদের অজানা নয়।”
শাণিতকণ্ঠে দ্বারকানাথ বললেন, “এই এক কোটি টাকার ঋণের কথাটি তুমি কার কাছ থেকে জানতে পেরেছ?”
“এ-কথা তো আলাদা করে জানার প্রয়োজন পড়ে না! সকলেই জানে, আপনি অতিরিক্ত বিলাসিতা করতে গিয়ে সমস্ত টাকা ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। বিলাতে যখন আপনার দেহান্তর ঘটে…”
“তখন আমার উপর ঋণের পরিমাণ ছিল এক কোটি টাকা, তাই তো?”
ঈষৎ দ্বিধান্বিত কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “হ্যাঁ, এ-কথা তো সর্বজনবিদিত!”
আরও পড়ুন-প্রকৃত কবির যাপন প্রত্যাশাহীন
“সে তো বটেই!” মাথা নাড়লেন দ্বারকানাথ, “সর্বজনবিদিত কথারও কোনও একটা প্রমাণ থাকে। এই হিসেব তুমি স্বচক্ষে দেখেছ?”
এইবার রবীন্দ্রনাথ অস্বস্তিভরে নীরব হলেন। এমন কোনও হিসেব দেখার কথা তাঁর মাথায় আসেনি কখনও। দেবেন্দ্রনাথ স্বয়ং এ-কথা বহুবার বলেছেন তাঁকে, নিজের আত্মজীবনীতে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, ‘সেই হিসাবে দেখান হইল যে, আমাদের হাউসের মোট দেনা এক কোটি টাকা, পাওনা সত্তর লক্ষ টাকা; ত্রিশ লক্ষ টাকার অসংস্থান।’ পিতৃদেব তো ভুল তথ্য লিখবেন না!
যেন রবীন্দ্রনাথের মনের কথা পড়ে ফেললেন দ্বারকানাথ; বললেন, “দেবেনের বইতে স্পষ্ট লেখা আছে— আমার মৃত্যুর পর কার-টেগোর কোম্পানিতে পাওনাদারদের যে সভা হয়েছিল, তাতে গর্ডন এই হিসেব দেখিয়েছিল। রাজনারায়ণ পাওনার খাতায় দেখিয়েছিল চল্লিশ লক্ষ, দেবেনের হিসেবের চাইতে ত্রিশ লক্ষ টাকা কম। এমন গরমিল হল কেন, ভেবেছ কখনও?”
“পিতৃদেব স্বয়ং গর্ডন সাহেবের কাছ থেকে এই হিসাব পেয়েছিলেন” বললেন রবীন্দ্রনাথ। পিতার সম্মান রক্ষা করা পুত্রের কর্তব্য।
“দেবেন সেই হিসাবের পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে নিয়েছিল কিনা, তা তুমি জানো? সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য ছিল কি না, তা তোমরা যাচাই করে নিয়েছিলে?” ক্রমশ তপ্ত হয়ে উঠছে দ্বারকানাথের কণ্ঠ।
আরও পড়ুন-প্রয়াগরাজ নিয়ে কেন চুপ বিজেপি ? বিজেপিকে তোপ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের
রবীন্দ্রনাথ মৃদু স্বরে বললেন, “এসব যখন ঘটেছে, তখনও আমার জন্ম হয়নি।”
দ্বারকানাথ পূর্ববৎ ধারালো গলায় বললেন, “অথচ তুমি নিজেও লিখে দিলে— ‘তখন ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক ফেল করাতে আমাদের বৈষয়িক দুর্গতির দিন উপস্থিত হইয়াছিল— তথাপি উইল অনুসারে যাহার যাহা প্রাপ্য ছিল তাহা পরিশোধ করিয়া দিয়া পিতৃদেব নিষ্কৃতি লাভ করিলেন।’”
রবীন্দ্রনাথ মৌন হলেন। সত্যই এ-কথা তিনি লিখেছিলেন, এখন অস্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না।
দ্বারকানাথ তীব্রকণ্ঠে বললেন, “বিলেতে যাওয়ার আগেই ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সমুদয় শেয়ার আমি বিক্রয় করে দিয়েছিলাম, সে-কথা তুমি জানতে না? মাত্র একান্নখানি শেয়ার ছিল আমার দখলে। তাহলে আমার মৃত্যুর তিন বছর পরে যখন ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক ফেল হল, তখন ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সম্পর্ক কোথায়, যে তোমাদের বৈষয়িক দুর্গতির দিন শুরু হবে?”
বিস্ফারিত চোখে পিতামহের দিকে তাকিয়ে রইলেন রবীন্দ্রনাথ। এই তথ্য তিনি জানতেন না।
“আর একটিমাত্র কথা বলব। কার-টেগোর কোম্পানি যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখনো কোম্পানির মোট অ্যাসেটের পরিমাণ ২৯,০২,৯৫০ টাকা; আর লায়াবেলিটির পরিমাণ ২৫,৪৬,০০০ টাকা। মাত্র এই ক’টা টাকার অসংস্থানের জন্য কোম্পানি উঠে গেল কী করে, এ-কথা ভেবে দেখেছ কখনও?”
