You are on Stage. It Symbolizes a Glorification of Suicide. It’s An act you want people to Notice… Jerald Ratnar.
জেরাল্ড র্যাটনার শুধু একা নন পৃথিবীর আসলে বহু মনস্তাত্ত্বিক মনে করেন, সুইসাইড বা আত্মহত্যার সঙ্গে কোথাও রোম্যান্টিকতা জড়িয়ে থাকে। যারা আত্মহত্যা করে তারা চায় এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে। সেটা কোনও ব্যক্তি হতে পারে, প্রতিষ্ঠান হতে পারে, সমাজ হতে পারে। যে কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুইসাইড নোট লেখে তারা। কোথায় আত্মহত্যা করছে সেটাও বেছে নেওয়া হয় অনেক হিসেবনিকেশ করে। সেটা অখ্যাত কিংবা বিখ্যাত যে কোনও জায়গাই হতে পারে। পৃথিবীতে ১০টি জনপ্রিয় সুইসাইড পয়েন্ট আছে। ভারতে আছে ৬টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই ১০টি সুইসাইড পয়েন্টের মধ্যে সব ক’টারই এক ধরনের ভয়ঙ্কর বন্য আকর্ষণ আছে। মায়াবী জাদু আছে। কেউ ব্রিজ থেকে লাফাচ্ছে। কেউ জলপ্রপাতে ঝাঁপ দিচ্ছে। আরও কত কী। আবহমান কাল ধরে আমাদের দেশের মেয়ে-বউরা গ্রামের বড় দিঘি- পুকুরে ডুব দিয়ে আর ওঠেনি। মানে উঠতে চায়নি। ভারতীয় সিনেমার খুব জনপ্রিয় সুইসাইড শট হল, কেউ নিখোঁজ। তাকে খুঁজতে গিয়ে ক্যামেরা চলে যাচ্ছে পুকুর পাড়ে। লং শটে পুকুর। তারপরেই টিল্ট ডাউন করে ক্যামেরা চলে আসছে পুকুর ঘাটে সেখানে একপাটি চটি বা জুতো পড়ে আছে। ফ্রিজ শটে মিড ক্লোজআপে তা দিয়েই যুগযুগ ধরে বোঝানো হয়েছে কেউ একজন সুইসাইড করেছে পুকুরে।
আরও পড়ুন-বিক্রম বেতাল-এর রূপকথা ও এক অদ্ভুত কাহিনি
কলকাতায় আত্মহত্যা করার সবথেকে জনপ্রিয় জায়গা হল মেট্রোরেল। ভয়ঙ্কর পপুলার। আর বেশিরভাব ক্ষেত্রেই মেট্রোতে লোকে সুইসাইড করে অফিস টাইমে। ভাবখানা এমন, আমি তো মরবই বাকিদেরও যন্ত্রণায় ভুগিয়ে মারব। ‘কেন রে মড়া? বেছে বেছে অফিস যাওয়ার সময়ই সুইসাইড করতে হবে? আর জায়গা পেলি না?’ সঙ্গে বাছাই করা বিশেষণ দিয়ে যাত্রীরা একটি সদ্য বডি হয়ে যাওয়া হতভাগ্যকে গালমন্দ দিতে থাকেন। কেনই বা দেবে না? মেট্রোয় সুসাইড মানে তো ঘণ্টাখানেকের জন্য মেট্রো চলাচল বন্ধ। কপাল খারাপ থাকলে আরও বেশি। তথ্য বলছে ১৯৮৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০০-র বেশি মানুষ কলকাতা মেট্রোতে সুইসাইড করেছে। অনেকে আবার বেঁচেও গিয়েছে। তবে সংখ্যাটা হাতে গোনা।
