বিজেপির রামরাজ্যের নমুনা! বিনা দোষে জেল খাটল কিশোর, বুলডোজারে বাড়ি ভাঙল পুলিশ

ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়ন শহরে। ১৮ বছর বয়সি আদনান মনসুরির বিরুদ্ধে হিন্দুদের ধর্মীয় মিছিলে থুথু ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছিল

Must read

প্রতিবেদন : এটাই কি বিজেপির রামরাজ্যের নমুনা? মধ্যপ্রদেশের আরও একটি ঘটনা দেখিয়ে দিল বিজেপি শাসিত রাজ্যে প্রশাসনিক পক্ষপাত, অনিয়ম আর নাগরিক-হেনস্থার ছবি। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে স্রেফ সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য বিনা অপরাধে এক কিশোর জেল খাটল টানা পাঁচ মাস। সেইসঙ্গে বিজেপি সরকারের পুলিশ বুলডোজার মাটিতে মিশিয়ে দিল তার পরিবারের বাসস্থান। আইনি বিচার পাওয়ার আগেই শাস্তির মুখে পড়তে হল ওই কিশোরকে। প্রশ্ন উঠছে, এটাই কি বিজেপির রামরাজ্যের তথাকথিত সুশাসন? বিরোধীদের অভিযোগ, সংখ্যালঘু পরিচয়ের কারণেই চরম হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে কিশোর ও তার পরিবারকে।

আরও পড়ুন-জন্মের প্রমাণপত্র হিসেবে আর গণ্য নয় আধার বিজ্ঞপ্তি জারি করল কেন্দ্র

ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়ন শহরে। ১৮ বছর বয়সি আদনান মনসুরির বিরুদ্ধে হিন্দুদের ধর্মীয় মিছিলে থুথু ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাতেই ১৫১ দিন বিচার বিভাগীয় হেফাজতে কাটাতে হয় তাকে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার আগেই অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, হঠাৎ করেই বেআইনি দখলদারির অভিযোগ এনে অতিসক্রিয় হয় প্রশাসন। কিশোর যখন জেলবন্দি, তখন তার পরিবারকে বসবাসের জন্য অন্য ঠিকানা খুঁজতে হয়। পাঁচ মাস জেলে থাকার পর ওই কিশোর জামিনে বেরিয়ে এসেছে। মজার ব্যাপার হল যে বড় অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে তড়িঘড়ি জেলে পোরা হল সেই মামলায় খোদ অভিযোগকারী এবং প্রধান সাক্ষী কিশোরকে শনাক্ত করতে অস্বীকার করেছেন। দুজনেই জানান, আদনানকে তাঁরা ঘটনাস্থলে দেখেননি। অভিযুক্ত কিশোরের নাবালক ভাই এবং আরেক সম্পর্কিত ভাইয়ের বিরুদ্ধেও এই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু এ-পর্যন্ত কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন-দিঘায় জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ির রাস্তা হবে চার লেনের, পুরনো মন্দির ঢেলে সাজাবে রাজ্য

ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, গত বছরের ১৭ জুলাই যখন ভগবান মহাকালের একটি শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল তখন দুই ভাই-সহ অভিযুক্ত আদনান নিজেদের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে তা দেখছিল। শোভাযাত্রাটি তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বের হওয়ার সময় হঠাৎই সেখানে কেউ চিৎকার করে বারবার বলতে থাকে ‘ওরা থুথু ফেলছে।’ সঙ্গে সঙ্গে অতিসক্রিয়তা দেখিয়ে পুলিশ আদনান ও তার দুই ভাইকে আটক করে। দুদিন পর তাদের বাড়িও বুলডোজারে ভেঙে দেওয়া হয়। ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র আশিস আগরওয়াল তখন বলেছিলেন, যারা ভগবান শিবকে অপমান করে তাদের শিবতাণ্ডবের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। আদনান এবং তার ভাইদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, শত্রুতা প্রচার, ধর্মীয় সমাবেশে বিঘ্ন ঘটানো এবং দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ আনা হয়। উজ্জয়নের বাসিন্দা সাওয়ান লটের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।

আরও পড়ুন-কালনায় চাষের কাজে কৃষি দফতর দিল সোলার পাম্প

নাবালক ভাইদের জামিন মঞ্জুর হলেও আদনানকে জেলেই থাকতে হয়। গত সোমবার, ইন্দোরে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের একক বিচারপতির বেঞ্চ আদনানকে জামিন দেয়। বিচারপতি উল্লেখ করেছেন, অভিযোগকারী সাওয়ান লট (সাক্ষী নম্বর ১) এবং অজয় খাতরা (সাক্ষী নম্বর ২) ট্রায়াল কোর্টের সামনে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং প্রসিকিউশনের মামলাকে সমর্থন করেননি। একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রশ্নের উত্তরে সাওয়ান লট বলেছেন যে আমি আদনানকে চিনি না। যে ছেলেটির ভিডিও আমাকে দেখানো হয়েছে, আমি তাকে চিনি না। ঘটনাস্থলে অন্য দুটি ছেলেকে দেখেছিলেন বলে জানান অভিযোগকারী। তাঁর মতে, কেন আদনানের বাড়ি ভাঙা হল তা তিনি জানেন না। এদিকে অভিযুক্তের আইনজীবী দেবেন্দ্র সিং সেঙ্গার বলেছেন, উচ্চ আদালত উল্লেখ করেছে যে অভিযোগকারী এফআইআরে উল্লিখিত প্রসিকিউশনের তত্ত্বকে সমর্থন করেননি। তিনি অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং এও বলেছিলেন যে তিনি ঘটনাটি ঘটতে দেখেননি। প্রসিকিউশনের অন্য সাক্ষী, অজয় খাতড়াও প্রতিকূল ছিলেন এবং আদনানকে অভিযুক্ত অপরাধকারী হিসাবে চিহ্নিত করেনি। বিতর্ক বাড়তেই যে খারাকুওয়া থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, সেখানকার পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে।

Latest article