কর্নাটকে বিজেপি জমানার বিরাট দুর্নীতি ফাঁস পিএসির

Must read

প্রতিবেদন : কোভিড মোকাবিলায় কর্নাটকের (Karnataka) পূর্বতন বিজেপি (BJP) সরকারের বিরাট দুর্নীতির ঘটনা সামনে এল। রাজ্য বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (PAC) রিপোর্টেই এই দুর্নীতির কথা ফাঁস হয়েছে। (PAC) রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগের বিজেপি জমানায় কর্নাটক সরকার ২০২০ এবং ২০২১ সালের কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা বিপুলভাবে চেপে গিয়েছে। রাজ্য বিধানসভায় এই রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্টে কোভিড মোকাবিলায় তৎকালীন বিজেপি সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে চড়া দামে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। সরবরাহের জন্য টেন্ডার পাওয়া সংস্থাগুলি ওষুধের অর্ডার পূরণ করেনি। আবার প্রয়োজন না থাকলেও ওষুধ কেনা হয়েছে। এই গরমিলের তথ্য উল্লেখ করে কমিটি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি বিষয়টির স্বাধীন তদন্তের কথাও বলা হয়েছে।

২০২০ সালে এইচ কে পাটিলের নেতৃত্বে এবং পরে রামালিঙ্গা রেড্ডির নেতৃত্বে, কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। মহামারী চলাকালীন কর্নটকে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বাসবরাজ বোম্মাই এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন কে সুধাকর। স্বাস্থ্য বিভাগের সমালোচনা করে কমিটি বলেছে, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভাগীয় গাফিলতি ছিল। ওষুধ এবং অক্সিজেনের অভাব ছিল। কমিটি বলেছে, অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২০ পর্যন্ত ২,৬৯,০২৯ জন এবং জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২১ পর্যন্ত ৪,২৬,৯৪৩ জন মৃত্যুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ২০২০-র তুলনায় ২০২১-এ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল ১,৫৭,৯১৪ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তারা ভুল তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি মাত্র ৩৭,২০৬। কমিটি মনে করছে, আধিকারিকরা মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১,২০,৭০৮ কম দেখিয়ে একটি জঘন্য অপরাধ করেছেন। কমিটির সুপারিশ, নিহতদের পরিবারকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আরও পড়ুন- ব্রিজভূষণের হয়ে সওয়াল নির্ভয়াকাণ্ডের আইনজীবীর

কমিটি তার রিপোর্টে জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকার আইভারমেকটিন ট্যাবলেট বিপুল পরিমাণে কিনেছিল। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২১ সালের মার্চ মাসে আইভারমেকটিন ট্যাবলেট ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতায় জানিয়েছিল যে, কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় এই ট্যাবলেট কার্যকর নয়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতা উপেক্ষা করে ২০২১ সালের এপ্রিলে ১.১০ কোটি ট্যাবলেট কিনেছিল। শুধু তাই নয়, কেনার জন্য কত টাকা খরচ হয়েছে এবং রাজ্যে কোথায় তা বিতরণ করা হয়েছে তার কোনও বিবরণ পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিকে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এর পাশাপাশি বলা হয়েছে, পিএম কেয়ার ফান্ডের অধীনে কর্নাটকে দেওয়া প্রায় ১৬৫টি ভেন্টিলেটর বেসরকারি হাসপাতালে বিতরণ করা হয়েছিল। পিএসির দাবি, এই বরাদ্দ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই কর্মকর্তারা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগসাজশ করে জনস্বার্থকে উপেক্ষা করেছেন বলে কমিটি জানিয়েছে। গুরুতর পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্য দফতর বারবার বলেছিল যে, ভেন্টিলেটরের কোনও অভাব নেই। এ বিষয়েও কমিটি গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

কমিটি দেখেছে যে, কেরল, তামিলনাড়ু এবং হিমাচল প্রদেশের মতো অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি দামে সরঞ্জাম কিনেছে কর্নাটকের তৎকালীন বিজেপি সরকার। কেনার ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। যে সমস্ত সংস্থাগুলি অর্ডার আংশিক সরবরাহ করেছিল তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। যাদের পণ্য ত্রুটিপূর্ণ ছিল তাদের অর্ডারও বাতিল করা হয়নি। বিভিন্ন সংস্থাকে অনেক বাড়তি দাম দিয়ে ওষুধ কেনা হয়েছিল। উচ্চমূল্যে ক্রয় এবং কালোবাজারে তার বিক্রি বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সমালোচনা করেছে কমিটি। কমিটির দাবি, কোভিড-এর সময়কালে কেনাকাটা সংক্রান্ত অনেক নথি এবং স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেলেনি। পিএসি রিপোর্টের ভিত্তিতে এবার দুর্নীতি নিয়ে পূর্বতন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বড় মাপের তদন্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে সিদ্দারামাইয়া সরকার। এই তদন্তের খবরে আশঙ্কায় ভুগছেন বিজেপি নেতারা।

Latest article