মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাবের আলোয় আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য রাজীবের

Must read

আজ আন্তর্জাতিক নারীদিবস আর যিনি নারীশক্তির আধার তিনি আর কেউ নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay), বললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

নারীশক্তি ছাড়া এই জগৎ অচল, যেমন নারী আমাদের লালন-পালন করেন ঠিক তেমনি দুর্গা এবং কালীরূপে দুষ্টের নাশ করেন। শক্তির বর্ণনা করতে গেলে দেবীশক্তির কথা বলতে হয়। শক্তির প্রতীক হিসাবে দেবী দুর্গা যেমন অসুরবিনাশিনী তেমন করেই সাধারণ মানুষের মনে পরমপূজ্য। আর সমস্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীশক্তির ভূমিকা বিদ্যমান। আর আমার কাছে নারীশক্তি তথা সমস্ত শক্তির আধার আমাদের নেত্রী তথা জনগণমন অধিনায়িকা সবার নয়নের মণি ‘দিদি’ তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। যিনি আজ সবার কাছে দেবীরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন।

আমাদের নেত্রী এমন একজন যিনি একাধারে অত্যন্ত কঠোর প্রশাসক, নির্ভীক দৃঢ়চেতা ও অন্যদিকে একজন সহজ, সরল, উদার এবং অত্যন্ত আন্তরিক একজন ব্যক্তিত্ব। আমার জীবনে ঘটে-যাওয়া একটা কথার উল্লেখ না করে থাকতে পারছি না। একটা কথা উনি আমায় বলেছিলেন, যখন আমি একটি বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। আজও সেই কথাটা আমার কানে বাজে— ‘‘চাকরি করে কর্মজীবনে এক লক্ষ টাকা রোজগার করার থেকে এক লক্ষ মানুষের উপকার করা অনেক বেশি জরুরি।’’ এবং এটা যে রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় সম্ভব নয় সেটা তিনি বুঝিয়েছিলেন। নেত্রীর চিন্তা-ভাবনা, কাজ করার ক্ষমতা ও সর্বোপরি এক অদম্য জেদ ওঁর ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। তাই তাঁর সেদিনের কথায় সব ছেড়ে দিয়ে তাঁর হাত ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ।

অত্যন্ত সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে আসা আমার নেত্রীর মতো জাতীয় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে নিজের রাজনৈতিক দল তৈরি করা এবং তৎক্ষণাৎ সাফল্য লাভ করার দৃষ্টান্ত সারা ভারতবর্ষের কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর নেই। একের পর এক রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত করে পথে নেমে প্রতিবাদের মাধ্যমে ৩৫ বছরের বাম অপশাসনের অবসান ঘটানো ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বামপন্থীদের হটাতে গিয়ে কতবার আক্রান্ত হয়েছেন ও ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে তা সর্বজনবিদিত। তাই কথায় আছে ‘রাখে হরি মারে কে’। নেত্রীকে যতবার আঘাত করা হয়েছে সেই আঘাত ভারতের ইতিহাসে কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীকে সহ্য করতে হয়নি। বরং আমি মনে করি যত আঘাত তাঁকে করা হয়েছে তত তিনি গর্জে উঠেছেন। সংগঠিত হয়েছেন এবং প্রস্ফুটিত হয়েছেন। ধমক, চমক, আঘাত করে তাঁকে কোনওদিন দমানো যায়নি ও ভবিষ্যতেও যাবে না। এর কারণ তিনি সবার থেকে আলাদা।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দরিদ্র, প্রান্তিক এবং নিপীড়িতদের সংঘবদ্ধ করে প্রতিবাদ সংগঠিত করেছিলেন। তার জন্যই তিনি আজকে একজন প্রকৃত ‘স্ট্রিট ফাইটার’। তিনি কোনও দিনও সংগ্রাম ছেড়ে যাননি। মানুষের স্বার্থ ও বাংলার স্বার্থই তাঁর কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে তিনি একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিত্ব ছাড়তেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে তখন একটাই পরিচয় ছিল, ‘টাইগ্রেস অফ বেঙ্গল’ ও ‘ফায়ারব্র্যান্ড লিডার’।

আরও পড়ুন – ৫ মে থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত জনসংযোগ যাত্রার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

মা-মাটি-মানুষের সরকার আসার আগে বাংলায় যা উন্নয়ন দেখেছি আমরা তার সবটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। কেন্দ্রের মন্ত্রী থাকাকালীন ‘বেঙ্গল প্যাকেজ’-এর কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। রেল হোক বা সড়ক সম্প্রসারণ বা বাংলার সমস্ত পরিকাঠামোগত নির্মাণের কারিগর তিনিই। আর মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠার পরে আজ যা যা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ আমরা দেখছি তার সমস্তটাই নেত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। সবটারই কৃতিত্বের দাবিদার স্বয়ং নেত্রীই। যদিও তাঁর উদার মানসিকতার জন্য তিনি টিমকে কৃতিত্ব দেন কিন্তু আমি দীর্ঘদিনের একজন শিষ্য হিসাবে দেখেছি তাঁর সব বিষয়ে অসাধারণ জ্ঞান। কোনও একটা প্রকল্প তৈরি করা থেকে সঠিক ভাবে রূপায়ণ কীভাবে করতে হয় তার সবটাই নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা তিনিই করেন। বলতে দ্বিধা নেই অসাধ্যকে সাধন করা কাকে বলে নেত্রীই তার প্রকৃত উদাহরণ যা আমরা বাস্তবিক জীবনে কখনও কল্পনাই করতে পারি না। তাই তো বলতে হয় আমাদের নেত্রী আজ যা ভাবেন, ভারতবর্ষ আগামী দিনে তা ভাবেন এবং দেখেছি নেত্রীর আন্দোলন হোক বা প্রকল্পই হোক অন্যান্য রাজ্য বা রাজ্যের নেতৃবৃন্দ সেগুলো নকল করেন।

পরিশেষে বলতে হয়, নেত্রী তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এখনও পর্যন্ত কঠিনতম লড়াই করেছেন ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে। যেখানে তাঁর সরাসরি প্রতিপক্ষ ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রিসভার সদস্য এবং তাবড় বিজেপির নেতৃবৃন্দ। এই লড়াইয়ের শেষে দিদি বিজেপির দর্প চূর্ণ করে বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর তুলনা শুধুমাত্র তিনিই নিজে। তাই তো আজ ভারতবর্ষের প্রতিটা মানুষ তাকিয়ে থাকে তাঁর জন্য। আমার প্রচুর চেনা-পরিচিত মানুষজন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন তাঁরাও আলোচনায় বলেন যে, আগামী দিনে নেত্রীকেই প্রয়োজন ভারতবর্ষের মানুষের ও দেশের স্বার্থে। তিনিই প্রধান ভূমিকা নিন জাতীয়স্তরে। আজকের এই আন্তর্জাতিক নারীদিবসে দিদির জন্য রইল আমার শুভকামনা।

‘তোমার ডানায় আগুন, দীর্ঘ হোক তোমার উড়ান।’

Latest article