রবীন্দ্রনাথ কোনওক্রমে বললেন, “পিতৃদেব ঋষিতুল্য পুরুষ ছিলেন। ব্যবসার এই সকল জটিল হিসাবনিকাশ তাঁর বোঝার কথা নয়।”
মৃদু হাসলেন দ্বারকানাথ, “দেবেন দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে আমি নিজে ব্রাহ্মসমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম দীর্ঘদিন। সকল ব্যয় বহন করেছিলাম আমি, সতীদাহের বিরুদ্ধে আন্দোলনে দেওয়ানজীর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম আমি। হিন্দু কলেজ বা মেডিকেল কলেজের জন্য আপ্রাণ সংগ্রাম করেছি। তার জন্য তো আমাকে ব্যবসাবুদ্ধি বিসর্জন দিতে হয়নি?”
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীতে পড়ুয়াদের ধর্না, উপাচার্য পাঠালেন বাইকবাহিনী
আগের মতোই ম্লানকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “সবাই কি সবকিছু পারে?”
“তা হয়তো পারে না।” মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন দ্বারকানাথ, “কিন্তু পূর্বপুরুষকে অকারণে অসম্মানিত করতে পারে সকলেই। তোমাদের এই ভিত্তিহীন প্রচারের ফলে মানুষের স্মৃতিতে আমি থেকে গেলাম একজন বিলাসী বুদ্ধিহীন ব্যর্থ ব্যবসায়ী হিসেবে। আমার সমস্ত জীবনের সাধনা বিফলে গেল, কারণ আমার উত্তরাধিকারীরা আমারই অর্থে পুষ্ট হয়ে আমারই সম্মানহানি করে গেল অকাতরে। বলতে পারো, আমার দোষ কী ছিল?”
বিমূঢ় দৃষ্টিতে হাহাকারে ভেঙে-পড়া মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর নম্র কণ্ঠে বললেন, “আমি কবি। ব্যবসায়ের খুঁটিনাটি বোঝা আমার কর্ম নয়। বিশ্বপ্রকৃতি আর মানবপ্রকৃতির ভিতরে যে অপার রহস্য নিহিত আছে, তারই সন্ধান করি আমি। আপনি অনর্থক আমার প্রতি দোষারোপ করছেন।”
ক্লান্তভাবে আবার নিজের প্রিয় চেয়ারটিতে গিয়ে বসলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর, যেন পরাজিত এক মানুষ। তারপর বললেন, “কাউকে দোষ দিচ্ছি না। এ আমার নিয়তির দোষ। নাহলে যে দিগম্বরীকে আমি সমস্ত অন্তর দিয়ে ভালবেসেছিলাম, সে আমাকে ভুল বুঝবে কেন? দেবেন তো তারই হাতে মানুষ! তার তো ভুল বোঝারই কথা।”
আরও পড়ুন-জল অপচয় বন্ধে ফিরহাদের পদক্ষেপ
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন রবীন্দ্রনাথ। এমন বিধ্বস্ত একজন মানুষকে কী বলে সান্ত্বনা দেওয়া যায়, তা বিশ্বকবিরও মাথায় এল না।
সহসা মুখ তুলে কিছুক্ষণ নির্নিমেষে রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকিয়ে রইলেন দ্বারকানাথ। তারপর বললেন, “কাছে এসো। তোমাকে একটি জিনিস উপহার দিতে চাই।”
পায়ে-পায়ে চেয়ারের কাছে এসে দাঁড়ালেন রবীন্দ্রনাথ, তারপর হাত বাড়িয়ে দিলেন পিতামহের দিকে। দ্বারকানাথ নিজেও হাত বাড়ালেন রবীন্দ্রনাথের দিকে। কোমল ও শিল্পীসুলভ হাতটি হুবহু রবীন্দ্রনাথের মতো।
তারপর পৌত্রের হাতের ওপর রাখলেন একটি অলংকার। সেই অলংকারটির দিকে তাকিয়ে আমূল চমকিত হলেন রবীন্দ্রনাথ…
আর তৎক্ষণাৎ তাঁর নিদ্রা ভঙ্গ হয়ে গেল।
দক্ষিণের বারান্দার কোণে রাখা কৌচটিতে বসে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দীর্ঘ যাত্রায় হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাঁর অসুস্থ শরীর।
স্বপ্ন দেখছিলেন এতক্ষণ তিনি! এমন প্রত্যক্ষবৎ স্বপ্ন তিনি কখনও দেখেননি।
সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করতেই তাঁর হাত থেকে কিছু একটা পড়ে গেল ঝকঝকে মেঝেতে। নিচু হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন রবীন্দ্রনাথ।
তাঁর ধবধবে ফর্সা পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে হাতির দাঁত ও পান্না দিয়ে তৈরি দু’খানি কানের দুল। এই অলংকারটি তাঁর বহুল-পরিচিত। পারিবারিক সংগ্রহশালায় তিনি এই দুলদুটি বহুবার দেখেছেন।
বহু বছর আগে এই কর্ণাভরণ দুটি পত্নী দিগম্বরীদেবীকে উপহার দিয়েছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, তাঁর উপেক্ষিত পিতামহ!