ভারতবর্ষের মধ্যে দিল্লি, মুম্বই, গুজরাত, ভোপাল— অন্যান্য আরও অনেক কিছুর মধ্যে সুইসাইড পয়েন্টের জন্য বেশ নাম করেছে (বদনাম)। যেমন গুজরাতের সবরমতী রিভার ফ্রন্ট আছে, তেমনি নভি মুম্বইয়ের ভাসি ক্রিক রয়েছে। ভোপালের কুখ্যাত ভিআইপি রোড যেমন আছে আবার দিল্লির জনকপুরী ডিস্ট্রিক্ট সেন্টারও আছে যেখানে ১৪তলা উঁচু টাওয়ার থেকে লোকে অহরহ নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর কলকাতা মেট্রোর কথা তো আগেই বলেছি।
আরও পড়ুন-ইন্ডোরে পাল্টা লড়াইয়ের ডাক: নয়া স্লোগান- এজেন্সি নয়, চাকরি চাই
গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সুইসাইড ইতিহাস ঘাঁটলে চোখে পড়বে, পপুলার সুইসাইড পয়েন্ট হিসেবে যেসব জায়গা কুলীন তালিকায় নিজেদের নাম তুলে দেশকে ‘গর্বিত’ করেছে তাদের বেশির ভাগই হল বিশাল উঁচু ব্রিজ। ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়া নায়াগ্রা জলপ্রপাতও এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চিন, জাপান— কাকে ছেড়ে কার কথা বলবেন। ভাবুন একবার, মানুষ পয়সা খরচা করে এসব জায়গায় সুইসাইড করতে যায়! একে লাক্সারি সুইসাইড স্পট ছাড়া আর কীই বা বলবেন! ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে হয়তো একবার জিজ্ঞেস করতেন, সস্তায় মরণের কিসু নাই? দিনকাইল যা পড়সে এত দাম দিয়া মরুম ক্যামনে কন?
আরও পড়ুন-গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাকে বিরোধীশূন্য করার চ্যালেঞ্জ
এই ধরুন কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাত। গোটা পৃথিবীর থেকে মানুষ যায় সেখানে। আহা দেখার মতো জিনিস বটে। আবার মরার মতো জিনিসও, অবিশ্যি যাঁরা মরতে চান তাঁদের জন্য বেড়ে জায়গা মশাই। ঐরকম বেগে ঝুলে পড়া রাশি রাশি জলে ঝাঁপিয়ে মরার ব্যাপারই আলাদা। মরবই যখন দামি জায়গায় মরব! বিদেশি সুসাইডাররা এরকম ভাবেন কি না আমার জানা নেই। পরপার বলে কিছু থাকলে সেখানেও তো সাংবাদিকতাই করে ভেসে থাকতে হবে। না হলে সেখানে মাগনায় খেতে-পরতে কেই বা দেবে! আর আমি তো অন্য কিছু পারি না তাই আমাকে পরপার টিভিতে পলিটিক্যাল স্টোরি— লাইভ কিংবা কাগজে কাজ পেলে কপি লেখা কিংবা পরপারে ডিজিটালে কিছু একটা করতে হবে তো নাকি! তো সেখানে নিশ্চয়ই কভারেজে বাইরে পাঠাবে, তখন না হয় একবার বিদেশি সুইসাইডার পেলে একটা বাইট নিয়ে দেখব তাঁরা কী বলেন! সেই বিখ্যাত (আসলে কুখ্যাত) প্রশ্নটা করবই করব, অত উঁচু থেকে সুইসাইড করে কেমন লাগল? এই পৃথিবীর বাস্তব তথ্য বলছে, সেই ১৮৫৬ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮০ জন সুইসাইড করেছেন। তারপরে আর গোনা হয়নি বোধহয়। প্রতি বছর সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন সুইসাইড করে থাকেন। নায়াগ্রার অদৃশ্য স্কোরবোর্ডে এরকম আস্কিং রেট থাকলে কোন স্কোরারই বা গুনতে চাইবে?
তারপর ধরুন জাপানের কুখ্যাত ঘনজঙ্গল, মাউন্ট ফুজিতে। আকিঘারা ফরেস্ট। ২০০৩ সালে সেখানে ১০০ জন আত্মহত্যা করেছেন। জঙ্গলে ঢুকে। আর ২০১০-এ ২৪৭ জন। এর মধ্যে নিজেদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন ৫৪ জন। ভাবা যায়! শুধুমাত্র সুইসাইড করার জন্য কতরকমের প্ল্যান ভেঁজেছেন এঁরা। সফলও হয়েছেন। কী অধ্যবসায়!
আরও পড়ুন-ইন্ডোরে পাল্টা লড়াইয়ের ডাক: নয়া স্লোগান- এজেন্সি নয়, চাকরি চাই
ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো ব্রিজ। রাতের মায়াবী আলোয় যেন রঙ ছড়ায়। ২০০ ফুট উচ্চতার স্বপ্নসুন্দরীর মতো মায়াবী এই ব্রিজ থেকে নীচে গভীর নদীর জলে ঝাঁপিয়ে জীবন দিয়েছেন ২০০ জন। এই হিসেব ১৯৭২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। অদ্ভুত ভাবে একমাত্র ১৯৮৪ সালে এখানে একটিও সুইসাইডের ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে একজন তো গাড়ি চুরি করতে গিয়ে পুলিস কুকুরের তাড়া খেয়ে ব্রিজ থেকে সোজা নদীতে লাফিয়েছিল। হ্যাম্বার ব্রিজ, সানশাইন স্কাই ওয়াক কিংবা মেলবোর্নের ওয়েস্টগেট ব্রিজ কাকে ছেড়ে কার কথা বলবেন। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়!
আরও পড়ুন-পুজোয় হাজির বৌদি canteen
তবে আমার মতে মুঠোফোন সম্বল আজকের পৃথিবীতে ফেসবুক সুইসাইড হল নবতম সংযোজন। আজকাল ফেসবুকে লাইভ করতে করতে লোকজন সুসাইড করছে। আমাদের প্রাণপ্রিয় শহর কলকাতায়, এই বাংলায় এরকম কত সুইসাইড তো ঘটল! ক’জনকে আর বাঁচানো গেল? আসলে আমাদের জীবন এখন কেবলই জটিল। আর আমরা সকলেই কম- বেশি একা। আমার মতো যাঁরা ভিড়ের মাঝেও নিজেদের একা অনুভব করি তাঁরা সকলেই কি সুইসাইডের কথা ভাবি? না। কিন্তু যাঁরা সুইসাইড করেন তাঁরা ঘরে কিংবা বাইরে নির্জন জায়গা বেছে নেন। জীবনে বিভিন্ন কারণে কোণঠাসা হতে হতে মানুষ যখন নিজের কাছেই নিজে হেরে যায়, তখন সে বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তখন একখান জম্পেশ জায়গা খোঁজে বিষাক্ত হয়ে যাওয়া জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার। আর সেই জায়গাগুলি হয়ে ওঠে সুইসাইড পয়েন্ট।
আরও পড়ুন-বিজেপির প্ররোচনায় মিলছে না বকেয়া টাকা
সবাই তো আর শোলের বীরু নয় যে ফুলটু নেশা করে ওপর থেকে বলবে মসি জি খুশি খুশি বসান্তি কা হাত মেরে হাত মে দে দো নেহি তো ম্যায় সুইসাইড কর লুঙ্গা। আর নিচে দাঁড়িয়ে জয় বলবে নটাঙ্কি শালা। আসলে আমাদের জীবনে জয়-রা বড্ড কমে এসেছে। নেই বললেই চলে৷ যারা নিজের জীবন বাজি রেখে বন্ধুকে বাঁচায়। তাই তো দরকার হয় সুইসাইড পয়েন্টের। জীবনের লড়াইয়ের টসে হেরে বেছে নিতে হয় মৃত্যুকে।